একটি সাক্ষাৎকারের ময়নাতদন্ত
বাংলা সাহিত্যে একসময় কবি-সাহিত্যিকদের একেকটি বন্ধুবৃত্ত ছিল। কলকাতায়ও ছিল, ঢাকায় ছিল। সমমনা ও অভিন্ন রুচিসম্পন্নদের নিয়ে গড়ে উঠত সেই বৃত্ত। ঢাকায় একসময় একটি চমৎকার বন্ধুবৃত্ত ছিল। এবং তা অটুট ছিল তাঁদের কারও কারও মৃত্যু পর্যন্ত। সেই বন্ধুবৃত্তে ছিলেন কবি আবুল হোসেন, কথাশিল্পী রশীদ করীম, কবি ও অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী এবং কবি শামসুর রাহমান।
তাঁরাই ছিলেন প্রধান, তবে কখনো তাঁদের বৈঠকে আরও কেউ যোগ দিতেন। তাঁদের কারও না কারও বাড়িতে ছুটির দিনগুলোয়, সকালের দিকে অথবা সন্ধ্যায়, তাঁরা বসতেন। দীর্ঘ আড্ডা হতো। তাঁরা সবাই ছিলেন বিদগ্ধ ও রুচিমান। শিল্প-সাহিত্য-রাজনীতি প্রভৃতি নিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক ও রুচিশীল আলোচনা হতো। কী সুন্দর ছিল সে আলোচনা! প্রচুর বিতর্ক হতো। ভিন্নমত দিতেন কেউ। কিন্তু শেষ হতো কী চমৎকারভাবে। আমার সঙ্গে তাঁদের বয়সের ব্যবধান ছিল অনেক। তা সত্ত্বেও তাঁদের প্রশ্রয়ে সেই মনোরম আড্ডায় যোগ দিতাম। তাঁদের মননশীল কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতাম। তাতে অশেষ উপকৃত হয়েছি। তাঁদের আড্ডা নিয়ে আশির দশকে দৈনিক বাংলার সাহিত্যের পাতায় একটি নিবন্ধও লিখেছিলাম। একদিন ওই মোহন আড্ডায় প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আইয়ুব খানের শাসনামলের কথা উঠল। তিনি ছিলেন সামরিক একনায়ক। সুতরাং তাঁর বিরুদ্ধেই অধিকাংশ। রশীদ করীম ভিন্নমত দিলেন। তাঁর কথা ছিল: আইয়ুব অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। মৌলিক গণতন্ত্র চালু করে রাজনীতিকে কলুষিত করেছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি করেছেন। কিন্তু প্রশাসক হিসেবে পাকিস্তানের অধিকাংশ সরকারপ্রধানের চেয়ে ছিলেন দক্ষ। তিনিই যদি সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতেন, গণতান্ত্রিক আচরণ করতেন, দেশ উপকৃত হতো। রশীদ করীমের এই বক্তব্যে খুব সাবলীলভাবে তাঁর আর তিন বন্ধু দ্বিমত করেননি। যেসব দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি রয়েছে, সেখানে যেকোনো পেশার মানুষই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে পারেন। কুড়ি শতকের দুজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন সেনাবাহিনীর জেনারেল।
তাঁরা ক্যুদেতার মাধ্যমে ক্ষমতায় যাননি। ছিলেন নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের খ্যাতিমান সমরনায়ক ছিলেন ডুইট ডেভিড আইসেনহাওয়ার। সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে তিনি ১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে হন পুনর্নির্বাচিত। বিশিষ্ট ভদ্রলোক হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল। যদিও তাঁর সময়েই যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম ও কোরিয়ার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তাঁর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের স্মৃতিকথা ক্রুসেড ইন ইউরোপ একটি অসামান্য গ্রন্থ। দুবার ক্ষমতায় থেকে ১৯৬০ সালে জন এফ কেনেডির কাছে আইসেনহাওয়ার ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। কুড়ি শতকের ফরাসি ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট ছিলেন জেনারেল শার্ল দ্য গল। তিনিও ছিলেন নির্বাচিত, ক্ষমতা জবরদখলকারী নন। বিপুল ভোটে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে চক্রান্ত করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল এইচ এম এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ক্ষমতা দখল করেন। তাঁর নিজের ভাষায়ই তাঁর ওই ক্ষমতা গ্রহণের ‘সাংবিধানিক ভিত্তি ছিল না’। ক্ষমতায় গিয়ে তিনি দল গঠন করেন। নিজের ক্ষমতাকে একটি সাংবিধানিক বা অসামরিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু জনগণ তার স্বীকৃতি দেয়নি। তাই জনরোষে তাঁকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করতে হয়। দীর্ঘ কারাবরণও করেন। কারাগার থেকেই পাঁচটি আসনে নির্বাচিত হন। তাঁর দল জাতীয় পার্টিও অনেক আসন পায়। পর পর কয়েকটি নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে,
জাতীয় পার্টি দেশের তৃতীয় বড় দল। এখন আর তাঁর পরিচিতি সামরিক স্বৈরশাসক হিসেবে নয়, গণতান্ত্রিক দলের নেতা হিসেবে। কেউ কেউ যথার্থই বলেন সাবেক স্বৈরশাসক। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক চরিত্র সম্পর্কে দেশের মানুষের ধারণা খুবই পরিষ্কার। নির্বাচন এলেই তাঁর কদর বাড়ে বড় দুই দলের কাছে। নীতি ও আদর্শগত দিক থেকে জাতীয় পার্টি বিএনপির কাছাকাছি। কিন্তু খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত পর্যায়ে দূরত্ব রয়েছে—মাঝেমধ্যে কাছাকাছি এলেও। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁর দলের ঘোষিত নীতির দূরত্ব বিরাট, কিন্তু শেখ হাসিনার সঙ্গে কিছু কারণে তাঁর সম্পর্ক কাছের। তাঁর কর্মকাণ্ড ও কথাবার্তার কারণে সংবাদমাধ্যম তাঁকে আলোচনার বিষয়বস্তু বানায়। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সময়ও তিনি আলোচিত হচ্ছেন। প্রায় নয়টি বছর তিনি দেশ শাসন করেছেন। তার পর থেকেই আছেন রাজনীতিতে। তাঁর অভিজ্ঞতা কম নয়। ক্ষমতায় যখন ছিলেন, তখন কোনো ভালো কাজ করেননি, তা-ও নয়। দেশের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জেনারেল এরশাদ প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিজানুর রহমান খানকে যে সাক্ষাৎকার দেন, তার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। সেটি সাধারণ সাক্ষাৎকার নয়। তাঁর সমর্থক ও প্রতিপক্ষের উচিত তাঁর কথাগুলো মূল্যায়ন করা।
তাঁর কিছু কথা আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক। তাঁর কিছু কথা সত্যের নিকটবর্তী নয়। কিছু কথা অসত্যও নয়। কিন্তু বিভিন্ন প্রসঙ্গে তাঁর কিছু কথা এই মুহূর্তে খুবই প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও তা অনেকের ভালো না-ও লাগতে পারে। মিজানুর রহমান খান যখন বলেন ‘আপনাকে হঠাৎ ভারতবিরোধী মনে হচ্ছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে আপনার দীর্ঘ সখ্য রয়েছে’; তখন তার জবাবে এরশাদ বলেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধু প্রতিবেশী। ইন্দিরা গান্ধী আমাকে ছেলের মতো জানতেন।... বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত যদি আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়, তাহলে সেটা ভারতের জাতীয় স্বার্থের অনুকূল হবে না। উপরন্তু শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিলে দেশের মানুষ অহেতুক ভারতবিরোধী হতে পারে।’ তাঁর এই বক্তব্য বাংলাদেশে ভারতবিরোধীদের কানে খুবই মধুর শোনাবে, পেশাদার ভারতপন্থীদের মধ্যে ক্রোধের সঞ্চার করবে, সত্যিকারের ভারতবান্ধবদের করবে বেদনাহত। জনাব খানকে জাপার নেতা আরও বলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্রসচিব আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। আমি তাঁকে বললাম, নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে এখন ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তিনি (সুজাতা সিং) বলেছেন, তাহলে কী হতে পারে। আমি বলেছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন করে সরকারের পরিবর্তন ঘটানো।’ বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে ভারতের উদ্বেগ রয়েছে এবং সেটা থাকা স্বাভাবিক। সে জন্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটকে ভারত ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই এরশাদ জানান, ভারত চায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন করে জাপা নির্বাচনকে বৈধতা দিক।
১৮ দল ক্ষমতায় গেলে জামায়াতের উত্থান ঘটবে। এই প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারের কথাবার্তা এই রকম: প্রথম আলো: ভারতের চারটি রাজ্যের নির্বাচনের পর ইঙ্গিত মিলছে, বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারে। তাহলে দুই দেশ একই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। এরশাদ: হ্যাঁ, আমরা যে কারণে বিজেপি সম্পর্কে বলতে পারি না, একইভাবে তারাও পারে না। প্রথম আলো: যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও জাতিসংঘ বিএনপিকে নিয়ে এবং ভারত বিএনপিকে বাইরে রেখেও নির্বাচন চাইছে। এই ধারণা ঠিক কি না? এরশাদ: ঠিক। তবে বিদেশিদের কেউ বাংলাদেশকে স্থিতিশীলতা দিতে পারবে না। এটা দেবে জনগণ। যেহেতু এরশাদের লজ্জা ও চক্ষুলজ্জা কম, তাই চক্ষুলজ্জাবশত যাঁরা অনেক কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন, তিনি তা বলেছেন। তাঁর এ কথা একজন দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক নেতার মতোই। বাংলাদেশে কিছু বিরক্তিকর ভারতবিরোধী রয়েছে। তাদের সংখ্যা ৪ থেকে ৫ শতাংশের বেশি হবে না। বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ মানুষই যে ভারতবিরোধী নয়, বরং ভারতবান্ধব এবং ধর্মান্ধতা ও জঙ্গিবাদবিরোধী, তা ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু পাঁচ বছর পর বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ মানুষের মনের অবস্থা কী? আজ অফিস-ফেরতা কেরানি ও ভ্যানে সবজি বিক্রেতাসহ ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ মানুষ ভারত সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব পোষণ করে। তার জন্য মহাজোট সরকারই দায়ী—তা এরশাদের মতো প্রায় সবারই ধারণা। এরশাদ যে এসব কথা এখনই প্রথম বললেন, তা নয়। গত ফেব্রুয়ারি থেকেই তিনি বলছেন। মহাজোট সরকারের কারণে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক ও ইসলামি মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটেছে। এ কথা তিনি বললেও, তিনিই শাপলা চত্বরের ধর্মান্ধদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। সেখানেই তাঁর চারিত্রিক সংহতি বা ইনটেগ্রিটির অভাব।
বছর খানেক যাবৎ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ের ওপর বর্বর আক্রমণ হচ্ছে। মন্দিরের প্রাণহীন অথচ পবিত্র প্রতিমার গায়ে আঘাত হানা হচ্ছে। কোনো দুষ্কৃতীকেই ধরা হয়নি, আইনের আওতায় এনে বিচার করে শাস্তি দেওয়া হয়নি। মহাজোটের নামজাদা অনেক নেতা যেন এই বর্বরতা উপভোগই করছেন। রাজনৈতিক অবস্থা বিচার করে সাধারণ মানুষ মনে করতে পারে, মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর ১৮-দলীয় জোটকে ক্ষমতার বাইরে রাখারই পূর্বসূচক বা পূর্বপ্রস্তুতিমূলক তৎপরতা। তাদের সেই অনুমান যদি সত্য হয়ে থাকে, তার চেয়ে বেদনাদায়ক ব্যাপার আর হতে পারে না। একে বলে গণতন্ত্র? স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বলতে দুনিয়ার শিক্ষিত মানুষ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বোঝেন