প্রশ্নফাঁস রোধের উদ্যোগ
প্রশ্নপত্র
ফাঁস রোধে সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে এবং এখনও নিচ্ছে। তবে এখনও কোনো
উদ্যোগই সাফল্যের মুখ দেখেনি। চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র
ফাঁস হয়ে চলেছে একের পর এক। প্রশ্নফাঁসকারীরা যেন এ ব্যাপারে সরকারের
উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে! বোঝাই যাচ্ছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীরা কোনো
কিছুই তোয়াক্কা করছে না। আইন-পুলিশ-আদালত ইত্যাদি তাদের কাছে অতি তুচ্ছ
বিষয় যেন। এটাও বোঝা যাচ্ছে, সরকারের নেয়া উদ্যোগগুলো সুচিন্তিত ও কার্যকর
নয়। সরকারের কোনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়ে পড়ছে মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার
শামিল। যেমন এসএসসি পরীক্ষার দিন সকাল ৮টা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত
আড়াই ঘণ্টা আইএসপি ও মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়ার
সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)।
অবশ্য বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে
প্রতিষ্ঠানটি। বস্তুত প্রশ্নফাঁস রোধ করতে হলে ফাঁস হওয়ার প্রকৃত ছিদ্রগুলো
বন্ধ করতে হবে। আর তা করতে হলে ছিদ্রগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে। এ
কাজটিই এখন পর্যন্ত করে উঠতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এটি অবশ্যই তাদের
ব্যর্থতা। তিনটি শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা
বলছেন, প্রশ্নফাঁসের ধরন দেখে মনে হচ্ছে, শুধু ট্রেজারি থেকে কেন্দ্রে
যাওয়ার সময়েই নয়, এর আগেও প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যায়।
এমন মনে হওয়ার কারণ, ইংরেজি
প্রথমপত্রের পরীক্ষার আগে দুই সেট প্রশ্নই ফাঁস করা হয়। গণিতের প্রশ্ন
পরীক্ষার আগের রাতেই অনেকে পেয়েছেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন সাবেক
চেয়ারম্যান যুগান্তরকে বলেছেন, বোর্ড থেকে সকাল সাড়ে ৭টায় বলে দেয়া হয় কোন
সেটে পরীক্ষা হবে। এর আগে প্রশ্নপত্রের সঠিক সেট ফাঁস হওয়া সম্ভব নয়।
সেক্ষেত্রে দুটি সেটই ফাঁস হলে মনে করতে হবে, ট্রেজারির আগের পর্বে প্রশ্ন
ফাঁস হয়েছে। আমরা মনে করি, এ কথাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে প্রশ্নফাঁসের তদন্তকাজ
পরিচালনা করা উচিত। ট্রেজারির আগে ও পরের উভয় পর্বকে সন্দেহে রেখে ব্যাপক
গোয়েন্দা তৎপরতা এবং প্রযুক্তিগত অনুসন্ধান চালিয়ে মূল হোতাদের চিহ্নিত
করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ এনে কারিগরি সহায়তা নেয়া
যেতে পারে। প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার সন্দেহে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে আটক
করা হয়েছে। তাদের কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে
প্রশ্নফাঁসের কোনো সূত্র। অন্যান্য দেশে প্রশ্নফাঁস রোধে কী ধরনের পদক্ষেপ
নেয়া হয়, তাও খতিয়ে দেখতে পারেন আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। দেশে গত কয়েক বছর
ধরে যেভাবে পাবলিক পরীক্ষা, ভর্তি পরীক্ষা, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে
চাকরির পরীক্ষা, এমনকি বিদ্যালয়ের নিচের শ্রেণির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস
হচ্ছে, তাতে বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে মোকাবেলা করা উচিত বলে আমরা মনে করি।
তা না হলে এ জাতি এক সময় প্রতিভাহীন হয়ে পড়বে, যার পরিণতিতে জাতিটি হয়ে
পড়বে মেরুদণ্ডহীন। মনে রাখতে হবে, প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধা
ও সৃজনশীলতা ধ্বংসের বন্দোবস্ত পাকা করা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায়
না। প্রশ্নফাঁস প্রতিরোধ করতে হবে যে কোনো উপায়ে।
No comments