ইছামতির কান্না by রাশিম মোল্লা
ঢাকার
নবাবগঞ্জ উপজেলার কাশিয়াখালী বেড়িবাঁধের মূল পয়েন্টে স্লুইসগেট না থাকায়
ইছামতি নদী এখন প্রায় বিলুপ্ত। এক সময় দিন-রাত শোনা যেত নদীর উত্তাল ঢেউ আর
জাহাজের সাইরেন। কিন্তু আজ আর নেই ইছামতির সেই চিরচেনা যৌবন। হারিয়ে যেতে
বসেছে তার আপন চেহারা। মিইয়ে গেছে আসল দৃশ্য। আর এর প্রধান কারণ ইছামতি ও
পদ্মা নদীর সংযোগস্থল কাশিয়াখালী বাঁধের ইছামতি নদীর প্রধান সংযোগস্থলে
স্লুইসগেট নির্মাণ না করা।
অথচ স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়েছে অন্যত্র। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইছামতি বাঁচাও আন্দোলন ও স্থানীয় বাসিন্দারা মূল নদীতে স্লুইসগেট নির্মাণের দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে থেকেছে সব সময়ই উদাসীন। এতে শুকিয়ে গেছে কাশিয়াখালী থেকে শিকারীপাড়া বারুয়াখালী বান্দুরা পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার নদীপথ। সমস্যায় পড়েছে স্থানীয় ৫ হাজার জেলে পরিবারের প্রায় ২৫ হাজার সদস্য। সে সঙ্গে বেকার হয়ে পড়েছে নদীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হাজারও পেশার মানুষ। আর এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে ঢাকা জেলার দোহার-নবাবগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ওপর। বিশেষ করে নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলার বাসিন্দাদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর আগমনের খবরে এলাকাবাসী আশার আলো দেখছে। তাদের দাবি মন্ত্রী বেড়িবাঁধের ইছামতি নদীর মূল পয়েন্টে স্লুইসগেট নির্মাণ ও বাঁধ মেরামত করবেন।
ইছামতি বাঁচাও আন্দোলনের সেক্রেটারী মোতাহার হোসেন বলেন, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। ইছামতি ও পদ্মার সংযোগস্থল কাশিয়াখালী বাঁধের মূল নদীতে স্লুইসগেট না থাকায়ই আজ ইছামতি নদীর এ দুরবস্থা। ইছামতির এ দুরবস্থা নিরসনের জন্য প্রয়োজন মূল নদীতে একটি স্লুইসগেট নির্মাণ। তা না হলে মৃতপ্রায় ইছামতি চলে যাবে প্রভাবশালী মহলের দখলে। ইতিমধ্যে অনেক স্থানে নদীর অংশ বিশেষ দখল হয়ে গেছে। নদীর এ দুরবস্থা নিরসনে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী মো. শাজাহান খান মানবজমিনকে বলেন, নবাবগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতি ও কালিগঙ্গা নদীর নাব্য সংকট নিরসনে শিগগিরই ড্রেজিং করা হবে। সেই সঙ্গে সংযোগস্থল কাশিয়াখালী বাঁধে স্থাপন করা হবে একটি স্লুইসগেট।
সরজমিন ইছামতি নদীর তীর ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা জেলার অন্যতম বৃহত্তম কোঠাবাড়ীর বিলে আজ পানির অভাবে ধান চাষ করতে পারছেন না কৃষক। এক সময় এই বিলেই চাষ হতো লাখ লাখ হেক্টর ইরি-বোরো। বিলের পানির উৎপাদিত ধানই নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলাবাসীর চালের চাহিদা মেটাতো। অপরদিকে বর্ষা মওসুমে জেলেরা এ বিলের পানিতে রাত-দিন মাছ শিকারে ব্যস্ত থাকতো। আর সেই মাছ বিক্রি করেই সংসার চলতো জেলে পরিবারগুলোর। এখানে পাওয়া যেত দেশি প্রজাতির হরেক রকম সুস্বাদু মাছ। কিন্তু এখন মাছ পাওয়া তো দূরের কথা দেখা দিয়েছে পানির চরম অভাব।
