সংলাপে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেবে বিএনপি, সংস্কার বিষয়ে পরে জানাবে by কিরণ শেখ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সংলাপে রাষ্ট্র সংস্কারে সুনির্দিষ্ট কিছু পরামর্শ দেবে বিএনপি। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণার পরামর্শ দেয়া হবে দলটির পক্ষ থেকে। প্রশাসনে আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্টদের পুনর্বাসন এবং ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরেও তাদের দোসরদের এখনো প্রশাসনে কাজ করার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরবে দলটি। পাশাপাশি দলটি বলছে, সংস্কারের জন্য নির্বাচন অত্যন্ত  গুরুত্বপূর্ণ, না হলে সেটা সম্ভব না। মূল সংস্কার নির্বাচিত সংসদের মধ্য দিয়ে আসতে হবে।

রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপি’র প্রস্তাবের বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির ছয়জন স্থায়ী কমিটির সদস্যের সঙ্গে কথা হয় মানবজমিন-এর। তারা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডেকেছে। সেখানে বিএনপি’র একটি প্রতিনিধিদল যাবেন। তারা কী বলেন- তা প্রতিনিধিদল শুনবেন। এছাড়া রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেবে বিএনপি। এ নিয়ে দু’টি মিটিং হয়েছে। সামনে আরও একটি মিটিং হবে। এরপর প্রস্তাব চূড়ান্ত করে শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, প্রথমে জানতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী করবে। এরপরে আমরা প্রস্তাব দেবো। আমাদের ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখা আছে। সেখানে বলা আছে আমরা সরকারের গেলে কী করবো। কিন্তু এই সরকারের কাছে জনগণ আশা করে, তারা যতদ্রুত সম্ভব একটি গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে- যে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। সেই লক্ষ্যে যেসব সংস্কার প্রয়োজন তা করবে। এটা যতদ্রুত সম্ভব হবে তা দেশ ও আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান মানবজমিনকে বলেন, শনিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা আমরা শুনবো। এরপরে আলাপ-আলোচনা করে আমরা সংস্কার প্রস্তাব ঠিক করবো। সেজন্য বিষয়টি এখনো বলা যাচ্ছে না।
ওদিকে রাষ্ট্র সংস্কারে সরকারকে সহযোগিতা করতে ছয়টি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। এসব কমিটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত ছয় কমিশনের সঙ্গে মিল রেখেই করা হয়েছে। কমিটিগুলো হলো- রাষ্ট্র সংস্কার, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, নির্বাচন কমিশন এবং ব্যাংকিং ও বাণিজ্য সংস্কার। মঙ্গলবার দলের চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব কমিটি গঠন করা হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। কমিটিরগুলো আহ্বায়ক ও সদস্যরা হলেন- সংবিধান পুনর্গঠন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। সদস্য হলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, প্রফেসর বোরহান উদ্দিন, অধ্যাপক ড. মাহফুজুল হক সুপন ও প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নাজমুজ জামান ভূঁইয়া ইমন। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারকে। সদস্য হলেন- এডভোকেট জয়নাল আবদিন, বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি মোহাম্মদ রইস উদ্দিন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বিচারক ইকতেদার হোসেন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসিম। পুলিশ বিভাগ সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। সদস্য হচ্ছেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জহিরুল ইসলাম, সাবেক আইজিপি আবদুল কাইউম, সাবেক ডিআইজি খোদা বক্স ও সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান।
এছাড়া প্রশাসন সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে। সদস্যরা হলেন- সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক সচিব মনিরুজ্জামান খান। দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে সাবেক বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি শরফুদ্দিন চাকলাদার ও বিচারপতি এএফএম আবদুর রহমানের নাম রয়েছে। সদস্য হচ্ছেন- ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও সাবেক সচিব আবদুর রশিদ। নির্বাচন কমিশন বিষয়ক সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানকে। সদস্য হচ্ছেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ,  ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক সচিব আবদুর রশিদ।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান মানবজমিনকে বলেন, এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আলাপ-আলোচনা চলছে। শিগগিরই চূড়ান্ত হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, সংস্কার প্রস্তাব এখনো ঠিক হয়নি। এজন্য কমিশন প্রণয়ন করা হয়েছে। তারা কাজ করছেন। আরও কয়েকদিন লাগবে কাজ শেষ হতে। এরপরে বলা যাবে।
এদিকে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এসব কমিশন ১লা অক্টোবর থেকে কাজ শুরুর কথা ছিল। যদিও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তৃতীয় দফায় সংলাপে বসবে আগামীকাল শনিবার। এদিন বেলা আড়াইটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে বসবেন বিএনপি’র একটি প্রতিনিধিদল। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিনদিন পর শপথ নেয়া অন্তর্বর্তী সরকার এর আগে দু’দফা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেন।

No comments

Powered by Blogger.