আগামী সপ্তাহ থেকে ফোর–জি
ফোর-জি
বা চতুর্থ প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ সেবা অবশেষে আসছে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের
এ সেবা দেওয়ার লাইসেন্স মিলবে ২০ ফেব্রুয়ারি। সেদিন থেকে গ্রাহকদের নতুন
এই সেবা দিতে অপারেটররা প্রস্তুত। সেবাটি চালু হলে মোবাইল ফোনে পাওয়া যাবে
আরও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা। মোবাইল ইন্টারনেটে দ্রুতগতির সেবায় ফোর-জি
সর্বশেষ প্রযুক্তি। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত থ্রি-জির এটি পরের ধাপ।
বাণিজ্যিকভাবে প্রথম এই সেবা চালু হয় ২০০৯ সালে; নরওয়ে ও সুইডেনে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ প্রায় সব উন্নয়নশীল দেশেই ফোর-জি সেবা চালু আছে।
বাংলাদেশে সে হিসেবে এটি বেশ পরেই এল। দেশে ফোর-জি সেবা চালু করবে
গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা, বাংলালিংক ও সরকারের মালিকানাধীন টেলিটক। সবাই এ
নিয়ে নিজেদের প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে। আজ ফোর-জি সেবার বেতার তরঙ্গ নিলামের
আয়োজন করেছে বিটিআরসি। গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক তাতে অংশ নেবে। ফোর-জির
জন্য রবি ও টেলিটকের কাছে যথেষ্ট তরঙ্গ থাকায় তারা নিলামে অংশ নেবে না।
নিলামের পরে ফোর-জি চালুর জন্য সময় থাকবে এক সপ্তাহ। সেবাদাতা
প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, সব কাজ সেরে গ্রাহক পর্যায়ে ঢাকাসহ দেশের বড় বিভাগীয়
শহরগুলোতে সেবাটি সময়মতো চালু করা যাবে। বিটিআরসির ফোর-জি নীতিমালা
অনুযায়ী, লাইসেন্স পাওয়ার দেড় বছরের মধ্যে দেশের সব জেলা শহরে সেবাটি চালু
করতে হবে; তিন বছরের মধ্যে সব উপজেলায়। বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান
মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০ ফেব্রুয়ারি মোবাইল ফোন অপারেটরদের হাতে
ফোর-জির লাইসেন্স আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হবে। এই দিন থেকে সেবা চালু
করতে তারা কারিগরিভাবেও প্রস্তুত।’
অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,
থ্রি-জির তুলনায় ফোর-জি ইন্টারনেটের গতি হবে কমপক্ষে দ্বিগুণ।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওপেন সিগন্যালের তথ্য অনুযায়ী,
বর্তমানে বাংলাদেশে থ্রি-জি ইন্টারনেটের গড় গতি ৩ দশমিক ৭৫ এমবিপিএস
(মেগাবিটস প্রতি সেকেন্ড)। আর বিশ্বে ফোর-জি প্রযুক্তির গড় গতি ১৬ দশমিক ৬
এমবিপিএস। ভারতে ফোর-জির গড় গতি বর্তমানে ৬ দশমিক ১৩ এমবিপিএস। পাকিস্তান,
শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের মতো দেশে ফোর-জির গতি ৯ থেকে ১৪
এমবিপিএসের মধ্যে। ফোর-জি গতিতে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দুই দেশ হলো
সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া। বিশ্বজুড়ে ৩৮ লাখ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর ৫
হাজার কোটি তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে একেকটি দেশের ফোর-জি
ইন্টারনেটের গতি নির্ধারণ করে ওপেন সিগন্যাল। টেলিযোগাযোগবিষয়ক গবেষণা
প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার জ্যেষ্ঠ গবেষক আবু সাইদ খান বলেছেন,
ভারত-পাকিস্তান তো বটেই, বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে থাকা মিয়ানমারেও বহু আগে
ফোর-জি সেবা চালু হয়েছে। মিয়ানমারের মতো টেলিযোগাযোগ সেবা পাওয়ার আশা
বাংলাদেশের গ্রাহকেরা করতেই পারেন। মোবাইল ফোন অপারেটররা আরও বলেছে, ফোর-জি
প্রযুক্তি উন্নত ও সাশ্রয়ী বলে ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচও কম হবে। তবে এই
প্রযুক্তির উপযোগী মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোনের স্বল্পতা এ সেবা প্রসারে বড়
বাধা। অপারেটরদের হিসাবে বাংলাদেশে মোট মোবাইল ফোনসেটের ৩০ শতাংশ
স্মার্টফোন। এর মধ্যে ফোর-জি প্রযুক্তির স্মার্টফোন ১০ শতাংশের কম। মোবাইল
ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব
বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন,
গ্রাহক পর্যায়ে ফোর-জি সেবা পৌঁছাতে অপারেটররা প্রস্তুত। তবে এই প্রযুক্তির
উপযোগী হ্যান্ডসেট ও ব্যান্ডউইটথ সরবরাহ অবকাঠামোয় বড় দুর্বলতা রয়েছে।
সেটি মেটাতে পারলে দ্রুতগতির ফোর-জি সেবা পেতে আর সমস্যা থাকবে না।
প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম বা সিটিসেলের মাধ্যমে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশে
মোবাইল ফোনের যাত্রা শুরু। ১৯৯৭ সালে দৃশ্যপটে ঢোকে গ্রামীণফোন। এরপর একে
একে একটেল (বর্তমানে রবি), টেলিটক ও বাংলালিংক। মোবাইল ইন্টারনেট সেবার
সূচনা ২০০৫ সালে। টেলিটক ২০১২ সালে চালু করে থ্রি-জি ইন্টারনেট। বেসরকারি
মোবাইল ফোন অপারেটররা থ্রি-জি সেবা দিতে শুরু করে এর এক বছর পর, ২০১৩ সালের
অক্টোবরে। বিটিআরসির হিসাবে, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ইন্টারনেট
ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮ কোটির বেশি। মোবাইলে এর সংখ্যা সাড়ে ৭ কোটি।
No comments