সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌচাষিরা by মো. নজরুল ইসলাম
টাঙ্গাইলের
প্রায় সব জায়গায় এখন সরিষার আবাদ হয়েছে। আর সরিষা খেতের চারপাশে
সারিবদ্ধভাবে মৌবাক্স স্থাপন করা হয়েছে। এসব বাক্সে পালিত মৌমাছি সরিষা ফুল
থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌবাক্সে জমা করছে। এই মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা।
মানিকগঞ্জের পরই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরিষার আবাদ হয় টাঙ্গাইল জেলায়।
মৌচাষে চাষিরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। এমনকি অনেক শিক্ষার্থীই লেখাপড়ার পাশাপাশি লাভবান হওয়ার জন্য মৌচাষ করছে। এই মধু এখন দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশেও বিক্রি হচ্ছে।
তবে চাষিদের দাবি সরকারের সহযোগিতা পেলে তারা এ মধুচাষে আরো লাভবান হতেন।
সরিষা ফুলের মধু যেমন খাঁটি তেমনি সুস্বাদু। মধু উচ্চমাত্রার প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হওয়ায় এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি ও ক্রেতাদের কাছে।
সরজমিনে মধুপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, সরিষা খেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে মৌবাক্স স্থাপন করা হয়েছে।
আর মৌমাছিরা সরিষা থেকে মধু আহরণ করে বাক্সে জমা করছে। এই বাক্স থেকে চাষিরা মধু সংগ্রহ করে সময় পার করছেন। মৌবাক্সের চারদিকে মৌমাছি ঘোরাঘুরি করছে। ওই স্থানে মৌমাছিদের মিলন মেলা তৈরি হয়েছে।
বিগত ১০ বছর ধরে মৌচাষ করেন টাঙ্গাইল পৌর এলাকার সন্তোষ ঘোষপাড়া এলাকার আমিনুর রহমান। তিনি এ পেশায় লাভবান উল্লেখ করে বলেন, এ বছর আমি সরিষা খেতে শতাধিক মৌবাক্স স্থাপন করেছি। এখন পর্যন্ত আমি (ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি ১ সপ্তাহ) প্রায় দেড় টন মধু সংগ্রহ করতে পেরেছি। সরিষা খেতে বছরে ৪ মাস মধু আহরণ করে থাকি। অন্য ৬ মাস কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাইয়ে মৌমাছিদের রাখা হয়। এবার আমার প্রায় আড়াই লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। আশা করছি আমার প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মতো লাভ হবে। বিভিন্ন কোম্পানির লোকজন আমাদের কাছ থেকে মধু কিনে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, মূলত ডিসেম্বর থেকে মধু আহরণের উপযুক্ত সময়। তখন জেলায় বিভিন্ন স্থানে ভালো সরিষা ফুল ফোটে। আকার ভেদে একটি বাক্সে ২ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়। আর প্রতিটি বাক্সে খরচ হয় ২ থেকে ১২ হাজার টাকা। এ ছাড়া আমি লিচু থেকেও মধু সংগ্রহ করে থাকি।
আমিনুর রহমান বলেন, আমার সংসারের যাবতীয় খরচ এর ওপর নির্ভরশীল। যদি সরকার আমাদের সহযোগিতা করেন তাহলে আমরা মৌচাষে আরো লাভবান হতাম। কিন্তু আমি বিগত সময়ে জেলা প্রশাসক এবং কৃষি অফিসে গিয়েও কোনো সহযোগিতা পাইনি।
এ ব্যাপারে শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি এ পেশায় নিয়োজিত। এতে আমরা বেশ লাভবান হচ্ছি। আমাদের দেখে অনেকেই সরিষা থেকে মৌবাক্সে মধু আহরণে আগ্রহী হচ্ছেন। সরিষা থেকে মধু আহরণে একদিকে যেমন বেকারত্ব দূর হয়। অন্যদিকে অল্প সময়ের মধ্যে লাভবান হওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন, অনেকেই প্রথমে সরিষা খেতের পাশে মৌবাক্স স্থাপনে বাধা দিলেও এখন কৃষকরা বাধা দেন না। কারণ এর ফলে সরিষার ফলন বেড়ে যায়। আমাদেরকে মৌমাছি কিনে আনতে হয়।
বাসাইল উপজেলার বাশুলিয়া গ্রামের আয়নাল হক নামের এক কৃষক বলেন, মৌবাক্স স্থাপনে সরিষার ফলন ভালো হচ্ছে। মৌচাষিদের খেতে মৌবাক্স স্থাপনে কোনো বাধা দেয়া হচ্ছে না।
মৌচাষি ইয়াকুব বলেন, প্রথমে ৫টি মৌবাক্স নিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন মৌবাক্স ৫০টিরও বেশি। এই কয়েক মাসের উপার্জন দিয়ে সারা বছর চলে যায়। মধু সংগ্রহে লাভবান হওয়ার কারণে অনেকেই এই পেশায় চলে আসছে।
