ফুটবল উন্মাদনা by সাজেদুল হক
বাঙালি হয়তো বিভক্তি ভালোবাসে। রাজনীতি থেকে খেলার মাঠ। বিদ্যায়তন থেকে সংস্কৃতি অঙ্গন। বিভক্তি সর্বত্র। সব জায়গায় আমরা দুই ভাগ।
আওয়ামী লীগ-বিএনপি । আবাহনী-মোহামেডান। দরজায় কড়া নাড়ছে ফুটবল বিশ্বকাপ। পৃথিবী নামক ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। রাশিয়া বিশ্বকাপে আমাদের অংশগ্রহণ নেই। অতীতে কোনো বিশ্বকাপে ছিলো না। ভবিষ্যতেও থাকবে না- এটা মোটামুটি হলফ করে বলে দিতে পারি। কিন্তু, ফুটবল জ্বর আর উন্মাদনার কথায় যদি আসি সম্ভবত পৃথিবীর কোনো দেশ থেকেই আমরা পিছিয়ে নেই। এবং যথারীতি এখানেও দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে বাংলাদেশ। অন্যান্য দলের সাপোর্টার যে একেবারে নেই তা বলা যায় না। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও যেমন আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র বাইরেও দল আছে, সাপোর্টার আছে। কিন্তু কে না জানে, এখনও মোটাদাগে আওয়ামী লী-বিএনপি এই দুই ক্লাবেই বিভক্ত বাংলাদেশ।
ফুটবলেও বাংলাদেশ ভাগ হয়ে গেছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায়। সোশ্যাল মিডিয়া এ বিভক্তিতে ভালোই রসদ জোগাচ্ছে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সাপোর্টাররা এখানে অনেকটাই মুখোমুখি। পবিত্র রমজান মাসেও ফুটবল নিয়ে যেন উন্মাদনা চলছে। পতাকা লাগাতে গিয়ে মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটছে। কেউ নিজের জমি বিক্রি করে বানাচ্ছেন পতাকা। কেউবা আবার বাড়ি রাঙাচ্ছেন প্রিয় দলের পতাকার রঙে। ভদ্রলোকের নাম দিয়েগো ক্রুসিয়ানি। বাংলাদেশ ফুটবল দলের কোচ ছিলেন এই আর্জেন্টাইন। ১১ বছর আগে বাংলাদেশ ছাড়লেও এ দেশ এখনো তার হৃদয়ে আঁকা। ২০০৬ সালে জার্মানি বিশ্বকাপের সময় ঢাকায় ছিলেন তিনি। সে সময় তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন ঢাকার বাড়িঘরের ছাদে ছাদে আর্জেন্টিনার পতাকা। আকাশি-নীল-সাদার এই ঢেউ তার হৃদয়ে এখনো আঁচড় কাটে। বুয়েন্স আয়ার্সেও আর্জেন্টিনার এতো পতাকা তিনি কখনো দেখেননি। আরেকটি খবরও এরই মধ্যে চাউর হয়েছে। বাংলাদেশে ফুটবলের এই উন্মাদনার খবর সংগ্রহ করতে খোদ ব্রাজিল থেকে তিন সাংবাদিক আসছেন। ব্রাজিলের গ্লোবো টিভি’র তিন সাংবাদিক ঢাকায় পা রাখবেন আগামী ১৫ই জুন।
ফুটবলের কালো মানিক পেলে। বহুবছর আগেই স্থান করে নিয়েছেন এদেশের পাঠ্যবইয়ে। আর ম্যারাডোনা। বিটিভি’র বদৌলতে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যান এ যাদুকর। তার নান্দনিক ফুটবলের প্রেমে মত্ত হন লাখ লাখ বাঙালি। পরে তিনি রীতিমতো পরিণত হন এক মিথে। যে কারণে দুইযুগের বেশি সময় ধরে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ শিরোপা জিততে না পারলেও আর্জেন্টিনার সমর্থনে আজো ভাটা পড়েনি এ ভূমে। মূলত পেলে-ম্যারাডোনা প্রেমে বুঁদ হয়েই এ অঞ্চলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার একচ্ছত্র আধিপত্য।
