রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: ওদের এখনো দুর্বিষহ জীবন by এমএম মাসুদ ও হাফিজ উদ্দিন
ঢাকার
অদূরে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে ভয়াবহ রানা প্লাজা ভবন ধসের ৫ বছর পূর্তি
হলো আজ। ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিলের ওই দুর্ঘটনায় মারা যায় ১১৩৬ জন। তবে
প্রাণে বেঁচে যাওয়া আহত অনেক শ্রমিকই আগের চেয়েও দুঃসহ জীবনযাপন করছেন।
চিকিৎসার পেছনে পাওয়া ক্ষতিপূরণের সমস্ত টাকাই খরচ হয়ে গেছে । এছাড়া
দুর্ঘটনার পর এখনো অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। পাশাপাশি শারীরিক ও
মানসিক কারণে তাদের অর্ধেকই বেকার জীবনযাপন করছেন। গতকাল সাভার এলাকার
আশেপাশের বেশ কয়েক জন আহত শ্রমিকের সঙ্গে কথা বললে তারা এসব তথ্য জানান।
আহতরা বলেছেন, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সরকারি কিছু অনুদান পেলেও এর সিংহভাগই চলে গেছে চিকিৎসা ব্যয়ে। এর মধ্যে অনুদান পেয়ে কেউ কেউ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও জীবনের কঠিন বাস্তবতায় তারা হেরে যাওয়ার পথে। আগামীর দিনগুলো কীভাবে কাটবে, কীভাবে সংসার চলবে, চিকিৎসার ব্যয় কোথা থেকে আসবে, এসব চিন্তা আর মানসিক যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত তাড়া করছে তাদের। এছাড়া গত ৫ বছরে এখনো আহতরা পায়নি প্রয়োজনীয় আর্থিক ক্ষতিপূরণ। ফলে অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিতে না পারায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না তারা।
ভবন ধসের পর কনক্রিটের বিমের নিচে আটকা পরে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন নিলুফা বেগম। কিন্তু হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হলেও বেঁচে ফিরেছিলেন তিনি। এখন অবশ্য ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলেই ভালো হতো বলে মনে করেন তিনি। কিন্তু পাঁচ বছর পেরোনোর পর যখন সংসার টানতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে, তখন নিলুফার মধ্যে প্রায় মনের মধ্যে উঁকি দেয় ভয়াবহতম ওই দুর্ঘটনা থেকে কেনো বেঁচে ফিরলেন এমন প্রশ্ন।
৩৮ বছর বয়সী নিলুফার জানালেন তার করুণ কাহিনী। বললেন, উপার্জন করে আমিই আমার পরিবারে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু এখন আমার হাতে নিয়মিত কাজ নেই। রানা প্লাজার ঘটনার পর যা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলাম তার প্রায় বেশিরভাগই আমার চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হয়েছে। দুর্ঘটনার পর আগের মতো কাজ করতে পারি না। তাই তার আয় নেই বললেই চলে। মাঝে মাঝে মনে হয় কেন বেঁচে গেলাম!
