কিম জং উন কি পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করবেন?
উত্তর
কোরিয়াকে ‘মহান সমাজতন্ত্রী পারমাণবিক শক্তিধর’ রাষ্ট্রে পরিণত করার
লক্ষ্যে কিম জং উন যুগপৎ পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির
ডাক দিয়েছেন। তবে শনিবার সমান্তরাল অগ্রগতি বলে পরিচিত নিজের এই প্রধান
নীতি থেকে পিছু হটার ঘোষণা দিলেন তিনি। অবশ্য তিনি এ-ও বলেছেন যে, সময়
এসেছে নতুন ‘কৌশলগত পন্থা’ অবলম্বনের। দেশের সম্পদ ব্যবহার জিরে অর্থনীতি
পুনঃনির্মাণ করা প্রয়োজন।
পারমাণবিক কর্মসূচির ক্ষেত্রে তিনি শনিবার ঘোষণা দিয়েছেন যে, মিশন সম্পন্ন হয়েছে। আর আণবিক বোমা বা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। তিনি দেশটির একমাত্র জ্ঞাত পারমাণবিক পরীক্ষাস্থল বন্ধেরও ঘোষণা দিয়েছেন। কিম জং উনের মতে, ‘সমান্তরাল অগ্রগতি’র নীতির মাধ্যমে ইতিমধ্যে বিরাট বিজয় অর্জিত হয়েছে।
পারমাণবিক কর্মসূচি ছেড়ে কিমের নজর এখন অর্থনীতির দিকে। এই অবস্থান পরিবর্তনের ঘোষণা তিনি দিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের সঙ্গে পূর্ব-নির্ধারিত সাক্ষাতের কয়েকদিন আগে। যুক্তরাষ্ট্রে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হামলা চালানোর সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, কিম জং উন একটি বিষয় স্পষ্ট করছেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমনভাবে সমঝোতায় আসতে চান, যেমনটা কয়েক দশক আগে প্রতিষ্ঠিত পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন করেছিল।
তবে প্রধান প্রশ্ন হলো, কিম জং উন আদৌ তার পারমাণবিক অস্ত্র পরিত্যাগ করবেন কিনা। ঠিক এই প্রশ্নেরই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
মার্কিন এই পত্রিকাটির এক বিশ্লেষণী সংবাদে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ার নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, সঠিক প্রণোদনার বিনিময়ে পারমাণবিক অস্ত্রাগার পরিত্যাগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কিম। এই প্রণোদনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে অর্থনৈতিক সাহায্য, শান্তিচুক্তি ও ওয়াশিংটনের কাছ থেকে অন্যান্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা।
দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক একত্রীকরণ মন্ত্রী লি জং-সিওক বলেন, ‘চীনে যেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে তেমনটা চান তিনি। তিনি যেই উত্তর কোরিয়ার স্বপ্ন দেখছেন, তা তার পিতার চেয়ে আলাদা।’ তবে তিনি এ-ও বলেন যে, ‘কিম জং উনের শাসনের পারমাণবিক দিকটিই এখন পর্যন্ত আমরা দেখতে পেয়েছি। অন্য দিকটা আমরা এড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পারমাণবিক অস্ত্র পরিত্যাগ করতে রাজি। তিনি যদি নিজের জনগণকে ৩ বেলা খাবার দিয়েই সন্তুষ্ট থাকতেন, তাহলে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করতেন না।’
দক্ষিণ কোরিয়ার জ্যেষ্ঠ গবেষণা থিঙ্কট্যাঙ্ক সেজং ইন্সটিটিউটের জ্যেষ্ঠ উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ চেওং সেওং চ্যাং বলেন, কিমের এই ঘোষণা তার জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নতির প্রত্যাশা বাড়াবে। তবে উত্তর কোরিয়া অনেকদিন ধরেই বলে আসছে, দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো দরকষাকষি করা হবে না। কিম নিজেই এই অস্ত্রকে বলেছেন, ‘ন্যায়বিচারের অমূল্য তলোয়ার।’ তিনি আরও বলেন, এই পারমাণবিক অস্ত্র তার জনগণের অস্তিত্বের অধিকার রক্ষায় একটি শক্তিশালী অস্ত্র।
টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও কূটনীতি অনুষদের কোরিয়া বিশেষজ্ঞ লি সাং-উন বলেন, কিম জং উনের এই সিদ্ধান্ত স্রেফ একটি পুরনো উত্তর কোরিয়ান কৌশলের পুনরাবৃত্তি। নাটকীয় প্রতীকী ছাড়ের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ছাড় আদায় করে নেয়ার কৌশল। তিনি বলেন, ‘ইতিহাস প্রহসনের মতো নিজের পুনরাবৃত্তি ঘটায়। কিম জং উনের কৌশল নতুন কিছু নয়।’
আমেরিকান কর্মকর্তারা বলেন, অতীতে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার আলোচনায় উত্তর কোরিয়া বারবার তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ১৯৯৪ সালে এমন একটি চুক্তি ভেস্তে যায় যখন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে গোপনে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অভিযোগ তোলে। কীভাবে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মান স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে, তা নিয়ে মতদ্বৈততার জেরে ২০০৫ সালেও আরেকটি চুক্তি ধসে পড়ে। ২০১২ সালে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত করতে সম্মত হওয়ার পর উত্তর কোরিয়া দূরপাল্লার রকেট নিক্ষেপ করে!
