আমেরিকার সঙ্গে মিত্রদের তীব্র কথার লড়াই
যুক্তরাষ্ট্রের
সঙ্গে দেশটির প্রথাগত মিত্র রাষ্ট্রগুলোর তীব্র বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ ৭ শিল্পোন্নত দেশের সংগঠন জি৭-এর বার্ষিক সম্মেলন থেকে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আগেভাগে বিদায় নেয়ার পর থেকে শুরু হয়
এই কথার লড়াই। কানাডায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন নিয়ে চাপা উত্তেজনা ছিল। তবে
সাময়িকভাবে মনে হয়েছিল সব দেশ কিছুটা হলেও ঐক্যে পৌঁছেছে। কিন্তু সম্মেলন
শেষে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর একটি সংবাদ সম্মেলন শেষে
ক্ষোভে ফেটে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কানাডা থেকে বিমানে করে
সিঙ্গাপুর যাওয়ার পথেই বিমানেই তিনি নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে নিজের ক্ষোভ
ঝাড়েন তিনি। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের পর তার উপদেষ্টারাও ট্রুডোর
ওপর ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। জি৭-এর যৌথ বিবৃতি থেকে ট্রাম্প প্রথমে নিজ
সরকারের সমর্থন প্রত্যাহার করেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এই সিদ্ধান্তের তীব্র
প্রতিবাদ জানায় ফ্রান্স ও জার্মানি। বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে
দেশটির পুরনো মিত্ররাষ্ট্র সমূহের মধ্যে যেই মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, যৌথ
বিবৃতিতে তা-ই ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু ট্রাম্প শেষ মুহূর্তে
সেখান থেকেও সরে আসেন। মূলত, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ট্রাম্প
প্রশাসন যেই শুল্ক আরোপ করেছে, তারই বিরোধিতা করছে প্রায় সকল মার্কিন
মিত্ররাষ্ট্র। জি৭ সম্মেলন শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কানাডার
প্রধানমন্ত্রী মার্কিন শুল্কের ব্যাপারে নিজের আপত্তি পুনর্ব্যক্ত করেন।
১লা জুলাই আমেরিকা থেকে পণ্য আমদানির ওপরও পাল্টা শুল্ক আরোপের অঙ্গীকার
ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘কানাডিয়ানরা নম্র ও যৌক্তিক। তবে আমরা
হুমকির মুখে নতি স্বীকার করবো না।’ মূলত, ট্রুডোর এই বক্তব্যেই ক্ষিপ্ত হন
ট্রাম্প। এয়ারফোর্স ওয়ানে করে সিঙ্গাপুর যাওয়ার সময়ই তিনি টুইটারে জানিয়ে
দেন যে, সম্মেলনের যৌথ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর না করতে তিনি মার্কিন
কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি, গাড়ি আমদানির ওপরও শুল্ক আরোপের
কথা ভাবছেন তিনি। তিনি বলেন, ট্রুডোর ‘মিথ্যা বিবৃতি’র প্রতিক্রিয়ায় তিনি
এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাশাপাশি, মার্কিন কৃষক, শ্রমিক ও প্রতিষ্ঠানের ওপর
কানাডা যেই বিপুল শুল্ক আরোপ করে রেখেছে, আমেরিকার শুল্ক তারই প্রতিক্রিয়া
মাত্র। এরপর ট্রাম্পের শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ল্যারি কুডলো ও বাণিজ্য
উপদেষ্টা পিটার নাভারো টিভি পর্দায় উপস্থিত হয়ে ট্রুডোর বিরুদ্ধে আরো
আক্রমণ দাগান। কুডলো বলেন, ‘তিনি (ট্রুডো) আমাদের পেছন থেকে ছুরি মেরেছেন।’
অপরদিকে নাভারো বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার
কূটনীতিতে লিপ্ত হয়ে পরে আবার পেছন থেকে ছুরি মারার চেষ্টা করবেন যেসব
নেতা, তাদের জন্য নরকে আলাদা স্থান বরাদ্দ আছে।’ ওদিকে ট্রুডোর কার্যালয়
থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে এমন কিছু
বলেন নি, যা তিনি আগে প্রকাশ্যে বলেননি। বিবৃতিতে বলা হয়, জি৭ সম্মেলনে
গৃহীত সমঝোতা মেনে চলবে কানাডা। ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া দেখে জি৭ সদস্যভুক্ত
বাকি ৫ দেশও কানাডার মতো স্তম্ভিত। আমেরিকা ছাড়া সবাইই চূড়ান্ত বিবৃতি
মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন বলেন,
রাগ বা ক্ষোভ দিয়ে বা অসতর্ক মন্তব্যের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