এক কথা, আর বঙ্গীয় ক্ষমতাসীনেরা বোঝেন অন্য কথা। স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার অর্থ একই দলের সরকার বা একই ব্যক্তির দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকা নয়। জনগণের ইচ্ছায় নির্বিঘ্নে সরকার বদলই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা। রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে স্থির থাকাই স্থিতিশীলতা। ভারতে মিসেস গান্ধীর পর মোরারজি দেশাই ছিলেন মাত্র সোয়া দুই বছর। চরণ সিং ছয় মাসের কম। মিসেস গান্ধী আবার চার বছর। রাজীব গান্ধী পুরো মেয়াদ। ভি পি সিং এক বছরের কম। চন্দ্রশেখর মাত্র সাত মাস। নরসীমা রাওয়ের পুরো মেয়াদের পর অটল বিহারি বাজপেয়ি প্রথমবার ১৬ দিন। দেব গৌড়া ১০ মাস প্রধানমন্ত্রিত্ব করেন। তাতে ভারতের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও স্থিতি ক্ষুণ্ন হয়নি। বাংলাদেশ অন্য রকম দেশ। এখানকার সবকিছুর সংজ্ঞা অন্য রকম। দেশপ্রেমের সংজ্ঞাও। বাংলাদেশে এমন একটি মধ্যশ্রেণী গড়ে উঠেছে গত ৪০ বছরে, যার একটি ক্ষুদ্র অংশ এতই স্বার্থান্ধ যে আজ যদি বলিভিয়া বা হাইতি বাংলাদেশকে দখল করে নেয়, পরদিন তার সপক্ষে উপসম্পাদকীয় লেখার লোকের অভাব হবে না। মধ্যরাতে টক শোতে অংশগ্রহণকারী তিনজনের দুজনই থাকবেন বলিভিয়া বা হাইতির নিযুক্ত প্রশাসকের পক্ষে।
উপস্থাপকও হাত নেড়ে এমন প্রশ্ন করবেন, যেন উত্তরটা বলিভিয়া বা হাইতির পক্ষেই যায়। কারও দ্বারা নিয়োগ দেওয়া প্রশাসক আর নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী একেবারেই দুই জিনিস। কোনো সরকারকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা জনগণের হাতে থাকার নামই গণতন্ত্র। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত প্রবাসী সরকারের মহিমা ও মুক্তিসেনাদের সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে প্রাপ্ত স্বাধীনতা যদি মহাজোটের সরকারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা যে শুধু আওয়ামী লীগের জন্য ট্র্যাজেডি, তা-ই নয়; আমাদের জন্যও বেদনার। একটি প্রশ্নে আমার বিশ্বাস অবিচল, তা হলো যে জাতির জীবনে বায়ান্ন আসে, বাষট্টি আসে, উনসত্তর আসে এবং আসে মহত্তম বছর একাত্তর, সে জাতি যেকোনো ষড়যন্ত্র ও নীলনকশা নস্যাৎ করার ক্ষমতা রাখে। রাজনৈতিক নেতাদের দেশাত্মবোধ নিয়ে প্রশ্ন করার স্পর্ধা আমাদের নেই। তাঁরা ছাড়াও বাংলার রাজনীতিতে আজ পাত্রপাত্রী অনেক। মুসলমান মৌলবাদীরা জানেন না তাঁরা দেশটির শুধু নয়, ইসলামের কত ক্ষতি করছেন। পলিটিকসে নাক গলানোর আগে বাঙালির সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁদের পাঠ গ্রহণ করতে হবে। প্রগতিশীলেরা জানেন না মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে তাঁরা কতটা ব্যর্থ হয়েছেন। গত ৬৫ বছরে লাখ লাখ হিন্দু ভারতে চলে যাওয়ার পরও, বাংলাদেশে এখনো এক-দেড় কোটি হিন্দু রয়েছে। তাদের সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তা শুধু আওয়ামী লীগ বা তরীকতের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। ধর্মপন্থী মুসলমান ও হিন্দু নেতাদেরও আজ অন্তর্বীক্ষণের ও চিন্তার পুনর্গঠনের প্রয়োজন রয়েছে। জাতিগত সংখ্যালঘুদের বেদনার কথা কেউ ভাবছেন না। আজ আমরা সবার সুখ-শান্তির জন্য সামগ্রিক ব্যবস্থার যদি পুনর্গঠন না করি, প্রত্যেকের অবস্থান স্পষ্ট না করি, সমন্বয় না করি, তাহলে একতরফা নির্বাচন তো নয়ই, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনও জাতিকে সর্বনাশের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না।
No comments