কিম জং উনের সর্বশেষ ঘোষণার ব্যাপারে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক ফেডারেশন অব আমেরিকান সাইয়েন্টিস্টের জ্যেষ্ঠ ফেলো অ্যাডাম মাউন্ট বলেন, ‘একটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র অস্ত্রমুক্ত করতে বাধ্য হয়েছে, এমনটা নয় কিন্তু। একে বরং স্রেফ অস্ত্রনিয়ন্ত্রণ চুক্তির প্রস্তাবের মতো মনে হয়েছে।’ কিম জং উনের বিবৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটি বেশ যত্নসহকারে তৈরি করা একটি বিবৃতি। এতে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আংশিক স্থগিত করার কথা বলা হয়েছে। পুরোপুরি বাদ দেয়ার কথা বলা হয়নি। বিধিনিষেধের মধ্যেও উত্তর কোরিয়া নিজের সামর্থ্য অনেকখানি বৃদ্ধি করতে পারবে।’
তবে তিনি এ-ও বলেছেন যে, পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণাও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, প্রযুক্তিগত ও সামরিক মানের দিক থেকে, উত্তর কোরিয়া এখনও একটি অত্যাধুনিক পারমাণবিক অস্ত্রাগার নির্মাণ সম্পন্ন করতে পারেনি। ফলে কর্মসূচি পরিত্যাগের আলোচনার পাশাপাশি, তাদের অগ্রগতি থামিয়ে দেয়াটাই হবে বড় অগ্রগতি।
তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু কর্মকর্তা ও বিশ্লেষক যুক্তি দেখিয়েছেন যে, উত্তর কোরিয়ায় আরও বড় ধরণের মৌলিক এক পরিবর্তন হয়তো দেখা যাচ্ছে।
পারমাণবিক অস্ত্রের দিক থেকে কিম জং উন বিজয় অর্জনের ঘোষণা দিতে থাকেন নববর্ষের দিন দেয়া এক বক্তৃতার মাধ্যমে। তিনি ওই বক্তব্যে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনই আর এই দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ উস্কে দেওয়ার সাহস করবে না। বিজয় অর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই কূটনৈতিক পথে এগোতে শুরু করেন তিনি। কয়েকদিন আগে তিনি চীনের নেতা শি জিনপিং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ওই সাক্ষাতের পরই দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে উত্তর কোরিয়া।
শেষ পর্যন্ত কিম কী করবেন, তা অনিশ্চিত। কিছু বিশ্লেষক বলছেন, দেশকে পঙ্গু করে দেয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে অধীর হয়ে আছেন কিম। তিনি চেষ্টা করবেন পারমাণবিক কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার বিনিময়ে বড় ছাড় আদায় করতে। তবে অন্যরা বলছেন, কিম আত্মবিশ্বাসী যে, পারমাণবিক অস্ত্র থাকার কারণে দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে নতুন ট্রাম্প কার্ড রয়েছে তার হাতে।
কিম যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে গুরুতরভাবে মাথা ঘামান, তাহলে তার বিশ্বের সাহায্য প্রয়োজন হবেই। বিশ্লেষকরা এক্ষেত্রে আশির দশকে চীনের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা দেং শিয়াওপিং-এর উদাহরণ টেনে আনছেন। পশ্চিমের সঙ্গে তখন লেনদেন চালু করার ফলেই এই কয়েক বছরে চীনের অবিশ্বাস্য উত্থান ঘটেছে।
চেওং বলেন, ‘কিম জং উন আদৌ উত্তর কোরিয়ার দেং শিয়াওপিং হতে পারবেন কিনা, তা নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশটিকে পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগের বিনিময়ে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ প্রদান করে, তার ওপর।’
পারমাণবিক কর্মসূচির ক্ষেত্রে তিনি শনিবার ঘোষণা দিয়েছেন যে, মিশন সম্পন্ন হয়েছে। আর আণবিক বোমা বা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। তিনি দেশটির একমাত্র জ্ঞাত পারমাণবিক পরীক্ষাস্থল বন্ধেরও ঘোষণা দিয়েছেন। কিম জং উনের মতে, ‘সমান্তরাল অগ্রগতি’র নীতির মাধ্যমে ইতিমধ্যে বিরাট বিজয় অর্জিত হয়েছে।
