সরকার পতনের পর পালিয়েছেন সেই সাংবাদিক: বইয়ের রয়্যালিটির অর্থ সরকারকে দেননি
বই বিক্রি বাবদ অর্থ প্রাপ্তির প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্য টাকা পরিশোধ করেননি বিতর্কিত সাংবাদিক নাজমুল হোসেনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জার্নি মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড। মন্ত্রণালয় থেকে বারবার তাগাদা দেয়ার পরও টাকা পরিশোধ করেননি তিনি। সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হোসেনের আস্থাভাজন হওয়ায় গ্রাহ্য করেননি মন্ত্রণালয়ের একের পর এক নির্দেশনাও। অভিযুক্ত সাংবাদিক নাজমুল হোসেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সংগ্রহে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ নামের একটি বই বিক্রির সুবাদে জার্নি মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের কাছে মন্ত্রণালয়ের ২ কোটি ৫৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা পাওনা ছিল। ২০২০ সালের ৪ঠা আগস্ট নাজমুল হোসেন মন্ত্রণালয় বরাবর একটি চেক প্রদান করেন। তার প্রায় দুই বছর পরে জার্নি এক কোটি টাকা পরিশোধ করে। বাকি এক কোটি ৫৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা এখন পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়নি। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের ‘বঙ্গবন্ধু বুক কর্নার’ প্রকল্পে ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ বইটি দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য কেনা হয়। সর্বমোট ৬৫ হাজার ৭০০ কপি বই তখন মন্ত্রণালয় কিনে নেয়। যার মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে ১১ কোটি ২ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৫ টাকা। ২০১৮ সালে ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ বইটি প্রথম প্রকাশ করেছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কপিরাইট আইন অনুযায়ী বইটির বাণিজ্যিক স্বত্ব মন্ত্রণালয় অর্থাৎ সরকারের। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ২০১৯ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের ‘বঙ্গবন্ধু বুক কর্নার’ প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরেও মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত সরকারি বই হিসেবেই ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ বইটি ক্রয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর ২০২০ সালের ৩রা মার্চ সাংবাদিক নাজমুল হোসেন জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের প্রতিষ্ঠান জার্নির নামে বইটির ১০০% কপিরাইট করিয়ে নেন। অনিয়ম ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে জার্নি মাল্টিমিডিয়া ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী জার্নি মাল্টিমিডিয়া ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় যথাক্রমে ৭৭% ও ২৩% অর্থ ভাগাভাগিতে সম্মত হয়। জার্নি মাল্টিমিডিয়ার এমডি নাজমুল হোসেনের স্ত্রী শারমিন সুলতানা প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। এদিকে বইয়ের রয়্যালিটি অবশিষ্ট অর্থ ফেরত চেয়ে নাজমুল হোসেনকে বেশ কয়েকবার চিঠিও দিয়েছে মন্ত্রণালয়। ২০২৩ সালের ৩রা অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আমজাদ হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে অবশিষ্ট অর্থ ফেরত চেয়ে নাজমুলকে চিঠি দেয়া হয়। দুই মাস পর আবারো ৩রা ডিসেম্বর চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু কোনোভাবেই মন্ত্রণালয়ের রয়্যালিটি বাবদ অবশিষ্ট অর্থ ফেরত দেননি নাজমুল। সর্বশেষ টাকা না দিয়েই গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরই দেশত্যাগ করেন নাজমুল। ওইদিন হাসিনার পতনের খবর শুনে আর অফিসেও ফেরেননি তিনি- এমনটাই জানিয়েছেন তার সহকর্মীরা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, তাকে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে কিন্তু সে টাকা পরিশোধ করেনি। অর্থ পরিশোধ না করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বইটির প্রকাশনায় বিতর্কিত বিষয়গুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমার সময়ে হয়নি- আগেই হয়েছে। আমি এসে এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। যেটি আগেই জবাবদিহিতার আওতায় আসা উচিত ছিল। অন্যদিকে অভিযুক্ত নাজমুল হোসেনের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
No comments