এশিয়া, অ্যামেরিকা কিংবা আফ্রিকা, বিয়েবাড়ি, অফিস বা হাসপাতাল, কোথাও
নিরাপদ নয় সাধারণ মানুষ৷ জঙ্গি হামলায় প্রতি বছরই বাড়ছে মৃত্যু৷ ইতিহাসের
কিছু ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা পড়ুন এই ছবিঘরে৷
|
ইস্টার সানডে হামলা (শ্রীলঙ্কা, ২০১৯)
২০১৯
সালের ২১ এপ্রিল ইস্টার সানডে পালন করছিলেন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা৷ এমন
দিনেই কলম্বো, নেগোম্বো ও বাট্টিকালোয়া শহরের মোট আটটি গির্জা ও হোটেলে একই
সময়ে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়৷ সরকারের দেয়া সবশেষ তথ্য অনুসারে এ
হামলায় নিহত হন ২৫৩ জন৷ ২০০৯ সালে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে গৃহযুদ্ধ
শেষ হবার পর এটিকেই দেশটির সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা বলে মনে করা হয়৷
হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস৷
|
|
বৈরুত ব্যারাক হামলা (লেবানন, ১৯৮৩)
১৯৮৩
সালের ২৩ অক্টোবর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে আত্মঘাতী ট্রাক হামলা চালানো
হয়৷ তখন লেবাননে গৃহযুদ্ধ চলছিল৷ ভবনগুলোতে মার্কিন ও ফরাসি শান্তিরক্ষী
বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছিলেন৷ দুই বিস্ফোরক বোঝাই ট্রাক ভবনে ঢুকে গেলে
নিহত হন ৩০৭ জন৷ এদের মধ্যে দুই হামলাকারী ছাড়াও ২৪১ জন মার্কিন সেনা, ৫৮
ফরাসি সেনা ও ছয় জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন৷ ‘ইসলামিক জিহাদ’ নামের একটি
গ্রুপ হামলার দায় স্বীকার করে৷
|
|
সিনাই মসজিদ হামলা (মিশর, ২০১৭)
মিশরের
ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা বলে মনে করা হয় এটিকে৷ ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর
জুম্মার নামাজ চলাকালীন ৪০ বন্দুকধারী আল-রাওদা মসজিদে হামলা চালায়৷
আল-রাওদা দেশটির অন্যতম সুফি মসজিদ৷ হামলায় নিহত হন ৩১১ জন৷ কোনো কোনো
সংবাদমাধ্যম হামলার সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের সম্পৃক্ততা খুঁজলেও
আনুষ্ঠানিকভাবে দায় স্বীকার করেনি কেউ৷
|
|
এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২ (ক্যানাডা, ১৯৮৫)
১৯৮৫
সালের ২৩ জুন ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩১ হাজার ফুট উঁচুতে আয়ারল্যান্ডের আকাশসীমায়
বিধ্বস্ত হয় এয়ার ইন্ডিয়ার টরন্টো-দিল্লি ফ্লাইট৷ বিমানটিতে আগে থেকে বোমা
রাখা ছিল, যা নিরাপত্তাকর্মীদের নজর এড়িয়ে যায়৷ ক্যানাডা পুলিশের দাবি,
ভারতের অমৃতসরে শিখদের পবিত্র উপাসনালয় গোল্ডেন টেম্পলে সেনা অভিযানের
প্রতিবাদে শিখ জঙ্গিদের সংগঠন বাবর খালসা এই বোমা হামলা করে৷ প্লেনে থাকা
৩২৯ জন যাত্রী, পাইলট, ক্রুর সবাই নিহত হন৷
|
|
গামবোরু এনগালা হামলা (নাইজেরিয়া, ২০১৪)
নাইজেরিয়ার
পাশাপাশি দুই শহর গামবোরু ও এনগালাতে ২০১৪ সালের ৫ মে রাতে হামলা শুরু করে
বোকো হারাম জঙ্গিরা৷ একে-৪৭ ও আরপিজি দিয়ে এ হামলা চালানো হয় টানা ১২
ঘণ্টা ধরে৷ হামলায় নিহত হন শহর দুটির ৩৩৬ জন বাসিন্দা৷ চিবোক শহর থেকে
অপহৃত মেয়েদের খুঁজে পাওয়া গেছে– এমন গুজব ছড়িয়ে হামলার ঠিক আগে আগেই শহর
দুটি থেকে মোতায়েন সেনাসদস্যদের অন্যদিকে সরিয়ে দিতে সফল হয় জঙ্গিরা৷ এরপরই
ঘটে হামলার ঘটনা৷
|
|
কারাডা হামলা (ইরাক, ২০১৬)
২০১৬
সালের ৩ জুলাই স্থানীয় সময় মধ্যরাতে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে দুটি হামলা
চালানো হয়৷ শিয়া অধ্যুষিত কারাডায় রমজান মাসে ব্যস্ত এক বাজারে আত্মঘাতী
ট্রাকহামলা চালানো হয়৷ একই সময়ে শা’ব এলাকায় রাস্তার পাশে রাখা আরো একটি
