দুর্নীতি বিরোধিী অভিযানের দায়িত্ব পুলিশকে বাদ দিয়ে কেন র্যাবের কাঁধে by কাদির কল্লোল
বাংলাদেশে পুলিশকে বাদ দিয়ে বিশেষ
বাহিনী র্যাবকে অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্যসহ দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের একক
দায়িত্ব দেয়ার বিষয় নিয়ে এখন বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা চলছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিভ্রান্তি এড়াতে অভিযানের পুরো দায়িত্ব র্যাবকে দেয়া হয়েছে।
তবে এতদিন ধরে অবৈধভাবে ক্যাসিনো বাণিজ্য চলার পেছনে পুলিশ প্রশাসনের কারও যোগসাজশ ছিল কিনা, এমন প্রশ্ন উঠছিল গত কয়েকদিন ধরে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দল এবং সহযোগী
সংগঠনগুলোর কিছু নেতা কর্মীর দুর্নীতিসহ নানা অপরাধে জড়ানোর বিষয়ে ক্ষোভ
প্রকাশ করে অভিযান চালানোর কথা বলেছিলেন সিনিয়র নেতাদের সাথে বৈঠকে।
এরপর
প্রথমে র্যাব ঢাকায় চারটি নামকরা ক্লাবে অভিযান চালিয়ে অবৈধ জুয়ার আসর
বা ক্যাসিনো বাণিজ্য বন্ধ করেছিল গত ১৮ই সেপ্টেম্বর। দু'দিন পর পুলিশও
অবৈধ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্লাবে অভিযান শুরু করেছিল।
তারপর থেকে পুলিশ এবং র্যাব একের পরে এক অভিযান চালিয়ে আসছিল।
তবে এখন পুলিশকে বাদ দিয়ে র্যাবকে এককভাবে এই অভিযানের দায়িত্ব দেয়া হলো।
অভিযানে
অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্যের গল্প একের পর এক যখন বেরিয়ে আসছে, তখন এনিয়ে
নানা প্রশ্ন উঠেছে। বড় প্রশ্ন হিসেবে এসেছে, এতদিন ধরে অবৈধভাবে ক্যাসিনো
বাণিজ্য চলেছে কিভাবে?
পুলিশ র্যাব এবং সরকারসহ সংশ্লিষ্ট এর দায় নিতে রাজি নয়।
কিন্তু
সরকারের অর্থমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, আইন
শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী বা প্রশাসনের নজরের বাইরে অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্য
চলেছে কিভাবে ? সেই প্রেক্ষাপটে অভিযানের দায়িত্ব থেকে পুলিশ বাদ পড়লো।
ঢাকা
মহানগর পুলিশ কমিশনার মো: শফিকুল ইসলাম বলছিলেন, একই কাজ বিভিন্ন বাহিনী
করলে ভাল ফল আসবে না, এই যুক্তিতে র্যাবকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
"একই
কাজ একটা বাহিনী করা ভাল। একটা কাজ যদি পাঁচজনকে ভাগ করে দেয়া হয়,
পাঁচজন পাঁচটা ফলাফল দেখাবে। একারণে র্যাবকে দায়িত্ব দিয়েছে।"
কিন্তু
প্রশাসনের নজরের বাইরে অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্য চলছিল কিভাবে-এমন প্রশ্ন যে
উঠেছে, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকার পুলিম কমিশনার বলেছেন, "শুধু পুলিশের
কথা বলেনি যে, পুলিশের চোখের সামনে এসব চলছিল। র্যাবতো এই এলাকার বাইরে
ছিল না। সবার চোখের সামনেই চলছিল। তো র্যাবকে দায়িত্ব দিয়েছে, তারা
দায়িত্ব পালন করছে। আমাদের বলা হয়েছে, একাসাথে এককাজ একাধিক বাহিনী করলে
সমস্যা হতে পারে। সুতরাং তারাই করবে।"
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের প্রশ্নে এটুকুই বলেছেন যে, র্যাব এই অভিযান
শুরু করেছে, সেকারণে তাদেরকেই এর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণারয়ের কর্মকর্তারা যুক্তি দিয়েছেন , বিভ্রান্তি এড়াতে র্যাবকে অভিযানের একক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
তবে
ঢাকায় পুলিশ ষ্টেশন থেকে অল্প দূরত্বেই বিভিন্ন জায়গায় ক্লাবগুলোতে
অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্য ধরা পড়েছে। ফলে এসব চলার পেছনে পুলিশ প্রশাসনের
দিকেই আঙুল তোলা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে।
ঢাকার পুলিশ কমিশনার অবশ্য বলেছেন যে, পুলিশের কেউ জড়িত ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
র্যাব
পুলিশেরই একটা বিশেষ বাহিনী। সাধারণ পুলিশ থেকেই উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা
র্যাবের প্রধানের দায়িত্ব পান। র্যাবে অন্যান্য পদে সেনাবাহিনীসহ
বিভিন্ন বাহিনী থেকে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
বিশ্লেষকরা বলেছেন,
অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্যে যেখানে বড় অংকের অর্থে বিষয় ছিলো, ফলে এটি আগে
কারোই নজরে আসেনি, এই যুক্তি খাটে না বলে তারা মনে করেন।
দুর্নীতি
বিরোধী বেসরকারি সংস্থা টিআইবি'র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা
কামাল মনে করেন, দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাসিনো বাণিজ্য চলার দায় পুলিশ বা
র্যাব কেউই এড়াতে পারে না।
"যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেটার জন্য যদি আমরা
মনে করি যে পুলিশ এখানে সেভাবে কাজ করেনি, তাদের অবহেলা যদি আমরা ধরতে
চাই, তাহলে কারও অজান্তে না হওয়ার প্রতিফলন র্যাবের ওপরও পড়তে পারে। এটা
নিয়ে আমরা প্রশ্ন করতে পারি যে, এখানে সরকারের কৌশলগত কোন কারণ আছে
কিনা?"
র্যাবের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়
সর্ম্পকিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু বলছিলেন, কোন একটি
বাহিনীকে দিয়ে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করানো হলে তাতে সমন্বয়ের অভাব
থাকে না। এটাকে তিনি সরকারের একটা কৌশল বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
No comments