বাংলাদেশের ইলিশ আসার খবরে আমজনতা খুশি by পরিতোষ পাল
গত
দু’দিন ধরে কলকাতার মাছের বাজারে ক্রেতাদের একটাই প্রশ্ন, কবে আসছে
বাংলাদেশের ইলিশ? শুধু কলকাতাই নয়, পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র এখন বাংলাদেশের
ইলিশ নিয়ে চলছে নানা নস্টালজিক আলোচনা। সাময়িক সময়ের জন্য হলেও দীর্ঘদিন
বাদে পদ্মা-মেঘনার ইলিশ ভারতে আসছে খবরে খুশি আমজনতা। অনেকে দু’হাত তুলে
প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। আসলে এ বছর
জামাইষষ্ঠি বা রান্নাপুজোর মতো অনুষ্ঠানে ইলিশ বাঙালির পাতে পড়েনি। বর্ষার
মৌসুমেও ইলিশ ছিল অধরা।
তবে দুর্গাপুজোয় অনেক বাড়ির পুজোর ভোগে ইলিশ গুরুত্বপূর্ণ। বিজয়া দশমী পর্যন্ত ইলিশভোজের নানা আচার এপার বাংলায় প্রচলিত। অথচ গঙ্গায় এখন ইলিশের দেখা মেলে না বললেই চলে। সাগর থেকে কিছু ইলিশ ধরা পড়লেও তার স্বাদ তেমনভাবে বাঙালির রসনা তৃপ্তি মেটায় না। আর তাই বাংলাদেশের ইলিশের উপর একটা বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে মাছে-ভাতে বাঙালির। ২০১২ সালের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের ইলিশ পাওয়া যেতো রাজ্যের বাজারে।
কিন্তু সেই বছরেই ইলিশ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিকবার ইলিশ দেয়ার অনুরোধের প্রত্যুত্তরে শেখ হাসিনা শুনিয়েছেন তিস্তার পানি দেয়ার কথা। অবশ্য শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার উদার সিদ্ধান্তে সাময়িকভাবে হলেও এপারের বাঙালি খুশি। ৫০০ টন ইলিশে বাঙালির চাহিদা হয়তো মিটবে না তবে কিছু মানুষের পাতে যে পড়বে তা নিশ্চিত। রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ শুক্রবার বলেছেন, পুজোয় বাঙালির ইলিশ-ভাগ্য প্রসন্ন হতে চলেছে। শনিবার মহালয়ার সকালেই পদ্মার ‘রুপোলি শস্য’ ফের আইনসিদ্ধ পথে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে পারার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বেঙ্গল ফিশ ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকস জানিয়েছেন, বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে আসবে এই ইলিশ। তবে এই ইলিশ আসতে আসতে সোমবার গড়িয়ে যাবে।
কলকাতার পাশাপাশি শিলিগুড়িতেও যাবে সেই ইলিশ। তবে ইলিশের দাম কত হবে তা নিয়েও চলছে জোর চর্চা। মাছ ব্যবসায়ীদের মতে, বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বাংলাদেশের ইলিশের দাম ঠিক হবে নিলামে। তবে দাম যে বেশ চড়া হবে তা নিয়ে নিশ্চিত ক্রেতারা। তবুও বাংলাদেশের একটি ইলিশ যোগাড়ের জন্য বাজারে রোববারই ঢুঁ মারার জন্য তৈরি হয়ে রয়েছেন মানিকতলার অরুণ মুখোপাধ্যায়, গড়িয়াহাটের দীপেন সরকার, যাদবপুরের মিনাক্ষী বিশ্বাসরা। বারাসাত, পাতিপুকুর ও হাওড়ার পাইকারি মাছের বাজারেও আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে ইলিশ প্রিয় বাঙালির।
কংগ্রেস ও বামদের হাত ধরাধরি
কংগ্রেস ও বামদলগুলো পশ্চিমবঙ্গে অস্তিত্বের সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে। এই অবস্থায় মাটি ফিরে পেতে কংগ্রেস ও বামদলগুলো অভিন্ন কর্মসূচির ভিত্তিতে আন্দোলনে নামার কথা ভাবছে। অবশ্য ২০০৪ সালেই বামদলগুলো অভিন্ন কর্মসূচির ভিত্তিতে দিল্লিতে কংগ্রেস সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল। এরপরেও রাজ্যে বামরা কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করেছে। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে পরস্পরের হাত ধরাধরি সম্ভব হয়নি। বরং আলাদা আলাদাভাবে নির্বাচনে লড়াই করতে গিয়ে বামদের যেমন ভরাডুবি হয়েছে তেমনি কংগ্রেসেরও। