নিপীড়নের দুরভিসন্ধি! by মো: তোফাজ্জল বিন আমীন
গত
২৯ জানুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে
মন্ত্রিসভা। সরকার এক দিকে বলছে ৫৭ ধারা আর থাকছে না, অপর দিকে এ ধারার
বিষয়বস্তু এই নতুন আইনের বিভিন্ন ধারায় অন্তর্ভুক্ত করার কৌশল নিয়েছে। নিকট
অতীতে ৫৭ ধারা নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা ও নাগরিক সমাজের তুমুল প্রতিবাদে
আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। আদালত এই আইনকে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলে
মতামত দিয়েছিল। ৫৭ ধারার বাতিলের খবর শুনে অনেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিল।
কিন্তু স্বস্তির সুবাতাস বইতে না বইতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া
অনুমোদিত করায় আবারো নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা
দিয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ তে যে সব ধারা সংযোজন করা হয়েছে তা
মূলত নতুন বোতলে পুরনো বিষ। খসড়া আইনে মোট ১৪টি ধারার অপরাধকে আমলযোগ্য ও
জামিন-অযোগ্য ঘোষণার প্রস্তাব করা হয়েছে। যে কারণে অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগেই
অনেককে বছরের পর বছর কারাগারে কাটাতে হতে পারে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
আইনটি প্রথম ২০০৬ সালে সন্নিবেশিত হয়। সংসদে পাস ও সন্নিবেশিত হওয়ার সময়
আইনটি এমন বিতর্কিত বা বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য এতটা বিপজ্জনক
হয়ে ওঠেনি।
আইনটি পাস হওয়ার পর প্রথম দফায় ২০০৯ সালে, দ্বিতীয় দফায় ২০১৩
সালে সংশোধন, সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর থেকে ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং ৫৭ ধারার
অপরাধকে জামিন-অযোগ্য করার মাধ্যমে একে একটি নিবর্তনমূলক আইনে পরিণত করা
হয়। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে আইসিটি আইনে ৩৯১টি মামলা হয়। তবে বেশির ভাগ
মামলায় সবচেয়ে হয়রানি ও জামিন-অযোগ্য ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ লক্ষ করা যায়। গত ২
আগস্ট দেশের একটি দৈনিকে মুদ্রিত হয়েছে যে,গত ছয় মাসে আইসিটি আইনে মামলার
সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এসব মামলার বেশির ভাগই ৫৭ ধারার। গত বছরের
জানুয়ারিতে আইসিটি মামলা হয়েছিল ৪২টি। জুনে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯টি।
ছাগল মারার মামলাও হয়েছে ৫৭ ধারায়। আইনটির ৩২ ধারা নতুন বির্তকের জন্ম
দিয়েছে। এ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি, আধা সরকারি,বা স্বায়ত্তশাসিত
প্রতিষ্ঠানে ঢুকে কেউ কোনো কিছু রেকর্ড করলে তা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে। এ
জন্য ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ লাখ টাকার অর্থদণ্ডের বিধান করা হয়েছে। এ
ছাড়া বেশ কিছু ধারা যুক্ত হচ্ছে নতুন আইনটিতে। নতুন এ আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে
স্বাধীন চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করা। ক্ষমতাসীনদের অপরাধের ঢাকনা বন্ধ করা।
এমনিতেই নাগরিকদের অধিকার ক্ষুণ হচ্ছে। নতুন এ আইন পাস হলে নাগরিকদের
অধিকার সঙ্কুচিত হবে। বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ হবে।
No comments