রানা প্লাজা ভবনের আটতলায় প্যান্টন এ্যাপারেলস লি.-এ সুইং অপারেটর হিসেবে সাড়ে পাঁচ বছর কাজ করেছেন তিনি। তার ও স্বামীর আয়ে ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু ঘটনার দিন থেকে তার স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে যায়। ভেঙে যায় স্বপ্নের দুনিয়া। ঘটনার আগের দিন জানতে পারেন ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ কারণে কাজে যেতে চাননি তিনি। কিন্তু সুপারভাইজারের ফোন আর বেতনের হুমকি সহ্য করতে না পেরে কাজে যেতে বাধ্য হন। সেই যাওয়াই যে তার পুরো জীবন নদীর স্রোতকে উজানে বইবে দেবে-তা কে জানতো? আহত হওয়ার পর থেকে একমাত্র ছেলে এবং স্বামীর সঙ্গে সাভার পৌর এলাকার পশ্চিম রাজাশন মহল্লার আয়াত আলী মার্কেটে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন তিনি।
দুর্ঘটনার সময় তার পায়ের উপরে একটি বিম পড়ে যায়। সেই বিমের আঘাতে ডান পা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। সাড়ে নয় ঘণ্টা পর নিলুফাকে উদ্ধার করে নেয়া হয়েছিল এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে ন্যাশনাল মেডিকেল, বারডেম, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। এরই মাঝে গত ৫ বছরে তিনি পায়ের চিকিৎসায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, হেলটন হাসপাতাল, গণস্বাস্থ্য ও সিআরপিতে ছুটেছেন। কিন্তু সুস্থ হয়ে ওঠেনি সেই পা। হাঁটতে পারেন না। প্রতিদিন ব্যথা ওঠে পায়ের আঘাতপ্রাপ্ত জায়গাগুলোতে। বর্তমানে সেই পায়ে পচন ধরার উপক্রম। চিকিৎসকরা সেই পা কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন নিলুফারকে। কিন্তু টাকার কারণে সেটিও করতে পারছেন না আহত এই নারী। পা ছাড়া অচল এই মানুষটি এখন প্রতিনিয়ত স্ক্র্যাচে করে হাঁটাচলা করেন। তাও বড় কষ্টের আর যন্ত্রণার। নিলুফার সঙ্গে কথা বলার সময় অঝোরে চোখের পানি ঝরছিল তার।
বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিইবা লাভ এসব কথা কইয়া?’ বলেই থেমে গেলেন। এরপর বললেন, ‘চলতি মাসের ১৫ দিন থাইক্যা কিডনির সমস্যায় ভুগতাছি। পা-টাও ব্যথা করে। গত ৫ বছর ধইরা জেলখানায় আটকাইয়া আছি। এর চাইতে আমার মরণই ভালা আছিল। চোখের পানি ঝরছে আর কথাগুলো আনমনে বলেই যাচ্ছেন নিলুফা।
কত টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, এর জবাবে নিলুফা বলেন, দুর্ঘটনার পর সরকার ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ৩ লাখ ৩০ টাকা পাই। এখান থেকে ৭৬ হাজার টাকা দিয়ে স্বামী শহীদুল ইসলামকে সংসার চালানোর জন্য দোকান ধরিয়ে দেই। বছর চার না ঘুরতেই সেই দোকানের মালামাল এখন শূন্য হয়ে পড়েছে। শুধু চা আর বিস্কুট বিক্রি করে যা আসে তাতেই নিলুফার সংসারে তার মা, স্বামী ও একমাত্র সন্তানের দু’মুঠো ভাত জোটানো কষ্টের হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে পাওনা টাকার সবটাই হারিয়ে এখন নিঃস্ব নিলুফা।
দুই বছর আগে বিজিএমইএতে তার স্বামী শহীদুল ইসলাম ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য যোগাযোগ করেছিলেন। তখন বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল সামনের বছরের এপ্রিলে প্রত্যেক আহত শ্রমিকের জন্য বরাদ্দকৃত সাড়ে আট লাখ টাকা দেয়া হবে। কিন্তু সেই এপ্রিল আর নিলুফার জীবনে ফিরে আসেনি।