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বামদের অভিযোগ ছিল, তারা অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস মুখ ফিরিয়ে নেয়াতেই সমঝোতা সম্ভব হয়নি। তবে এবার কংগ্রেসই এগিয়ে এসে বামদের সঙ্গে পথে নামার কথা ঘোষণা করেছে। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি সোমেন মিত্র জানিয়েছেন, অভিন্ন কর্মসূচি তৈরি করে পুজোর পরেই কংগ্রেস বামদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়বে। বাস্তব অবস্থা তুলে ধরে সোমেন মিত্র বলেছেন, আমরা নতুন করে ভাবতে শুরু করেছি। পশ্চিমবঙ্গে আমরা একা লড়াই করতে পারবো না।
লড়াইয়ের সঙ্গী দরকার। আর এ ব্যাপারে যে বামরাই একমাত্র সঙ্গী হতে পারে সেটাও জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তিনি পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, জাতপাতের ভিত্তিতে, ধর্মীয় বিভাজনের লক্ষ্যে রাজ্যে আগে কখনো ভোট হয়নি। আমরা ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছি, বামরা পেয়েছে ৭ শতাংশ। আমাদের ওপর মানুষ আস্থা রাখেনি। কিন্তু দুইপক্ষ মিলে মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব। কংগ্রেসের এই মনোভাবে বামরাও আশান্বিত। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী মনে করেন, তৃণমূল কংগ্রেসের ওপর মানুষ আস্থা হারিয়েছে। আর বিজেপি কী সর্বনাশা শক্তি সেটাও মানুষ বুঝতে পারছেন। তাই এই পরিস্থিতিতে বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিই একমাত্র বিকল্প। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করা নিয়ে বামদলগুলোর মধ্যে বিতর্ক ছিল।
তবে এতদিনে ফরওয়ার্ড ব্লক পার্টি স্বীকার করেছে, গত নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনো ভাবেই সমঝোতায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ‘বাস্তবোচিত’ ছিল না। এক সময় দলটি কংগ্রেসের সঙ্গ এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ফরওয়ার্ড ব্লকের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মূল্যায়ন হলো যে, তৃণমূল কংগ্রেসের মতো ‘লুম্পেন’ শক্তি এবং অন্যদিকে বিজেপির মতো সামপ্রদায়িক শক্তির মোকাবিলায় ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সব দলকে নিয়ে মঞ্চ গড়া দরকার। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বামদলগুলোর মধ্যে বোধোদয় হওয়ার পাশাপাশি কংগ্রেসের মনোভাবের পরিবর্তনে আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গে বিকল্প হিসেবে গণতান্ত্রিক শক্তির উঠে আসা কোনো অসম্ভব কিছু নয়।
বাংলার সঙ্গে শব্দ জুড়ুক কেন্দ্র
পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলের চেষ্টা চলছে বামফ্রন্ট আমল থেকে। সর্বশেষ পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার রাজ্য বিধানসভায় নাম পাল্টে বাংলা করার প্রস্তাব পাঠিয়েছে ভারত সরকারের কাছে। তারাই বিল আনবে এবং পরে তা রাজ্যের বিধানসভায় গৃহীত হলে তবেই রাষ্ট্রপতির অনুমোদন চাওয়া হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের নাম পাল্টাতে মোটেই আগ্রহী নয়। তবে কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাম পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে বলেছেন। এমনকি বাংলা শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দ জুড়তেও যে রাজ্যের আপত্তি নেই সে কথাও জানিয়ে এসেছেন। মমতা সাংবাদিকদেরও বলেছেন, বাংলাকে সামনে রেখে কিছু পরিবর্তন করতে চাইলে রাজি আছি। তবুও নাম পরিবর্তন হোক এই দাবিই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আসলে রাজ্যের যুক্তি, বিভিন্ন আন্তঃরাজ্য বৈঠকে ইংরেজিতে রাজ্যের নাম ওয়েস্ট বেঙ্গল হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের ডাক পড়ে একেবারে শেষে। তখন আর কারও কথা শোনার ধৈর্য থাকে না।