জেলা কৃষি সমপ্রাসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলায় এ বছর সরিষার আবাদের টার্গেট ছিল ২৮ হাজার হেক্টর জমি। কিন্তু সরিষা উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩৯ হাজার হেক্টর জমি। এতে প্রায় ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে।
এ বছর জেলায় ৭ হাজার ২শটি বাক্সে বসানোর টার্গেট ছিল। কিন্তু সরিষা খেতের পাশে প্রায় ১০ হাজারের মতো বাক্স বসানো হয়েছে। যা টার্গেটের চেয়ে বেশি। এখন পর্যন্ত মধু উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কেজি। আধুনিক প্রযুক্তি/বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মধু আহরণ করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ বছর জেলায় টার্গেটের চেয়ে বেশি সরিষা আবাদ এবং মৌবাক্স স্থাপন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মধু উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কেজি। সামনে আরো মধু উৎপাদন হবে।
তিনি বলেন, বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষিজমিতে সরিষা খেতে মৌবাক্স স্থাপন করেছে মৌচাষিরা। এতে একদিকে মৌচাষিরা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে মধু সংগ্রহ করে লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে স্থানীয় কৃষিজমিতে সরিষার ফলনও অন্য বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আব্দুর রাজ্জাক জানান, মধু ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। এখানকার মধু দেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও বিদেশে চাহিদা রয়েছে। তাই মধু দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশেও বিক্রি করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সরিষা খেতের পাশে মৌচাষ করলে সরিষার পরাগায়নের ফলে আবাদ শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ ফলন বৃদ্ধি পায়। কয়েক বছর আগেও সরিষা চাষিরা তাদের জমিতে মৌবাক্স স্থাপনে বাধা দিত। তাদের ধারণা ছিল মৌমাছির কারণে সরিষার ফলন কম হবে। তবে আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা বোঝাতে সক্ষম হন মৌচাষের কারণে সরিষার ফলন কমতো হয়ই না, বরং ফলন ভালো হয়। এরপর চাষিরা তাদের জমির পাশে মৌবাক্স স্থাপনে সহায়তা করে আসছেন।
মৌচাষে চাষিরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। এমনকি অনেক শিক্ষার্থীই লেখাপড়ার পাশাপাশি লাভবান হওয়ার জন্য মৌচাষ করছে। এই মধু এখন দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশেও বিক্রি হচ্ছে।
তবে চাষিদের দাবি সরকারের সহযোগিতা পেলে তারা এ মধুচাষে আরো লাভবান হতেন।
সরিষা ফুলের মধু যেমন খাঁটি তেমনি সুস্বাদু। মধু উচ্চমাত্রার প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হওয়ায় এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি ও ক্রেতাদের কাছে।
সরজমিনে মধুপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, সরিষা খেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে মৌবাক্স স্থাপন করা হয়েছে।
আর মৌমাছিরা সরিষা থেকে মধু আহরণ করে বাক্সে জমা করছে। এই বাক্স থেকে চাষিরা মধু সংগ্রহ করে সময় পার করছেন। মৌবাক্সের চারদিকে মৌমাছি ঘোরাঘুরি করছে। ওই স্থানে মৌমাছিদের মিলন মেলা তৈরি হয়েছে।
বিগত ১০ বছর ধরে মৌচাষ করেন টাঙ্গাইল পৌর এলাকার সন্তোষ ঘোষপাড়া এলাকার আমিনুর রহমান। তিনি এ পেশায় লাভবান উল্লেখ করে বলেন, এ বছর আমি সরিষা খেতে শতাধিক মৌবাক্স স্থাপন করেছি। এখন পর্যন্ত আমি (ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি ১ সপ্তাহ) প্রায় দেড় টন মধু সংগ্রহ করতে পেরেছি। সরিষা খেতে বছরে ৪ মাস মধু আহরণ করে থাকি। অন্য ৬ মাস কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাইয়ে মৌমাছিদের রাখা হয়। এবার আমার প্রায় আড়াই লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। আশা করছি আমার প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মতো লাভ হবে। বিভিন্ন কোম্পানির লোকজন আমাদের কাছ থেকে মধু কিনে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, মূলত ডিসেম্বর থেকে মধু আহরণের উপযুক্ত সময়। তখন জেলায় বিভিন্ন স্থানে ভালো সরিষা ফুল ফোটে। আকার ভেদে একটি বাক্সে ২ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়। আর প্রতিটি বাক্সে খরচ হয় ২ থেকে ১২ হাজার টাকা। এ ছাড়া আমি লিচু থেকেও মধু সংগ্রহ করে থাকি।