কেন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে ঘিরে এ উন্মাদনা। একটা জবাবতো পাওয়াই গেলো। পেলে-ম্যারাডোনার বড় ভূমিকা এখানে। এমনিতে ফুটবল খুব সহজ খেলা। আগেই বলেছি, পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিশ্বজনীন খেলাও বটে। ফুটবলের কোনো ধর্ম নেই, জাত নেই। দ্য বিউটিফুল গেম। নোংরা রাজনীতি যে এখানে একেবারে নেই তা নয়। রাজনীতির কাছে কখনো কখনো ফুটবল হেরে গেছে। তবুও মাঠের চৌহদ্দিতে জীবনের মানে খোঁজেন অনেকে। কত হাঁসি, কত কান্না। কত তারকার পতন দেখেছে বিশ্বকাপ। কত তারকার উত্থান। পেনাল্টি মিস করে কত বিখ্যাত ফুটবলারের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে। মাদক কেড়ে নিয়েছে কত জীবন, ভালোবাসা। যদিও ভালোবাসারও জয় হয়েছে শেষ পর্যন্ত। দিয়েগো ম্যারাদোনার সে কান্না আজো কী ভুলতে পেরেছে মানুষ। কোনদিন কী ভোলা যাবে?
বিশ্বকাপ এখনো মাঠে গড়ায়নি। তবে বিশ্বকাপের উন্মাদনায় এরই মধ্যে রীতিমতো কম্পন শুরু হয়ে গেছে ৫৬ হাজার বর্গ মাইলে। রাশিয়াতেও এতো উত্তেজনা আছে কি-না কে জানে? বিশ্বকাপের এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে তৈরি হবে কত আখ্যান। কেউ বা আনন্দে উদ্বেলিত হবেন। কারো চোখের জল পড়বে নীরবে, কারো বা প্রকাশ্যে। হুমায়ূন থেকে ধার করে বলি, চোখের জল মানুষের কোনো ক্ষতি করে না।
হাসি-কান্না যাই হোক এটা গ্যারান্টি দিয়েই বলা যায়, আগামী দেড় মাস বাংলাদেশের মানুষ ফুটবল খাবে, পান করবে। কেননা, এই সময়টা ফুটবলই তাদের জীবন।
আওয়ামী লীগ-বিএনপি । আবাহনী-মোহামেডান। দরজায় কড়া নাড়ছে ফুটবল বিশ্বকাপ। পৃথিবী নামক ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। রাশিয়া বিশ্বকাপে আমাদের অংশগ্রহণ নেই। অতীতে কোনো বিশ্বকাপে ছিলো না। ভবিষ্যতেও থাকবে না- এটা মোটামুটি হলফ করে বলে দিতে পারি। কিন্তু, ফুটবল জ্বর আর উন্মাদনার কথায় যদি আসি সম্ভবত পৃথিবীর কোনো দেশ থেকেই আমরা পিছিয়ে নেই। এবং যথারীতি এখানেও দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে বাংলাদেশ। অন্যান্য দলের সাপোর্টার যে একেবারে নেই তা বলা যায় না। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও যেমন আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র বাইরেও দল আছে, সাপোর্টার আছে। কিন্তু কে না জানে, এখনও মোটাদাগে আওয়ামী লী-বিএনপি এই দুই ক্লাবেই বিভক্ত বাংলাদেশ।
ফুটবলেও বাংলাদেশ ভাগ হয়ে গেছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায়। সোশ্যাল মিডিয়া এ বিভক্তিতে ভালোই রসদ জোগাচ্ছে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সাপোর্টাররা এখানে অনেকটাই মুখোমুখি। পবিত্র রমজান মাসেও ফুটবল নিয়ে যেন উন্মাদনা চলছে। পতাকা লাগাতে গিয়ে মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটছে। কেউ নিজের জমি বিক্রি করে বানাচ্ছেন পতাকা। কেউবা আবার বাড়ি রাঙাচ্ছেন