সেই কারণেই নাম পরিবর্তনের ভাবনার শুরু। পশ্চিমবঙ্গের নাম কি হওয়া উচিত তা নিয়ে বিশিষ্টজনদের নানা মত রয়েছে। একদল মনে করেন, দেশ ভাগের ইতিহাসের স্বার্থেই পশ্চিমবঙ্গ নামটি রাখাই বাঞ্ছনীয়। তবে অন্যরা রাজ্যের নাম হিসেবে বঙ্গ, বঙ্গদেশ ও বাংলা এই সব নামের কথা বলেছেন। ২০১৬ সালে রাজ্য বিধানসভায় সর্বসম্মতিতে বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় যথাক্রমে বাংলা, বেঙ্গল ও বঙ্গাল, এই তিনটি নামের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। তখন ভারত সরকার জানিয়েছিল, তিন ভাষাতে একই নাম হতে হবে। এর পরেই নতুন করে বিধানসভা বাংলা নামের প্রস্তাব এনে তা পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। তবে এবার পররাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে এই নামের মিল থাকায় এটি নাম হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। এরপর থেকে নাম পরিবর্তনের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে রয়েছে। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই রাজ্য বাংলা নামের সঙ্গে শব্দ জোড়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
স্বর্গের নিচে মহাবিশৃঙ্খলা
চীনের রাজনীতি, অর্থনীতি ও উন্নয়নের মডেল নিয়ে বিতর্ক গোটা বিশ্বজুড়েই। ভারতেও কমিউনিস্টদের মধ্যে নানা প্রশ্নে মতান্তর রয়েছে। সমাজতন্ত্রের স্বর্গ হিসেবে কমিউনিস্টদের কাছে পরিচিত চীনে দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারব্যবস্থার পক্ষপাতিত্ব নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। তবে এসব সত্ত্বেও চীনের প্রতি ভারতীয় কমিউনিস্টদের সহানুভূতি প্রশ্নাতীত। ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি সিপিআইএমের নেতারাও এই দলে। ফলে চীন নিয়ে কোনো বিরূপ আলোচনায় সিপিআইএম নেতাদের সায় দিতে দেখা যায়নি। তবে এতদিন পরে পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিআইএমের পলিটব্যুরোর সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য কলম ধরেছেন চীনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে। লিখেছেন একটি বই। নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই গোটা পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, কোনো চরিত্রের পক্ষে বা বিপক্ষে আমি দাঁড়াইনি।
যে বিষয়টি বাস্তবে প্রমাণিত, সেটিই সত্য। শুধু তত্ত্বে নয়, এই মার্ক্সীয় ধারণাকেই আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেছি।’’ অবশ্য তিনি বইয়ের নামকরণ করেছেন, ‘স্বর্গের নিচে মহাবিশৃঙ্খলা’। অবশ্য শিরোনামটি তিনি ধার করেছেন চীনের মহান নেতা মাও সেতুংয়ের কাছ থেকে। স্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মাও সেতুং এই কথাটি লিখেছিলেন। জানা গেছে, সাধারণ মানুষের মনে ওঠা নানা প্রশ্নকে তিনি চীনের সাফল্যের মাঝেই সামনে আনার চেষ্টা করেছেন। তার বইয়ের একটি অনুচ্ছেদের নাম ‘চাঁদেরও কলঙ্ক আছে’।
বুদ্ধবাবু চীনের অভাবনীয় সাফল্যের কথা লেখার পাশাপাশি দুর্নীতি, উন্নয়নের জন্য বহুসংখ্যক মানুষের উচ্ছেদ, সকল নাগরিকের জন্য বিচারব্যবস্থার নাগাল পাওয়ার সমান সুযোগ না থাকা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিদ্ধ আধুনিক চীন নিয়েও আলোচনা করেছেন। তবে এসব ক্ষেত্রে চীন সরকারের দেয়া ব্যাখ্যার পরও যে তার কাছে বহু প্রশ্নের উত্তর নেই- সেকথাও বলেছেন বুদ্ধবাবু। বুদ্ধবাবু লিখেছেন, চীনের নেতারা আমাকে বলেছিলেন, পার্টিই শেষ পর্যন্ত রক্ষা করবে, যদি গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা বজায় থাকে। আর যদি না থাকে? ব্যক্তিপুজোয় বিলীন হয়ে যায়? এখনো উত্তর মেলেনি। অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি এই বইটি লেখার তাগিদ অনুভব করেছিলেন। নিজে লিখতে না পারলেও বছরখানেক ধরে ওঁর কথা শুনে শুনে বইটা তৈরি করা হয়েছে।