পারমাণবিক কর্মসূচি ছেড়ে কিমের নজর এখন অর্থনীতির দিকে। এই অবস্থান পরিবর্তনের ঘোষণা তিনি দিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের সঙ্গে পূর্ব-নির্ধারিত সাক্ষাতের কয়েকদিন আগে। যুক্তরাষ্ট্রে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হামলা চালানোর সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, কিম জং উন একটি বিষয় স্পষ্ট করছেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমনভাবে সমঝোতায় আসতে চান, যেমনটা কয়েক দশক আগে প্রতিষ্ঠিত পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন করেছিল।
তবে প্রধান প্রশ্ন হলো, কিম জং উন আদৌ তার পারমাণবিক অস্ত্র পরিত্যাগ করবেন কিনা। ঠিক এই প্রশ্নেরই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
মার্কিন এই পত্রিকাটির এক বিশ্লেষণী সংবাদে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ার নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, সঠিক প্রণোদনার বিনিময়ে পারমাণবিক অস্ত্রাগার পরিত্যাগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কিম। এই প্রণোদনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে অর্থনৈতিক সাহায্য, শান্তিচুক্তি ও ওয়াশিংটনের কাছ থেকে অন্যান্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা।
দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক একত্রীকরণ মন্ত্রী লি জং-সিওক বলেন, ‘চীনে যেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে তেমনটা চান তিনি। তিনি যেই উত্তর কোরিয়ার স্বপ্ন দেখছেন, তা তার পিতার চেয়ে আলাদা।’ তবে তিনি এ-ও বলেন যে, ‘কিম জং উনের শাসনের পারমাণবিক দিকটিই এখন পর্যন্ত আমরা দেখতে পেয়েছি। অন্য দিকটা আমরা এড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পারমাণবিক অস্ত্র পরিত্যাগ করতে রাজি। তিনি যদি নিজের জনগণকে ৩ বেলা খাবার দিয়েই সন্তুষ্ট থাকতেন, তাহলে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করতেন না।’
দক্ষিণ কোরিয়ার জ্যেষ্ঠ গবেষণা থিঙ্কট্যাঙ্ক সেজং ইন্সটিটিউটের জ্যেষ্ঠ উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ চেওং সেওং চ্যাং বলেন, কিমের এই ঘোষণা তার জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নতির প্রত্যাশা বাড়াবে। তবে উত্তর কোরিয়া অনেকদিন ধরেই বলে আসছে, দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো দরকষাকষি করা হবে না। কিম নিজেই এই অস্ত্রকে বলেছেন, ‘ন্যায়বিচারের অমূল্য তলোয়ার।’ তিনি আরও বলেন, এই পারমাণবিক অস্ত্র তার জনগণের অস্তিত্বের অধিকার রক্ষায় একটি শক্তিশালী অস্ত্র।
টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও কূটনীতি অনুষদের কোরিয়া বিশেষজ্ঞ লি সাং-উন বলেন, কিম জং উনের এই সিদ্ধান্ত স্রেফ একটি পুরনো উত্তর কোরিয়ান কৌশলের পুনরাবৃত্তি। নাটকীয় প্রতীকী ছাড়ের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ছাড় আদায় করে নেয়ার কৌশল। তিনি বলেন, ‘ইতিহাস প্রহসনের মতো নিজের পুনরাবৃত্তি ঘটায়। কিম জং উনের কৌশল নতুন কিছু নয়।’
আমেরিকান কর্মকর্তারা বলেন, অতীতে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার আলোচনায় উত্তর কোরিয়া বারবার তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ১৯৯৪ সালে এমন একটি চুক্তি ভেস্তে যায় যখন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে গোপনে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অভিযোগ তোলে। কীভাবে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মান স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে, তা নিয়ে মতদ্বৈততার জেরে ২০০৫ সালেও আরেকটি চুক্তি ধসে পড়ে। ২০১২ সালে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত করতে সম্মত হওয়ার পর উত্তর কোরিয়া দূরপাল্লার রকেট নিক্ষেপ করে!