সূত্র জানায়, চিরচেনা সদরঘাট থেকে কলাকোপা বান্দুরা লঞ্চ অতিপরিচিত একটি নাম। উপজেলা হিসেবে নবাবগঞ্জকে বাংলাদেশের অনেক মানুষ না চিনলেও কলাকোপা বান্দুরাকে চিনতো সবাই। চেনার অন্যতম কারণ ছিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্য মাসব্যাপী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। ভাদ্র মাসের ১ তারিখে খানেপুর-তুইতাল এলাকায় ইছামতি নদীতে শুরু হতো নৌকাবাইচ। এভাবে ভাদ্র মাসজুড়েই চলতো নৌকাবাইচ। নৌকাবাইচ ঐতিহ্য রক্ষা কমিটির আহবায়ক মো. মাসুদ মোল্লা বলেন, ভাদ্র মাস এলেই নৌকাবাইচের নেশায় ঘুম আসতো না। পুরো মাসের রাত-দিন ইছামতি নদীর সঙ্গে কাটতো। কিন্তু আজ সেই স্বপ্নের ইছামতি পানির স্বল্পতায় আমার সে নেশা পণ্ড হয়ে গেছে। আজ আর বর্ষা মওসুমে বাইচাদের (মাঝি) বাঁশির শব্দ শোনা যায় না। নদীতে এখন আর নৌকা চলে না, দুই পাড়ের মানুষ এখন হেঁটেই পার হয় নদী। জেগে উঠা নদীর বিভিন্ন স্থানে আবাদ হচ্ছে ধান, কেউবা আবার মাঝ নদী জাল আটকে চাষ করছে মাছ। কোথাও আবার জমে থাকা কচুরিপানায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে পানি।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত প্রায় দেড় যুগ ধরে বর্ষা মওসুমে পদ্মার পানি প্রবেশ করতে না পারায় স্রোতের প্রবাহ নেই। বন্ধ হয়ে গেছে ইছামতির সঙ্গে পদ্মার সংযোগ। ফলে শুকিয়ে গেছে নদী। চৈত্র মাস আর শ্রাবণ মাসের যেন কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। বন্ধ হওয়া পয়েন্টগুলো হলো সাদাপুর খাল, আড়িয়ল বিলের গোবিন্দপুর খাল, কার্তিকপুর বেড়িবাঁধ ও কাশিয়াখালী বাঁধ এলাকা। এসব স্থানে পদ্মার সঙ্গে সংযোগ ক্যানেলগুলো ভরাট হওয়ায় ইছামতি আজ মরা নদীতে পরিণত হয়েছে।
আশির দশকজুড়েই এ অঞ্চলের মানুষের ঢাকা যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল লঞ্চ। ইছামতিজুড়েই যেন কচুরিপানার দখল। ইছামতির সঙ্গে পদ্মা নদীর সব সংযোগ খাল ভরাট ও বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ইছামতিকে সচল করতে এলাকার কিছু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের দাবি-দাওয়া থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাথাব্যথা নেই। আর সাবেক গণপরিষদ সদস্য সুবিদ আলী টিপু জানান, ১৯৭২ সালে ইছামতিকে সচল করতে কোমরগঞ্জ থেকে মরিচা পর্যন্ত ড্রেজিং করে ১০ কিমি. খনন করা হয়। ১৯৭৭ সালে তৎকালীন সরকারের শাসন আমলে ঢাকা-১ দোহারের সংসদ সদস্য ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন নুরুল হক ইছামতি নদীর নাব্যতা ফিরে আনতে ড্রেজিং করেন।
বিগত ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দোহার-নবাবগঞ্জ এবং হরিরামপুর উপজেলাকে পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করার জন্য দোহারের অরঙ্গাবাদ থেকে মানিকগঞ্জের হাটিপাড়া বংখুরী পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ইছামতির সঙ্গে পদ্মার সংযোগস্থলগুলোতে স্লুইসগেট নির্মাণ না করায় ইছামতি নদী খরস্রোত হারিয়ে নাব্যতার সংকট সৃষ্টি হয়। ফলে শুকনো মওসুমে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার সৈয়দপুর হতে মানিকগঞ্জের কাশিয়াখালী পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিমি. জলপথে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পণ্যসামগ্রী, কাঁচামাল, বাড়িঘর নির্মাণ সামগ্রী নৌপথে স্বল্প খরচে আনা-নেয়া করতে পারছে না। এসব সমস্যার সম্মুখীন হয়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। ইছামতি নদী পথে সৈয়দপুর, মরিচা, ভাঙাভিটা, হরিস্কুল, কলাকোপা পোদ্দারবাজার, ধাপারী, গোল্লা, বান্দুরা, খানেপুর, আলালপুর, দাউদপুর, বারুয়াখালী ও শিকারিপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে নদীর পানি শুকিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। দাউদপুরের মৎস্যজীবী সুকুমার হালদার বলেন, ইছামতি মরে যাওয়ায় আজ অনেকে বাপ-দাদার পেশা ফেলে বিভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছে।
ধাপারী বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, নদীপথে কম খরচে বেশি মালামাল আনা-নেয়া যায়। বর্তমানে সড়কপথে মালামাল পরিবহন করতে ট্রাফিক, মাস্তানদের চাঁদা প্রদানসহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। নদীতে ড্রেজিং করা হলে এলাকাবাসী স্বল্প খরচে নৌযানে মালামাল বহন করতে পারবে।
সেভ দ্য সোসাইটি এন্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সভাপতি এড. সাইদুর রহমান মানিক বলেন, নদী মরে যাওয়ায় এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের, কৃষিকাজ, মৎস্য আহরণে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাই দ্রুত নদীটি খননের দাবি জানান তিনি। একইভাবে সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা কাশিয়াখালী বেড়িবাঁধ রক্ষা মঞ্চের সদস্যরা গত কয়েক আগে এলাকায় স্লুইসগেট নির্মাণ ও বেড়িবাঁধ সংস্কারে ক্যাম্পেইন করেছে। তারা জরুরি ভিত্তিতে নদীটি খনন করে সারা বছর নৌ চলাচলের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।
অথচ স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়েছে অন্যত্র। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইছামতি বাঁচাও আন্দোলন ও স্থানীয় বাসিন্দারা মূল নদীতে স্লুইসগেট নির্মাণের দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে থেকেছে সব সময়ই উদাসীন। এতে শুকিয়ে গেছে কাশিয়াখালী থেকে শিকারীপাড়া বারুয়াখালী বান্দুরা পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার নদীপথ। সমস্যায় পড়েছে স্থানীয় ৫ হাজার জেলে পরিবারের প্রায় ২৫ হাজার সদস্য। সে সঙ্গে বেকার হয়ে পড়েছে নদীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হাজারও পেশার মানুষ। আর এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে ঢাকা জেলার দোহার-নবাবগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ওপর। বিশেষ করে নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলার বাসিন্দাদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর আগমনের খবরে এলাকাবাসী আশার আলো দেখছে। তাদের দাবি মন্ত্রী বেড়িবাঁধের ইছামতি নদীর মূল পয়েন্টে স্লুইসগেট নির্মাণ ও বাঁধ মেরামত করবেন।