তবে দুর্গাপুজোয় অনেক বাড়ির পুজোর ভোগে ইলিশ গুরুত্বপূর্ণ। বিজয়া দশমী পর্যন্ত ইলিশভোজের নানা আচার এপার বাংলায় প্রচলিত। অথচ গঙ্গায় এখন ইলিশের দেখা মেলে না বললেই চলে। সাগর থেকে কিছু ইলিশ ধরা পড়লেও তার স্বাদ তেমনভাবে বাঙালির রসনা তৃপ্তি মেটায় না। আর তাই বাংলাদেশের ইলিশের উপর একটা বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে মাছে-ভাতে বাঙালির। ২০১২ সালের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের ইলিশ পাওয়া যেতো রাজ্যের বাজারে।
কিন্তু সেই বছরেই ইলিশ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিকবার ইলিশ দেয়ার অনুরোধের প্রত্যুত্তরে শেখ হাসিনা শুনিয়েছেন তিস্তার পানি দেয়ার কথা। অবশ্য শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার উদার সিদ্ধান্তে সাময়িকভাবে হলেও এপারের বাঙালি খুশি। ৫০০ টন ইলিশে বাঙালির চাহিদা হয়তো মিটবে না তবে কিছু মানুষের পাতে যে পড়বে তা নিশ্চিত। রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ শুক্রবার বলেছেন, পুজোয় বাঙালির ইলিশ-ভাগ্য প্রসন্ন হতে চলেছে। শনিবার মহালয়ার সকালেই পদ্মার ‘রুপোলি শস্য’ ফের আইনসিদ্ধ পথে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে পারার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বেঙ্গল ফিশ ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকস জানিয়েছেন, বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে আসবে এই ইলিশ। তবে এই ইলিশ আসতে আসতে সোমবার গড়িয়ে যাবে।
কলকাতার পাশাপাশি শিলিগুড়িতেও যাবে সেই ইলিশ। তবে ইলিশের দাম কত হবে তা নিয়েও চলছে জোর চর্চা। মাছ ব্যবসায়ীদের মতে, বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বাংলাদেশের ইলিশের দাম ঠিক হবে নিলামে। তবে দাম যে বেশ চড়া হবে তা নিয়ে নিশ্চিত ক্রেতারা। তবুও বাংলাদেশের একটি ইলিশ যোগাড়ের জন্য বাজারে রোববারই ঢুঁ মারার জন্য তৈরি হয়ে রয়েছেন মানিকতলার অরুণ মুখোপাধ্যায়, গড়িয়াহাটের দীপেন সরকার, যাদবপুরের মিনাক্ষী বিশ্বাসরা। বারাসাত, পাতিপুকুর ও হাওড়ার পাইকারি মাছের বাজারেও আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে ইলিশ প্রিয় বাঙালির।
কংগ্রেস ও বামদের হাত ধরাধরি
কংগ্রেস ও বামদলগুলো পশ্চিমবঙ্গে অস্তিত্বের সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে। এই অবস্থায় মাটি ফিরে পেতে কংগ্রেস ও বামদলগুলো অভিন্ন কর্মসূচির ভিত্তিতে আন্দোলনে নামার কথা ভাবছে। অবশ্য ২০০৪ সালেই বামদলগুলো অভিন্ন কর্মসূচির ভিত্তিতে দিল্লিতে কংগ্রেস সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল। এরপরেও রাজ্যে বামরা কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করেছে। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে পরস্পরের হাত ধরাধরি সম্ভব হয়নি। বরং আলাদা আলাদাভাবে নির্বাচনে লড়াই করতে গিয়ে বামদের যেমন ভরাডুবি হয়েছে তেমনি কংগ্রেসেরও। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বামদের অভিযোগ ছিল, তারা অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস মুখ ফিরিয়ে নেয়াতেই সমঝোতা সম্ভব হয়নি। তবে এবার কংগ্রেসই এগিয়ে এসে বামদের সঙ্গে পথে নামার কথা ঘোষণা করেছে। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি সোমেন মিত্র জানিয়েছেন, অভিন্ন কর্মসূচি তৈরি করে পুজোর পরেই কংগ্রেস বামদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়বে। বাস্তব অবস্থা তুলে ধরে সোমেন মিত্র বলেছেন, আমরা নতুন করে ভাবতে শুরু করেছি। পশ্চিমবঙ্গে আমরা একা লড়াই করতে পারবো না।
