প্রসঙ্গ চিকিৎসা, ব্যয়ভার বহন করতে চায় বিএনপি: খালেদা চান ইউনাইটেডে সরকারের বিকল্প প্রস্তাব
কারাগারে
অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে
(সিএমএইচ) চিকিৎসার জন্য প্রস্তাব দেবে সরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব
মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি
জানানোর প্রেক্ষিতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। অন্যদিকে রাজধানীর ইউনাইটেড
হাসপাতালে চিকিৎসার দাবিতে অনড় বিএনপি।
সোমবার ডিআইজি প্রিজন্সের একটি বক্তব্যের সূত্র ধরে বিএনপি’র তরফে জানিয়ে দেয়া হয়েছে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হলে বিএনপিই তার খরচ বহন করবে। খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানিয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে মন্ত্রীর একান্ত সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবের একান্ত সচিবের কাছে আবেদনটি জমা দেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং তার ভাগনে ডা. মোহাম্মদ মামুন। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শহীদ মিনারে শত নাগরিক জাতীয় কমিটি আয়োজিত মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি পুলিশ। বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে আয়োজকদের কাছে অবস্থান কর্মসূচির অনুমতি ছিল কিনা জানতে চায় পুলিশ। এরপর কেড়ে নেয়া হয় ব্যানার।
ইউনাইটেডেই চিকিৎসা নিতে চান খালেদা : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দি খালেদা জিয়ার অস্বীকৃতির কারণে চিকিৎসার জন্য গতকালও তাকে নেয়া হয়নি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। মঙ্গলবার সকালে তাকে ওই হাসপাতালে নেয়ার সরকারি প্রস্তুতি ছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য গতকাল দ্বিতীয় দফায় প্রস্তুত ছিল বিএসএমএমইউ। সেখানে তাকে নেয়ার জন্য ভোর ৬টা থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগার থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বাড়ানো হয় পুলিশি নিরাপত্তা। খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেয়ার নির্ধারিত সড়কে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ভিড় করেন গণমাধ্যমকর্মীরাও। খালেদা জিয়াকে নেয়ার জন্য কারাফটকে যায় গাড়ি। কিন্তু অপেক্ষার প্রহর বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে প্রতীক্ষার ইতি ঘটান কারা অধিদপ্তরের প্রধান। কারা অধিদপ্তরের গেটে বেলা পৌনে ১১টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। তিনি বলেন, আজকে (মঙ্গলবার) আমাদের প্রস্তুতি ছিল। বেলা ১১টার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে নেয়ার কথা ছিল। আমাদের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়া ছিল। কিন্তু তিনি যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন ইউনাইটেড হাসপাতাল ছাড়া চিকিৎসা নেবেন না। আইজি প্রিজন্স বলেন, আমি নিজেই গতকাল (সোমবার) গিয়ে উনাকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছি। আজ (মঙ্গলবার) সকালেও চিকিৎসক পাঠিয়েছি। উনি বলে দিয়েছেন, ইউনাইটেড হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও যাবেন না। উনি যদি মত পরিবর্তন করেন, তাহলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাবো। তবে বিএসএমএমইউতে অনাস্থার বিষয়টি তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি বলে জানান তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আইজি প্রিজন্স বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী সরকারের হাইয়েস্ট যে রেফারেল মাল্টি ডিসিপ্লিনারি হাসপাতাল আছে, সেখানেই আমরা পাঠাতে পারি।
সেখানে যদি কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ না থাকে, তাহলে প্রাইভেট হাসপাতালে করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা থাকলে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। কারাবিধি অনুযায়ী বিএসএমএমইউ সর্বোচ্চ। বেসরকারি হাসপাতালের বিষয়ে কারাকর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। পরিবার আবেদন করলে তা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে পারি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে বলেছেন, তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসার দেয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়া হবে। এদিকে বিএনপি খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে না নেয়ার ঘোষণা আসার পর মোতায়েন করা বাড়তি পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেয়া হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পাওয়ায় পুলিশ সদস্যরা পুরান ঢাকা থেকে শাহবাগ পর্যন্ত তাদের নিরাপত্তা প্রহরা থেকে সরে যান।