তার স্বামী শহীদুল ইসলাম জানালেন, দুর্ঘটনার আগে নিলুফা প্রতি মাসে কাজ করে পেতেন আট থেকে দশ হাজার টাকা। এ নিয়ে ভালোই চলছিল তাদের সংসার। এখন তাদের সংসারে দৈনিক ১০০ টাকা আসা মানেই অনেক। গেল পাঁচ বছরে নিলুফার চিকিৎসায় প্রায় চার লাখ টাকার উপরে ব্যয় হয়েছে। পাশাপাশি নিলুফা তার বাবার বাড়ির জমি বন্ধক রেখে ৫৫ হাজার টাকা নিয়ে এসেছিলেন। তাও চিকিৎসার ব্যয়ে খরচ করেছেন। এছাড়া গত দুই বছরে সংসার ও তার চিকিৎসার খরচ চালাতে দুই লাখ টাকার মতো ঋণ করেছেন তার স্বামী। এরপরও সেই আঘাতপ্রাপ্ত পা ভালো হয়নি বলে জানালেন তার স্বামী শহীদুল।
নিলুফার স্বামী শহীদুল বলেন, রানা প্লাজার পর অচল হইয়া গেছি, আমার এখনকার অবস্থা ভিক্ষা করার মতো। নিলুফা তো সাড়ে তিন লাখ টাকা পেয়েছিলেন। নিলুফার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার সিংড়ায়। একমাত্র ছেলে (১১)কে পড়ালেখা করাইতে পারছি না। সবাই স্কুল ড্রেস বানিয়ে দিয়েছে, আমি এখনো ছেলের স্কুল ড্রেস দিতে পারিনি। মাস্টাররা বকাঝকা করে। মাঝে মধ্যে পোশাকের জন্য ছেলের স্কুলে লজ্জা পেতে হয়। নিলুফা বলেন, ক্ষতিপূরণের জন্য উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় সাংসদের কার্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেছি। কোথাও কোনো সহযোগিতা পাইনি। হাত-পা থাকতেও আহত অনেকে ১০-২০ লাখ টাকা পাইছে। আমি শুধু বিকাশ এবং প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এক লাখ টাকার চেকসহ তিন লাখ ত্রিশ হাজার টাকা পেয়েছি। এরই মধ্যে যা টাকা পেয়েছি তারচেয়ে অনেক বেশি চিকিৎসার পেছনে খরচ হয়েছে। বাকি টাকা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ করেছি। প্রতিমাসে প্রায় দুই হাজার টাকা দোকান ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু দোকানে কোনো মালামাল না থাকায় বেচাকেনাও নেই।
আপনাদের কাছে আমার একটাই দাবি, আমি যেন একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বাঁচতে পারি। তা না হলে আমি পরিবারসহ বিষ খেয়ে মরে যাবো। মাসের ২০ তারিখ চলে গেছে এখনো ঘর ভাড়া দিতে পারিনি। গত মাসে দশ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। কিন্তু এখন আমার কাছে এক টাকাও নেই। ওষুধ কিনে টাকা শেষ। আরেক হতভাগা শ্রমিক হালিমা বেগম। রানা প্লাজার আটতলায় থাকা নিউ ওয়েব স্টাইল লিমিটেড কারখানায় অপারেটর পদে কাজ করতেন। ভবন ধসের ঘটনায় নাকের হাড়, ডান পা ও মাথাসহ শরীরের নানা স্থানে আঘাত পান। ভবন ধসের পর তিনি যে পরিমাণ টাকা অনুদান পেয়েছেন তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি টাকা চিকিৎসার জন্য ব্যয় করেছেন তিনি। তাই তিনি আর কারো কোনো আশ্বাস শুনতে চান না। তার প্রাপ্য ক্ষতিপূরণটুকু পেলেই তিনি খুশি। পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপির সহায়তায় একটি দোকান দিয়ে কোনো রকমে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন এই নারী।
