রোহিঙ্গা সংকট: জাতিসংঘে মিয়ানমারের মন্ত্রী বলেছেন, নতুন শর্ত আরোপ করলে প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হবে
প্রত্যাবাসন কর্মসূচী বাস্তবায়ন
রুখতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ধ্বংসাত্মক আন্দোলনসহ যেসব বাধা
সৃষ্টি করা হচ্ছে সে সম্পর্কে মিয়ানমার অবগত রয়েছে উল্লেখ করে
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের কার্যালয়ের ইউনিয়ন মন্ত্রী চিয়াও তিন্ত
সোয়ে বলেছেন, এই সমস্যাগুলো সমাধান করা দরকার।
জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে মিয়ানমারের তরফে দেয়া ভাষণে তিনি একথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্র সময় শনিবার এবং বাংলাদেশ সময় রবিবার ভোরের দিকে মি. সোয়ে এ ভাষণ দেন।
নির্বিঘ্ন
এবং সফল প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে প্রকৃত রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও উদ্যোগের
পাশাপাশি এ বিষয়ে সই করা চুক্তির শর্তও কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে বলে উল্লেখ
করেন তিনি।
এর আগে একই অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা বলেছিলেন, "রাখাইন প্রদেশে সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও চলাফেরার স্বাধীনতা
এবং সামগ্রিকভাবে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত একজন
রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরে যায়নি"।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে রোহিঙ্গা বিষয়ে কথা বলেন মিয়ানমারের ইউনিয়ন মন্ত্রী কিয়াও তিন্ত সুয়ে |
কিন্তু মি. সোয়ে বলছেন, মিয়ানমার বাংলাদেশের সাথে যে প্রত্যাবাসন
চুক্তি সই করেছে সেই চুক্তি অনুযায়ীই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আগ্রহী দেশটির
সরকার।
এই চুক্তির যথাযথ প্রয়োগই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের
একমাত্র উপায় বলেও চিহ্নিত করেন তিনি। আর তাই দ্বিপক্ষীয় চুক্তি কঠোরভাবে
মেনে চলতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয় ওই ভাষণে।
প্রত্যাবাসন
প্রক্রিয়ায় নতুন কোন শর্ত বা উপাদান অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হলে তা
ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মি. সোয়ে বলেন,
"মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করার ক্রমাগত আহ্বান রয়েছে। মিয়ানমারের
ভেতরে সেফ জোন বা নিরাপদ অঞ্চল তৈরির চাপ রয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন
নিশ্চয়তা দেয়া যাবে না এবং এটি বাস্তবসম্মতও নয়।"
ভাষণে তিনি আহ্বান জানান, কক্সবাজারের শিবির থেকে মিয়ানমারে ফিরতে আগ্রহী ৪০০ হিন্দুসহ অন্যান্যদের দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে।
ওদিকে এর ঠিক এক দিন আগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাষণে বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার ও তাদের নাগরিকদের মধ্যকার
সমস্যার বোঝা বহন করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে
তিনি আহ্বান রাখেন যেন তারা এই সংকটের বিষয়টি উপলব্ধি করে।
শেখ হাসিনা বলেন, "এই সমস্যা এখন আর বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না।"
"সকল
প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিষয়টি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয় হয়ে
দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি এই এলাকার পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাও ঝুঁকির
সম্মুখীন হচ্ছে"।
এছাড়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইনে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে চারটি সুপারিশ তুলে ধরেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনে মিয়ানমারের সামরিক অভিযানের পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা |
রোহিঙ্গাদের
প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী, প্রত্যাবাসনে যোগ্যদেরকে পরিচয়পত্র বা
আইডেন্টিটি কার্ড দেয়া হবে এবং মিয়ানমারের নাগরিকত্বের আইন অনুযায়ী
যোগ্যদেরকে নাগরিকত্ব কার্ড দেয়া হবে।
বাকিরা ন্যাশনাল ভেরিকেশন কার্ড বা এনবিসি'র আওতাভুক্ত হবে।
মি. সোয়ে বলেন, এই কার্ড জাতিসংঘের অনুমোদিত অভিবাসীদের জন্য দেয়া গ্রিন কার্ডের মতো হবে।
২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনে মিয়ানমারের সামরিক অভিযানের পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।
এ
পর্যন্ত জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের
ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার রাজি হলেও কার্যত দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ
নিয়েও একজন রোহিঙ্গাকেও স্বেচ্ছায় রাখাইনে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
মূলত
নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ওই দুই দফায় স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে চায়নি
কোন রোহিঙ্গা। সেই সাথে নাগরিকত্ব দেয়ার দাবিও ছিলো তাদের।
২০১৭ সালে সামরিক অভিযানের জেরে সাত লাখের রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে পালিয়ে যায়।
জাতিসংঘ
একে জাতিগত নির্মূল কর্মকাণ্ডের 'টেক্সটবুক' উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
তবে নিজেদের বাহিনীর হাতে বড় মাত্রায় হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ নাকচ করেছে
মিয়ানমার।
মিয়ানমার, মূলত বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দেশ,
সেনাবাহিনীর হাতে জাতিগত দমন এবং গণহত্যার অভিযোগ ধারাবাহিকভাবে অস্বীকার
করে আসছে। তবে এখন তারা বলছে যে, তারা কিছু পরিমাণ শরণার্থী ফিরিয়ে নিতে
প্রস্তুত।
কিন্তু গত মাসে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের
দ্বিতীয় চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। মিয়ানমারের অনুমোদিত ৩ হাজার ৪৫০ জন
রোহিঙ্গার মধ্যে কেউই ফিরতে না চাইলে এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
তারা
অভিযোগ তোলে যে, ২০১৭ সালে সংঘটিত নিপীড়নের জন্য কোন জবাবদিহিতা নেই এবং
নিজেদের চলাফেরায় স্বাধীনতা ও নাগরিকত্ব পাওয়া নিয়েও কোন নিশ্চয়তা নেই।
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা |
No comments