৬৮ ভাগ মানুষ চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার
দেশের
৬৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হওয়া
বাঞ্ছনীয়। তারা ব্যবস্থার পক্ষে মত দিয়েছেন। আর এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন
২৩ শতাংশ। মার্কেটিং গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিয়েলসেন-বাংলাদেশ এর এক জরীপে এ
তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের ৩০ অক্টোবর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত
এই জরিপটি পরিচালনা করে। তত্ত্বাবধান করে গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারস
ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)। গতকাল সোমবার জরিপের
ফলাফল সম্পর্কে জানা যায়। কয়েকটি অনলাইন মিডিয়ায় জরিপটি প্রকাশ করা হয়।
সংস্থাটির দাবী এই জরিপে বহুস্তরে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। দেশের ৭টি বিভাগে,
জেলা অনুযায়ী এবং গ্রাম ও শহরে ব্যক্তি পর্যায়ে ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে
সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। জরিপে অংশ নেন ২৫৫০ জন। তারা সবাই ভোটার এবং বয়স ১৮
বছরের ওপরে। সব বিভাগের ৬৪ জেলায় ২৫৫টি প্রাথমিক নমুনা ইউনিট (পিএসইউ) থেকে
তথ্য/নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গ্রামে এ ইউনিটকে মৌজা ও শহরে মহল্লা হিসেবে
সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রোব্যাবিলিটি
প্রপোরশনাল টু সাইজ (পিপিএস) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথম বাড়ি
নির্বাচনের জন্য ডেট মেথড ও যথাযথ গৃহস্থালি বাছাইয়ের জন্য পদ্ধতিগত দৈব
নমুনায়ন ব্যবহৃত হয়েছে। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী দলে নারী ও পুরুষ ছিলেন।
ভুলের (মার্জিন অব এরোর) ঝুঁকি দুইয়ের বেশি বা কম হবে না বলে জানানো হয়েছে।
জরিপে একটি প্রশ্ন ছিল, আগামী সংসদ নির্বাচনে আগে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক
সরকার ফিরিয়ে আনা কি উচিত? জবাবে ৬৮ শতাংশ মানুষ জবাব দেন ‘হ্যাঁ’ এবং ২৩
শতাংশ উত্তর দেন ‘না’। আর ৯ শতাংশ মানুষ কোনো উত্তর দেননি বা এ বিষয়ে তারা
জানেন না বলে জানিয়েছেন। এ হিসাব ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসের। অবশ্য ২০১৫
সালের জুনে একই প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ জবাব ছিল ৬৭ শতাংশ। ‘না’ জবাব ছিল ২২
শতাংশ। কোনো উত্তর দেননি বা এ বিষয়ে তারা জানেন না বলে জানান ১১ শতাংশ।
জরিপে একটি প্রশ্ন ছিল, আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশ সঠিক পথে যাচ্ছে নাকি
ভুল পথে? এর উত্তরে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে ৬৪ শতাংশ মানুষ মনে বাংলাদেশ
সঠিক পথে যাচ্ছে এবং ৩২ শতাংশ মনে করেন দেশ ভুল পথে আছে। এতে বলা হয়, ২০১৩
সালে একই সময় ৬২ শতাংশ মানুষ মনে করত দেশ ভুল যাচ্ছে। কেন সঠিক বাংলাদেশ?
