দাঙ্গায় তিল থেকে তাল
দাঙ্গা-হাঙ্গামা
নানা কারণেই হতে পারে। কখনো রাজনৈতিক, আবার কখনো সামাজিক কারণে হাঙ্গামার
সৃষ্টি হয়। কিছু সমাজবিজ্ঞানীর মতে, হাঙ্গামায় অংশ নেওয়া বেশির ভাগ মানুষ
শুধু অনেকের ভিড় দেখেই এতে অংশ নেন। কারণ, অনেক মানুষ এই কাজ করছে—এ ধরনের
বোধ দাঙ্গাকে তাঁদের কাছে ন্যায়সংগত করে তোলে। তবে বিশ্বে অনেক অদ্ভুত
কারণেও হাঙ্গামার সৃষ্টি হয়েছে। দেখা গেছে, খুব ছোট্ট একটি বিষয়ই পরে
সহিংসতায় রূপ নিয়েছে।
আসুন জেনে নিই এমনই কিছু হাঙ্গামার পূর্বাপর:
১. দর্শকদের উন্মাদনা
ডার্ট খেলায় খালি হাতে ছুড়তে হয় ছোট তির। ঝুলে থাকা একটি বোর্ডের বিভিন্ন ঘরে লাগাতে হয় তা। সে অনুযায়ী নম্বর ওঠে। এ খেলার আনুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতাও আছে। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ডার্ট খেলার এমনই এক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে লেগে যায় দাঙ্গা। সাধারণত খেলা চলার সময় প্রতিযোগীদের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা থাকে। তবে সেই দিন দর্শকদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণেই প্রায় পণ্ড হতে বসেছিল টুর্নামেন্ট। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য এজের খবরে বলা হয়েছে, হাঙ্গামার সঠিক কারণ জানা যায়নি। অনেক দর্শকই সেদিন পরস্পরের দিকে প্লাস্টিকের তৈরি চেয়ার-টেবিল ছুড়ে একাকার করে ফেলেন। কেউ কেউ আবার টেবিলের ওপর উঠে তা না ভাঙা পর্যন্ত লাফিয়ে গেছেন!। পুলিশের ৪০ জন সদস্য ও ৭০ জন নিরাপত্তারক্ষীর আপ্রাণ চেষ্টায় পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
২. বেলুন নিয়ে গুজব
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিক। উড়োজাহাজ আবিষ্কার না হলেও মানুষের আকাশে ওড়ার ইচ্ছে ছিল ষোলো আনা। ভরসা বলতে ছিল বিশালাকৃতির বেলুন। হেনরি কক্সওয়েল ছিলেন একজন পেশাদার বেলুনচালক। ১৮৬৪ সালে তিনি বেলুনে করে আকাশে ওড়ার এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন যুক্তরাজ্যের লিচেস্টারে। তখন এ ধরনের অনুষ্ঠানে মানুষের আগ্রহও ছিল বেশ। প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ওই অনুষ্ঠানের টিকিট কেটেছিলেন। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, অনুষ্ঠানের আগের দিন গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে কক্সওয়েল আগের চেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় বেলুন নিয়ে আসেননি। আর এই গুজবই কাল হলো! হাজার পঞ্চাশেক মানুষের প্রতিবাদে শেষে পণ্ড হলো অনুষ্ঠান। ওড়ার বদলে বিক্ষোভকারীদের রোষে টুকরো টুকরো হয়েছিল হেনরি কক্সওয়েলের বেলুন।
৩. অপেরা নিয়ে হাঙ্গামা
১৮৩০ সালের ২৫ আগস্ট। বেলজিয়াম তখন ছিল ডাচ শাসনাধীন। নেদারল্যান্ডসের রাজা প্রথম উইলিয়ামের জন্মদিন উপলক্ষে ব্রাসেলসে একটি বিশেষ গীতিনাট্য (অপেরা) মঞ্চস্থ করা হয়েছিল। সেই অপেরার বিষয়বস্তু ছিল স্পেনের শাসনের বিরুদ্ধে ইতালির নেপলসের অধিবাসীর প্রতিবাদ। আর সেই অপেরা দেখে জাতীয়তাবাদের চেতনা জেগে ওঠে বেলজিয়ানদের মধ্যেও। হিস্টরি চ্যানেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেই তাৎক্ষণিক হাঙ্গামা থেকেই বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন কলকারখানায় হামলা চালান এবং সরকারি ভবনগুলো দখল করে নেন। ওই হাঙ্গামা এখানেই শেষ হয়নি। এটি পরে স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত হয়। ওই বছরের অক্টোবর মাসে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল বেলজিয়াম।
৪. ভাস্কর্য নিয়ে তোলপাড়
