ছাত্রদের কাছে আবেদন, তারা যেন খারাপ রাজনীতিতে জড়িত না হয় -আবরারের বাবা

খারাপ রাজনীতিতে জড়িত না হতে ছাত্রদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের বাবা মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ। রোববার আবরার হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন তিনি।

হত্যা মামলায় রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ বলেন, ‘আজকের রায়ে আমরা আপাতত সন্তুষ্ট। রায়টি যাতে দ্রুত কার্যকর করা হয় সরকারের কাছে সেই আবেদন জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাবা-মায়েরা খুব কষ্ট করে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠায়। এখানে তো বাবা-মায়ের কোনো দোষ নেই। তাদের তো লেখাপড়া করার জন্য পাঠানো হয়েছে। এখন ছেলে-মেয়েরা এসে যদি বিভিন্ন প্রলোভনে পরে নষ্ট হয়ে যায়, তখন তো বাবা-মায়েরাও কষ্ট পেয়ে থাকে।’

বরকত উল্লাহ বলেন, ছাত্রদের কাছে আমার আবেদন থাকবে, তারা যেন এ সমস্ত খারাপ রাজনীতিতে জড়িত না হয়।’ এ সময় আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ উপস্থিত ছিলেন।

আবরার হত্যা মামলা: ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ৫ জনের যাবজ্জীবন বহাল রাখা হয়েছে।

রোববার বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ  রায় দেন।

মৃত্যুদণ্ডের ২০ আসামি
বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু (মেকানিক্যাল ইঞ্জনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মোজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুর রহমান মাজেদ (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এস এম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোসের্স, ১৬ ব্যাচ), শামছুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) এবং এসএম মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল)।

যাবজ্জীবনের ৫ আসামি
বুয়েট ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), সদস্য আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ)।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় তার বাবা চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।

২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র গঠন করা হয়। দুই পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

তাদের মধ্যে তিনজন মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন। বাকি ২২ জনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুনতাসির আল জেমির কারাগার থেকে পালিয়েছেন।

গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ৬ অগাস্ট তিনি গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের দেয়াল ভেঙে পালিয়ে যান ওই আসামি।

বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.