এতে সাড়া দেন এক হাজার ৬৭৯ জন। উত্তরে ৭২ শতাংশ মনে করেন শিক্ষায় উন্নতি
একটা বড় কারণ। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কথা বলেছেন ১৮ শতাংশ। এ ছাড়া
মাত্র ৬ শতাংশ ভালো অর্থনীতির কথা বলেছেন। দেশ ভুল পথে যাচ্ছে কেন? এর
উত্তর দেন ৮০৪ জন। এদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ মানুষ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ৩০ শতাংশ
মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে দায়ী করেন। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে
দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ২৯ শতাংশ বলেন
খুব ভালো, ৫১ শতাংশের মন্তব্য কিছুটা ভালো এবং ৯ শতাংশ বলেন খুব খারাপ ও ১১
শতাংশ জানান কিছুটা খারাপ। একই সময়ের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্নে
২১ শতাংশ জানান খুব স্থিতিশীল ও ৪৯ শতাংশ জানান কিছুটা স্থিতিশীল। ১৩ শতাংশ
মানুষ মনে করেন খুব অস্থিতিশীল ও ৯ শতাংশ মানুষের বিবেচনায় কিছুটা
অস্থিতিশীল। রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপের কারণ জানতে চাইলে ৩৫ শতাংশ মানুষ
বলেন মারামারি, ২১ শতাংশ সহিংসতা বৃদ্ধি, ২০ শতাংশ একতরফা নির্বাচন, ২০
শতাংশ হরতাল, ৯ শতাংশ গণতন্ত্রের অভাব, ৯ শতাংশ বিরোধী দল দমনকে দায়ী করেন।
আসন্ন বছরে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়- পরিস্থিতি উন্নত
হবে, খারাপ হবে নাকি একই রকম থাকবে? ২০১৫ সালের নভেম্বরে ৫০ শতাংশ মানুষ
জবাবে বলেন পরিস্থিতি উন্নত হবে এবং ১৩ শতাংশের বিবেচনায় একই থাকবে। মাত্র
১৩ শতাংশ মানুষের মতে পরিস্থিতি খারাপ হবে এবং ২০ শতাংশের কোনো উত্তর নেই
বা জানা নেই। বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কেমন? এর উত্তরে ৩০
শতাংশ মানুষের মতে খুব ভালো এবং ৪৯ শতাংশ বলেন কিছুটা ভালো। এ ছাড়া ৭ শতাংশ
বলেন খুব খারাপ এবং ১২ শতাংশ বলেন কিছুটা খারাপ। ব্যক্তিগত আর্থিক অবস্থা
সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়- গত বছরের তুলনায় আপনার বা আপনার পরিবারের
ব্যক্তিগত আর্থিক উন্নতি হয়েছে, খারাপ হয়েছে নাকি একই রকম আছে? এর উত্তরে
৬৫ শতাংশ মানুষ বলেন উন্নতি হয়েছে, ১৮ শতাংশ বলেন খারাপ হয়েছে এবং জরিপে
অংশগ্রহণকারী ১৭ শতাংশের মতে খারাপ হয়েছে। আগামী বছরে আপনার বা আপনার
পরিবারের ব্যক্তিগত আর্থিক উন্নতি হবে, খারাপ হবে নাকি একই রকম থাকবে?
জবাবে ৭২ শতাংশ বলেন উন্নত হবে, ১০ শতাংশ মনে করেন একই রকম থাকবে এবং ৫
শতাংশ আশঙ্কা করেন খারাপ হবে। এ ছাড়া ১২ শতাংশ কোনো উত্তর দেননি। নিত্যপণ্য
(চাল, ডাল, দুধ, ডিম, মাছ) কেনার জন্য আপনি ও আপনার পরিবারের কি পর্যাপ্ত
আয় হয়? এর জবাবে ৯০ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ সুচক এবং ১০ শতাংশ ‘না’ সুচক জবাব দেন।
আপনি কি মনে করেন এখন (২০১৫ নভেম্বর) থেকে আগামী ৬ মাসে নিত্যপণ্যের দাম
বাড়বে নাকি কমবে? ১২ শতাংশ মনে করেন খুব বাড়বে, ৪৯ শতাংশের মতে কিছুটা
বাড়বে, ১২ শতাংশের বিবেচনায় একই রকম থাকবে। কয়েকটি বিষয়ে আপনি জাতীয়
সরকারের কর্মদক্ষতাকে মূল্যায়ন করবেন? শিক্ষা ঃ ৮৪ শতাংশ বলেন ভালো, ১৩
শতাংশ বলেন খারাপ। স্বাস্থ্যসেবা ঃ ৭৮ শতাংশের মতে ভালো, ১৭ শতাংশের মতে
খারাপ। অবকাঠামো উন্নয়ন ঃ ৭৩ শতাংশ বলেন ভালো, ২৫ শতাংশ বলেন খারাপ।
লৈঙ্গিক সমতা ঃ ৭২ শতাংশ ভালোর পক্ষে, ১৭ শতাংশ খারাপ। এ ছাড়া
দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে ৪৭ শতাংশ মনে করছেন সরকার ভালো করছে, আর ৪৯ শতাংশ
মনে করছে খারাপ করছে। এই বক্তব্যগুলোর প্রতিটি কোন রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে
কেমন প্রযোজ্য? এর উত্তরে ৪৮ শতাংশ মনে করেন আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রাখা
যায়, আর ২৪ শতাংশের আস্থা বিএনপির ওপর। ৫৯ শতাংশ মানুষ মনে আওয়ামী লীগে
শক্তিশালী নেতৃত্ব রয়েছে। ১৯ শতাংশের মতে বিএনপিতে এ নেতৃত্ব রয়েছে।
No comments