বোমাও বিস্ফোরিত হয়৷ দুই হামলায় নিহত হন ৩৪২ জন৷ হামলার দায় স্বীকার করে
আইএস৷
|
|
ত্রুয়িলো হত্যাকাণ্ড (কলম্বিয়া, ১৯৮৮-১৯৯৪)
কলম্বিয়ার
ত্রুয়িলো শহরে ছয় বছর ধরে চলেছে এই হত্যাকাণ্ড৷ এজন্য দায়ী করা হয়
অঞ্চলটিতে সক্রিয় বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনী ও দুর্ধর্ষ মাদক চোরাচালানকারী
পাবলো এসকোবারের অধীনের ড্রাগ কার্টেলকে৷ এই মাদক চোরাচালান সংগঠনগুলোর
সদস্যরা সামরিক বাহিনী ও পুলিশেও সক্রিয় ছিলেন৷ ধারণা করা হয়, ছয় বছরে
অন্তত ৪০০ মানুষকে হত্যা করেছে মাদক ব্যবসায়ীরা৷ হত্যার পর মরদেহ ফেলে দেয়া
হতো পাশ দিয়ে বয়ে চলা কাউকা নদীতে৷
|
|
মোগাদিসু হামলা (সোমালিয়া, ২০১৭)
সোমালিয়া
তো বটেই, পুরো আফ্রিকা মহাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা মনে করা
হয় এটিকে৷ নিরাপত্তাকর্মীরা একটি বোমাভর্তি ট্রাককে মোগাদিসুর ব্যস্ততম
সড়কে তল্লাশির জন্য আটকালে চালক এটির বিস্ফোরণ ঘটান৷ হামলায় অন্তত ৫৮৭
জনের মৃত্যু হয়৷ আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ দায় স্বীকার না করলেও পুলিশের ধারণা,
হামলার জন্য দায়ী জঙ্গি সংগঠন আল শাবাব৷
|
|
পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা (শ্রীলঙ্কা, ১৯৯০)
১৯৯০
সালের ১১ জুন শ্রীলঙ্কার ইস্টার্ন প্রভিন্সে পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা
চালায় তামিল টাইগাররা৷ কয়েকটি থানায় হামলা চালিয়ে দখল করা হয়৷ নিহতের
সংখ্যা অন্তত ৬০০ থেকে ৭৭৪ জন হতে পারে বলে জানায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম৷
|
|
ইয়াজিদি হত্যাকাণ্ড (ইরাক, ২০০৭)
আগস্টের
১৪ তারিখ ইরাকের মোসুল লগরীর পাশে ইয়াজিদি সম্প্রদায় অধ্যুষিত তিল এজের
এবং সিবা শেখ খিদির শহরে চারটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ হামলায়
অন্তত ৭৯৬ জন নিহত হন৷ কোনো জঙ্গি গোষ্ঠি হামলার দায় স্বীকার করেনি৷ তবে
ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জালাল তালাবানি এ হামলার জন্য সুন্নি
সন্ত্রাসীদের দায়ী করেন৷
|
|
ক্রিসমাস হত্যাকাণ্ড (ডি আর কঙ্গো, ২০০৮)
২০০৮
সালের ২৪ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর
হাউত-উয়েলে জেলার কয়েকটি গ্রামে আক্রমণ চালায় উগান্ডার বিদ্রোহী গ্রুপ
লর্ডস রেজিসট্যান্স আর্মি (এলআরএ)৷ উগান্ডা ও প্রতিবেশী অপর তিন দেশের
সেনাবাহিনীর সম্মিলিত অভিযানের পালটা ব্যবস্থা হিসেবে সীমান্ত পেরিয়ে
সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায় এলআরএ৷ নিহত হন অন্তত ৬২০ জন৷
|
|
ক্যাম্প স্পাইশার হত্যাকাণ্ড (ইরাক, ২০১৪)
২০১৪
সালের ১২ জুন ইরাকের তিকরিতে ক্যাম্প স্পাইশারে হামলা চালিয়ে শিয়া ইরাকি
বিমান বাহিনীর ১,৫৬৬ ক্যাডেটকে হত্যা করে আইএস৷ হামলার সময় ক্যাম্পটিতে
কয়েক হাজার নিরস্ত্র ক্যাডেট অবস্থান করছিলেন৷ তাঁদের মধ্য থেকে বেছে বেছে
শিয়া মুসলিম ও অমুসলিমদের আলাদা করা হয়৷ তারপর গুলি চালিয়ে তাঁদের হত্যা
করে আইএস জঙ্গিরা৷
|
|
৯/১১ হামলা (যু্ক্তরাষ্ট্র, ২০০১)
২০০১
সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারসহ যুক্তরাষ্ট্রের চারটি স্থাপনায় যুগপৎ
হামলা চালায় আল কায়েদা জঙ্গি গোষ্ঠী৷ বিমান ছিনতাই করে সেটি নিয়েই টুইন
টাওয়ারে আঘাত হানে ছিনতাইকারীরা৷ সরকারি তথ্যমতে, এ হামলায় মোট ২,৯৯৬ জন
প্রাণ হারান৷ নিহতদের মধ্যে ১৯ জন ছিনতাইকারী বলে জানিয়েছে গোয়েন্দারা৷
প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ হামলায়৷
|
No comments