শ্রমিক জুয়েল শেখ রানা প্লাজার ৪র্থ তলার প্যান্টম এ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানায় কাজ করতেন। বিয়ের পর গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুর থানার ইদিলপুর গ্রাম ছেড়ে জীবিকার তাগিদে পরিবার নিয়ে কাজের সন্ধানে আসেন সাভারে। অনেক ঘুরে-ফিরে ফিনিশিং আয়রনম্যান হিসেবে কাজ জুটিয়ে নেন রানা প্লাজায়। ভবন ধসের প্রায় ২৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার হন তিনি। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নেন। এছাড়া সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি’র) সহায়তায় একটি মুদি দোকান করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন তিনি। দুই মেয়ে মনিরা (৯), জান্নাত (৫) ও স্ত্রীকে নিয়ে সাভারের চাপাইন এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। দোকানের নাম দিয়েছেন জান্নাত-মনিরা স্টোর। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় পুঁজি থেকে ঘাটতি যাচ্ছে তার। এছাড়া পায়ে সমস্যার কারণে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতেও পারেন না জুয়েল শেখ। স্ক্র্যাচ দিয়ে হাঁটতে গেলেও পায়ের রগে টান লাগে। রাতে ঘুমের মধ্যেও আতঙ্কিত হয়ে জেগে উঠেন তিনি। এছাড়া বড় কোনো শব্দ হলেও ভয় পান। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সহায়তা প্রদানসহ তিনি সরকারের কাছে উপযুক্ত চিকিৎসা সেবাও দাবি করেছেন পঙ্গু হয়ে বেঁচে থাকা জুয়েল শেখ।
ফ্যান্টম এ্যাপারেলস কারখানার আহত শ্রমিক মিনু আক্তার। ভবন ধসের তিন দিন পর তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার হন। ভবন ধসের সময় কানের পর্দা ফেটে যাওয়াসহ মাথা ও শরীরের বিভিন্নস্থানে মারাত্মক আঘাত পান তিনি। সামান্য নাম মাত্র সহায়তা পেলেও উন্নত চিকিৎসা সেবা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা পাননি তিনি। ধসের ৫ বছর পরও মিনু অন্য অনেক শ্রমিকের মতো সঠিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানিয়েছেন।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, দেশে অনেক সময়ই অনেক অপরাধের বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে করা হয়। যেমন সিলেটের শিশু রাজন হত্যা মালার বিচারকাজ দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে করা হলো। অথচ রানা প্লাজা ধসে নিহত ও আহতের ঘটনায় জড়িত দায়ীদের বিচারকাজ বিশেষ ট্রাইবুনালে না হওয়াটা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন এই শ্রমিক নেতা। শ্রমিকদের এখন একটাই প্রাণের দাবি আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ সরকার বা বিজেএমইএ’র পক্ষ থেকে যেন তাদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। সেই সঙ্গে ভবন ধসের ঘটনায় প্রধান আসামি সোহেল রানাসহ সকল দোষীকে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে ধসে পড়ে ৯ তলাবিশিষ্ট বহুতল ভবন রানা প্লাজা। মুহূর্তের মধ্যে পুরো ভবন দুমড়ে মুচড়ে একত্রিত হয়ে যায়। ধুলায় অন্ধকার হয়ে যায় পুরো আকাশ। প্রথমে চারদিকে ছুটোছুটি তার কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় লাশের মিছিল। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান তৈরি পোশাক শ্রমিকসহ ১১৩৬ জন লোক। আর আহত হন আরো অন্তত ২ হাজার ৪৩৮ জন হতভাগা শ্রমিক।
এদিকে গত শনিবার রানা প্লাজা ধসের ৫ বছর উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত শ্রমিকদের জন্য গঠিত তহবিলে অর্থ থাকলেও কোনো শ্রমিক তা নিতে আসছে না। ক্ষতিগ্রস্ত কোনো শ্রমিক বলতে পারবে না যে, তারা ক্ষতিপূরণ পায়নি। দুর্ঘটনায় রানা প্লাজা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছিল। এ ফান্ড থেকে ২৪০ কোটি টাকা ওই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া হয়েছে। এখনো টাকা রয়েছে কিন্তু কেউ নিতে আসে না।