চিকিৎসাবিদ্যায় মৃতদেহের ব্যবচ্ছেদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢের হাঙ্গামা হয়েছিল একসময়। তবে ১৯০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর লন্ডনে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন অন্য এক কারণে। জীবন্ত প্রাণীদের শরীরে শল্যচিকিৎসার সমর্থনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন তাঁরা। অবশ্য এ ঘটনার শুরু ১৯০৩ সালে। তখন লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজে চেতনানাশক প্রয়োগ না করেই কিছু প্রাণীর দেহে শল্যচিকিৎসা করার অভিযোগ উঠেছিল। হিস্ট্রি চ্যানেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রাণী অধিকার কর্মীরা পরে ১৯০৬ সালে ব্রোঞ্জের তৈরি কুকুরের এক ভাস্কর্য স্থাপন করেছিলেন সেখানে। আর তাতেই খেপে গিয়েছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা। ১৯০৭ সালে তাঁরা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং ওই ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। পরে প্রায় ৪০০ পুলিশ মোতায়েন করে হাঙ্গামা সামলায় প্রশাসন। ১৯১০ সালে কুকুরের ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।
৫. খেলা নিয়ে হাঙ্গামা
নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামের একটি জনপ্রিয় খেলা ছিল ইল পুলিং। এই খেলায় ইল নামের একটি মাছকে কোনো খালের ওপরে দড়ি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। আর চলন্ত নৌকায় থাকা প্রতিযোগীদের সেই পিচ্ছিল মাছকে ছিনিয়ে নিতে হতো। দেশটির সরকার ‘নিষ্ঠুর’ আখ্যা দিয়ে এই খেলা অবৈধ ঘোষণা করলেও সাধারণ মানুষ বন্ধ করেনি তা। ১৮৮৬ সালের জুলাই মাসে এই খেলার এমনই এক প্রতিযোগিতায় বাধা দিয়েছিল পুলিশ। মেন্টাল ফ্লসের খবরে বলা হয়েছে, আমস্টারডামের জরডান এলাকায় ওই প্রতিযোগিতা হচ্ছিল। বাধা দেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। স্থানীয় কিছু রাজনীতিকও তাতে যোগ দিলে সংঘর্ষ রূপ নেয় দাঙ্গায়। পরে সেখানে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছিল। দিন কয়েক ধরে চলা এই হাঙ্গামা শেষ হয়েছিল রক্ত ঝরিয়ে। সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছিল ২৬ জন। আহত হয়েছিল প্রায় ১৩৬ জন মানুষ।
১. দর্শকদের উন্মাদনা
ডার্ট খেলায় খালি হাতে ছুড়তে হয় ছোট তির। ঝুলে থাকা একটি বোর্ডের বিভিন্ন ঘরে লাগাতে হয় তা। সে অনুযায়ী নম্বর ওঠে। এ খেলার আনুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতাও আছে। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ডার্ট খেলার এমনই এক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে লেগে যায় দাঙ্গা। সাধারণত খেলা চলার সময় প্রতিযোগীদের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা থাকে। তবে সেই দিন দর্শকদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণেই প্রায় পণ্ড হতে বসেছিল টুর্নামেন্ট। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য এজের খবরে বলা হয়েছে, হাঙ্গামার সঠিক কারণ জানা যায়নি। অনেক দর্শকই সেদিন পরস্পরের দিকে প্লাস্টিকের তৈরি চেয়ার-টেবিল ছুড়ে একাকার করে ফেলেন। কেউ কেউ আবার টেবিলের ওপর উঠে তা না ভাঙা পর্যন্ত লাফিয়ে গেছেন!। পুলিশের ৪০ জন সদস্য ও ৭০ জন নিরাপত্তারক্ষীর আপ্রাণ চেষ্টায় পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
২. বেলুন নিয়ে গুজব
