শহরাঞ্চলে ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন by শাহ্ আব্দুল হান্নান
বাংলাদেশের
প্রধান শহরগুলোতে ছিন্নমূলদের সংখ্যা অনেক। বিশেষ করে ঢাকায়। এরা নানা
ধরনের হয়ে থাকে- ১. ছিন্নমূল শিশু। ওরা পিতামাতার আশ্রয়ে নেই। রাস্তায়
থাকে। এরা শেষ পর্যন্ত অপরাধীতে পরিণত হয়। ২. ছিন্নমূল নারী, যাদের সাথে
শিশু থাকতে পারে, না-ও থাকতে পারে। তবে সাথে স্বামী নেই, এরাও রাস্তায়
থাকে। কোনোভাবে ভিক্ষা করে জীবন যাপন করে। ৩. ছিন্নমূল পরিবার- স্বামী,
স্ত্রী, শিশু। কোনো বাসস্থান নেই। রাস্তায় বা ঝুপরিতে থাকে। তাদেরও কোনো
নিয়মিত রোজগার নেই। নানা স্থানে কাজ করে কিছু উপার্জন করে। ৪. বস্তিবাসী,
যাদের থাকার ব্যবস্থা শোচনীয়। পানির অভাব এবং পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থা খুব
খারাপ।
প্রথম তিন ধরনের লোকেরা সাধারণত শহরে আসে নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়ে এবং মঙ্গা অঞ্চল থেকে, কাজ না পেয়ে। নদীভাঙনে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার লোক সর্বস্ব হারায় এ দেশে। তারা বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারে না। তাদের পুনর্বাসনের যথাযথ ব্যবস্থা নেই। এদের বেশির ভাগ বড় বড় শহরে চলে আসে, বিশেষ করে ঢাকায়।
নদীভাঙনের শিকার মানুষের পুনর্বাসনের একটি সমন্বিত ব্যবস্থা করতে হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় এর মূল দায়িত্বে থাকবে। তাদেরকে সমন্বয় করতে হবে পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা মন্ত্রণালয়, নারী মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে। তাদের উচিত একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যতে নদীভাঙনের শিকার লোকদের আর শহরে আসতে না হয়। তাদেরকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখতে হবে। পরে তাদের খাস জমিতে আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদেরকে কিছু আর্থিক সাহায্য দিতে হবে, যাতে তারা কোনো কাজ করে চলতে পারে।
সর্বপ্রথম উল্লিখিত পথশিশুদের শহরেই আশ্রয়কেন্দ্রে রাখতে হবে। সেখানে শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে, যাতে তারা পরবর্তীকালে কাজ করে খেতে পারে। সরকারও বড় বড় এনজিওকে এ কাজে সম্পৃক্ত করতে পারে এবং ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলকে ভাগ করে তাদের দায়িত্ব নিতে বলতে পারে। সরকার এনজিওগুলোকে সাহায্যও করতে পারে এ ক্ষেত্রে। এ ব্যবস্থা ঢাকা ছাড়া অন্যান্য প্রধান শহরেও করা যায়। জেলা ও উপজেলায় এ দায়িত্ব পৌরসভাকে দিতে হবে। সরকার তাদেরকে এ কাজে পর্যাপ্ত সাহায্য করা উচিত।
দুই নম্বরে উল্লিখিত নারীদের অবস্থা সবচেয়ে বিপজ্জনক। তারা রাস্তায় থাকার কারণে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তাদের পুনর্বাসন খুব জরুরি। তাদেরকেও এনজিও, সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে বড় শহরগুলোতে পুনর্বাসন করতে হবে। তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। ছোট শহরগুলোতে পৌরসভার মাধ্যমে পুনর্বাসন করতে হবে। তাদের বিভিন্ন কাজ শিক্ষা দিতে হবে। আর্থিক সাহায্য দিতে হবে।
তৃতীয় নম্বরে উল্লিখিত পরিবারগুলোকে তাদের গ্রামে বা উপজেলায় পুনর্বাসন করতে হবে। এর দায়িত্ব থাকবে উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার ওপর। সরকার তাদেরকে সাহায্য করবে।
সর্বশেষ, বস্তিগুলোর সার্বিক উন্নয়ন করতে হবে। বিশেষ করে পানি, পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থা ও প্রাইমারি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেক বেকার পরিবারের একজনকে বেকারভাতা দিতে হবে।
