অবরুদ্ধ কাশ্মিরে ভোগান্তিতে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা
বিশেষ
মর্যাদা বাতিলের পর অবরুদ্ধ কাশ্মিরে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেখানকার
নাগরিকরা। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অন্তঃসত্ত্বা নারীরা। আন্দোলন, আতঙ্ক ও
যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার মধ্যে চিকিৎসা নিতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদেরকে। সেখানে
চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় হাসপাতালে পৌঁছাতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদেরকে।
আয়ের উৎসগুলো বন্ধ থাকায় অর্থনৈতিক সংকটে আছে কাশ্মিরিরা। নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক চিকিৎসকরা সেখানকার হবু মায়েদের দুরাবস্থার কথাও স্বীকার করেছেন।
তবে চিকিৎসাজনিত সমস্যার কথা স্বীকার করতে নারাজ কর্তৃপক্ষ।
৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর কাশ্মিরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত সেনা। কারফিউ জারির ৩৯ দিন পর প্রত্যাহার করা হলেও সেখানে ফিরেনি স্বাভাবিকতা। স্থানীয় বাসিন্দারা নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন ধারার নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে পড়ছেন। এমনই এক নারী মুবিনা বানু।
সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া তার ভাইপোকে কাশ্মিরের প্রধান মাতৃসদন হাসপাতাল লালাদেদের একজন শিশু বিশেষজ্ঞকে দেখিয়েছেন মুবিনা। এক সপ্তাহ আগে ছোট ভাই আর অন্তঃসত্ত্বা বোনকে নিয়ে সীমান্তবর্তী কুপওয়ার জেলা থেকে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে মুবিনা ওই হাসপাতালে গেছেন। সাধারণ মানুষের কাছে লালাদেদ নামে পরিচিত, বিখ্যাত এক হিন্দু মরমি কবির নামে এই হাসপাতালটির নামকরণ করা হয়েছে।
এখানে আসতে তাদেরকে অনেক সেনা ব্যারিকেড, চেক পোস্ট, পাথর নিক্ষেপকারী ক্রুদ্ধ জনতাকে পাশ কাটিয়ে মুবিনার ক্যাবটি তিন ঘণ্টায় প্রায় ১১০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছে। তার বোন রফিকা বানু সন্তান প্রসবের শেষ পর্যায়ে ছিলেন। তার পরিচর্যায় থাকা গ্রামের চিকিৎসকেরা তাদেরকে চরমভাবে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
প্রসবের তারিখ ছিল ৩০ আগস্ট। রফিকাকে ২৯ আগস্ট তার জেলার প্রাইমারি হেলথ সেন্টারে ভর্তি হতে বলা হলো। মুবিনা বলেন, কিন্তু ৫ আগস্ট যেমন ঘটেছে, তেমন করেই যেন নাটকীয়ভাবে সব কিছু ঘটতে শুরু করল। আমাদের গ্রামের পিএইসিতে তেমন স্টাফ ছিল না। রফিকার জটিলতা বেড়ে গেল ২৫ আগস্ট। আমরা আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইনি। এ কারণে শ্রীনগরে ছুটে এসেছি।
এক দিন পর তার বোন একটি ছেলে জন্ম দেন। অবশ্য চিকিৎসকেরা যখন দেখতে পেলেন যে শিশুটি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছে না, তখন পুরো পরিবার শঙ্কায় পড়ে গেল। শিশুটির ইনকিউবেটর প্রয়োজন। চিকিৎসক যত্ন দিয়ে শিশুটির হৃদকম্প পর্যবেক্ষণ করলেন, মুবিনাকে বললেন যে কয়েক দিন শিশুটিকে ইনকিউবেটরে রাখতে হবে। মুবিনা যেন বোবা বনে গেলন। তার কাছে টাকা নেই, অন্য কোথাও থেকে সংগ্রহ করার উপায়ও নেই।
তিনি বিলাপের সুরে বললেন, আমরা এখানে কিভাবে থাকব। আমাদের জমানো টাকাও তো শেষ হয়ে গেছে। এখানে কাউকে তো চিনিও না, যার কাছ থেকে সংগ্রহ করব।
মুবিনা তার বাড়ি ত্যাগ করার দিন থেকে তার পরিবার জানে না সে বা রফিকা বা অন্যরা কেমন আছে। তিনি বলেন, রফিকার স্বামী জানে না, সে এখন একটি ছেলে শিশুর বাবা। গত সপ্তাহে আমরা হাসপাতালে এসেছি, আমাদের টাকা শেষ হয়ে গেছে। পরিবারের কাছ থেকে সহায়তা চাইবো, তেমন কোনো ব্যবস্থাও নেই, ফোনও বন্ধ। প্রতিটি কাশ্মিরির জন্য এখন সত্যিই কঠিন সময়।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও বর্তমান অনিশ্চিত পরিবেশে কাশ্মিরের একমাত্র মাতৃসদন হাসপাতালে অবস্থান করছে উদ্বিগ্ন, চিন্তিত ও শঙ্কিত লোকজন। প্রতিটি রোগী ও তাদের স্বজনেরা হাসপাতালের করিডোর বা অপারেশন থিয়েটারের বাইরে ভাগ্যে কী আছে, তারই অপেক্ষা করছে।
