যারা আন্দোলনে ব্যর্থ তারা নির্বাচনে জিততে পারে না
আন্দোলনে ব্যর্থ হলে কখনো কেউ নির্বাচনে জিততে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রাখেন। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি আন্দোলনের ডাক দেয় সরকারকে উৎখাত করতে। তাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য মানুষকে পুড়িয়ে মারা। এটা মানুষ কখনো মেনে নিতে পারে না। তখন জনগণই তাদের প্রতিরোধ করে। আর তাদের সেই আন্দোলন কিন্তু এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।
তারা যতোই আন্দোলন করে জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করে। তাই তাদের সব আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
আর আন্দোলনে যারা ব্যর্থ হয়, নির্বাচনে তারা কখনো জয়ী হতে পারে না। সেটা প্রমাণ হয়েছে ২০১৮ সালের নির্বাচনে। এই নির্বাচনে ব্যর্থতার কারণটা কী? আমি বিএনপিকে বলবো তাদেরই ভেবে দেখতে। কারণ তারা যে অপকর্মগুলো করেছে, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, শুধু সন্ত্রাস, লুটপাট, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা এবং ব্যাপক হারে মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে তাদের এই ভরাডুবি। একই আসনের জন্য সকালে একজন, দুপুরে একজন ও বিকালে একজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়। তাদের অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের দুঃখের কথা বলেছেন। একজন তো আমাদের দলে জয়েন করলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির যেসব প্রার্থী উইনেবল ছিল তারা কেউই মনোনয়ন পাননি। টাকা বেশি না দিতে পারায় তারা মনোনয়ন পাননি।
সকালে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়, তার চেয়ে বেশি টাকা দেয়ার পর দুপুরে আরেকজন মনোনয়ন পান। বিকালে তার চেয়ে বেশি টাকা পাওয়ায় সকাল ও দুপুরের প্রার্থী মনোনয়ন থেকে আউট হয়ে যান। এভাবে যে দল মনোনয়ন দেয় তাদের জনগণ কেন ভোট দেবে? প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মনোনয়ন দিয়েছে উচ্চ আদালত থেকে নিষিদ্ধ হওয়া জামায়াতে ইসলামীকে। এই দলের ২৫ জন মনোনয়ন পেয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। তারা কখনো যুদ্ধাপরাধীকে ভোট দেবে না। যারা রাজনীতি না করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায় তারা কীভাবে আশা করে দেশের মানুষ তাদের মেনে নেবে। এই দেশের মানুষ বিএনপিকে অতীতে কখনো মেনে নেয়নি, এখনো মেনে নেয় নাই আর ভবিষ্যতেও মেনে নেবে না। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার নিয়ে সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অনেকে এই ভোটের হার নিয়ে সমালোচনা করছেন, তারা যদি একটু তুলনাটা দেখেন তাহলে দেখবেন ২০০৮ সালে এর চেয়েও বেশি ভোট পড়েছিল। ৮৬ ভাগ। কোনো কোনো কেন্দ্রে ৯০ ভাগের বেশি ভোট পড়েছিল।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, তার স্বপ্নগুলো পূরণে এখন কাজ করতে হবে। দেশে একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই মানুষের জন্য কিছু করে। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য যারা ক্ষমতায় ছিল তারা জনগণের জন্য কিছু করেনি। মানুষের কথা ভাবেনি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী পাঁচ বছর আমাদের জন্য কঠিন পরীক্ষা। যে উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছি, সেটা অব্যাহত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাদের ওপর আস্থা-বিশ্বাস রেখেছে। এই বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো এই বিশ্বাস আমাদের আছে। তিনি বলেন, আজ জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই। তার আদর্শ বুকে নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই, এ দেশের যে উন্নতি আমরা করেছি, সেটা যেন অব্যাহত থাকে।
বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলীয় সভাপতি বলেন, জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়লে দেখবেন, একজন মানুষ তার জীবনে জনগণের জন্য কতখানি ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন। ‘কারাগারে রোজনামচা’ পড়লেও দেখবেন, কীভাবে তিনি ত্যাগ স্বীকার করেছেন মানুষের জন্য।
এ সময় ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন নিয়ে ‘সিক্রেটস অব ডক্যুমেন্টস’ বইয়ের প্রকাশিত খণ্ডগুলোও নেতাকর্মীদের পড়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, আজ এদেশের মানুষ পেট ভরে ভাত খাবে, তাদের বাসস্থান হবে, চিকিৎসা, শিক্ষার সুযোগ হবে, মানুষ উন্নত জীবন পাবে- এটাই তো ছিল জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য, একমাত্র উদ্দেশ্য। একটা দেশের জনগণ সবসময় বঞ্চিত ছিল, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি মহৎ আত্মত্যাগ করে গেছেন। সেই আত্মত্যাগ আমাদের ভুললে চলবে না। আমাদের সেটাই অনুসরণ করে চলতে হবে। দেশের মানুষ যদি ভালো থাকে, দেশের মানুষ যদি সুন্দর জীবন পায়, এরচেয়ে বড় সার্থকতা একজন রাজনীতিবিদের জীবনে আর কিছু হতে পারে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা দেখে যেতে পারলেন না। কিন্তু আমি এটা সবসময় বিশ্বাস করি, নিশ্চয়ই তিনি যে দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবেসেছেন, হয়তো তিনি আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন, এই বাংলাদেশের ৫৪ হাজার বর্গমাইলজুড়ে তিনি আছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা এ সময় আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, ‘আমি জানি না। সেটা আমি উপলব্ধি করতে পারি, তিনি আছেন। নইলে আমার পক্ষে এত দ্রুত দেশের উন্নতি করা বা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে এতটা অর্জন করা কখনোই সম্ভব হতো না। আমি সবসময় মনে করি, আমার মা-বাবা আমাকে সবসময় ছায়া দিয়ে রেখেছেন বলেই আজকে এটা সম্ভব হচ্ছে। নিশ্চয় তিনি বেহেশতে বসে সব দেখছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন এবং ২০২০ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের সময় বাংলাদেশকে অবশ্যই একটি উন্নত দেশ হিসেবে, ক্ষুধামুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।’ ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশকে আরো উন্নত করার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে। বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে টেনে নিতে পারবে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে যেন আর কখনো যুদ্ধাপরাধী, খুনি, সন্ত্রাসী, অগ্নিসন্ত্রাসী ফিরে আসতে না পারে, দেশের মানুষকে সেভাবেই সজাগ থাকতে হবে। বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রার শুরু, জাতির পিতা যে কথা বলে গেছেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না, কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নাই, ভবিষ্যতেও পারবে না। জাতির পিতার প্রতি এটাই আমাদের ওয়াদা। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ, মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ। আলোচনা মঞ্চে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত
এদিকে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত হয়েছে। সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় তিনি সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। শেখ হাসিনা পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ফের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদনকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও ডা. দীপু মনি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন ও এনামুল হক শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর বঙ্গবন্ধু ভবন এলাকা ত্যাগ করার পর বিভিন্ন দল ও সংগঠন ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বঙ্গমাতা পরিষদ এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বঙ্গমাতা পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন পল্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
তারা যতোই আন্দোলন করে জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করে। তাই তাদের সব আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
আর আন্দোলনে যারা ব্যর্থ হয়, নির্বাচনে তারা কখনো জয়ী হতে পারে না। সেটা প্রমাণ হয়েছে ২০১৮ সালের নির্বাচনে। এই নির্বাচনে ব্যর্থতার কারণটা কী? আমি বিএনপিকে বলবো তাদেরই ভেবে দেখতে। কারণ তারা যে অপকর্মগুলো করেছে, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, শুধু সন্ত্রাস, লুটপাট, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা এবং ব্যাপক হারে মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে তাদের এই ভরাডুবি। একই আসনের জন্য সকালে একজন, দুপুরে একজন ও বিকালে একজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়। তাদের অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের দুঃখের কথা বলেছেন। একজন তো আমাদের দলে জয়েন করলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির যেসব প্রার্থী উইনেবল ছিল তারা কেউই মনোনয়ন পাননি। টাকা বেশি না দিতে পারায় তারা মনোনয়ন পাননি।
সকালে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়, তার চেয়ে বেশি টাকা দেয়ার পর দুপুরে আরেকজন মনোনয়ন পান। বিকালে তার চেয়ে বেশি টাকা পাওয়ায় সকাল ও দুপুরের প্রার্থী মনোনয়ন থেকে আউট হয়ে যান। এভাবে যে দল মনোনয়ন দেয় তাদের জনগণ কেন ভোট দেবে? প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মনোনয়ন দিয়েছে উচ্চ আদালত থেকে নিষিদ্ধ হওয়া জামায়াতে ইসলামীকে। এই দলের ২৫ জন মনোনয়ন পেয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। তারা কখনো যুদ্ধাপরাধীকে ভোট দেবে না। যারা রাজনীতি না করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায় তারা কীভাবে আশা করে দেশের মানুষ তাদের মেনে নেবে। এই দেশের মানুষ বিএনপিকে অতীতে কখনো মেনে নেয়নি, এখনো মেনে নেয় নাই আর ভবিষ্যতেও মেনে নেবে না। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার নিয়ে সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অনেকে এই ভোটের হার নিয়ে সমালোচনা করছেন, তারা যদি একটু তুলনাটা দেখেন তাহলে দেখবেন ২০০৮ সালে এর চেয়েও বেশি ভোট পড়েছিল। ৮৬ ভাগ। কোনো কোনো কেন্দ্রে ৯০ ভাগের বেশি ভোট পড়েছিল।