চিকিৎসার ব্যয়ভার নেবে বিএনপি: মোশাররফ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে তার পছন্দ অনুযায়ী ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে প্রয়োজনে দলের পক্ষ থেকে চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার বহন করা হবে। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। খন্দকার মোশাররফ বলেন, আইজি প্রিজন্স গণমাধ্যমে বলেছেন- কারাবিধি অনুযায়ী প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। খালেদা জিয়াকে প্রাইভেট হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার চিকিৎসা ব্যয় কে বহন করবে সে সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হবে। এমন কোনো সিদ্ধান্ত না থাকায় খালেদা জিয়াকে পিজি হাসপাতালেই নিতে হবে। এই বক্তব্যই প্রমাণ করে কেন এতদিন খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। এরই প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানোর আবেদন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে দেশনেত্রীর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই- দেশনেত্রীর সুচিকিৎসার বিষয়ে রাজনৈতিক কারণে অবহেলা কিংবা বিলম্ব করা হলে তার পরিণাম সরকারের জন্য শুভ হবে না। দেশবাসী বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা সরকারের অমানবিক আচরণে ক্ষুব্ধ। খন্দকার মোশাররফ বলেন, দুইদিন ধরে খালেদা জিয়াকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউতে নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এর আগে তাকে সেখানে নেয়া হলে সেখানকার ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ এবং চিকিৎসা সেবার বিষয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। আমরা দেশনেত্রীর উপযুক্ত চিকিৎসা চাই বলেই গণমাধ্যমের মাধ্যমে সরকারকে জানাতে চাই, প্রয়োজনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সব ব্যয় বিএনপিই বহন করবে। কাজেই কালবিলম্ব না করে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হোক। তিনি বলেন, তথাকথিত ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সুতরাং খালেদা জিয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারি অনুমোদন ও অর্থ সংস্থানের বিষয়ে এতদিনেও সিদ্ধান্ত না হওয়া রহস্যজনক এবং নিন্দনীয়।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে শুধু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিতই করা হয়নি বরং তার স্বাস্থ্যের অবনতির কথাও গোপন রাখার অপচেষ্টা করা হয়েছে। এই ঘটনায় স্পষ্ট বোঝা যায়, সরকার তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়ার জীবন বিনা চিকিৎসায় ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থাইটিস, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তার দুই হাঁটু এবং দুই চোখেই অপারেশন করতে হয়েছে। ফলে তাকে সবসময়ই যোগ্য চিকিৎসকের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়। অথচ নির্জন এই কারাগারে তাকে দেখার জন্য জুনিয়র ডাক্তার ও ডিপ্লোমা নার্স নিয়োগ করে সরকার দাবি করছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ড. মোশাররফ বলেন, ৩ বারের নির্বাচিত এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীর স্বাস্থ্যের যে অবস্থা তাতে তাকে সর্বক্ষণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা রাখা একান্তই জরুরি বলে মতামত দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সার্জনগণ। আমাদের দলের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে দুইবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব জানিয়েছি। অনতিবিলম্বে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা এবং এমআরআইসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর দাবি করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কিছুই করা হয়নি। এখন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্থাইটিসের ব্যথা বৃদ্ধির ফলে তিনি চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়ছেন। পাশাপাশি তার অপারেশন করা চোখ লাল হয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত তার উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে তার শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হতে পারে। আমরা এটাও সরকারকে জানিয়েছি। কিন্তু তার সুচিকিৎসার কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে গত ৫ই জুন তিনি হঠাৎ করে অচেতন হয়ে পড়েন। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি জেল কর্তৃপক্ষ তার পরিবারের কোনো সদস্যকেও জানায়নি এবং কেন তিনি অচেতন হয়ে পড়লেন তা পরীক্ষার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গত ৮ই জুন তার পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত সাক্ষাতে গিয়ে এই বিষয়টি জানতে পারেন। ৫ দফা আবেদনের পর গত ৯ই জুন কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে ঢাকা সিভিল সার্জনের উপস্থিতিতে দেখা করার অনুমতি পান দেশনেত্রীর চিকিৎসা করতেন এমন ৪ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। তারা জানতে পারেন- ৫ই জুন দুপুর ১টার দিকে দেশনেত্রী ৫/৭ মিনিট চেতনা হারান এবং সে সময়ের কোনো কিছু মনে করতে না পারছেন না। এ বিষয়টিকে চিকিৎসকরা মারাত্মক বলে মনে করেন। তাদের মতে এটা ছিল ট্রানজিয়েন্ট স্কিমিক অ্যাটাক-টিআইএ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফএম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- আগামীতে একটা বড় ধরনের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। এই ৪ জন তাদের পর্যবেক্ষণ ও মতামত লিখিতভাবে কারাকর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন। তারা বিশেষ কিছু পরীক্ষা ও যোগ্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়ার জন্য দেশনেত্রীকে অবিলম্বে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করেছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রেস ব্রিফিংয়ের পর এ বিষয়ে সরকারের আইনমন্ত্রী, সেতুমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুখ খোলেন। তারা এখন বলছেন যে, ৫ই জুন রোজা রাখার কারণে খালেদা জিয়ার সুগার কমে যাওয়ায় তার মাথা ঘুরে গিয়েছিল মাত্র এবং একটা চকোলেট খেয়ে তিনি ভালো হয়ে যান। আইজি প্রিজন্সও একই কথা বললেও স্বীকার করেছেন যে, দেশনেত্রীর আর্থাইটিস সমস্যা বেড়েছে। ড. মোশাররফ বলেন, গত ৫ই জুন সংঘটিত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সম্পর্কে সরকারের মন্ত্রীবর্গ, অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইজি প্রিজন প্রায় ১ সপ্তাহ পরে ১১ই জুন মুখ খুললেন কেন? কেন এতদিন ঘটনাটি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করা হলো? কেন ইতিমধ্যে তার হঠাৎ এত বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়নি? অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন- ৯ই জুন চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার অজ্ঞান হওয়ার কথা বলে নাকি আদালতের সহানুভূতি লাভের চেষ্টা করেছেন। অথচ তিনি অবশ্যই জানেন যে, চিকিৎসকদের সাক্ষাতের দিনক্ষণ স্থির করে সরকার। তারা ৯ তারিখে সাক্ষাতের দিন স্থির করেছে বলেই ওই দিন চিকিৎসকরা প্রেস ব্রিফিং করেছেন। মামলার দিন তারিখ সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের জানার কথা-ডাক্তারদের নয়। ড. মোশাররফ বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মরিয়া এই দলবাজ অ্যাটর্নি জেনারেল একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতা নিয়েও অশোভন ও অযৌক্তিক মন্তব্য করায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তিনি বলেন, মানবিক কারণে ঈদের আগেই দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে দেশের বিশিষ্টজনদের সংগঠন শত নাগরিক কমিটি আজ (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায় জাতীয় শহীদ মিনারে মৌন অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। যথাসময়ে শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, চিকিৎসক ও আইনজীবীরা শহীদ মিনারে উপস্থিত হলে পুলিশ বিনা উস্কানিতে মৌন অবস্থান কর্মসূচি পণ্ড করে দেয়। ড. এমাজউদ্দীন আহমেদসহ দেশের বিশিষ্ট জনদের সঙ্গে নির্দয় আচরণ করে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ আলী চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ মিনারে শত নাগরিক জাতীয় কমিটির মৌন অবস্থানে পুলিশের বাধা
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শত নাগরিক জাতীয় কমিটি আয়োজিত মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি পুলিশ। গতকাল বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিল আয়োজকরা। তবে এ সময় আয়োজকদের কাছে অবস্থান কর্মসূচির অনুমতি ছিল কিনা জানতে চায় পুলিশ। এরপর কেড়ে নেয়া হয় ব্যানার। এসময় শত নাগরিক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক তাজমেরী ইসলাম, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের বাধার পরে শত নাগরিক জাতীয় কমিটির কিছু সংখ্যক সদস্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে বসে প্রতিবাদ করেন। এ সময় তারা পৌনে ১২টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ‘মানবিক কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ঈদের আগে মুক্তি দেয়ার দাবিতে আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শত নাগরিক জাতীয় কমিটি একটি মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে আমাদের কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি। দেশের মানুষ ইতিমধ্যেই জেনেছে যে বেগম জিয়া মাইল্ড স্ট্রোক করেছেন। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। তাই আমরা চেয়েছি মানবিক কারণে সরকার যেন বেগম জিয়াকে মুক্তি দেয়।’ এদিকে শত নাগরিক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শত নাগরিক জাতীয় কমিটির উদ্যোগে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঈদের আগে মানবিক কারণে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যে মৌন অবস্থান কর্মসূচি করতে চেয়েছিলাম, তা পুলিশি বাধার মুখে বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি। দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের এমন একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি করতে না দেয়া দুর্ভাগ্যজনক এবং নিন্দনীয়। এতে বোঝা যায় গণতন্ত্রের কি অবস্থা এখন বাংলাদেশে।’
