পেছনের সারিতে বাংলাদেশ
অর্থনৈতিক
উন্নয়নে বাংলাদেশের যে সাফল্য, তার মধ্যে পরিবেশ যে কতটা অপাঙ্ক্তেয়,
তারই একটি নির্দেশক সম্প্রতি প্রকাশিত এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স
ইনডেক্সের (ইপিআই) সূচক। তবে তাই বলে ১৮০টি দেশের মধ্যে সূচকের একেবারে
তলানিতে, মানে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৯তম স্থানে নেমে আসার খবরটি আমাদের
বিচলিত করেছে। অবশ্য এটাও কোনো সান্ত্বনা নয় যে আমাদের দুই নিকটতম
প্রতিবেশী ভারত ও নেপালের সূচক যথাক্রমে ১৭৭ ও ১৭৬। এটা বরং আরও নির্দেশ
করছে যে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমরা ১৬ কোটি মানুষ যে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের
মধ্যে বাস করছি, সেটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, আমরা একেবারে অঞ্চলগতভাবে
একটা বিপজ্জনক গহ্বরে পড়ে গেছি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এটা হয়তো কাকতালীয় নয়,
হিমালয়দুহিতা ভুটান পরিবেশের প্রতি যত্নশীল থেকেও ভারত, নেপাল ও
বাংলাদেশের প্রতিবেশী হিসেবে তাদের সূচকও ১৩১-এ স্থির হয়েছে। এই অঞ্চলের
মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম শ্রীলঙ্কা, যার অবস্থান ৭০তম। এসবই নির্দেশ করছে
যে প্রতিবেশী পরিবেশমন্ত্রীরা নিয়মিতভাবে কোনো বৈঠকে বসার উদ্যোগ নিতে
পারেন।
তাঁরা খতিয়ে দেখবেন যে আফ্রিকার কোনো কোনো দেশ কীভাবে সূচকের এতটা
ওপরে থাকতে পারে। দ্বিপক্ষীয় ফোরামের চেয়ে মনে হচ্ছে অঞ্চলের সরকারগুলোর
উচিত হবে বহুপক্ষীয়ভাবে এই কঠিন সমস্যা মোকাবিলায় অভিন্ন কৌশল গ্রহণ করা।
তবে এ বিষয়ে এই অঞ্চলের সরকারগুলো জনগণকে যেভাবে রুটিনভাবে আশ্বস্ত করে
থাকে, তাতে তাদের গ্রহণযোগ্যতাকে এই সমীক্ষা যেন খাদে ফেলে দিয়েছে। এটা
দুঃখজনক যে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক সরকারগুলো মাত্রাভেদে এখন পর্যন্ত ইউরোপের
উন্নয়নদর্শন গ্রহণে বহু গুণে পিছিয়ে আছে। এরা বরং কথায় কথায় মানুষকে গল্প
শোনাতে অভ্যস্ত। জিডিপির হার, রাস্তাঘাট, দালানকোঠা, উড়ালসেতুর মতো
দৃশ্যমান কিছু বিষয় তারা উন্নয়নের সাফল্য হিসেবে হাজির করে। আশা করব,
পরিবেশকে বাদ দিয়ে গণতন্ত্র ও সুশাসন যে কার্যকর হতে পারে না, সেই অপ্রিয়
সত্য তারা বিবেচনায় নেবে। ওই রিপোর্ট বলছে, বায়ুর মানোন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য
সংরক্ষণ ও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমিয়ে আনার প্রশ্নে ভারত ও বাংলাদেশের
এই হাল হয়েছে। এ থেকে বাঁচতে চাইলে বাংলাদেশকে আগে রাজনৈতিক সদিচ্ছার
প্রমাণ দিতে হবে। কারণ, আইন ও নজরদারির জন্য প্রতিষ্ঠানের কোনো ঘাটতি নেই।
ভয়ংকর ঘাটতি চলছে আইন বাস্তবায়নে। নদী ও জলাধার উদ্ধারে বিচার বিভাগীয়
হস্তক্ষেপগুলো কার্যকর কোনো সুফল যে দিতে পারে না, তা বুঝতে হলে রাজনৈতিক
অঙ্গীকারের সংকট না থাকার দিকেই মনোযোগ দিতে হবে।
No comments