লড়াইয়ের সঙ্গী দরকার। আর এ ব্যাপারে যে বামরাই একমাত্র সঙ্গী হতে পারে সেটাও জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তিনি পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, জাতপাতের ভিত্তিতে, ধর্মীয় বিভাজনের লক্ষ্যে রাজ্যে আগে কখনো ভোট হয়নি। আমরা ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছি, বামরা পেয়েছে ৭ শতাংশ। আমাদের ওপর মানুষ আস্থা রাখেনি। কিন্তু দুইপক্ষ মিলে মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব। কংগ্রেসের এই মনোভাবে বামরাও আশান্বিত। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী মনে করেন, তৃণমূল কংগ্রেসের ওপর মানুষ আস্থা হারিয়েছে। আর বিজেপি কী সর্বনাশা শক্তি সেটাও মানুষ বুঝতে পারছেন। তাই এই পরিস্থিতিতে বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিই একমাত্র বিকল্প। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করা নিয়ে বামদলগুলোর মধ্যে বিতর্ক ছিল।
তবে এতদিনে ফরওয়ার্ড ব্লক পার্টি স্বীকার করেছে, গত নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনো ভাবেই সমঝোতায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ‘বাস্তবোচিত’ ছিল না। এক সময় দলটি কংগ্রেসের সঙ্গ এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ফরওয়ার্ড ব্লকের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মূল্যায়ন হলো যে, তৃণমূল কংগ্রেসের মতো ‘লুম্পেন’ শক্তি এবং অন্যদিকে বিজেপির মতো সামপ্রদায়িক শক্তির মোকাবিলায় ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সব দলকে নিয়ে মঞ্চ গড়া দরকার। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বামদলগুলোর মধ্যে বোধোদয় হওয়ার পাশাপাশি কংগ্রেসের মনোভাবের পরিবর্তনে আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গে বিকল্প হিসেবে গণতান্ত্রিক শক্তির উঠে আসা কোনো অসম্ভব কিছু নয়।
বাংলার সঙ্গে শব্দ জুড়ুক কেন্দ্র
পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলের চেষ্টা চলছে বামফ্রন্ট আমল থেকে। সর্বশেষ পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার রাজ্য বিধানসভায় নাম পাল্টে বাংলা করার প্রস্তাব পাঠিয়েছে ভারত সরকারের কাছে। তারাই বিল আনবে এবং পরে তা রাজ্যের বিধানসভায় গৃহীত হলে তবেই রাষ্ট্রপতির অনুমোদন চাওয়া হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের নাম পাল্টাতে মোটেই আগ্রহী নয়। তবে কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাম পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে বলেছেন। এমনকি বাংলা শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দ জুড়তেও যে রাজ্যের আপত্তি নেই সে কথাও জানিয়ে এসেছেন। মমতা সাংবাদিকদেরও বলেছেন, বাংলাকে সামনে রেখে কিছু পরিবর্তন করতে চাইলে রাজি আছি। তবুও নাম পরিবর্তন হোক এই দাবিই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আসলে রাজ্যের যুক্তি, বিভিন্ন আন্তঃরাজ্য বৈঠকে ইংরেজিতে রাজ্যের নাম ওয়েস্ট বেঙ্গল হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের ডাক পড়ে একেবারে শেষে। তখন আর কারও কথা শোনার ধৈর্য থাকে না।