কিম জং উনের সর্বশেষ ঘোষণার ব্যাপারে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক ফেডারেশন অব আমেরিকান সাইয়েন্টিস্টের জ্যেষ্ঠ ফেলো অ্যাডাম মাউন্ট বলেন, ‘একটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র অস্ত্রমুক্ত করতে বাধ্য হয়েছে, এমনটা নয় কিন্তু। একে বরং স্রেফ অস্ত্রনিয়ন্ত্রণ চুক্তির প্রস্তাবের মতো মনে হয়েছে।’ কিম জং উনের বিবৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটি বেশ যত্নসহকারে তৈরি করা একটি বিবৃতি। এতে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আংশিক স্থগিত করার কথা বলা হয়েছে। পুরোপুরি বাদ দেয়ার কথা বলা হয়নি। বিধিনিষেধের মধ্যেও উত্তর কোরিয়া নিজের সামর্থ্য অনেকখানি বৃদ্ধি করতে পারবে।’
তবে তিনি এ-ও বলেছেন যে, পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণাও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, প্রযুক্তিগত ও সামরিক মানের দিক থেকে, উত্তর কোরিয়া এখনও একটি অত্যাধুনিক পারমাণবিক অস্ত্রাগার নির্মাণ সম্পন্ন করতে পারেনি। ফলে কর্মসূচি পরিত্যাগের আলোচনার পাশাপাশি, তাদের অগ্রগতি থামিয়ে দেয়াটাই হবে বড় অগ্রগতি।
তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু কর্মকর্তা ও বিশ্লেষক যুক্তি দেখিয়েছেন যে, উত্তর কোরিয়ায় আরও বড় ধরণের মৌলিক এক পরিবর্তন হয়তো দেখা যাচ্ছে।
পারমাণবিক অস্ত্রের দিক থেকে কিম জং উন বিজয় অর্জনের ঘোষণা দিতে থাকেন নববর্ষের দিন দেয়া এক বক্তৃতার মাধ্যমে। তিনি ওই বক্তব্যে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনই আর এই দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ উস্কে দেওয়ার সাহস করবে না। বিজয় অর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই কূটনৈতিক পথে এগোতে শুরু করেন তিনি। কয়েকদিন আগে তিনি চীনের নেতা শি জিনপিং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ওই সাক্ষাতের পরই দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে উত্তর কোরিয়া।
শেষ পর্যন্ত কিম কী করবেন, তা অনিশ্চিত। কিছু বিশ্লেষক বলছেন, দেশকে পঙ্গু করে দেয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে অধীর হয়ে আছেন কিম। তিনি চেষ্টা করবেন পারমাণবিক কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার বিনিময়ে বড় ছাড় আদায় করতে। তবে অন্যরা বলছেন, কিম আত্মবিশ্বাসী যে, পারমাণবিক অস্ত্র থাকার কারণে দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে নতুন ট্রাম্প কার্ড রয়েছে তার হাতে।
কিম যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে গুরুতরভাবে মাথা ঘামান, তাহলে তার বিশ্বের সাহায্য প্রয়োজন হবেই। বিশ্লেষকরা এক্ষেত্রে আশির দশকে চীনের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা দেং শিয়াওপিং-এর উদাহরণ টেনে আনছেন। পশ্চিমের সঙ্গে তখন লেনদেন চালু করার ফলেই এই কয়েক বছরে চীনের অবিশ্বাস্য উত্থান ঘটেছে।
চেওং বলেন, ‘কিম জং উন আদৌ উত্তর কোরিয়ার দেং শিয়াওপিং হতে পারবেন কিনা, তা নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশটিকে পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগের বিনিময়ে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ প্রদান করে, তার ওপর।’
No comments