সোমবার ডিআইজি প্রিজন্সের একটি বক্তব্যের সূত্র ধরে বিএনপি’র তরফে জানিয়ে দেয়া হয়েছে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হলে বিএনপিই তার খরচ বহন করবে। খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানিয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে মন্ত্রীর একান্ত সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবের একান্ত সচিবের কাছে আবেদনটি জমা দেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং তার ভাগনে ডা. মোহাম্মদ মামুন। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শহীদ মিনারে শত নাগরিক জাতীয় কমিটি আয়োজিত মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি পুলিশ। বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে আয়োজকদের কাছে অবস্থান কর্মসূচির অনুমতি ছিল কিনা জানতে চায় পুলিশ। এরপর কেড়ে নেয়া হয় ব্যানার।
ইউনাইটেডেই চিকিৎসা নিতে চান খালেদা : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দি খালেদা জিয়ার অস্বীকৃতির কারণে চিকিৎসার জন্য গতকালও তাকে নেয়া হয়নি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। মঙ্গলবার সকালে তাকে ওই হাসপাতালে নেয়ার সরকারি প্রস্তুতি ছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য গতকাল দ্বিতীয় দফায় প্রস্তুত ছিল বিএসএমএমইউ। সেখানে তাকে নেয়ার জন্য ভোর ৬টা থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগার থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বাড়ানো হয় পুলিশি নিরাপত্তা। খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেয়ার নির্ধারিত সড়কে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ভিড় করেন গণমাধ্যমকর্মীরাও। খালেদা জিয়াকে নেয়ার জন্য কারাফটকে যায় গাড়ি। কিন্তু অপেক্ষার প্রহর বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে প্রতীক্ষার ইতি ঘটান কারা অধিদপ্তরের প্রধান। কারা অধিদপ্তরের গেটে বেলা পৌনে ১১টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। তিনি বলেন, আজকে (মঙ্গলবার) আমাদের প্রস্তুতি ছিল। বেলা ১১টার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে নেয়ার কথা ছিল। আমাদের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়া ছিল। কিন্তু তিনি যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন ইউনাইটেড হাসপাতাল ছাড়া চিকিৎসা নেবেন না। আইজি প্রিজন্স বলেন, আমি নিজেই গতকাল (সোমবার) গিয়ে উনাকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছি। আজ (মঙ্গলবার) সকালেও চিকিৎসক পাঠিয়েছি। উনি বলে দিয়েছেন, ইউনাইটেড হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও যাবেন না। উনি যদি মত পরিবর্তন করেন, তাহলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাবো। তবে বিএসএমএমইউতে অনাস্থার বিষয়টি তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি বলে জানান তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আইজি প্রিজন্স বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী সরকারের হাইয়েস্ট যে রেফারেল মাল্টি ডিসিপ্লিনারি হাসপাতাল আছে, সেখানেই আমরা পাঠাতে পারি।
সেখানে যদি কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ না থাকে, তাহলে প্রাইভেট হাসপাতালে করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা থাকলে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। কারাবিধি অনুযায়ী বিএসএমএমইউ সর্বোচ্চ। বেসরকারি হাসপাতালের বিষয়ে কারাকর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। পরিবার আবেদন করলে তা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে পারি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে বলেছেন, তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসার দেয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়া হবে। এদিকে বিএনপি খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে না নেয়ার ঘোষণা আসার পর মোতায়েন করা বাড়তি পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেয়া হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পাওয়ায় পুলিশ সদস্যরা পুরান ঢাকা থেকে শাহবাগ পর্যন্ত তাদের নিরাপত্তা প্রহরা থেকে সরে যান।
চিকিৎসার ব্যয়ভার নেবে বিএনপি: মোশাররফ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে তার পছন্দ অনুযায়ী ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে প্রয়োজনে দলের পক্ষ থেকে চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার বহন করা হবে। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। খন্দকার মোশাররফ বলেন, আইজি প্রিজন্স গণমাধ্যমে বলেছেন- কারাবিধি অনুযায়ী প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। খালেদা জিয়াকে প্রাইভেট হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার চিকিৎসা ব্যয় কে বহন করবে সে সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হবে। এমন কোনো সিদ্ধান্ত না থাকায় খালেদা জিয়াকে পিজি হাসপাতালেই নিতে হবে। এই বক্তব্যই প্রমাণ করে কেন এতদিন খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। এরই প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানোর আবেদন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে দেশনেত্রীর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই- দেশনেত্রীর সুচিকিৎসার বিষয়ে রাজনৈতিক কারণে অবহেলা কিংবা বিলম্ব করা হলে তার পরিণাম সরকারের জন্য শুভ হবে না। দেশবাসী বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা সরকারের অমানবিক আচরণে ক্ষুব্ধ। খন্দকার মোশাররফ বলেন, দুইদিন ধরে খালেদা জিয়াকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউতে নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এর আগে তাকে সেখানে নেয়া হলে সেখানকার ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ এবং চিকিৎসা সেবার বিষয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। আমরা দেশনেত্রীর উপযুক্ত চিকিৎসা চাই বলেই গণমাধ্যমের মাধ্যমে সরকারকে জানাতে চাই, প্রয়োজনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সব ব্যয় বিএনপিই বহন করবে। কাজেই কালবিলম্ব না করে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হোক। তিনি বলেন, তথাকথিত ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সুতরাং খালেদা জিয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারি অনুমোদন ও অর্থ সংস্থানের বিষয়ে এতদিনেও সিদ্ধান্ত না হওয়া রহস্যজনক এবং নিন্দনীয়।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে শুধু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিতই করা হয়নি বরং তার স্বাস্থ্যের অবনতির কথাও গোপন রাখার অপচেষ্টা করা হয়েছে। এই ঘটনায় স্পষ্ট বোঝা যায়, সরকার তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়ার জীবন বিনা চিকিৎসায় ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থাইটিস, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তার দুই হাঁটু এবং দুই চোখেই অপারেশন করতে হয়েছে। ফলে তাকে সবসময়ই যোগ্য চিকিৎসকের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়। অথচ নির্জন এই কারাগারে তাকে দেখার জন্য জুনিয়র ডাক্তার ও ডিপ্লোমা নার্স নিয়োগ করে সরকার দাবি করছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ড. মোশাররফ বলেন, ৩ বারের নির্বাচিত এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীর স্বাস্থ্যের যে অবস্থা তাতে তাকে সর্বক্ষণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা রাখা একান্তই জরুরি বলে মতামত দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সার্জনগণ। আমাদের দলের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে দুইবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব জানিয়েছি। অনতিবিলম্বে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা এবং এমআরআইসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর দাবি করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কিছুই করা হয়নি। এখন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্থাইটিসের ব্যথা বৃদ্ধির ফলে তিনি চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়ছেন। পাশাপাশি তার অপারেশন করা চোখ লাল হয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত তার উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে তার শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হতে পারে। আমরা এটাও সরকারকে জানিয়েছি। কিন্তু তার সুচিকিৎসার কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে গত ৫ই জুন তিনি হঠাৎ করে অচেতন হয়ে পড়েন। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি জেল কর্তৃপক্ষ তার পরিবারের কোনো সদস্যকেও জানায়নি এবং কেন তিনি অচেতন হয়ে পড়লেন তা পরীক্ষার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গত ৮ই জুন তার পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত সাক্ষাতে গিয়ে এই বিষয়টি জানতে পারেন। ৫ দফা আবেদনের পর গত ৯ই জুন কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে ঢাকা সিভিল সার্জনের উপস্থিতিতে দেখা করার অনুমতি পান দেশনেত্রীর চিকিৎসা করতেন এমন ৪ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। তারা জানতে পারেন- ৫ই জুন দুপুর ১টার দিকে দেশনেত্রী ৫/৭ মিনিট চেতনা হারান এবং সে সময়ের কোনো কিছু মনে করতে না পারছেন না। এ বিষয়টিকে চিকিৎসকরা মারাত্মক বলে মনে করেন। তাদের মতে এটা ছিল ট্রানজিয়েন্ট স্কিমিক অ্যাটাক-টিআইএ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফএম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- আগামীতে