প্রভাবিত করা যাবে না। ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়,
‘আসুন সিরিয়াস হই। আমাদের জনগণের উপযুক্ত আচরণ করি। আমরা যেসব অঙ্গীকার
করি, সেসব আমরা রাখি।’ জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রী হেইকো মাস বলেন, ‘স্রেফ
২৮০ শব্দের এক টুইটার বার্তায় নিমিষেই আপনি বিশ্বাস ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে
পারেন।’ সম্মেলনের চূড়ান্ত বিবৃতিতে, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য,
ফ্রান্স, ইতালি, জাপান ও জার্মানি ‘মুক্ত, সুষ্ঠু ও পারস্পরিক লাভজনক
বাণিজ্যে’র প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সম্মত হয়। এছাড়া সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে
লড়াইয়ের গুরুত্ব নিয়েও সবাই একমত হয়। বিবৃতিতে অন্যান্য অনেক বিষয়ে ৭ দেশের
নেতা প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছিলেন। যেমন, রাশিয়ার ‘অস্থিতিশীল আচরণ বন্ধ’ ও
সিরিয়ান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রতি দেশটির সমর্থন প্রত্যাহারের
দাবি জানানো হয়। তেহরানের পারমানবিক প্রকল্প যাতে শান্তিপূর্ণ হয়, তা
‘চিরস্থায়ীভাবে’ নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়। জলবায়ু ইস্যুতে
‘দ্বিমত পোষণ করা’র ব্যাপারে দেশগুলো একমত হয়েছে। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। দৃশ্যত, এখানে
ট্রাম্পের অবস্থানকে মেনে নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের দরিদ্রতম নারী ও মেয়েদের
শিক্ষার জন্য ৩০০ কোটি ডলার অর্থায়নেও সম্মত হয় সব দেশ। তবে প্রাথমিক
সম্মতি সত্ত্বেও শেষ অবধি যুক্তরাষ্ট্র এই বিবৃতি থেকে সরে আসে। ১লা জুন
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে স্টিল আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ ও
অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প
বলেছেন, এই পদক্ষেপ ঘরোয়া উৎপাদনকারীদের সুরক্ষার জন্য নেয়া হয়েছে, যা
জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই পদক্ষেপের পর ইইউ হার্লে ডেভিডসন
মটোরসাইকেলসহ নানাবিধ মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। কানাডা ও
মেক্সিকোও পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছে।
জি৭ হলো বিশ্বের শীর্ষ শিল্পোন্নত ৭টি দেশের সংগঠন। এই ৭টি দেশ সম্মিলিতভাবে বিশ্বের ৬০ শতাংশ বাণিজ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। জি৭ সম্মেলনে মূলত অর্থনীতি প্রাধান্য পায়। তবে অন্যান্য বৈশ্বিক ইস্যু নিয়েও এখন এই সম্মেলনে প্রায়ই আলোচনা হয়। ২০১৪ সালের আগে এটি ছিল জি৮। তখন রাশিয়াও ছিল এর সদস্য। তবে ওই বছর ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া দখলে নেয়ার পর রাশিয়াকে এই গ্রুপ থেকে বহিষ্কার করা হয়। শুক্রবার ট্রাম্প মেক্সিকোকে এই গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়ে সকলকে চমকে দেন। তবে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল জানান বাকি কোনো সদস্য রাষ্ট্রই এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নয়।
জি৭ হলো বিশ্বের শীর্ষ শিল্পোন্নত ৭টি দেশের সংগঠন। এই ৭টি দেশ সম্মিলিতভাবে বিশ্বের ৬০ শতাংশ বাণিজ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। জি৭ সম্মেলনে মূলত অর্থনীতি প্রাধান্য পায়। তবে অন্যান্য বৈশ্বিক ইস্যু নিয়েও এখন এই সম্মেলনে প্রায়ই আলোচনা হয়। ২০১৪ সালের আগে এটি ছিল জি৮। তখন রাশিয়াও ছিল এর সদস্য। তবে ওই বছর ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া দখলে নেয়ার পর রাশিয়াকে এই গ্রুপ থেকে বহিষ্কার করা হয়। শুক্রবার ট্রাম্প মেক্সিকোকে এই গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়ে সকলকে চমকে দেন। তবে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল জানান বাকি কোনো সদস্য রাষ্ট্রই এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নয়।
No comments