গুলশানের বাটলার্স চকোলেট ক্যাফে: ব্রেকফাস্ট করুন মধ্যরাতে by আজম খান
চকলেট প্রেমীদের জন্য ঘোষণা! সম্ভাবনা আছে যে ঢাকার গুলশানের উত্তরাংশের
এই স্মার্ট ক্যাফেগুলোতে খাবারের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাবেন আপনি। এটা বাটলার
চকোলেট ক্যাফে এবং কাস্টমারদের এখানে বিভিন্ন চকলেট, কফিসহ বিভিন্ন জিনিসের
বিশেষ স্বাদ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রধান আকর্ষণ হলো বাটলারের লাভা কেক। মৌচাকে মৌমাছিরা যেমন ভিড় করে,
চকলেট প্রেমীরা তেমন এই কেক খেতে ভিড় করে। আকাঙ্ক্ষায় গা ভাসানো ছাড়া অন্য
কিছু বলা যায় না এটাকে। ছোট্ট কেকটা দেয়া হয় লম্বা সাদা ট্রেতে। একদিকে এক
স্কুপ ভ্যানিলা আইসক্রিম আর অন্যদিকে সামান্য চকোলেট সস। কেকের মধ্যে চামচ
ডোবালেই লাভার মতো ঘন, মিষ্টি চকোলেট বেরিয়ে আসবে। এরপর কেকের সাথে
আইসক্রিম আর চকলেট সস মিশিয়ে খাওয়ার পালা। একেবারে স্বর্গীয় স্বাদ যেন!
অবাক হওয়ার কিছু নেই যে বহু মানুষ এখানে প্রতিদিন ভিড় করছে। বিশেষ করে
বাইরে ডিনার করার পর এখানে এসে অসাধারণ এই ডেজার্ট দিয়ে খাবারের ইতি টানা
আর কি।
সেই সাথে রয়েছে বাটলারের সিগনেচার সানডে.. আইসক্রিম, কুকিজ আর ক্রিম,
সিরাপ ও আরও নানা সুস্বাদু জিনিসে ভর্তি। একবার শুরু করলে গ্লাসের তলা
পর্যন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত থামতে ইচ্ছা করবে না।
সবচেয়ে ভালো মিল্কশেকটাও সম্ভবত এখানেই পাবেন আপনি – ঘন, সুগন্ধযুক্ত,
ঠাণ্ডা ও মিষ্টি। বেশি মিষ্টি? হয়তো কারো কারো জন্য, কিন্তু যাদের মিষ্টি
পছন্দ, তারা এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, শহরের সেরা এটাই।
- *এই আইরিশ ক্যাফেতে যাদের সমাগম ঘটে, সেটাও বেশ মজার। প্রায়ই এখানে দেখা যাবে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিককে – ববি নামেই যিনি বেশি পরিচিত – প্রধানমন্ত্রীর এই ভাইপো রাজনীতিতে বেশ পরিচিত মুখ। ক্রিকেট স্টার নাসের হোসেনও প্রায়ই আসেন এখানে। আসেন ফেরদৌসের মতো মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, মিঠু সাত্তারের মতো ব্যাংকার্স, মাহফুজ আনাম, জাফর সোবহানের (রেহমান সোবহানের ছেলে) মতো মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ফাইজ সোবহানের (ফারুক সোবহানের ছেলে) মতো থিঙ্ক–ট্যাঙ্কার।
যারা চকলেট বা চিনির স্বাদ পছন্দ করেন না, তাদের জন্য সুসংবাদ হলো এখানে
সবকিছুই শুধু মিষ্টি নয়। মেন্যুতে বিভিন্ন স্বাদের খাবার রয়েছে, আর সেখানে
সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো পিজ্জা। বিফ/চিকেন বারবিকিউ পিজ্জা পছন্দের অন্যতম।
স্মোকি ফ্লেভার, অতিরিক্ত চিজ নেই, পিজ্জাটাতে পাতলা ক্রাস্ট রয়েছে আর খেয়ে
তৃপ্তি পাওয়া যায়।
ব্রেকফাস্টের সময়েও নিয়মিত কাস্টমার থাকে এখানে, বিশেষ করে গুলশান,
বারিধারা, বনানি এলাকাগুলোতে। ডিমের শানি-সাইড আপ, টোস্ট, ক্রয়সেন্ট, সসেজ,
হ্যাশ ব্রাউন আরও অনেক কিছু দিয়ে আইরিশ নাস্তা করতে পারেন আপনি। সব শেষে
থাকবে এক কাপ ইংলিশ ব্রেকফাস্ট চা অথবা আর্ল গ্রে চা অথবা হট চকোলেট। আর এই
নাস্তা সারা দিনই পাওয়া যাবে।
খাবারের তালিকায় আরও রয়েছে পাস্তা, পানিনি, চিকেন স্ট্রিপস, স্পাইসি রাইস, বিভিন্ন ধরনের সালাদ এবং আরও নানা খাবার।
বাটলার্স এখন বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের খাবারের গন্তব্য – এদের মধ্যে
কূটনীতিক থেকে নিয়ে তরুণ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা এবং শহরের প্রখ্যাত
ব্যক্তিরা রয়েছে। গণ্যমান্যদের সবাইকেই পাবেন এখানে।
তরুণ উদীয়মান এক ব্যাংকার হাসলেন। “আমার বিশ্বাস অফিসের চেয়ে এখানেই আমি
