ফুলকপিচাষিদের মুখে হাসি
আগাম জাতের ফুলকপিচাষিদের মুখে এবার হাসি ফুটেছে। চুয়াডাঙ্গায় এবার ফুলকপির ফলন যেমন ভালো হয়েছে, তেমনি দামও বেশ ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। স্থানীয় হাট-বাজারে গত বছর এই সময়ে ফুলকপি প্রতি মণ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও চলতি বছর তা ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় শীতকালীন আগাম সবজি হিসেবে ১ হাজার ৩৭১ হেক্টর জমিতে ফুলকপির চাষ হয়েছে। ফুলকপির বাজারজাতও শুরু হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে এই ফুলকপি। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খেত থেকেই পাইকারেরা ফুলকপি কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। সদর উপজেলার গাইদঘাট গ্রামে একটি ফুলকপিখেতে দাঁড়িয়ে কথা হয় কৃষক আনোয়ার জোয়ারদারের সঙ্গে। আনোয়ার বলেন, এবার ২০ বিঘা জমিতে ফুলকপির চাষ করা হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো। বিঘাপ্রতি ১৫ হাজার হিসেবে তাঁর মোট খরচ হয়েছে তিন লাখ টাকা। এ পর্যন্ত ১৪ বিঘা জমির ফুলকপি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে খরচ বাদে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাভ করেছেন তিনি। এখনো ছয় বিঘা জমির ফুলকপি বিক্রি বাকি আছে,
যা বিক্রি করে কমপক্ষে আরও ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। আনোয়ার জোয়ারদার বলেন, এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় ফুলকপির ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। গাইদঘাট গ্রামে ফুলকপি কিনতে এসেছেন মুন্সিগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন সাগর। তিনি চুয়াডাঙ্গা থেকে সবজি কিনে ঢাকার কারওয়ান বাজারের আড়তে বিক্রি করেন। আলাউদ্দিন বলেন, ‘২০ বছর ধরে সবজির ব্যবসা করছি। ঢাকার বাজারে চুয়াডাঙ্গার সবজির ভালো চাহিদা আছে। এখানকার সবজিচাষিরা প্রতিটি ফসল বেশ যত্ন করে ফলায়। এ কারণে অন্য এলাকার চেয়ে চুয়াডাঙ্গার সবজির দামও বেশি।’ সদর উপজেলার বেলগাছি গ্রামের ইসরাফিল হোসেন এবার পাঁচ বিঘা জমিতে ফুলকপির চাষ করেছেন। টানা দুই বছর লোকসানের পর এবার লাভের মুখ দেখেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘গ্যালো দুইবার ফুলকপির আবাদ কইরে খুপ লুকসান হয়েলো। এবেড্ডা লাব না হলি মাটে মারা যাতাম।’ চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারের সবজিপট্টির আড়তদার শাহ আলম বলেন, এ বছর চাষিরা ফুলকপিতে বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম পেয়েছেন। প্রথম দিকে ফুলকপি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানেও ভালো কপি ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার উপপরিচালক নির্মল কুমার দে বলেন, এবার আগাম জাতের ফুলকপির ফলন ভালো হওয়ায় ও দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।
No comments