আশুলিয়ায় কঠোর নিরাপত্তায় কাজে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা

আশুলিয়ায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে পোশাক কারখানাগুলোতে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণভাবে কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগ দিয়েছেন তৈরি পোশাক শ্রমিকরা। কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় শিল্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে ৩১টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। আশুলিয়ার কাঠগড়া, জিরাবো, পুকুরপাড়, নরসিংহপুর ও জামগড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি কারখানার সামনেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

এর আগে সকালে শান্তিপূর্ণভাবে প্রবেশের পর কাজে যোগ দিয়েছেন অধিকাংশ কারখানার শ্রমিকরা। তবে শিল্পকারখানায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ভাঙচুর, বহিরাগত হামলা, অযৌক্তিক দাবি, কর্মবিরতিসহ চলমান সহিংসতা, বে-আইনি ধর্মঘট, অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ২৪টি কারখানায় অনির্দিষ্টাকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে কর্র্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ৭টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে এবং কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা কাজ না করে কর্মবিরতি পালন করছে। নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বেশকিছু কারখানার মূল ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ টাঙ্গানো হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা কারখানাগুলো হলো- জহরচান্দা এলাকার রাতুল গ্রুপ, আল্পস অ্যাপারেলস লিমিটেড, জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার তাহারাত ফ্যাশন, দূর্গাপুর এলাকার ফ্যাশন ডট কম লিমিটেড, বুড়িপাড়া এলাকার ইথিক্যাল গার্মেন্টস লিমিটেড, কাঠগড়া এলাকার ডুকাটি অ্যাপারেলস লিমিটেড, আগামী অ্যাপারেলস লিমিটেড, এআর জিন্স  প্রোডিউসার লিমিটেড, জিহান গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, এআর ওয়েট প্রসেসিং লিমিটেড, ফিউচার ক্লোথিং লিমিটেড, এফজিএস ডেনিমওয়্যার লিমিটেড, আঞ্জুমান গার্মেন্টস।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, সকল শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণের সদয় অবগতির জন্য জানানো হয়, বর্তমানে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের গার্মেন্টস শিল্পকারখানায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ভাঙচুর, বহিরাগত হামলা, অযৌক্তিক দাবি, কর্মবিরতিসহ চলমান সহিংসতা, বে-আইনি ধর্মঘট, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি একইসঙ্গে শিল্পাঞ্চলে সার্বিক আতঙ্কজনক অবস্থার কারণে কারখানা পরিচালনা করার অনকূল পরিবেশ না থাকায় এবং কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণের জান-মাল ও সার্বিক নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ধারা ১৩ (১) মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ থাকবে।

জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার রাইজিং গ্রুপের অ্যাকটিভ কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার জেনারেল ম্যানেজার মো. মাহমুদ খালেদ বলেন, সকালে আমাদের কারখানার শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগদান করেছে। আমরা বিজিএমইএ ও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রমিকদের সকল দাবি মেনে নেয়ায় কোনো ধরনের অসন্তোষের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু পার্শ্ববর্তী লুসাকা গ্রুপের কারখানাসহ অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা এসে আমাদের গেটে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের ছেড়ে দিতে হয়। কারখানাটিতে কাজ করা একজন নারী শ্রমিক বলেন, আমরা কাজ করতে চাই বলেই কারখানায় আসি। কিন্তু কারখানায় কাজের পরিবেশ না থাকলে মালিকপক্ষ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিবে বলে শুনেছি। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে আমরা কী করে খাবো। আমরা চাই সরকার যেন এ বিষয়ে দ্রুত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবির জানান, শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, এপিবিএনসহ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে না ঘটে সেজন্য কঠোর নজরদারি ও টহল অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি। তবে বেশকিছু কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে এবং কিছু কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.