বিশ্বব্যাপী বাড়ছে অদূরদর্শিতা, ২০৫০ সালের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৪০ শতাংশ তরুণ প্রজন্ম

বিশ্বব্যাপী অদূরদর্শিতা বাড়ছে। আর এতে ক্রমবর্ধমান মহামারির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে বিশ্ব। নতুন তথ্য অনুসারে, ২০৫০ সালের মধ্যে ৭৪০ মিলিয়নেরও বেশি শিশু ও কিশোর-কিশোরীর দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যেতে পারে।

বিশ্বব্যাপী একটি পর্যালোচনার উপর ভিত্তি করে এই ধারণাটি করা হচ্ছে। ২০২৩ সালে ৫০টি দেশ থেকে সংগৃহীত ডেটার ওপর ভিত্তি করে মায়োপিয়া বা অদূরদর্শিতার এই পরীক্ষা করা হয়। অর্থাৎ আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যা অদূরদর্শিতার শিকার হবে।

নতুন এই বিশ্লেষণটি চীনের সান ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নেতৃত্বে করা হয়েছিল। ২৭৬ টি গবেষণা বিবেচনা করে এই বিশ্লেষণটি প্রস্তুত করা হয়। এরমধ্যে মধ্যে প্রায় ৫.৪ মিলিয়ন শিশু ও কিশোর-কিশোরী অন্তর্ভুক্ত যাদের প্রায় ২ মিলিয়ন মায়োপিয়ায় আক্রান্ত।

জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী জিংহং লিয়াং ও তার গবেষক দল বলছেন, ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে মায়োপিয়ার প্রকোপ ২৪ শতাংশ থেকে ৩৬ শতাংশে বেড়েছে। জাপানে ব্যাপকতা সবচেয়ে বেশি ছিল, যেখানে বর্তমানে ৮৬ শতাংশ শিশু, কিশোর-কিশোরীরা অদূরদর্শিতার শিকার। এরমধ্যে সর্বনিম্ন দেশটি ছিল প্যারাগুয়ে, সেখানে আক্রান্ত মাত্র ০.৮৪ শতাংশ। যদি শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে দৃষ্টিশক্তি একই হারে আরও খারাপ হতে থাকে, তাহলে বিশ্বব্যাপী তরুণদের মধ্যে মায়োপিয়ার প্রকোপ ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ৪০ শতাংশে পৌঁছতে পারে। অর্থাৎ ৭৪০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে এশিয়ায় ২০৫০ সালের মধ্যে এর প্রকোপ প্রায় ৭০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।

ডেটা অনুযায়ী যদি এই হারে মায়োপিয়ার প্রকোপ বাড়ে, তাহলে বিগত ৩০ বছরে বিশেষ করে ২০২০ এর পরে মায়োপিয়া  ছড়িয়ে পড়বে। পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোতে কোভিড-১৯ মহামারিকে শিশুদের দৃষ্টিশক্তি খারাপের জন্য দায়ী করেছিল। ২০২০ সালে হংকংয়ের গবেষকরা ৬ থেকে ৮ বছর বয়সী ৭০৯ শিশুর মধ্যে মায়োপিয়ার দ্রুত বৃদ্ধি শনাক্ত করেছেন। যদিও জেনেটিক্স নিঃসন্দেহে মায়োপিয়াতে একটি ভূমিকা পালন করে, তবে বিশ্বব্যাপী মায়োপিয়ার   সাম্প্রতিক বৃদ্ধির জন্য এটিকে দায়ী করা হয় না। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, পিতা-মাতা বাইরে পর্যাপ্ত সময় ব্যয় না করলেও মায়োপিয়ার জেনেটিক হুমকি প্রায় ৬০শতাংশে বেড়ে যায়।

বাইরে খেলা শিশুদের মধ্যে মায়োপিয়ার ঝুঁকি কমায় বলে মনে করা হয়। মহামারি চলাকালীন বিশ্বের অন্যান্য অনেক অংশে শিশুরা ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকটা সময় স্ক্রিনের সামনে কাটাতে হয়েছে। পর্যালোচকদের যুক্তি, এটি প্রাক-স্কুল শিশুদের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ তারা একটি জটিল সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে।

আফ্রিকাতে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মায়োপিয়ার প্রকোপ এশিয়ার তুলনায় সাত গুণ কম। শিক্ষার সময়কাল এবং মায়োপিয়া হওয়ার মধ্যে একটি সম্পর্ক বিদ্যমান। সিঙ্গাপুর ও হংকং-এ দুই বা তিন বছরের কম বয়সী শিশুরা আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলে পড়ার আগে সক্রিয়ভাবে শিক্ষামূলক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। অদূরদর্শিতার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি বিভিন্ন কারণে উদ্বেগজনক। মায়োপিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স পরা ব্যয়বহুল হতে পারে। একইসঙ্গে এটি তাদের চোখের রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যেমন মায়োপিক ম্যাকুলোপ্যাথি ও রেটিনাল ডিটাচমেন্ট যা উভয়ই স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি কেবল একজন ব্যক্তির জীবনযাত্রাকে শুধু প্রভাবিতই করে না, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপও সৃষ্টি করতে পারে।

শিশুদের মধ্যে অদূরদর্শিতা আরও বেশি উদ্বেগজনক। এই কারণে এটি গুরুতর মায়োপিয়াতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যার ফলে চোখের সমস্যা  বাড়তে পারে।

সূত্র: সায়েন্স এলার্ট

mzamin

No comments

Powered by Blogger.