চ্যালেঞ্জ নিয়েই সিলেটের রাজপথে সার্জেন্ট হৈমন্তী by ওয়েছ খছরু
বিশ্বকবি
রবি ঠাকুরের অনন্য সৃষ্টি ‘হৈমন্তী’ চরিত্রটি। এই চরিত্রের নানা উপমা এখনো
সমাজের মানুষের কাছে আলোচিত হচ্ছে। সেই হৈমন্তী হয়তো যুগেরতালে পরিবর্তিত
হয়েছে। এখনকার হৈমন্তীরা সমাজ বিনির্মাণের কারিগর হয়ে উঠেছেন। প্রতিবাদী
পেশায়ও নেমেছেন হৈমন্তীরা। তেমনি এক ‘হৈমন্তী’ সিলেটে প্রথমবারের মতো
নেমেছেন রাস্তায়। সিলেটের রাস্তায় গুরুত্বপূর্ণ পেশা ট্রাফিক সার্জেন্ট হয়ে
প্রথম বারের মতো কাজ শুরু করেছেন হৈমন্তী সরকার। গতকাল সিলেটে হৈমন্তীর
সিলেটের প্রথম কার্যদিবস। নগরীর নাইওরপুল পয়েন্ট। সঙ্গে কয়েকজন নারী
ট্রাফিক কনস্টেবল। মূল দায়িত্বে হৈমন্তী সরকার। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট
নাইওরপুল। সবসময় ঝামেলা লেগেই থাকে। পুরুষ ট্রাফিক সার্জেন্টও হাঁপিয়ে উঠে
ওই এলাকায়। সেখানে দায়িত্ব পালন শুরু করেন হৈমন্তী। একেক করে গাড়ি যাচ্ছে
আর দাঁড়িয়ে দেখছেন হৈমন্তী। হাত নেড়ে ইশারায় গাড়ি থামাচ্ছেন আর ছেড়ে
দিচ্ছেন। দৃশ্য তো অবাক করার মতো। সিলেটের রাস্তায় এভাবে কোনো নারী
সার্জেন্টকে অতীতে দেখা যায়নি। এই শহর সিলেটে এতদিন যারাই দায়িত্ব পালন
করছেন তারা পুরুষ। বেশ স্মার্ট নারী হৈমন্তীকে দেখেই চমকে ওঠেন চালকেরা। এ
দৃশ্য তো সিলেটে অতীতে দেখা যায়নি। ট্রাফিক কন্ট্রোলও পরিচালিত হচ্ছে
স্মার্টভাবে।
এভাবে প্রায় এক ঘণ্টা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেন সার্জেন্ট হৈমন্তী সরকার। সঙ্গে থাকা নারী কনস্টেবলরা দক্ষভাবে সেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এমন সময় নাইওরপুল এলাকা দিয়ে পাড়ি দিচ্ছিল এক সিএনজি অটোরিকশা। এমন সময় হাত দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা থামালেন হৈমন্তী সরকার। কাগজ দেখতে চাইলেন। সিএনজিচালক নানা ভাবে তাকে ম্যানেজের চেষ্টা চালালেন। বললেন- ‘আমরা রাস্তায় চলি। কোনো অসুবিধা হয় না।’ নাছোড়বান্দা হৈমন্তী সরকার। কোনো কথাই শুনছেন না। কাগজ দেখাতে আবারো চালককে নির্দেশ দিলেন। চালক মোবাইল ফোনে কথা বললেন কারো সঙ্গে। এ সময় চালক হৈমন্তীর দিকে মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বললেন- ‘আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান। একটু কথা বলুন।’ সম্মান জানালেন হৈমন্তী। কথা বললেন। এরপর মোবাইল ছেড়ে দিলেন। চালকের কাছে আবারো চাইলেন কাগজ। চালক কাগজ দেখালেন। দেখলেন সার্জেন্ট হৈমন্তী সরকার। কাগজে সমস্যা আছে। একটি মামলা দিয়ে বললেন- ‘কাগজ ঠিক করতে হবে।’ হৈমন্তী থামছেন না। এবার থামালেন প্রাইভেট কার। একটি নয়, একাধিক কার। কাগজ চেক করলেন। খুব ছোটখাটো ভুল হলে সতর্ক করে দিলেন। আর যাদের কাগজে গরমিল বেশি তাদের মামলা দিয়ে দিলেন।
এভাবে গতকাল দুপুরের পর পর্যন্ত নাইওরপুল পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করলেন সার্জেন্ট হৈমন্তী সরকার। চালকদের সামলাতে হয়েছে তার। কেউ কেউ নিজের ক্ষমতা দেখাতে এখানে-ওখানে ফোন করলেন। কিন্তু আইন থেকে একটু নড়লেন না হৈমন্তী সরকার। নিজের দায়িত্ব পালনে তিনি অবিচল থাকলেন। সিলেটের রাজপথে নারী সার্জেন্ট। বিষয়টি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে গেল পরিবহন সেক্টরের মানুষের কাছে। সাংবাদিকরাও জানলেন বিষয়টি। তারাও ছুটে গেলেন নাইওরপুল পয়েন্টে। সেখানে তারা নারী সার্জেন্ট হৈমন্তীর দায়িত্ব পালনের দৃশ্য নিচ চোখে দেখলেন। কোথাও ভ্রুক্ষেপ নেই হৈমন্তীর। কাজের প্রতি অবিচল থেকে তিনি দায়িত্ব পালন করে চললেন অবিরাম। দিনশেষে হৈমন্তী ১০টি যানকে মামলা করলেন। জরিমানাও করলেন