ডিসি পদায়নে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ: তদন্তের দায়িত্বে ৩ উপদেষ্টা

ডিসি নিয়োগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশনা দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। তদন্তের জন্য তিনজন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। গতকাল সচিবালয়ে দুর্গাপূজা উপলক্ষে নেয়া কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষে এ তথ্য জানানো হয়। তিনি বলেন, অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে জনপ্রশাসন সচিব তদন্ত করেন। জনপ্রশাসন সচিবের বিরুদ্ধে ওঠা ডিসি নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ সরকার তদন্ত করবে কিনা- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, অবশ্যই আমরা এটার তদন্ত করবো। সরকার (তদন্ত) করবে। কিন্তু এখানে দুটি জিনিস মিডিয়াকে মাথায় নিতে হবে। এটাও কিন্তু আমরা খতিয়ে দেখছি যে ক্লিপটা সোশ্যাল মিডিয়ায় বহুল প্রচারিত হয়েছে সেটা কতোখানি এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) প্রডিউসড করা। সেটা কতোখানি বাস্তব, কতোখানি ফেক আমাদের মতো সাধারণ মানুষ বলতে পারে না। ইমিডিয়েটলি যে সিদ্ধান্তটা হয়েছে এটার টেকনিক্যাল ইন্টিগ্রিটিটা কী সেটা জানার জন্য কেবিনেটে তথা উপদেষ্টা পরিষদে কথা হয়েছে। শারমীন এস মুরশিদ বলেন, অত্যন্ত দায়িত্বশীল জায়গায় প্রতিষ্ঠিত কর্মকর্তাদের কোনো ধরনের দায়িত্বহীনতা মেনে নেয়া যাবে না। এটাও আমাদের অনুশাসনের অধীনে আনতে হবে।

এ বিষয়ে উপদেষ্টাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটি কমিটি করে তারা এটা দেখবে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই তিনজনের কথা বলা হয়েছে, এর মানে এই নয় যে অন্যরা এতে যুক্ত হতে পারবেন না। একটি কমিটি করে এটা তদন্ত করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে নিয়ে এ রকম কথা। এটি নিয়ে অবশ্যই আমরা উদ্বিগ্ন। ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ কেন উঠলো, এটার সূত্র কী, এটার কারণ কী- সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। আমরা তো এখন এনালগ যুগে নেই। এজন্য আমাদের বাড়তি কষ্টটা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যেটাই আসছে আমরা লাফ দিয়ে ধরে নিতে পারছি না- এটাই সত্য। আমাদের এটাকে যাচাই করতে হয়। এদিকে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ডিসি নিয়োগকে কেন্দ্র করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। সেখানে সিনিয়র সচিবের হোয়াটসঅ্যাপে কথোপকথনের স্ক্রিনশটও প্রকাশ করা হয়। তবে ডিসি নিয়োগকে কেন্দ্র করে অর্থের লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে ‘ইটস এ ফেইক নিউজ’ বলেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। একইসঙ্গে যে অভিযোগ উঠেছে তা মূল্যহীন বলে মন্তব্য করেন তিনি। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগের অভিযোগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এবং যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও আলী আযমের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ সংবাদকে ‘ফেইক’ বলে দাবি করেছেন সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান। এদিকে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইটস এ ফেক নিউজ’। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। আমাকে সরকার যে টেলিফোন দিয়েছে সেটা আমি ব্যবহার করি না। আমি আগের নম্বরই ব্যবহার করছি। নিয়োগ সংক্রান্ত আলোচনা নিয়ে প্রকাশিত স্ক্রিনশট নিয়ে তিনি বলেন, আমার মোবাইল হলো স্যামসাং। তারা যেটা শো করেছে সেটি হলো আইফোন। আইফোন কী আমি ব্যবহার করি? আমি ব্যবহার করি স্যামসাং। উনারা কে কি দেখালো ওনাদের জিজ্ঞেস করবেন। আমি এটার বিষয়ে কিছুই জানি না। এ বিষয়ে মানহানির মামলা করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমে বলবো-যারা এই নিউজ করেছেন তাদেরকে আমরা কতোটুকু গুরুত্ব দেই। রাস্তার লোক অনেক কথা বলতে পারে, তাই বলে আমি কি তার পেছনে দৌড়াবো? কখনই না। উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান, যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও আলী আযম সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে হোয়াটসঅ্যাপে ডিসি নিয়োগ নিয়ে কথোপকথন ও বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তথ্যও প্রকাশিত হয়।

No comments

Powered by Blogger.