কেয়ার ভিসায় জালিয়াতি: লন্ডনে কর্মহীন ছেলে সিলেটের দালালদের বিরুদ্ধে পিতার মামলা by ওয়েছ খছরু
প্রায় এক বছর আগে ২৯ লাখ টাকা খরচ করে কেয়ার ভিসায় লন্ডনে ছেলেকে পাঠিয়েছেন মৌলভী আবুল কালাম দুলাল আহমদ। তিনি সিলেটের জাতীয় পার্টির পরিচিত নেতা। নিজের সম্পত্তির অর্ধেক বিক্রি করে স্বপ্ন পূরণে ছেলেকে লন্ডনে পাঠান। কথা ছিল লন্ডনে নেয়ার পর কেয়ার ভিসায় চাকরি দেয়া হবে। কিন্তু লন্ডনে পৌঁছানোর পর ছেলে আবু তাহের তানভীর আহমদ কোম্পানীর পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাননি। বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে চাকরির জন্য ডাকা হয়নি। তবে সিলেটের এজেন্টরা দাবি করেছেন; লন্ডনে তিন দিনের প্রশিক্ষণ নেয়ার পরও পরবর্তীতে তানভীর যোগাযোগ করেননি। নগরের সোনারপাড়া নবারুন আবাসিক এলাকার বাসিন্দা দুলাল আহমদ সিলেটের মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে গত ২২শে জুন তিন জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় তিনি আসামি করেছেন- ভিনটেজ ইন্টারন্যাশনালের কর্তৃপক্ষ ও ছাতকের বাগবাড়ি এলাকার ইনাম আহমদ চৌধুরী, বড়লেখার চান্দগ্রামের মিলন আহমদ ও সোনারপাড়া এলাকার কাজী লায়েক আহমদকে। মামলায় দুলাল আহমদ জানিয়েছেন- সোনারপাড়াস্থ ভিনটেজ ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে লন্ডনে কেয়ার ভিসার লোক পাঠানো হয় প্রচার হওয়ার পর তার ছেলে তানভীরসহ তারা ইনামসহ আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তানভীরকে লন্ডনে পাঠানোর কথাবার্তা চূড়ান্ত হওয়ার পর আসামিদের সঙ্গে তাদের চুক্তিও হয়। পরে চুক্তিমতো তিনি ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে ২০২৩ সালের ২৩শে মে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন। কেয়ার ভিসা ইস্যু হওয়ার পর ওই বছরের ২৮শে আগস্ট ভিনটেজ ইন্টারন্যাশনালে ২৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এ সময় আসামিরা কোনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হবে না বলে আশ্বস্ত করেন। এ ছাড়া তার ছেলেকে লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগ করে দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন। মামলার এজাহারে দুলাল জানান- তার ছেলে তানভীর লন্ডনে পৌঁছার পর প্রতিষ্ঠানের কথিত কোনো প্রতিনিধি তানভীরকে রিসিভ করেননি। এমনকি কাজেরও কোনো ব্যবস্থা করেননি। খাওয়া-ধাওয়া সমস্যা হওয়ায় তার ছেলে লন্ডনে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আসামিরা সংঘবদ্ধ চক্র হিসেবে একই অভিপ্রায়ে তার ছেলেকে উন্নত ভিসা প্রদানের নামে মানব পাচারের মতো অপরাধ সংঘটিত করেছে। এজাহারে দুলাল জানান- এ ঘটনার পর পরবর্তীতে আসামিরা নতুন করে আরও ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। নতুবা তার ছেলেকে মানব পাচার চক্রের কাছে হস্তান্তর করে দেবেন বলে হুমকিও দিয়েছেন। তার ছেলের লন্ডনে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। যেখানে পৌঁছার পর আসামিদের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। এ কারণে তার ছেলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এই অবস্থায় গত ১০ই সেপ্টেম্বর নগরের জিন্দাবাজারের মারজান শপিং সেন্টারের তৃতীয় তলার এডুএক্সেস প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বিচারপ্রার্থী হলে আসামি মিলন ও লায়েক তাকে হুমকি দিয়ে বলেন; ভাড়াটিয়া কিলার দিয়ে হত্যা করে ফেলবেন। এদিকে গতকাল বিকালে মামলার বাদী দুলাল আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন- তার ছেলে এখন লন্ডনে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য গিয়েছিল সে প্রতিষ্ঠানে কাজ দেয়া হচ্ছে না। আর ওই প্রতিষ্ঠানের লিখিত অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ চাকরিতে নিচ্ছে না। অন্যদিকে; প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বারবারই কেবল অপেক্ষা করতে বলে। তিনি জানান- এ ব্যাপারে সিলেটের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একাধিকবার দালালদের সঙ্গে বৈঠকে বসলে তারা নানা টালবাহানা করতে থাকে। তার ছেলের বয়স ২৪ বছর। এইটুকু বয়সের একটি ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিলেটের দালালরা ও লন্ডনের কোম্পানির লোকজন যা করছে তা অমানবিক। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি মামলা করেছেন। মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই তদন্ত করছে। লন্ডনে থাকা তানভীর আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন- বাস্তবে কোম্পানির কাছে কাজ নেই। তারা মিথ্যা কথা বলে লন্ডনে নিয়ে এসে কাজ দিচ্ছে না। এতে করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছেন। এদিকে মামলার প্রধান আসামি ইনাম আহমদ চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন; তারা তানভীরের সঙ্গে কোনো প্রতারণা করেননি। তানভীর লন্ডনের যাওয়ার পর তাদের টাকায় তিন দিনের ট্রেনিং করিয়েছেন। পরে কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য বারবার অনুরোধ করলেও তিনি যোগাযোগ রাখেননি। এজন্য সিলেটের কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় বলে জানান ইনাম।
No comments