এদিকে গত মঙ্গলবার একশনএইড বাংলাদেশ এক প্রতিবেদনে বলেছে, পাঁচ বছর আগে রানা প্লাজা ধসের পর প্রাণে বেঁচে গেলেও এখনো কাজ করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেননি আহত হওয়া অর্ধেক শ্রমিক। তারা বলছে, আহত শ্রমিকদের ৪৮.৭ শতাংশ এখনো কোনো কাজ করতে পারছেন না। ১২ শতাংশের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। ২২ শতাংশ শ্রমিক এখনো মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। অন্যদিকে ২১.৬ শতাংশ শ্রমিক আবারো পোশাক কারখানায় কাজে যুক্ত হতে পেরেছেন বলে একশনএইডের গবেষণায় উঠে এসেছে।
আহতরা বলেছেন, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সরকারি কিছু অনুদান পেলেও এর সিংহভাগই চলে গেছে চিকিৎসা ব্যয়ে। এর মধ্যে অনুদান পেয়ে কেউ কেউ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও জীবনের কঠিন বাস্তবতায় তারা হেরে যাওয়ার পথে। আগামীর দিনগুলো কীভাবে কাটবে, কীভাবে সংসার চলবে, চিকিৎসার ব্যয় কোথা থেকে আসবে, এসব চিন্তা আর মানসিক যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত তাড়া করছে তাদের। এছাড়া গত ৫ বছরে এখনো আহতরা পায়নি প্রয়োজনীয় আর্থিক ক্ষতিপূরণ। ফলে অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিতে না পারায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না তারা।
ভবন ধসের পর কনক্রিটের বিমের নিচে আটকা পরে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন নিলুফা বেগম। কিন্তু হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হলেও বেঁচে ফিরেছিলেন তিনি। এখন অবশ্য ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলেই ভালো হতো বলে মনে করেন তিনি। কিন্তু পাঁচ বছর পেরোনোর পর যখন সংসার টানতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে, তখন নিলুফার মধ্যে প্রায় মনের মধ্যে উঁকি দেয় ভয়াবহতম ওই দুর্ঘটনা থেকে কেনো বেঁচে ফিরলেন এমন প্রশ্ন।
৩৮ বছর বয়সী নিলুফার জানালেন তার করুণ কাহিনী। বললেন, উপার্জন করে আমিই আমার পরিবারে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু এখন আমার হাতে নিয়মিত কাজ নেই। রানা প্লাজার ঘটনার পর যা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলাম তার প্রায় বেশিরভাগই আমার চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হয়েছে। দুর্ঘটনার পর আগের মতো কাজ করতে পারি না। তাই তার আয় নেই বললেই চলে। মাঝে মাঝে মনে হয় কেন বেঁচে গেলাম!
রানা প্লাজা ভবনের আটতলায় প্যান্টন এ্যাপারেলস লি.-এ সুইং অপারেটর হিসেবে সাড়ে পাঁচ বছর কাজ করেছেন তিনি। তার ও স্বামীর আয়ে ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু ঘটনার দিন থেকে তার স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে যায়। ভেঙে যায় স্বপ্নের দুনিয়া। ঘটনার আগের দিন জানতে পারেন ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ কারণে কাজে যেতে চাননি তিনি। কিন্তু সুপারভাইজারের ফোন আর বেতনের হুমকি সহ্য করতে না পেরে কাজে যেতে বাধ্য হন। সেই যাওয়াই যে তার পুরো জীবন নদীর স্রোতকে উজানে বইবে দেবে-তা কে জানতো? আহত হওয়ার পর থেকে একমাত্র ছেলে এবং স্বামীর সঙ্গে সাভার পৌর এলাকার পশ্চিম রাজাশন মহল্লার আয়াত আলী মার্কেটে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন তিনি।
