জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস যেন বিকৃত না হয়
শনিবার জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের লেখা ‘জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’- বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন তিনি। বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন।
অনুষ্ঠানে আফিস মাহমুদ বলেন, গণ-অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পিছনে একমাত্র কারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। এই স্বতঃস্ফূর্ততা কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে একটা গণ-অভ্যুত্থানের দিকে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমরা যদি গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশকে একটা দীর্ঘমেয়াদি সুন্দর কাঠামোগত সংস্কারের মধ্য দিয়ে এই সফলতা মানুষের জন্য সংরক্ষিত করতে না পারি তাহলে আবারো কোনো না কোনো ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার সুযোগটা থেকে যাবে। সুতরাং এই লড়াইটা শেষ না। লড়াইটা শুরু হয়েছে।
বই প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ বলেন, এই বইটা আমার চোখে জুলাই। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে লেখা। তারপরও আমি মনে করি এটা সম্পূর্ণ না। আমি প্রত্যাশা রাখবো এবং আহ্বান করবো যারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যেভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন সবাই আপনাদের অংশ লিখবেন। যাতে আমরা আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের একটা পূর্ণ চিত্র পাই। আমাদের কাছে যেন একটা পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস থাকে।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই শুধু ট্র্যাজেডির গল্প না। জুলাই বিজয় আর সাহসেরও গল্প। আমাদের প্রত্যেকের একটা গল্প আছে। বিস্তারিত গল্প আছে। আমাদের এ রকম নাহিদ, আসিফ, রিফাত আরও অনেক আছে। তাদের কেউ মরে গেছে, কেউ আহত হয়েছে। তাদের কেউ বুকে কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছে। আমরা সবার এই অভূতপূর্ব আত্মদানের মধ্য দিয়ে মানুষের প্রত্যাশা পূরণের জন্য এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যারা অগ্রসারির নেতা ছিল তাদের নিয়ে যখন অবাধ, জঘন্য মিথ্যাচার চলে। তখন মনে রাখতে হবে এটা জুলাই শত্রুদের কাজ। এই মিথ্যাচারকে উন্মোচিত করতে হবে।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণ ছাত্রনেতা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমি বললে সেটা আমার গল্প হবে। আসিফ বললে সেটা আসিফের গল্প হবে। আমাদের প্রত্যেকের এই অভ্যুত্থানে আলাদা আলাদা গল্প আছে। এই আলাদা আলাদা গল্পগুলো একটা সামষ্টিক গল্প তৈরি করবে। আমরা যখন এখানে বলছি, এটা নিশ্চয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক গল্পটা। এর বাইরে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকা পালন করছে, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা নেমে আসছে। আমি এখনো জানি না ঢাকার বাইরে কীভাবে আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে। আমাদের বেশি করে তাদের এই গল্পগুলো আসা দরকার। তিনি বলেন, শুধু আমাদের গল্পগুলোই কেউ যেন না ভেবে নেয়- এটা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গল্প। প্রতিটি মানুষের গল্পই জুলাই অভ্যুত্থানের গল্প। সেই গল্পগুলো আমাদের আরও বেশি শোনা উচিত।
আন্দোলনের শুরু থেকেই মানুষকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুক্ত করাই মূল পরিকল্পনা ছিল উল্লেখ করে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, এই আন্দোলন কি পরিকল্পিত ছিল নাকি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল? এই বির্তকগুলো পরবর্তীতে আসছে। এই আন্দোলন একটা পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। আবার পরিকল্পনার বাইরে গিয়েই ঘটনা প্রবাহ এগিয়েছে। এবং মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল। মানুষকে যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুক্ত করতে হবে এটাই এই আন্দোলনের মূল পরিকল্পনা ছিল শুরু থেকেই। শুরুতেই আন্দোলনের নেতৃত্ব, আন্দোলনের কৌশল নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা ছিল।
প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের পরিচালনায় প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- এনসিপি’র যুগ্ম সদস্য সচিব মো. রশিদুল ইসলাম রিফাত (রিফাত রশিদ)। আরও উপস্থিত ছিলেন- সড়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বিশেষ সহকারী মনির হায়দার ও এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন প্রমুখ।
No comments