প্রিয় দলের পতাকার রঙে। ভদ্রলোকের নাম দিয়েগো ক্রুসিয়ানি। বাংলাদেশ ফুটবল দলের কোচ ছিলেন এই আর্জেন্টাইন। ১১ বছর আগে বাংলাদেশ ছাড়লেও এ দেশ এখনো তার হৃদয়ে আঁকা। ২০০৬ সালে জার্মানি বিশ্বকাপের সময় ঢাকায় ছিলেন তিনি। সে সময় তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন ঢাকার বাড়িঘরের ছাদে ছাদে আর্জেন্টিনার পতাকা। আকাশি-নীল-সাদার এই ঢেউ তার হৃদয়ে এখনো আঁচড় কাটে। বুয়েন্স আয়ার্সেও আর্জেন্টিনার এতো পতাকা তিনি কখনো দেখেননি। আরেকটি খবরও এরই মধ্যে চাউর হয়েছে। বাংলাদেশে ফুটবলের এই উন্মাদনার খবর সংগ্রহ করতে খোদ ব্রাজিল থেকে তিন সাংবাদিক আসছেন। ব্রাজিলের গ্লোবো টিভি’র তিন সাংবাদিক ঢাকায় পা রাখবেন আগামী ১৫ই জুন।
ফুটবলের কালো মানিক পেলে। বহুবছর আগেই স্থান করে নিয়েছেন এদেশের পাঠ্যবইয়ে। আর ম্যারাডোনা। বিটিভি’র বদৌলতে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যান এ যাদুকর। তার নান্দনিক ফুটবলের প্রেমে মত্ত হন লাখ লাখ বাঙালি। পরে তিনি রীতিমতো পরিণত হন এক মিথে। যে কারণে দুইযুগের বেশি সময় ধরে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ শিরোপা জিততে না পারলেও আর্জেন্টিনার সমর্থনে আজো ভাটা পড়েনি এ ভূমে। মূলত পেলে-ম্যারাডোনা প্রেমে বুঁদ হয়েই এ অঞ্চলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার একচ্ছত্র আধিপত্য।
কেন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে ঘিরে এ উন্মাদনা। একটা জবাবতো পাওয়াই গেলো। পেলে-ম্যারাডোনার বড় ভূমিকা এখানে। এমনিতে ফুটবল খুব সহজ খেলা। আগেই বলেছি, পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিশ্বজনীন খেলাও বটে। ফুটবলের কোনো ধর্ম নেই, জাত নেই। দ্য বিউটিফুল গেম। নোংরা রাজনীতি যে এখানে একেবারে নেই তা নয়। রাজনীতির কাছে কখনো কখনো ফুটবল হেরে গেছে। তবুও মাঠের চৌহদ্দিতে জীবনের মানে খোঁজেন অনেকে। কত হাঁসি, কত কান্না। কত তারকার পতন দেখেছে বিশ্বকাপ। কত তারকার উত্থান। পেনাল্টি মিস করে কত বিখ্যাত ফুটবলারের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে। মাদক কেড়ে নিয়েছে কত জীবন, ভালোবাসা। যদিও ভালোবাসারও জয় হয়েছে শেষ পর্যন্ত। দিয়েগো ম্যারাদোনার সে কান্না আজো কী ভুলতে পেরেছে মানুষ। কোনদিন কী ভোলা যাবে?
বিশ্বকাপ এখনো মাঠে গড়ায়নি। তবে বিশ্বকাপের উন্মাদনায় এরই মধ্যে রীতিমতো কম্পন শুরু হয়ে গেছে ৫৬ হাজার বর্গ মাইলে। রাশিয়াতেও এতো উত্তেজনা আছে কি-না কে জানে? বিশ্বকাপের এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে তৈরি হবে কত আখ্যান। কেউ বা আনন্দে উদ্বেলিত হবেন। কারো চোখের জল পড়বে নীরবে, কারো বা প্রকাশ্যে। হুমায়ূন থেকে ধার করে বলি, চোখের জল মানুষের কোনো ক্ষতি করে না।
হাসি-কান্না যাই হোক এটা গ্যারান্টি দিয়েই বলা যায়, আগামী দেড় মাস বাংলাদেশের মানুষ ফুটবল খাবে, পান করবে। কেননা, এই সময়টা ফুটবলই তাদের জীবন।
No comments