দুর্ঘটনার সময় তার পায়ের উপরে একটি বিম পড়ে যায়। সেই বিমের আঘাতে ডান পা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। সাড়ে নয় ঘণ্টা পর নিলুফাকে উদ্ধার করে নেয়া হয়েছিল এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে ন্যাশনাল মেডিকেল, বারডেম, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। এরই মাঝে গত ৫ বছরে তিনি পায়ের চিকিৎসায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, হেলটন হাসপাতাল, গণস্বাস্থ্য ও সিআরপিতে ছুটেছেন। কিন্তু সুস্থ হয়ে ওঠেনি সেই পা। হাঁটতে পারেন না। প্রতিদিন ব্যথা ওঠে পায়ের আঘাতপ্রাপ্ত জায়গাগুলোতে। বর্তমানে সেই পায়ে পচন ধরার উপক্রম। চিকিৎসকরা সেই পা কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন নিলুফারকে। কিন্তু টাকার কারণে সেটিও করতে পারছেন না আহত এই নারী। পা ছাড়া অচল এই মানুষটি এখন প্রতিনিয়ত স্ক্র্যাচে করে হাঁটাচলা করেন। তাও বড় কষ্টের আর যন্ত্রণার। নিলুফার সঙ্গে কথা বলার সময় অঝোরে চোখের পানি ঝরছিল তার।
বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিইবা লাভ এসব কথা কইয়া?’ বলেই থেমে গেলেন। এরপর বললেন, ‘চলতি মাসের ১৫ দিন থাইক্যা কিডনির সমস্যায় ভুগতাছি। পা-টাও ব্যথা করে। গত ৫ বছর ধইরা জেলখানায় আটকাইয়া আছি। এর চাইতে আমার মরণই ভালা আছিল। চোখের পানি ঝরছে আর কথাগুলো আনমনে বলেই যাচ্ছেন নিলুফা।
কত টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, এর জবাবে নিলুফা বলেন, দুর্ঘটনার পর সরকার ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ৩ লাখ ৩০ টাকা পাই। এখান থেকে ৭৬ হাজার টাকা দিয়ে স্বামী শহীদুল ইসলামকে সংসার চালানোর জন্য দোকান ধরিয়ে দেই। বছর চার না ঘুরতেই সেই দোকানের মালামাল এখন শূন্য হয়ে পড়েছে। শুধু চা আর বিস্কুট বিক্রি করে যা আসে তাতেই নিলুফার সংসারে তার মা, স্বামী ও একমাত্র সন্তানের দু’মুঠো ভাত জোটানো কষ্টের হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে পাওনা টাকার সবটাই হারিয়ে এখন নিঃস্ব নিলুফা।
দুই বছর আগে বিজিএমইএতে তার স্বামী শহীদুল ইসলাম ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য যোগাযোগ করেছিলেন। তখন বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল সামনের বছরের এপ্রিলে প্রত্যেক আহত শ্রমিকের জন্য বরাদ্দকৃত সাড়ে আট লাখ টাকা দেয়া হবে। কিন্তু সেই এপ্রিল আর নিলুফার জীবনে ফিরে আসেনি।
তার স্বামী শহীদুল ইসলাম জানালেন, দুর্ঘটনার আগে নিলুফা প্রতি মাসে কাজ করে পেতেন আট থেকে দশ হাজার টাকা। এ নিয়ে ভালোই চলছিল তাদের সংসার। এখন তাদের সংসারে দৈনিক ১০০ টাকা আসা মানেই অনেক। গেল পাঁচ বছরে নিলুফার চিকিৎসায় প্রায় চার লাখ টাকার উপরে ব্যয় হয়েছে। পাশাপাশি নিলুফা তার বাবার বাড়ির জমি বন্ধক রেখে ৫৫ হাজার টাকা নিয়ে এসেছিলেন। তাও চিকিৎসার ব্যয়ে খরচ করেছেন। এছাড়া গত দুই বছরে সংসার ও তার চিকিৎসার খরচ চালাতে দুই লাখ টাকার মতো ঋণ করেছেন তার স্বামী। এরপরও সেই আঘাতপ্রাপ্ত পা ভালো হয়নি বলে জানালেন তার স্বামী শহীদুল।