বিষয়টি অনেক ব্যাপক ও অনেক গভীর। একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা করা দরকার। আর অবহেলা করা উচিত হবে না। সরকার, সিটি করপোরেশন, এনজিও ও পৌরসভাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এ ব্যাপারে।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
প্রথম তিন ধরনের লোকেরা সাধারণত শহরে আসে নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়ে এবং মঙ্গা অঞ্চল থেকে, কাজ না পেয়ে। নদীভাঙনে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার লোক সর্বস্ব হারায় এ দেশে। তারা বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারে না। তাদের পুনর্বাসনের যথাযথ ব্যবস্থা নেই। এদের বেশির ভাগ বড় বড় শহরে চলে আসে, বিশেষ করে ঢাকায়।
নদীভাঙনের শিকার মানুষের পুনর্বাসনের একটি সমন্বিত ব্যবস্থা করতে হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় এর মূল দায়িত্বে থাকবে। তাদেরকে সমন্বয় করতে হবে পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা মন্ত্রণালয়, নারী মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে। তাদের উচিত একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যতে নদীভাঙনের শিকার লোকদের আর শহরে আসতে না হয়। তাদেরকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখতে হবে। পরে তাদের খাস জমিতে আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদেরকে কিছু আর্থিক সাহায্য দিতে হবে, যাতে তারা কোনো কাজ করে চলতে পারে।
সর্বপ্রথম উল্লিখিত পথশিশুদের শহরেই আশ্রয়কেন্দ্রে রাখতে হবে। সেখানে শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে, যাতে তারা পরবর্তীকালে কাজ করে খেতে পারে। সরকারও বড় বড় এনজিওকে এ কাজে সম্পৃক্ত করতে পারে এবং ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলকে ভাগ করে তাদের দায়িত্ব নিতে বলতে পারে। সরকার এনজিওগুলোকে সাহায্যও করতে পারে এ ক্ষেত্রে। এ ব্যবস্থা ঢাকা ছাড়া অন্যান্য প্রধান শহরেও করা যায়। জেলা ও উপজেলায় এ দায়িত্ব পৌরসভাকে দিতে হবে। সরকার তাদেরকে এ কাজে পর্যাপ্ত সাহায্য করা উচিত।
দুই নম্বরে উল্লিখিত নারীদের অবস্থা সবচেয়ে বিপজ্জনক। তারা রাস্তায় থাকার কারণে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তাদের পুনর্বাসন খুব জরুরি। তাদেরকেও এনজিও, সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে বড় শহরগুলোতে পুনর্বাসন করতে হবে। তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। ছোট শহরগুলোতে পৌরসভার মাধ্যমে পুনর্বাসন করতে হবে। তাদের বিভিন্ন কাজ শিক্ষা দিতে হবে। আর্থিক সাহায্য দিতে হবে।
তৃতীয় নম্বরে উল্লিখিত পরিবারগুলোকে তাদের গ্রামে বা উপজেলায় পুনর্বাসন করতে হবে। এর দায়িত্ব থাকবে উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার ওপর। সরকার তাদেরকে সাহায্য করবে।
সর্বশেষ, বস্তিগুলোর সার্বিক উন্নয়ন করতে হবে। বিশেষ করে পানি, পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থা ও প্রাইমারি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেক বেকার পরিবারের একজনকে বেকারভাতা দিতে হবে।
বিষয়টি অনেক ব্যাপক ও অনেক গভীর। একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা করা দরকার। আর অবহেলা করা উচিত হবে না। সরকার, সিটি করপোরেশন, এনজিও ও পৌরসভাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এ ব্যাপারে।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
No comments