বেশি ক্লায়েন্টের সাথে কথা বলি। সত্যিই! বাটলার্স আমার কাছে একটা কফি
পয়েন্টের চেয়েও বেশি কিছু। এটা নেটওয়ার্কিংয়ের জায়গা, পেশাদার আলাপের
জায়গা”।
ইউরোপিয় একটি দেশের সিনিয়র এক কূটনীতিক বললেন, “আমি এখানে নিরাপদ ও
পরিচিত বোধ করি। এটা শুধু বাড়ির কাছাকাছিই নয়, বরং এই জায়গার অনুভূতিটাও
একই সাথে খুবই কসমোপলিটান আবার নিজের বাড়ির মতো। আমি নিউ ইয়র্ক, লন্ডন,
প্যারিস বা যে কোন জায়গায় নিজেকে ভাবতে পারি.. এটার সেই বৈশিষ্ট্য রয়েছে”।
মালিক হাবিব ঘিওয়ালা থাকেন আয়ারল্যান্ডে। এই আউটলেটগুলোর দেখভালের জন্য
প্রায়ই তিনি ঢাকা আসেন। “ঢাকায় ডাবলিন-ভিত্তিক এই আউটলেটগুলো গড়ে তুলতে
অনেক সময় নিয়েছি আমি। শুধু জায়গা বাছাইয়ের জন্যই আমি তিন বছর সময় নিয়েছি।
এতে লাভ হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য জায়গার চেয়ে ঢাকা বাটলার্স বেশি লাভজনক
হয়েছে। বাংলাদেশীরা যে বাটলার্সকে তাদের এক নাম্বার পছন্দে পরিণত করেছে, এ
জন্য বাংলাদেশীদের আমি অবশ্যই ধন্যবাদ দেই”। বাটলার্সের পাকিস্তানে তিনটি,
দুবাই ও আয়ারল্যান্ডে একটি করে আউটলেট রয়েছে।
আর এই আইরিশ ক্যাফেতে যাদের সমাগম ঘটে, সেটাও বেশ মজার। প্রায়ই এখানে
দেখা যাবে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিককে – ববি নামেই যিনি বেশি পরিচিত –
প্রধানমন্ত্রীর এই ভাইপো রাজনীতিতে বেশ পরিচিত মুখ। ক্রিকেট স্টার নাসের
হোসেনও প্রায়ই আসেন এখানে। আসেন ফেরদৌসের মতো মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, মিঠু
সাত্তারের মতো ব্যাংকার্স, মাহফুজ আনাম, জাফর সোবহানের (রেহমান সোবহানের
ছেলে) মতো মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ফাইজ সোবহানের (ফারুক সোবহানের ছেলে) মতো
থিঙ্ক-ট্যাঙ্কার, সারা হোসেনের (কামাল হোসেনের মেয়ে) মতো আইনজ্ঞ, কনার মতো
গায়িকা এবং আরও অনেকে।
আগের প্রজন্মের তারকা ববিতা এবং চম্পার মতো নায়িকারাও মাঝে মাঝে কফি
খেতে ঢুঁ মারেন এখানে। নিয়মিত কাস্টমারদের মধ্যে আজকের সময়ের তরুণ ও
প্রতিশ্রুতিশীল ব্যক্তিরাও রয়েছেন। রয়েছেন সালমান রহমানের মতো ব্যক্তির
ছেলে মেয়েরা, লোটাস কামাল, মোরশেদ খান, আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্যরা। এই
ব্যক্তিরা নিজেরাই এই গন্তব্যের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং বাটলার্স নিজেও
শতাব্দির এই ভিড়কে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।
ব্যবসা বা বিনোদন, যে কাজেই কেউ ঢাকা সফরে আসছেন, তারা একবার হলেও
বাটলার্স ঘুরে দেখতে পারেন। এটা মজাদার, দেখার মতো একটি জায়গা এবং এখানকার
অভিজ্ঞতাটাও মজার।
মজার ব্যাপার হলো, এখানকার কফিটা যদিও শহরের সবচেয়ে মজাদার নয়, এরপরও
জনপ্রিয়তা পেয়েছে এটা। সম্ভবত বিভিন্ন ধরনের জন্য – ক্যাপাচিনো, মোচাস,
এসপ্রেসো – সব ধরনের ফ্লেভার রয়েছে এখানে। আর এখানকার নিজস্ব পরিবেশ তো
রয়েছেই।
বাটলার্সের দাম বেশি হবে এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু দামের ব্যাপারে সচেতন
মানুষরাও ভিড় করেন এখানে। বাইরে বিএমডাব্লিউ থেকে অডিস, মার্সিডিজ থেকে
নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পার্ক করা চকচকে এসইউভি দেখলেই সেটা আঁচ করা যায়।
গুলশান নর্থ এভিন্যুয়ের অনেকটা জায়গায় দখল করে থাকে এই গাড়িগুলো।
আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো এটা বহু রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। এর দরজা বন্ধ হয় রাত একটায়। মাঝরাতে স্ন্যাকস খেতে চান? মধ্যরাতে ব্রেকফাস্ট?
No comments