মোহাম্মদ ইউনুস হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছেন তার স্ত্রীর রুটিন চেক-আপ করে চিকিৎসকের কক্ষ থেকে ফিরে আসার জন্য। তার প্রসবের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর। বিদ্রোহীদের উত্তপ্ত ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত পুলওয়ামা এলাকা থেকে তিনি এসেছেন। তিনি এখন জটিলতা এড়াতে একটি ভাড়া বাসায় থাকার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। জানি না কাল কী হবে। শুনেছি, অনেক আসন্ন মা হাসপাতালেও আসতে পারছেন না।
গত তিন দিন ধরে তাসলিমা আখতার একাকি আছেন হাসপাতালে। গত সপ্তাহে তিনি একটি মেয়ে শিশুর জন্ম দিয়েছেন। এক দিন পর শিশুটিকে তিন মাইল দূরে শিশুদের একটি হাসপাতালে তাকে স্থানান্তরিত করা হয়। এখন এই শিশুটির অবস্থা জানার জন্য তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। এই ভাইবোন সাহায্যের জন্য স্বজনদেরও ডাকতে পারছেন না। আখতার বলেন, আমাদের কপালে এই লেখা ছিল। কোনো অভিযোগ নেই আমার। আল্লাহই সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী।
হাসপাতালের সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার নানা শঙ্কায় পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তার ১৫ বছরের চিকিৎসা ক্যারিয়ারে তিনি কখনো হবু মায়েদের এমন দুরাবস্থায় দেখেননি। তিনি বলেন, এখানে আসা লোকজনের হাতে টাকা নেই, স্বজনদের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়ার কোনো ব্যবস্থাও নেই। চিকিৎসা কর্মীরাও নানা কঠিন অবস্থা অতিবাহিত করছেন।
তবে সরকারি মুখপাত্র রোহিত কানসাল ২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কাশ্মিরের বিভিন্ন হাসপাতালে, সিজারিয়ান ও নরম্যাল, দুই হাজার সন্তান প্রসব ঘটনা ঘটেছে। রোগীদের পর্যাপ্ত পরিচর্যা করা হচ্ছে। হবু মায়েদের কঠিন সময়ের কথাও তিনি অস্বীকার করেন। তার মতে, কাশ্মিরের সহিংসতা ব্যাপকভাবে কমে এসেছে, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।
৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর কাশ্মিরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত সেনা। কারফিউ জারির ৩৯ দিন পর প্রত্যাহার করা হলেও সেখানে ফিরেনি স্বাভাবিকতা। স্থানীয় বাসিন্দারা নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন ধারার নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে পড়ছেন। এমনই এক নারী মুবিনা বানু।
সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া তার ভাইপোকে কাশ্মিরের প্রধান মাতৃসদন হাসপাতাল লালাদেদের একজন শিশু বিশেষজ্ঞকে দেখিয়েছেন মুবিনা। এক সপ্তাহ আগে ছোট ভাই আর অন্তঃসত্ত্বা বোনকে নিয়ে সীমান্তবর্তী কুপওয়ার জেলা থেকে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে মুবিনা ওই হাসপাতালে গেছেন। সাধারণ মানুষের কাছে লালাদেদ নামে পরিচিত, বিখ্যাত এক হিন্দু মরমি কবির নামে এই হাসপাতালটির নামকরণ করা হয়েছে।
এখানে আসতে তাদেরকে অনেক সেনা ব্যারিকেড, চেক পোস্ট, পাথর নিক্ষেপকারী ক্রুদ্ধ জনতাকে পাশ কাটিয়ে মুবিনার ক্যাবটি তিন ঘণ্টায় প্রায় ১১০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছে। তার বোন রফিকা বানু সন্তান প্রসবের শেষ পর্যায়ে ছিলেন। তার পরিচর্যায় থাকা গ্রামের চিকিৎসকেরা তাদেরকে চরমভাবে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