কাউকে কাউকে। সিলেট মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন ইনচার্জ আবু বকর শাওন হৈমন্তীর দায়িত্ব পালন সম্পর্কে জানালেন- এসএমপি’র কমিশনার মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া ও উপ- কমিশনার (ট্রাফিক) তোফায়েল আহমেদ এসএমপি’র ট্রাফিক বিভাগে নারী সদস্য যুক্ত করার বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। এ চ্যালেঞ্জ সফল হলে ভবিষ্যতে সিলেটের পথে আরো নারী সদস্যদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে দেখা যাবে। ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি থামানোর কাজটি চ্যালেঞ্জের মনে করলেও নিজের এ দায়িত্ব নিয়ে বেশ রোমাঞ্চিতই মনে হলো হৈমন্তী সরকারকে। সিলেটের রাজপথে প্রথমবারের মতো দায়িত্ব পালন করা নারী সার্জেন্ট হৈমন্তী সরকার জানালেন- ‘পুলিশের পেশাটাই তো চ্যালেঞ্জিং পেশা, তার মাঝে ট্রাফিক সামলানোর দায়িত্বটা আরো চ্যালেঞ্জের। তবে এ চ্যালেঞ্জটাকেই জয় করতে চাই।’ হৈমন্তী সরকার সিলেট মেট্রোপুলিশের ট্রাফিক বিভাগে যোগ দেন এক বছর আগে। মাঝে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ছিলেন। সে ছুটি শেষে গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসেন। হৈমন্তী সরকার নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সাফল্য সরকার ও অনীতা সরকারের মেয়ে। তার স্বামী যীশু দেবনাথ পেশায় একজন ব্যাংকার।
বাংলাদেশ পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে ২০১৫ সালে ২৯ জন নারীকে সার্জেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়। রাজপথে প্রথম নারী পুলিশ সার্জেন্ট বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ মনে করে পুলিশ বিভাগ ওই সব নারী সার্জেন্টদের নিয়োগ প্রদান করে। এরপর প্রাথমিকভাবে নিয়োগকৃত ২৯ জনের মধ্যে ২২ জনকে ঢাকা মহানগরের রাজপথে দায়িত্ব পালনে নামায়। তারা বেশ দক্ষতার সঙ্গে ঢাকার রাজপথে দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি সময়ে ওই ২২ জনের মধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল পাঠানো হয়। নেত্রকোনায় বাড়ি হৈমন্তীর স্বামী সিলেটের একজন ব্যাংকার। এ কারণে হৈমন্তী তার পছন্দের শহর সিলেটে এসেছেন। এখন থেকে সিলেটের রাজপথে চ্যালেঞ্জিং পেশায় থাকবেন তিনি। গতকাল দায়িত্ব পালনের প্রথম দিনই হৈমন্তী সরকার সবার সহযোগিতা চাইলেন। বললেন- ‘সবাই আইন মেনে চললে একদিন এই দেশ পাল্টে যাবে। আমরা যেন হই পাল্টে যাওয়া সময়ের সহযাত্রী।’
এভাবে প্রায় এক ঘণ্টা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেন সার্জেন্ট হৈমন্তী সরকার। সঙ্গে থাকা নারী কনস্টেবলরা দক্ষভাবে সেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এমন সময় নাইওরপুল এলাকা দিয়ে পাড়ি দিচ্ছিল এক সিএনজি অটোরিকশা। এমন সময় হাত দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা থামালেন হৈমন্তী সরকার। কাগজ দেখতে চাইলেন। সিএনজিচালক নানা ভাবে তাকে ম্যানেজের চেষ্টা চালালেন। বললেন- ‘আমরা রাস্তায় চলি। কোনো অসুবিধা হয় না।’ নাছোড়বান্দা হৈমন্তী সরকার। কোনো কথাই শুনছেন না। কাগজ দেখাতে আবারো চালককে নির্দেশ দিলেন। চালক মোবাইল ফোনে কথা বললেন কারো সঙ্গে। এ সময় চালক হৈমন্তীর দিকে মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বললেন- ‘আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান। একটু কথা বলুন।’ সম্মান জানালেন হৈমন্তী। কথা বললেন। এরপর মোবাইল ছেড়ে দিলেন। চালকের কাছে আবারো চাইলেন কাগজ। চালক কাগজ দেখালেন। দেখলেন সার্জেন্ট হৈমন্তী সরকার। কাগজে সমস্যা আছে। একটি মামলা দিয়ে বললেন- ‘কাগজ ঠিক করতে হবে।’ হৈমন্তী থামছেন না। এবার থামালেন প্রাইভেট কার। একটি নয়, একাধিক কার। কাগজ চেক করলেন। খুব ছোটখাটো ভুল হলে সতর্ক করে দিলেন। আর যাদের কাগজে গরমিল বেশি তাদের মামলা দিয়ে দিলেন।
