এতো এতো পুরনো কাপড় কোথায় যায়?
লাস্ট আপডেট- ১২ জুলাই ২০১৭: আপনি কি কখনো ভেবেছেন আপনার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া পুরনো কাপড় কোথায় যায়?
পশ্চিমা দেশগুলোতে ব্যবহার করা কাপড় অনেক সময় বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা এবং দোকানে দেয়া হয়।
সেসব
পুরনো কাপড় কখনো দরিদ্র মানুষদের মাঝে বিতরণ করা হয়। আবার কখনো সেসব
কাপড় বিক্রি করে দাতব্য সংস্থাগুলো তহবিল জোগাড়ের চেষ্টা করে।
কিন্তু যেসব কাপড় কেউ পরতে চায় না কিংবা কিনতে চায় না , সেগুলো কোথায় যায়?
সেখান
থেকে এসব কাপড় চলে যায় ভারতের উত্তরাঞ্চলের পানিপথ এলাকায়। এ জায়গাটি
বিশ্বের পুরাতন ব্যবহার্য কাপড়ের ভাণ্ডার। এটিকে অনেকে পুরাতন কাপড়ের
রাজধানী হিসেবেও বর্ণনা করেন।
প্রতিদিন ব্রিটেন এবং আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার-হাজার টন পুরনো কাপড় এখানে আসে।
শহরে বাইরে পুরাতন কাপড় বহনকারী শতশত ট্রাকের দীর্ঘ সারি দেখা যায়।
ভারতের
পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি বন্দরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে জাহাজে করে শতশত
কন্টেইনারে করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পুরনো কাপড় আসে। সে বন্দর থেকে
ট্রাকে করে কাপড়গুলো এ শহরে আসে।
পৃথিবীর যে কয়েকটি দেশ পুরনো
ব্যবহার্য কাপড় আমদানি করে ভারতে স্থান সে তালিকায় সবার উপরে। এখানে দুই
ধরনের কাপড় আমদানি করা হয়।
এক ধরনের কাপড় আছে যেগুলো পুরনো হলেও ব্যবহার করা যায় এবং আরেক ধরণের কাপড় হচ্ছে ছেঁড়া , যেগুলো ব্যবহারের উপযোগী থাকে না।
পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরনো কাপড় আসে ভারতে |
ব্যবহার
করার মতো কাপড় যারা আমদানি করে তাদের জন্য সরকারি লাইসেন্স থাকা
বাধ্যতামূলক। কারণ ভারতের স্থানীয় পোশাক শিল্পকে সুরক্ষা দিতে চায় সরকার।
এসব পুরনো কাপড় যদি বাজারে বিক্রি হয় তাহলে ভারতের স্থানীয়
শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেজন্য এ কাপড়গুলো ভারতের বাজারে বিক্রি না করে
পুনরায় বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
কিন্তু ভারতে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় পুরাতন ছেঁড়া কাপড়।
পুরাতন কাপড় পুনরায় প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে রপ্তানি করে এমন একটি কারখানা পরিদর্শন করে দেখা গেলো
সেখানে
বিভিন্ন ধরনের জ্যাকেট, সোয়েটার, স্কার্ট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সেসব
কাপড় থেকে জিপার, বোতাম এবং লেবেল আলাদা করে একটি মেশিনে দেয়া হয়।
মেশিনে দেবার আগে কাপড়ের রং অনুযায়ী সেগুলোকে আলাদা করে স্তূপ করা হয়। মেশিনের মাধ্যমে কাপড় থেকে সুতা আলাদা করা হয়।
প্রতি তিন টন কাপড় থেকে প্রায় দেড় টন সুতা উৎপাদন হয়। তারপর সে সুতার মাধ্যমে কম্বল তৈরি করা হয়।
কারখানার মালিক জানালেন, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় দুর্যোগের সময় এসব কম্বল বিতরণ করা হয়।
এসব
কারখানায় তৈরি বেশিরভাগ কম্বল আফ্রিকার দেশগুলোতে যায়। কিছু কমদামী
কম্বল ভারতের বাজারেও বিক্রি হয়। কিন্তু সেটির পরিমাণ খুব বেশি নয়।
একসময় অনেক কম দামে বিদেশ থেকে পুরনো কাপড় আমদানি করা যেত। কিন্তু এখন সে খরচ বেড়ে গেছে।
কারণ ভারতে আসার পর সরকারী শুল্ক, উৎপাদন খরচ, পরিবহন ব্যয় - এসব মিলিয়ে উৎপাদিত কম্বলের দাম বেড়ে যায়।
আফ্রিকার দেশগুলো খুব সস্তায় কম্বল কিনতে চায়। তাদের সে চাহিদা পূরণ করা এখন উৎপাদকদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
পুরনো কাপড় পুনরায় প্রক্রিয়াজাত করে কম্বল তৈরি করে এ কারখানাটি। |
No comments