একটা বড় ধরনের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। এই ৪ জন তাদের পর্যবেক্ষণ ও মতামত লিখিতভাবে কারাকর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন। তারা বিশেষ কিছু পরীক্ষা ও যোগ্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়ার জন্য দেশনেত্রীকে অবিলম্বে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করেছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রেস ব্রিফিংয়ের পর এ বিষয়ে সরকারের আইনমন্ত্রী, সেতুমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুখ খোলেন। তারা এখন বলছেন যে, ৫ই জুন রোজা রাখার কারণে খালেদা জিয়ার সুগার কমে যাওয়ায় তার মাথা ঘুরে গিয়েছিল মাত্র এবং একটা চকোলেট খেয়ে তিনি ভালো হয়ে যান। আইজি প্রিজন্সও একই কথা বললেও স্বীকার করেছেন যে, দেশনেত্রীর আর্থাইটিস সমস্যা বেড়েছে। ড. মোশাররফ বলেন, গত ৫ই জুন সংঘটিত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সম্পর্কে সরকারের মন্ত্রীবর্গ, অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইজি প্রিজন প্রায় ১ সপ্তাহ পরে ১১ই জুন মুখ খুললেন কেন? কেন এতদিন ঘটনাটি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করা হলো? কেন ইতিমধ্যে তার হঠাৎ এত বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়নি? অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন- ৯ই জুন চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার অজ্ঞান হওয়ার কথা বলে নাকি আদালতের সহানুভূতি লাভের চেষ্টা করেছেন। অথচ তিনি অবশ্যই জানেন যে, চিকিৎসকদের সাক্ষাতের দিনক্ষণ স্থির করে সরকার। তারা ৯ তারিখে সাক্ষাতের দিন স্থির করেছে বলেই ওই দিন চিকিৎসকরা প্রেস ব্রিফিং করেছেন। মামলার দিন তারিখ সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের জানার কথা-ডাক্তারদের নয়। ড. মোশাররফ বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মরিয়া এই দলবাজ অ্যাটর্নি জেনারেল একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতা নিয়েও অশোভন ও অযৌক্তিক মন্তব্য করায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তিনি বলেন, মানবিক কারণে ঈদের আগেই দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে দেশের বিশিষ্টজনদের সংগঠন শত নাগরিক কমিটি আজ (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায় জাতীয় শহীদ মিনারে মৌন অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। যথাসময়ে শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, চিকিৎসক ও আইনজীবীরা শহীদ মিনারে উপস্থিত হলে পুলিশ বিনা উস্কানিতে মৌন অবস্থান কর্মসূচি পণ্ড করে দেয়। ড. এমাজউদ্দীন আহমেদসহ দেশের বিশিষ্ট জনদের সঙ্গে নির্দয় আচরণ করে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ আলী চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ মিনারে শত নাগরিক জাতীয় কমিটির মৌন অবস্থানে পুলিশের বাধা
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শত নাগরিক জাতীয় কমিটি আয়োজিত মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি পুলিশ। গতকাল বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিল আয়োজকরা। তবে এ সময় আয়োজকদের কাছে অবস্থান কর্মসূচির অনুমতি ছিল কিনা জানতে চায় পুলিশ। এরপর কেড়ে নেয়া হয় ব্যানার। এসময় শত নাগরিক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক তাজমেরী ইসলাম, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের বাধার পরে শত নাগরিক জাতীয় কমিটির কিছু সংখ্যক সদস্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে বসে প্রতিবাদ করেন। এ সময় তারা পৌনে ১২টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ‘মানবিক কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ঈদের আগে মুক্তি দেয়ার দাবিতে আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শত নাগরিক জাতীয় কমিটি একটি মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে আমাদের কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি। দেশের মানুষ ইতিমধ্যেই জেনেছে যে বেগম জিয়া মাইল্ড স্ট্রোক করেছেন। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। তাই আমরা চেয়েছি মানবিক কারণে সরকার যেন বেগম জিয়াকে মুক্তি দেয়।’ এদিকে শত নাগরিক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শত নাগরিক জাতীয় কমিটির উদ্যোগে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঈদের আগে মানবিক কারণে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যে মৌন অবস্থান কর্মসূচি করতে চেয়েছিলাম, তা পুলিশি বাধার মুখে বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি। দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের এমন একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি করতে না দেয়া দুর্ভাগ্যজনক এবং নিন্দনীয়। এতে বোঝা যায় গণতন্ত্রের কি অবস্থা এখন বাংলাদেশে।’
No comments