সেই কারণেই নাম পরিবর্তনের ভাবনার শুরু। পশ্চিমবঙ্গের নাম কি হওয়া উচিত তা নিয়ে বিশিষ্টজনদের নানা মত রয়েছে। একদল মনে করেন, দেশ ভাগের ইতিহাসের স্বার্থেই পশ্চিমবঙ্গ নামটি রাখাই বাঞ্ছনীয়। তবে অন্যরা রাজ্যের নাম হিসেবে বঙ্গ, বঙ্গদেশ ও বাংলা এই সব নামের কথা বলেছেন। ২০১৬ সালে রাজ্য বিধানসভায় সর্বসম্মতিতে বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় যথাক্রমে বাংলা, বেঙ্গল ও বঙ্গাল, এই তিনটি নামের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। তখন ভারত সরকার জানিয়েছিল, তিন ভাষাতে একই নাম হতে হবে। এর পরেই নতুন করে বিধানসভা বাংলা নামের প্রস্তাব এনে তা পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। তবে এবার পররাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে এই নামের মিল থাকায় এটি নাম হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। এরপর থেকে নাম পরিবর্তনের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে রয়েছে। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই রাজ্য বাংলা নামের সঙ্গে শব্দ জোড়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
স্বর্গের নিচে মহাবিশৃঙ্খলা
চীনের রাজনীতি, অর্থনীতি ও উন্নয়নের মডেল নিয়ে বিতর্ক গোটা বিশ্বজুড়েই। ভারতেও কমিউনিস্টদের মধ্যে নানা প্রশ্নে মতান্তর রয়েছে। সমাজতন্ত্রের স্বর্গ হিসেবে কমিউনিস্টদের কাছে পরিচিত চীনে দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারব্যবস্থার পক্ষপাতিত্ব নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। তবে এসব সত্ত্বেও চীনের প্রতি ভারতীয় কমিউনিস্টদের সহানুভূতি প্রশ্নাতীত। ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি সিপিআইএমের নেতারাও এই দলে। ফলে চীন নিয়ে কোনো বিরূপ আলোচনায় সিপিআইএম নেতাদের সায় দিতে দেখা যায়নি। তবে এতদিন পরে পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিআইএমের পলিটব্যুরোর সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য কলম ধরেছেন চীনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে। লিখেছেন একটি বই। নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই গোটা পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, কোনো চরিত্রের পক্ষে বা বিপক্ষে আমি দাঁড়াইনি।
যে বিষয়টি বাস্তবে প্রমাণিত, সেটিই সত্য। শুধু তত্ত্বে নয়, এই মার্ক্সীয় ধারণাকেই আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেছি।’’ অবশ্য তিনি বইয়ের নামকরণ করেছেন, ‘স্বর্গের নিচে মহাবিশৃঙ্খলা’। অবশ্য শিরোনামটি তিনি ধার করেছেন চীনের মহান নেতা মাও সেতুংয়ের কাছ থেকে। স্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মাও সেতুং এই কথাটি লিখেছিলেন। জানা গেছে, সাধারণ মানুষের মনে ওঠা নানা প্রশ্নকে তিনি চীনের সাফল্যের মাঝেই সামনে আনার চেষ্টা করেছেন। তার বইয়ের একটি অনুচ্ছেদের নাম ‘চাঁদেরও কলঙ্ক আছে’।
বুদ্ধবাবু চীনের অভাবনীয় সাফল্যের কথা লেখার পাশাপাশি দুর্নীতি, উন্নয়নের জন্য বহুসংখ্যক মানুষের উচ্ছেদ, সকল নাগরিকের জন্য বিচারব্যবস্থার নাগাল পাওয়ার সমান সুযোগ না থাকা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিদ্ধ আধুনিক চীন নিয়েও আলোচনা করেছেন। তবে এসব ক্ষেত্রে চীন সরকারের দেয়া ব্যাখ্যার পরও যে তার কাছে বহু প্রশ্নের উত্তর নেই- সেকথাও বলেছেন বুদ্ধবাবু। বুদ্ধবাবু লিখেছেন, চীনের নেতারা আমাকে বলেছিলেন, পার্টিই শেষ পর্যন্ত রক্ষা করবে, যদি গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা বজায় থাকে। আর যদি না থাকে? ব্যক্তিপুজোয় বিলীন হয়ে যায়? এখনো উত্তর মেলেনি। অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি এই বইটি লেখার তাগিদ অনুভব করেছিলেন। নিজে লিখতে না পারলেও বছরখানেক ধরে ওঁর কথা শুনে শুনে বইটা তৈরি করা হয়েছে।
No comments