ইছামতি বাঁচাও আন্দোলনের সেক্রেটারী মোতাহার হোসেন বলেন, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। ইছামতি ও পদ্মার সংযোগস্থল কাশিয়াখালী বাঁধের মূল নদীতে স্লুইসগেট না থাকায়ই আজ ইছামতি নদীর এ দুরবস্থা। ইছামতির এ দুরবস্থা নিরসনের জন্য প্রয়োজন মূল নদীতে একটি স্লুইসগেট নির্মাণ। তা না হলে মৃতপ্রায় ইছামতি চলে যাবে প্রভাবশালী মহলের দখলে। ইতিমধ্যে অনেক স্থানে নদীর অংশ বিশেষ দখল হয়ে গেছে। নদীর এ দুরবস্থা নিরসনে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী মো. শাজাহান খান মানবজমিনকে বলেন, নবাবগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতি ও কালিগঙ্গা নদীর নাব্য সংকট নিরসনে শিগগিরই ড্রেজিং করা হবে। সেই সঙ্গে সংযোগস্থল কাশিয়াখালী বাঁধে স্থাপন করা হবে একটি স্লুইসগেট।
সরজমিন ইছামতি নদীর তীর ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা জেলার অন্যতম বৃহত্তম কোঠাবাড়ীর বিলে আজ পানির অভাবে ধান চাষ করতে পারছেন না কৃষক। এক সময় এই বিলেই চাষ হতো লাখ লাখ হেক্টর ইরি-বোরো। বিলের পানির উৎপাদিত ধানই নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলাবাসীর চালের চাহিদা মেটাতো। অপরদিকে বর্ষা মওসুমে জেলেরা এ বিলের পানিতে রাত-দিন মাছ শিকারে ব্যস্ত থাকতো। আর সেই মাছ বিক্রি করেই সংসার চলতো জেলে পরিবারগুলোর। এখানে পাওয়া যেত দেশি প্রজাতির হরেক রকম সুস্বাদু মাছ। কিন্তু এখন মাছ পাওয়া তো দূরের কথা দেখা দিয়েছে পানির চরম অভাব।
সূত্র জানায়, চিরচেনা সদরঘাট থেকে কলাকোপা বান্দুরা লঞ্চ অতিপরিচিত একটি নাম। উপজেলা হিসেবে নবাবগঞ্জকে বাংলাদেশের অনেক মানুষ না চিনলেও কলাকোপা বান্দুরাকে চিনতো সবাই। চেনার অন্যতম কারণ ছিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্য মাসব্যাপী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। ভাদ্র মাসের ১ তারিখে খানেপুর-তুইতাল এলাকায় ইছামতি নদীতে শুরু হতো নৌকাবাইচ। এভাবে ভাদ্র মাসজুড়েই চলতো নৌকাবাইচ। নৌকাবাইচ ঐতিহ্য রক্ষা কমিটির আহবায়ক মো. মাসুদ মোল্লা বলেন, ভাদ্র মাস এলেই নৌকাবাইচের নেশায় ঘুম আসতো না। পুরো মাসের রাত-দিন ইছামতি নদীর সঙ্গে কাটতো। কিন্তু আজ সেই স্বপ্নের ইছামতি পানির স্বল্পতায় আমার সে নেশা পণ্ড হয়ে গেছে। আজ আর বর্ষা মওসুমে বাইচাদের (মাঝি) বাঁশির শব্দ শোনা যায় না। নদীতে এখন আর নৌকা চলে না, দুই পাড়ের মানুষ এখন হেঁটেই পার হয় নদী। জেগে উঠা নদীর বিভিন্ন স্থানে আবাদ হচ্ছে ধান, কেউবা আবার মাঝ নদী জাল আটকে চাষ করছে মাছ। কোথাও আবার জমে থাকা কচুরিপানায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে পানি।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত প্রায় দেড় যুগ ধরে বর্ষা মওসুমে পদ্মার পানি প্রবেশ করতে না পারায় স্রোতের প্রবাহ নেই। বন্ধ হয়ে গেছে ইছামতির সঙ্গে পদ্মার সংযোগ। ফলে শুকিয়ে গেছে নদী। চৈত্র মাস আর শ্রাবণ মাসের যেন কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। বন্ধ হওয়া পয়েন্টগুলো হলো সাদাপুর খাল, আড়িয়ল বিলের গোবিন্দপুর খাল, কার্তিকপুর বেড়িবাঁধ ও কাশিয়াখালী বাঁধ এলাকা। এসব স্থানে পদ্মার সঙ্গে সংযোগ ক্যানেলগুলো ভরাট হওয়ায় ইছামতি আজ মরা নদীতে পরিণত হয়েছে।