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, তার স্বপ্নগুলো পূরণে এখন কাজ করতে হবে। দেশে একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই মানুষের জন্য কিছু করে। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য যারা ক্ষমতায় ছিল তারা জনগণের জন্য কিছু করেনি। মানুষের কথা ভাবেনি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী পাঁচ বছর আমাদের জন্য কঠিন পরীক্ষা। যে উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছি, সেটা অব্যাহত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাদের ওপর আস্থা-বিশ্বাস রেখেছে। এই বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো এই বিশ্বাস আমাদের আছে। তিনি বলেন, আজ জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই। তার আদর্শ বুকে নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই, এ দেশের যে উন্নতি আমরা করেছি, সেটা যেন অব্যাহত থাকে।
বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলীয় সভাপতি বলেন, জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়লে দেখবেন, একজন মানুষ তার জীবনে জনগণের জন্য কতখানি ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন। ‘কারাগারে রোজনামচা’ পড়লেও দেখবেন, কীভাবে তিনি ত্যাগ স্বীকার করেছেন মানুষের জন্য।
এ সময় ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন নিয়ে ‘সিক্রেটস অব ডক্যুমেন্টস’ বইয়ের প্রকাশিত খণ্ডগুলোও নেতাকর্মীদের পড়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, আজ এদেশের মানুষ পেট ভরে ভাত খাবে, তাদের বাসস্থান হবে, চিকিৎসা, শিক্ষার সুযোগ হবে, মানুষ উন্নত জীবন পাবে- এটাই তো ছিল জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য, একমাত্র উদ্দেশ্য। একটা দেশের জনগণ সবসময় বঞ্চিত ছিল, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি মহৎ আত্মত্যাগ করে গেছেন। সেই আত্মত্যাগ আমাদের ভুললে চলবে না। আমাদের সেটাই অনুসরণ করে চলতে হবে। দেশের মানুষ যদি ভালো থাকে, দেশের মানুষ যদি সুন্দর জীবন পায়, এরচেয়ে বড় সার্থকতা একজন রাজনীতিবিদের জীবনে আর কিছু হতে পারে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা দেখে যেতে পারলেন না। কিন্তু আমি এটা সবসময় বিশ্বাস করি, নিশ্চয়ই তিনি যে দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবেসেছেন, হয়তো তিনি আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন, এই বাংলাদেশের ৫৪ হাজার বর্গমাইলজুড়ে তিনি আছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা এ সময় আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, ‘আমি জানি না। সেটা আমি উপলব্ধি করতে পারি, তিনি আছেন। নইলে আমার পক্ষে এত দ্রুত দেশের উন্নতি করা বা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে এতটা অর্জন করা কখনোই সম্ভব হতো না। আমি সবসময় মনে করি, আমার মা-বাবা আমাকে সবসময় ছায়া দিয়ে রেখেছেন বলেই আজকে এটা সম্ভব হচ্ছে। নিশ্চয় তিনি বেহেশতে বসে সব দেখছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন এবং ২০২০ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের সময় বাংলাদেশকে অবশ্যই একটি উন্নত দেশ হিসেবে, ক্ষুধামুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।’ ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশকে আরো উন্নত করার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে। বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে টেনে নিতে পারবে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে যেন আর কখনো যুদ্ধাপরাধী, খুনি, সন্ত্রাসী, অগ্নিসন্ত্রাসী ফিরে আসতে না পারে, দেশের মানুষকে সেভাবেই সজাগ থাকতে হবে। বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রার শুরু, জাতির পিতা যে কথা বলে গেছেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না, কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নাই, ভবিষ্যতেও পারবে না। জাতির পিতার প্রতি এটাই আমাদের ওয়াদা। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ, মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ। আলোচনা মঞ্চে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত
এদিকে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত হয়েছে। সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় তিনি সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। শেখ হাসিনা পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ফের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদনকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও ডা. দীপু মনি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন ও এনামুল হক শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর বঙ্গবন্ধু ভবন এলাকা ত্যাগ করার পর বিভিন্ন দল ও সংগঠন ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বঙ্গমাতা পরিষদ এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বঙ্গমাতা পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন পল্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
No comments