হজযাত্রীর বিমান ভাড়া বৃদ্ধি
হজযাত্রীর
বিমান ভাড়া এক লাখ ২৪ হাজার ৭২৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে এ বছর প্রায় এক লাখ ৩৫
হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছে বিমান। বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ
পরিষদের অভিযোগ, অতিরিক্ত ভাড়ার নামে হাজীদের কাছ থেকে অন্তত ৩৪৫ কোটি ৮৯
লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এ টাকা বিদেশে পাচার হওয়ার
আশঙ্কা প্রকাশ করে সংগঠনটি এক সংবাদ সম্মেলনে বিমানের এমডির অপসারণ ও
দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
হজ ফ্লাইটের ভাড়া বৃদ্ধির পক্ষে বিমানের পক্ষ থেকে অবশ্য কিছু যুক্তি তুলে
ধরা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, গত এক বছরে ৪ দফা জেট ফুয়েলের দাম
বৃদ্ধি এবং হজ ফ্লাইট সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবার ওপর সৌদি সরকারের অতিরিক্ত ৫
শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ আরোপ। উল্লেখ্য, সৌদি এয়ারলাইন্স বাদে
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক অন্য এয়ারলাইন্সগুলোয় সাধারণত ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা
যাতায়াতের ভাড়া নেয়া হয় ৩৮ থেকে ৪২ হাজার টাকা। এ বছর ওমরা পালনেচ্ছুদের
কাছ থেকে বাংলাদেশ বিমান জেদ্দা যাওয়া-আসার ভাড়া নিচ্ছে ৫২ হাজার টাকা।
হজের সময় এ ভাড়া এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা কেন হবে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
হজের
সময় বিমান জেদ্দা থেকে খালি ফিরে আসে এবং হজ শেষে হাজীদের নিয়ে আসার পর
খালি ফিরে যায়- এ যুক্তি মেনে নিলেও হাজীদের বিমান ভাড়া বড়জোর দ্বিগুণ হতে
পারে, কিন্তু তা তিনগুণ কেন? বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর যেসব মানুষ হজ করতে
সৌদি আরব যান, তাদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত ও নিুমধ্যবিত্ত শ্রেণীর। হজযাত্রী
পরিবহনের নামে সিন্ডিকেট গঠন করে টিকিট বিক্রি বাবদ প্রতি বছর প্রচুর টাকা
হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এখন সরকারিভাবেই যদি বিমানের ভাড়া তিনগুণ
বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে হজ পালনেচ্ছু সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা আরও
বাড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা মনে করি, বিমানের প্রধান সমস্যা হচ্ছে
দুর্নীতি। হজ ফ্লাইটের ভাড়া না বাড়িয়ে সরকার বরং বিমানকে শতভাগ
দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠানরূপে গড়ে তোলায় মনোনিবেশ করতে পারে। এটি সম্ভব হলে
হাজীদের কাছ থেকে তিনগুণ ভাড়া আদায় করার প্রয়োজন হয়তো নাও হতে পারে। বলার
অপেক্ষা রাখে না, হজ একটি স্পর্শকাতর ধর্মীয় আচার। এর সঙ্গে ধর্মপ্রাণ
মুসলমানদের আবেগ-অনুভূতি ও বিশ্বাসের প্রশ্ন জড়িত। হজ ফ্লাইটের ভাড়া বৃদ্ধি
করা হলে এর মাশুল হজযাত্রীদেরই গুনতে হবে। এতে সরকারকেও বিপাকে পড়তে হতে
পারে। কাজেই হাজীদের বিমান ভাড়া সহনীয় মাত্রায় রাখার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব
দেয়া উচিত।
No comments