ঘৃণা করতে শেখানো গেলে ভালোবাসাও শেখানো যায়
বাবার শেষ সময়টা কেমন ছিল স্মৃতির পাতা থেকে সে কথাই বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন নেলসন ম্যান্ডেলার মেয়ে মাকাজিউয়ে ম্যান্ডেলা। সারা বিশ্বের মানুষের মনে স্থান করে নেয়া এই মানুষটির মৃত্যুর সময়টিতে তার পাশে ছিলেন স্ত্রী, সন্তান, নাতি-নাতনি সবাই। আর তাই বাবার এ সময়টিকে ‘চমৎকার’ শেষ সময় বলেই অভিহিত করেছেন মাকাজিউয়ে। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘শেষ বিদায় জানানোর জন্য তার (ম্যান্ডেলার) কাছে ছিলেন স্ত্রী গ্রাসাসহ সন্তান ও নাতি-নাতনিরা। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি আমাদের কাছে পেয়েছেন। আমরা সবসময়ই তার চারপাশে ছিলাম। বৃহস্পতিবার সারাটা দিন একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা তার সঙ্গেই বসেছিলাম।’ মাকাজিউয়ে আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, গত সপ্তাহের শুক্রবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত খুবই চমৎকার একটি সময় ছিল। কেননা, আমরা সবাই সেখানে ছিলাম’। ম্যান্ডেলার প্রথম দাম্পত্য জীবনে চার সন্তানের মধ্যে একমাত্র জীবিত মেয়ে মাকাজিউয়ে। গত কয়েক মাস ধরেই তিনি বাবার খোঁজখবর রেখেছেন।
তার সঙ্গে নিয়মিত দেখাও করতেন। বাবার শেষ সময়ের বর্ণনায় ম্যাকাজিউয়ে বলেন, ‘চিকিৎসকরা যখন আমাদের বললেন, সেটা মনে হয় বৃহস্পতিবার সকালের দিকেই...তাদের আর কোনোকিছু করার নেই এবং তারা আমাকে এও বললেন যে, ‘বাকি যারা তাকে দেখতে চান এবং বিদায় জানাতে চান তাদের সবাইকে ডাকো’; সবার উপস্থিতিতে তখন সেই দিনটা খুব চমৎকারই ছিল। স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি চারদিকে ঘিরে থাকায় মনে হচ্ছিল বাবাকে যেন রাজার মতো সেনারা পাহারা দিয়ে রেখেছে।’ জীবদ্দশায় বাবার লড়াইটা কেবল রাজনৈতিক মুক্তির জন্য নয় বরং আধ্যাÍিক মুক্তির জন্যও ছিল বলে মন্তব্য করেন মাকাজিউয়ে। বাবা যে শিক্ষা দিতেন সে সম্পর্কে মাকাজিউয়ের উক্তি, ‘তিনি ক্ষমা করার সৎ সাহসের কথা বলতেন। এই ক্ষমা এক কঠিন জিনিস। আমি মনে করি, তিনি জানতেন, ক্ষমা করতে না পারলে আধ্যাত্মিক মুক্তি মিলবে না। আর তাই অন্যকে ক্ষমা করার সাহস থাকাটা আমরা তার জীবন থেকেই শিখেছি।’ ‘অন্যকে ঘৃণা করার মানসিকতা নিয়ে আমাদের কেউ পৃথিবীতে আসেনি- আমাদের ঘৃণা করতে শেখানো হয়েছে। আর মানুষকে ঘৃণা করতে শেখানো গেলে ভালোবাসতে শেখানো যায়।’ শোক, শ্রদ্ধা, প্রার্থনা আর প্রশংসার মধ্য দিয়ে এখনও ম্যান্ডেলাকে স্মরণ করছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
No comments