এসএসসি পরীক্ষা
আগামী
১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে
সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, আপাতদৃষ্টিতে সেগুলো ইতিবাচক মনে হলেও প্রকৃতই
কাজে আসবে কি না, সেটি নির্ভর করছে এর প্রয়োগের ওপর। সরকারের গৃহীত
সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে পরীক্ষার্থীর
আসনে বসা, পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্রের মোড়ক খোলা এবং পরীক্ষা
শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা। চলতি বছর সারা দেশে অভিন্ন
প্রশ্নে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে
হলে প্রথমেই এর উৎসগুলো খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে কোচিং
সেন্টারগুলো যে একটি বড় উপাদান হিসেবে কাজ করে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে কোচিং সেন্টারগুলো কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করছে, সেই
প্রমাণও আছে। সেদিক থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত
জানাই। কিন্তু সেই সঙ্গে এ–ও মনে রাখতে হবে যে কোচিং সেন্টারগুলো নিজে নিজে
তো প্রশ্ন ফাঁস করতে পারে না। প্রশ্নপত্র তৈরি, মুদ্রণ ও বিতরণের সঙ্গে
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সহায়তা নিয়েই কাজটি করে থাকে।
সরকারকে প্রথমে এই তিন
স্তরের ফাঁকফোকর বন্ধ করতে হবে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহির আওতায়
আনতে হবে। তবে সরকার পরীক্ষা চলাকালে সীমিত সময়ের জন্য ফেসবুক বন্ধ করার
যে চিন্তাভাবনা করছে, সেটি সমর্থনযোগ্য নয়। প্রথমত, ফেসবুক নিজে তো
প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে পারে না। প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে
সেটি ছড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক
সৃষ্টি হতে পারে। এসব বিবেচনায় নিয়েও বলব, প্রশ্নপত্র ফাঁসের উৎস বন্ধ করতে
পারলে ফেসবুক নিয়ে টানাটানির প্রয়োজন হবে না। কোথাও প্রশ্নপত্র ফাঁসের
ঘটনা ঘটলে সরকার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে,
আমরা মনে করি এটি সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে পরীক্ষা বন্ধ করা যেন প্রশ্নপত্র
ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বাঁচানোর কৌশল না হয়। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি
ব্যবহার করে যে চক্রটি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি এবং চাকরির
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে, সেই চক্রের বেশ কয়েকজন ধরা পড়েছে। এ ধরনের
জালিয়াত চক্রকে কঠোর শাস্তি দেওয়া গেলে পাবলিক পরীক্ষাসহ সব পরীক্ষার
প্রশ্নপত্র ফাঁস চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। তবে তার আগে সরষের ভেতরের ভূত
তাড়াতে হবে।
No comments