নিলুফার স্বামী শহীদুল বলেন, রানা প্লাজার পর অচল হইয়া গেছি, আমার এখনকার অবস্থা ভিক্ষা করার মতো। নিলুফা তো সাড়ে তিন লাখ টাকা পেয়েছিলেন। নিলুফার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার সিংড়ায়। একমাত্র ছেলে (১১)কে পড়ালেখা করাইতে পারছি না। সবাই স্কুল ড্রেস বানিয়ে দিয়েছে, আমি এখনো ছেলের স্কুল ড্রেস দিতে পারিনি। মাস্টাররা বকাঝকা করে। মাঝে মধ্যে পোশাকের জন্য ছেলের স্কুলে লজ্জা পেতে হয়। নিলুফা বলেন, ক্ষতিপূরণের জন্য উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় সাংসদের কার্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেছি। কোথাও কোনো সহযোগিতা পাইনি। হাত-পা থাকতেও আহত অনেকে ১০-২০ লাখ টাকা পাইছে। আমি শুধু বিকাশ এবং প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এক লাখ টাকার চেকসহ তিন লাখ ত্রিশ হাজার টাকা পেয়েছি। এরই মধ্যে যা টাকা পেয়েছি তারচেয়ে অনেক বেশি চিকিৎসার পেছনে খরচ হয়েছে। বাকি টাকা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ করেছি। প্রতিমাসে প্রায় দুই হাজার টাকা দোকান ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু দোকানে কোনো মালামাল না থাকায় বেচাকেনাও নেই।
আপনাদের কাছে আমার একটাই দাবি, আমি যেন একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বাঁচতে পারি। তা না হলে আমি পরিবারসহ বিষ খেয়ে মরে যাবো। মাসের ২০ তারিখ চলে গেছে এখনো ঘর ভাড়া দিতে পারিনি। গত মাসে দশ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। কিন্তু এখন আমার কাছে এক টাকাও নেই। ওষুধ কিনে টাকা শেষ। আরেক হতভাগা শ্রমিক হালিমা বেগম। রানা প্লাজার আটতলায় থাকা নিউ ওয়েব স্টাইল লিমিটেড কারখানায় অপারেটর পদে কাজ করতেন। ভবন ধসের ঘটনায় নাকের হাড়, ডান পা ও মাথাসহ শরীরের নানা স্থানে আঘাত পান। ভবন ধসের পর তিনি যে পরিমাণ টাকা অনুদান পেয়েছেন তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি টাকা চিকিৎসার জন্য ব্যয় করেছেন তিনি। তাই তিনি আর কারো কোনো আশ্বাস শুনতে চান না। তার প্রাপ্য ক্ষতিপূরণটুকু পেলেই তিনি খুশি। পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপির সহায়তায় একটি দোকান দিয়ে কোনো রকমে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন এই নারী।
শ্রমিক জুয়েল শেখ রানা প্লাজার ৪র্থ তলার প্যান্টম এ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানায় কাজ করতেন। বিয়ের পর গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুর থানার ইদিলপুর গ্রাম ছেড়ে জীবিকার তাগিদে পরিবার নিয়ে কাজের সন্ধানে আসেন সাভারে। অনেক ঘুরে-ফিরে ফিনিশিং আয়রনম্যান হিসেবে কাজ জুটিয়ে নেন রানা প্লাজায়। ভবন ধসের প্রায় ২৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার হন তিনি। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নেন। এছাড়া সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি’র) সহায়তায় একটি মুদি দোকান করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন তিনি। দুই মেয়ে মনিরা (৯), জান্নাত (৫) ও স্ত্রীকে নিয়ে সাভারের চাপাইন এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। দোকানের নাম দিয়েছেন জান্নাত-মনিরা স্টোর। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় পুঁজি থেকে ঘাটতি যাচ্ছে তার। এছাড়া পায়ে সমস্যার কারণে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতেও পারেন না জুয়েল শেখ। স্ক্র্যাচ দিয়ে হাঁটতে গেলেও পায়ের রগে টান লাগে। রাতে ঘুমের মধ্যেও আতঙ্কিত হয়ে জেগে উঠেন তিনি। এছাড়া বড় কোনো শব্দ হলেও ভয় পান। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সহায়তা প্রদানসহ তিনি সরকারের কাছে উপযুক্ত চিকিৎসা সেবাও দাবি করেছেন পঙ্গু হয়ে বেঁচে থাকা জুয়েল শেখ।