আশির দশকজুড়েই এ অঞ্চলের মানুষের ঢাকা যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল লঞ্চ। ইছামতিজুড়েই যেন কচুরিপানার দখল। ইছামতির সঙ্গে পদ্মা নদীর সব সংযোগ খাল ভরাট ও বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ইছামতিকে সচল করতে এলাকার কিছু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের দাবি-দাওয়া থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাথাব্যথা নেই। আর সাবেক গণপরিষদ সদস্য সুবিদ আলী টিপু জানান, ১৯৭২ সালে ইছামতিকে সচল করতে কোমরগঞ্জ থেকে মরিচা পর্যন্ত ড্রেজিং করে ১০ কিমি. খনন করা হয়। ১৯৭৭ সালে তৎকালীন সরকারের শাসন আমলে ঢাকা-১ দোহারের সংসদ সদস্য ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন নুরুল হক ইছামতি নদীর নাব্যতা ফিরে আনতে ড্রেজিং করেন।
বিগত ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দোহার-নবাবগঞ্জ এবং হরিরামপুর উপজেলাকে পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করার জন্য দোহারের অরঙ্গাবাদ থেকে মানিকগঞ্জের হাটিপাড়া বংখুরী পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ইছামতির সঙ্গে পদ্মার সংযোগস্থলগুলোতে স্লুইসগেট নির্মাণ না করায় ইছামতি নদী খরস্রোত হারিয়ে নাব্যতার সংকট সৃষ্টি হয়। ফলে শুকনো মওসুমে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার সৈয়দপুর হতে মানিকগঞ্জের কাশিয়াখালী পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিমি. জলপথে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পণ্যসামগ্রী, কাঁচামাল, বাড়িঘর নির্মাণ সামগ্রী নৌপথে স্বল্প খরচে আনা-নেয়া করতে পারছে না। এসব সমস্যার সম্মুখীন হয়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। ইছামতি নদী পথে সৈয়দপুর, মরিচা, ভাঙাভিটা, হরিস্কুল, কলাকোপা পোদ্দারবাজার, ধাপারী, গোল্লা, বান্দুরা, খানেপুর, আলালপুর, দাউদপুর, বারুয়াখালী ও শিকারিপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে নদীর পানি শুকিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। দাউদপুরের মৎস্যজীবী সুকুমার হালদার বলেন, ইছামতি মরে যাওয়ায় আজ অনেকে বাপ-দাদার পেশা ফেলে বিভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছে।
ধাপারী বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, নদীপথে কম খরচে বেশি মালামাল আনা-নেয়া যায়। বর্তমানে সড়কপথে মালামাল পরিবহন করতে ট্রাফিক, মাস্তানদের চাঁদা প্রদানসহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। নদীতে ড্রেজিং করা হলে এলাকাবাসী স্বল্প খরচে নৌযানে মালামাল বহন করতে পারবে।
সেভ দ্য সোসাইটি এন্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সভাপতি এড. সাইদুর রহমান মানিক বলেন, নদী মরে যাওয়ায় এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের, কৃষিকাজ, মৎস্য আহরণে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাই দ্রুত নদীটি খননের দাবি জানান তিনি। একইভাবে সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা কাশিয়াখালী বেড়িবাঁধ রক্ষা মঞ্চের সদস্যরা গত কয়েক আগে এলাকায় স্লুইসগেট নির্মাণ ও বেড়িবাঁধ সংস্কারে ক্যাম্পেইন করেছে। তারা জরুরি ভিত্তিতে নদীটি খনন করে সারা বছর নৌ চলাচলের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।
No comments