আমিনুর রহমান বলেন, আমার সংসারের যাবতীয় খরচ এর ওপর নির্ভরশীল। যদি সরকার আমাদের সহযোগিতা করেন তাহলে আমরা মৌচাষে আরো লাভবান হতাম। কিন্তু আমি বিগত সময়ে জেলা প্রশাসক এবং কৃষি অফিসে গিয়েও কোনো সহযোগিতা পাইনি।
এ ব্যাপারে শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি এ পেশায় নিয়োজিত। এতে আমরা বেশ লাভবান হচ্ছি। আমাদের দেখে অনেকেই সরিষা থেকে মৌবাক্সে মধু আহরণে আগ্রহী হচ্ছেন। সরিষা থেকে মধু আহরণে একদিকে যেমন বেকারত্ব দূর হয়। অন্যদিকে অল্প সময়ের মধ্যে লাভবান হওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন, অনেকেই প্রথমে সরিষা খেতের পাশে মৌবাক্স স্থাপনে বাধা দিলেও এখন কৃষকরা বাধা দেন না। কারণ এর ফলে সরিষার ফলন বেড়ে যায়। আমাদেরকে মৌমাছি কিনে আনতে হয়।
বাসাইল উপজেলার বাশুলিয়া গ্রামের আয়নাল হক নামের এক কৃষক বলেন, মৌবাক্স স্থাপনে সরিষার ফলন ভালো হচ্ছে। মৌচাষিদের খেতে মৌবাক্স স্থাপনে কোনো বাধা দেয়া হচ্ছে না।
মৌচাষি ইয়াকুব বলেন, প্রথমে ৫টি মৌবাক্স নিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন মৌবাক্স ৫০টিরও বেশি। এই কয়েক মাসের উপার্জন দিয়ে সারা বছর চলে যায়। মধু সংগ্রহে লাভবান হওয়ার কারণে অনেকেই এই পেশায় চলে আসছে।
জেলা কৃষি সমপ্রাসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলায় এ বছর সরিষার আবাদের টার্গেট ছিল ২৮ হাজার হেক্টর জমি। কিন্তু সরিষা উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩৯ হাজার হেক্টর জমি। এতে প্রায় ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে।
এ বছর জেলায় ৭ হাজার ২শটি বাক্সে বসানোর টার্গেট ছিল। কিন্তু সরিষা খেতের পাশে প্রায় ১০ হাজারের মতো বাক্স বসানো হয়েছে। যা টার্গেটের চেয়ে বেশি। এখন পর্যন্ত মধু উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কেজি। আধুনিক প্রযুক্তি/বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মধু আহরণ করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ বছর জেলায় টার্গেটের চেয়ে বেশি সরিষা আবাদ এবং মৌবাক্স স্থাপন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মধু উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কেজি। সামনে আরো মধু উৎপাদন হবে।
তিনি বলেন, বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষিজমিতে সরিষা খেতে মৌবাক্স স্থাপন করেছে মৌচাষিরা। এতে একদিকে মৌচাষিরা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে মধু সংগ্রহ করে লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে স্থানীয় কৃষিজমিতে সরিষার ফলনও অন্য বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আব্দুর রাজ্জাক জানান, মধু ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। এখানকার মধু দেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও বিদেশে চাহিদা রয়েছে। তাই মধু দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশেও বিক্রি করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সরিষা খেতের পাশে মৌচাষ করলে সরিষার পরাগায়নের ফলে আবাদ শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ ফলন বৃদ্ধি পায়। কয়েক বছর আগেও সরিষা চাষিরা তাদের জমিতে মৌবাক্স স্থাপনে বাধা দিত। তাদের ধারণা ছিল মৌমাছির কারণে সরিষার ফলন কম হবে। তবে আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা বোঝাতে সক্ষম হন মৌচাষের কারণে সরিষার ফলন কমতো হয়ই না, বরং ফলন ভালো হয়। এরপর চাষিরা তাদের জমির পাশে মৌবাক্স স্থাপনে সহায়তা করে আসছেন।
No comments