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিক। উড়োজাহাজ আবিষ্কার না হলেও মানুষের আকাশে ওড়ার ইচ্ছে ছিল ষোলো আনা। ভরসা বলতে ছিল বিশালাকৃতির বেলুন। হেনরি কক্সওয়েল ছিলেন একজন পেশাদার বেলুনচালক। ১৮৬৪ সালে তিনি বেলুনে করে আকাশে ওড়ার এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন যুক্তরাজ্যের লিচেস্টারে। তখন এ ধরনের অনুষ্ঠানে মানুষের আগ্রহও ছিল বেশ। প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ওই অনুষ্ঠানের টিকিট কেটেছিলেন। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, অনুষ্ঠানের আগের দিন গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে কক্সওয়েল আগের চেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় বেলুন নিয়ে আসেননি। আর এই গুজবই কাল হলো! হাজার পঞ্চাশেক মানুষের প্রতিবাদে শেষে পণ্ড হলো অনুষ্ঠান। ওড়ার বদলে বিক্ষোভকারীদের রোষে টুকরো টুকরো হয়েছিল হেনরি কক্সওয়েলের বেলুন।
৩. অপেরা নিয়ে হাঙ্গামা
১৮৩০ সালের ২৫ আগস্ট। বেলজিয়াম তখন ছিল ডাচ শাসনাধীন। নেদারল্যান্ডসের রাজা প্রথম উইলিয়ামের জন্মদিন উপলক্ষে ব্রাসেলসে একটি বিশেষ গীতিনাট্য (অপেরা) মঞ্চস্থ করা হয়েছিল। সেই অপেরার বিষয়বস্তু ছিল স্পেনের শাসনের বিরুদ্ধে ইতালির নেপলসের অধিবাসীর প্রতিবাদ। আর সেই অপেরা দেখে জাতীয়তাবাদের চেতনা জেগে ওঠে বেলজিয়ানদের মধ্যেও। হিস্টরি চ্যানেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেই তাৎক্ষণিক হাঙ্গামা থেকেই বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন কলকারখানায় হামলা চালান এবং সরকারি ভবনগুলো দখল করে নেন। ওই হাঙ্গামা এখানেই শেষ হয়নি। এটি পরে স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত হয়। ওই বছরের অক্টোবর মাসে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল বেলজিয়াম।
৪. ভাস্কর্য নিয়ে তোলপাড়
চিকিৎসাবিদ্যায় মৃতদেহের ব্যবচ্ছেদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢের হাঙ্গামা হয়েছিল একসময়। তবে ১৯০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর লন্ডনে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন অন্য এক কারণে। জীবন্ত প্রাণীদের শরীরে শল্যচিকিৎসার সমর্থনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন তাঁরা। অবশ্য এ ঘটনার শুরু ১৯০৩ সালে। তখন লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজে চেতনানাশক প্রয়োগ না করেই কিছু প্রাণীর দেহে শল্যচিকিৎসা করার অভিযোগ উঠেছিল। হিস্ট্রি চ্যানেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রাণী অধিকার কর্মীরা পরে ১৯০৬ সালে ব্রোঞ্জের তৈরি কুকুরের এক ভাস্কর্য স্থাপন করেছিলেন সেখানে। আর তাতেই খেপে গিয়েছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা। ১৯০৭ সালে তাঁরা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং ওই ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। পরে প্রায় ৪০০ পুলিশ মোতায়েন করে হাঙ্গামা সামলায় প্রশাসন। ১৯১০ সালে কুকুরের ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।
৫. খেলা নিয়ে হাঙ্গামা
নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামের একটি জনপ্রিয় খেলা ছিল ইল পুলিং। এই খেলায় ইল নামের একটি মাছকে কোনো খালের ওপরে দড়ি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। আর চলন্ত নৌকায় থাকা প্রতিযোগীদের সেই পিচ্ছিল মাছকে ছিনিয়ে নিতে হতো। দেশটির সরকার ‘নিষ্ঠুর’ আখ্যা দিয়ে এই খেলা অবৈধ ঘোষণা করলেও সাধারণ মানুষ বন্ধ করেনি তা। ১৮৮৬ সালের জুলাই মাসে এই খেলার এমনই এক প্রতিযোগিতায় বাধা দিয়েছিল পুলিশ। মেন্টাল ফ্লসের খবরে বলা হয়েছে, আমস্টারডামের জরডান এলাকায় ওই প্রতিযোগিতা হচ্ছিল। বাধা দেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। স্থানীয় কিছু রাজনীতিকও তাতে যোগ দিলে সংঘর্ষ রূপ নেয় দাঙ্গায়। পরে সেখানে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছিল। দিন কয়েক ধরে চলা এই হাঙ্গামা শেষ হয়েছিল রক্ত ঝরিয়ে। সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছিল ২৬ জন। আহত হয়েছিল প্রায় ১৩৬ জন মানুষ।
No comments