প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব by মিজানুর রহমান
প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন। ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার পররাষ্ট্র সচিবসহ বিভিন্ন পদে নাটকীয় পরিবর্তন আনে। গত ৮ই সেপ্টেম্বর নতুন পররাষ্ট্র সচিব হিসাবে দায়িত্ব নেন পেশাদার কূটনীতিক, সর্বশেষ চীনে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকারী মো. জসীম উদ্দিন। সেগুনবাগিচা বলছে, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দিন-রাত হোমওয়ার্কে ব্যস্ত সময় পার করছেন সচিব। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে জানা-বুঝা এবং সরকারের নির্দেশনা পেতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎসহ সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে প্রয়োজনীয় বৈঠকাদি করেছেন। বিদেশে থাকা বাংলাদেশি কূটনীতিকের সঙ্গে বিভিন্ন ফর্মেটে সিরিজ আলোচনা ছাড়াও ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ সেরেছেন। ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে দায়িত্ব গ্রহণের ঠিক এক মাসের মাথায় অর্থাৎ আগামী ৭ই অক্টোবর নিউ ইয়র্কগামী ফ্লাইটে উঠবেন পররাষ্ট্র সচিব। সেখানে দু’দিন কাটাবেন। জাতিসংঘ এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হবে তার। ১০ই অক্টোবর যাবেন ওয়াশিংটনে। সেখানে স্টেট ডিপার্টমেন্ট, হোয়াইট হাউজ, বাণিজ্য দপ্তর, রাজস্ব ও অর্থ এবং শ্রম দপ্তর এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিবের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের কথা রয়েছে। স্মরণ করা যায়, গত ৮ই আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সর্বোচ্চ নেতৃত্বের পাশাপাশি নানা স্তরে তিন দফা আলোচনা হয়েছে। গত মাসে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক হয়। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্য পদ প্রাপ্তির পর থেকে বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সঙ্গে নিউ ইয়র্কে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এটাই ছিল প্রথম বৈঠক। প্রথা ভেঙে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরল বৈঠকে মিলিত হওয়ার মধ্য দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ঢাকা নতুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পেয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। শীর্ষ বৈঠকের দুদিনের মাথায় ড. ইউনূসের সঙ্গে আলাদাভাবে দেখা করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন। তারও আগে গত ১৫ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন নেতৃত্বের এসব বৈঠকে যে আলোচনা হয়েছে বিশেষ করে ভবিষ্যত সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার যে বার্তা স্পষ্ট হয়েছে, তার নিটিগিটি চূড়ান্তকরণে পররাষ্ট্র সচিবের অত্যাসন্ন ওয়াশিংটন সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে সেগুনবাগিচা। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের গুণগত পরিবর্তন এসেছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ তারই প্রতিফলন। দুই শীর্ষ নেতার আলোচনার পথ ধরে সংস্কারের পাশাপাশি নানা ক্ষেত্রে কীভাবে সহযোগিতা এগিয়ে নেয়া যায় তা নিয়ে আমার ওয়াশিংটন সফরে আলোচনা হবে বলে আশা করছি।
No comments