প্রসবের তারিখ ছিল ৩০ আগস্ট। রফিকাকে ২৯ আগস্ট তার জেলার প্রাইমারি হেলথ সেন্টারে ভর্তি হতে বলা হলো। মুবিনা বলেন, কিন্তু ৫ আগস্ট যেমন ঘটেছে, তেমন করেই যেন নাটকীয়ভাবে সব কিছু ঘটতে শুরু করল। আমাদের গ্রামের পিএইসিতে তেমন স্টাফ ছিল না। রফিকার জটিলতা বেড়ে গেল ২৫ আগস্ট। আমরা আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইনি। এ কারণে শ্রীনগরে ছুটে এসেছি।
এক দিন পর তার বোন একটি ছেলে জন্ম দেন। অবশ্য চিকিৎসকেরা যখন দেখতে পেলেন যে শিশুটি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছে না, তখন পুরো পরিবার শঙ্কায় পড়ে গেল। শিশুটির ইনকিউবেটর প্রয়োজন। চিকিৎসক যত্ন দিয়ে শিশুটির হৃদকম্প পর্যবেক্ষণ করলেন, মুবিনাকে বললেন যে কয়েক দিন শিশুটিকে ইনকিউবেটরে রাখতে হবে। মুবিনা যেন বোবা বনে গেলন। তার কাছে টাকা নেই, অন্য কোথাও থেকে সংগ্রহ করার উপায়ও নেই।
তিনি বিলাপের সুরে বললেন, আমরা এখানে কিভাবে থাকব। আমাদের জমানো টাকাও তো শেষ হয়ে গেছে। এখানে কাউকে তো চিনিও না, যার কাছ থেকে সংগ্রহ করব।
মুবিনা তার বাড়ি ত্যাগ করার দিন থেকে তার পরিবার জানে না সে বা রফিকা বা অন্যরা কেমন আছে। তিনি বলেন, রফিকার স্বামী জানে না, সে এখন একটি ছেলে শিশুর বাবা। গত সপ্তাহে আমরা হাসপাতালে এসেছি, আমাদের টাকা শেষ হয়ে গেছে। পরিবারের কাছ থেকে সহায়তা চাইবো, তেমন কোনো ব্যবস্থাও নেই, ফোনও বন্ধ। প্রতিটি কাশ্মিরির জন্য এখন সত্যিই কঠিন সময়।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও বর্তমান অনিশ্চিত পরিবেশে কাশ্মিরের একমাত্র মাতৃসদন হাসপাতালে অবস্থান করছে উদ্বিগ্ন, চিন্তিত ও শঙ্কিত লোকজন। প্রতিটি রোগী ও তাদের স্বজনেরা হাসপাতালের করিডোর বা অপারেশন থিয়েটারের বাইরে ভাগ্যে কী আছে, তারই অপেক্ষা করছে।
মোহাম্মদ ইউনুস হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছেন তার স্ত্রীর রুটিন চেক-আপ করে চিকিৎসকের কক্ষ থেকে ফিরে আসার জন্য। তার প্রসবের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর। বিদ্রোহীদের উত্তপ্ত ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত পুলওয়ামা এলাকা থেকে তিনি এসেছেন। তিনি এখন জটিলতা এড়াতে একটি ভাড়া বাসায় থাকার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। জানি না কাল কী হবে। শুনেছি, অনেক আসন্ন মা হাসপাতালেও আসতে পারছেন না।
গত তিন দিন ধরে তাসলিমা আখতার একাকি আছেন হাসপাতালে। গত সপ্তাহে তিনি একটি মেয়ে শিশুর জন্ম দিয়েছেন। এক দিন পর শিশুটিকে তিন মাইল দূরে শিশুদের একটি হাসপাতালে তাকে স্থানান্তরিত করা হয়। এখন এই শিশুটির অবস্থা জানার জন্য তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। এই ভাইবোন সাহায্যের জন্য স্বজনদেরও ডাকতে পারছেন না। আখতার বলেন, আমাদের কপালে এই লেখা ছিল। কোনো অভিযোগ নেই আমার। আল্লাহই সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী।
হাসপাতালের সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার নানা শঙ্কায় পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তার ১৫ বছরের চিকিৎসা ক্যারিয়ারে তিনি কখনো হবু মায়েদের এমন দুরাবস্থায় দেখেননি। তিনি বলেন, এখানে আসা লোকজনের হাতে টাকা নেই, স্বজনদের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়ার কোনো ব্যবস্থাও নেই। চিকিৎসা কর্মীরাও নানা কঠিন অবস্থা অতিবাহিত করছেন।
তবে সরকারি মুখপাত্র রোহিত কানসাল ২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কাশ্মিরের বিভিন্ন হাসপাতালে, সিজারিয়ান ও নরম্যাল, দুই হাজার সন্তান প্রসব ঘটনা ঘটেছে। রোগীদের পর্যাপ্ত পরিচর্যা করা হচ্ছে। হবু মায়েদের কঠিন সময়ের কথাও তিনি অস্বীকার করেন। তার মতে, কাশ্মিরের সহিংসতা ব্যাপকভাবে কমে এসেছে, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।
No comments