এভাবে গতকাল দুপুরের পর পর্যন্ত নাইওরপুল পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করলেন সার্জেন্ট হৈমন্তী সরকার। চালকদের সামলাতে হয়েছে তার। কেউ কেউ নিজের ক্ষমতা দেখাতে এখানে-ওখানে ফোন করলেন। কিন্তু আইন থেকে একটু নড়লেন না হৈমন্তী সরকার। নিজের দায়িত্ব পালনে তিনি অবিচল থাকলেন। সিলেটের রাজপথে নারী সার্জেন্ট। বিষয়টি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে গেল পরিবহন সেক্টরের মানুষের কাছে। সাংবাদিকরাও জানলেন বিষয়টি। তারাও ছুটে গেলেন নাইওরপুল পয়েন্টে। সেখানে তারা নারী সার্জেন্ট হৈমন্তীর দায়িত্ব পালনের দৃশ্য নিচ চোখে দেখলেন। কোথাও ভ্রুক্ষেপ নেই হৈমন্তীর। কাজের প্রতি অবিচল থেকে তিনি দায়িত্ব পালন করে চললেন অবিরাম। দিনশেষে হৈমন্তী ১০টি যানকে মামলা করলেন। জরিমানাও করলেন কাউকে কাউকে। সিলেট মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন ইনচার্জ আবু বকর শাওন হৈমন্তীর দায়িত্ব পালন সম্পর্কে জানালেন- এসএমপি’র কমিশনার মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া ও উপ- কমিশনার (ট্রাফিক) তোফায়েল আহমেদ এসএমপি’র ট্রাফিক বিভাগে নারী সদস্য যুক্ত করার বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। এ চ্যালেঞ্জ সফল হলে ভবিষ্যতে সিলেটের পথে আরো নারী সদস্যদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে দেখা যাবে। ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি থামানোর কাজটি চ্যালেঞ্জের মনে করলেও নিজের এ দায়িত্ব নিয়ে বেশ রোমাঞ্চিতই মনে হলো হৈমন্তী সরকারকে। সিলেটের রাজপথে প্রথমবারের মতো দায়িত্ব পালন করা নারী সার্জেন্ট হৈমন্তী সরকার জানালেন- ‘পুলিশের পেশাটাই তো চ্যালেঞ্জিং পেশা, তার মাঝে ট্রাফিক সামলানোর দায়িত্বটা আরো চ্যালেঞ্জের। তবে এ চ্যালেঞ্জটাকেই জয় করতে চাই।’ হৈমন্তী সরকার সিলেট মেট্রোপুলিশের ট্রাফিক বিভাগে যোগ দেন এক বছর আগে। মাঝে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ছিলেন। সে ছুটি শেষে গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসেন। হৈমন্তী সরকার নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সাফল্য সরকার ও অনীতা সরকারের মেয়ে। তার স্বামী যীশু দেবনাথ পেশায় একজন ব্যাংকার।
বাংলাদেশ পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে ২০১৫ সালে ২৯ জন নারীকে সার্জেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়। রাজপথে প্রথম নারী পুলিশ সার্জেন্ট বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ মনে করে পুলিশ বিভাগ ওই সব নারী সার্জেন্টদের নিয়োগ প্রদান করে। এরপর প্রাথমিকভাবে নিয়োগকৃত ২৯ জনের মধ্যে ২২ জনকে ঢাকা মহানগরের রাজপথে দায়িত্ব পালনে নামায়। তারা বেশ দক্ষতার সঙ্গে ঢাকার রাজপথে দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি সময়ে ওই ২২ জনের মধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল পাঠানো হয়। নেত্রকোনায় বাড়ি হৈমন্তীর স্বামী সিলেটের একজন ব্যাংকার। এ কারণে হৈমন্তী তার পছন্দের শহর সিলেটে এসেছেন। এখন থেকে সিলেটের রাজপথে চ্যালেঞ্জিং পেশায় থাকবেন তিনি। গতকাল দায়িত্ব পালনের প্রথম দিনই হৈমন্তী সরকার সবার সহযোগিতা চাইলেন। বললেন- ‘সবাই আইন মেনে চললে একদিন এই দেশ পাল্টে যাবে। আমরা যেন হই পাল্টে যাওয়া সময়ের সহযাত্রী।’
No comments