ফ্যান্টম এ্যাপারেলস কারখানার আহত শ্রমিক মিনু আক্তার। ভবন ধসের তিন দিন পর তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার হন। ভবন ধসের সময় কানের পর্দা ফেটে যাওয়াসহ মাথা ও শরীরের বিভিন্নস্থানে মারাত্মক আঘাত পান তিনি। সামান্য নাম মাত্র সহায়তা পেলেও উন্নত চিকিৎসা সেবা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা পাননি তিনি। ধসের ৫ বছর পরও মিনু অন্য অনেক শ্রমিকের মতো সঠিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানিয়েছেন।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, দেশে অনেক সময়ই অনেক অপরাধের বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে করা হয়। যেমন সিলেটের শিশু রাজন হত্যা মালার বিচারকাজ দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে করা হলো। অথচ রানা প্লাজা ধসে নিহত ও আহতের ঘটনায় জড়িত দায়ীদের বিচারকাজ বিশেষ ট্রাইবুনালে না হওয়াটা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন এই শ্রমিক নেতা। শ্রমিকদের এখন একটাই প্রাণের দাবি আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ সরকার বা বিজেএমইএ’র পক্ষ থেকে যেন তাদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। সেই সঙ্গে ভবন ধসের ঘটনায় প্রধান আসামি সোহেল রানাসহ সকল দোষীকে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে ধসে পড়ে ৯ তলাবিশিষ্ট বহুতল ভবন রানা প্লাজা। মুহূর্তের মধ্যে পুরো ভবন দুমড়ে মুচড়ে একত্রিত হয়ে যায়। ধুলায় অন্ধকার হয়ে যায় পুরো আকাশ। প্রথমে চারদিকে ছুটোছুটি তার কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় লাশের মিছিল। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান তৈরি পোশাক শ্রমিকসহ ১১৩৬ জন লোক। আর আহত হন আরো অন্তত ২ হাজার ৪৩৮ জন হতভাগা শ্রমিক।
এদিকে গত শনিবার রানা প্লাজা ধসের ৫ বছর উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত শ্রমিকদের জন্য গঠিত তহবিলে অর্থ থাকলেও কোনো শ্রমিক তা নিতে আসছে না। ক্ষতিগ্রস্ত কোনো শ্রমিক বলতে পারবে না যে, তারা ক্ষতিপূরণ পায়নি। দুর্ঘটনায় রানা প্লাজা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছিল। এ ফান্ড থেকে ২৪০ কোটি টাকা ওই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া হয়েছে। এখনো টাকা রয়েছে কিন্তু কেউ নিতে আসে না।
এদিকে গত মঙ্গলবার একশনএইড বাংলাদেশ এক প্রতিবেদনে বলেছে, পাঁচ বছর আগে রানা প্লাজা ধসের পর প্রাণে বেঁচে গেলেও এখনো কাজ করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেননি আহত হওয়া অর্ধেক শ্রমিক। তারা বলছে, আহত শ্রমিকদের ৪৮.৭ শতাংশ এখনো কোনো কাজ করতে পারছেন না। ১২ শতাংশের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। ২২ শতাংশ শ্রমিক এখনো মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। অন্যদিকে ২১.৬ শতাংশ শ্রমিক আবারো পোশাক কারখানায় কাজে যুক্ত হতে পেরেছেন বলে একশনএইডের গবেষণায় উঠে এসেছে।
No comments