ট্যানারির গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি বিচ্ছিন্ন করার কাজ শুরু
রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ শুরু হয়েছে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট তিতাস গ্যাস, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষকে (ঢাকা ওয়াসা) সঙ্গে নিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্নের কাজ শুরু করেছে। নিরাপত্তার জন্য সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গত ৬ মার্চ হাইকোর্ট হাজারীবাগ ছাড়তে ট্যানারিগুলোর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেন। পরে এ রায় সুপ্রিম কোর্টে বহাল থাকে। ট্যানারি মালিকেরা ঈদুল আজহা পর্যন্ত সময় চেয়ে আবেদন করলে তা হাইকোর্টে খারিজ হয়ে যায়। ট্যানারিগুলোর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে ১০ এপ্রিলের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন আদালত। পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে ট্যানারি মালিকেরা আর কোনো আইনি লড়াইয়ে না যাওয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্নের কাজ শুরু হয়েছে। সংযোগ বিচ্ছিন্নের সময় উপস্থিত পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রইছউল আলম মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, কাল দুপুর নাগাদ এ কাজ শেষ হবে। সংযোগ বিচ্ছিন্নের কাজে ট্যানারি মালিক ও শ্রমিকদের সহযোগিতা পাচ্ছেন। সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরা গ্রামে ১৯৯ একর জমির ওপর চামড়া শিল্পনগর প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে ১৫৫টি ট্যানারি শিল্প-কারখানাকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। তবে বেশ কিছু ট্যানারি সেখানে প্লট পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
যদিও পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবি, ওই ট্যানারিগুলোর পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। সে ক্ষেত্রে প্লট পায়নি—এমন ট্যানারিগুলোর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে কি না, জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরের এখতিয়ারবহির্ভূত। সব সংযোগই বিচ্ছিন্ন করা হবে। ট্যানারি মোড়, মনেশ্বর রোডের মোড়, ঢাকা ট্যানারি মোড়, বেড়িবাঁধ মোড়—হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোকে এ চার ভাগে ভাগ করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ শুরু হয়েছে। সে সময় ট্যানারি মালিক ও শ্রমিকদের ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে তাঁরা কাজে কোনো বাধা দেননি। এমবি ট্যানারির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সময় কাঁদতে শুরু করেন প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মী রমজান আলী। তিনি বলেন, ৩২ বছর ধরে তিনি এখানে কাজ করেছেন। এখন কর্মহীন হয়ে পড়বেন। সামনে রোজা, ঈদ। বেতন-বোনাস কিছুই পাবেন না। সন্তানদের নিয়ে কীভাবে চলবেন বলেই কান্না শুরু করেন তিনি। ট্যানারি মালিকদের অভিযোগ, হেমায়েতপুরে ট্যানারিগুলোর এখনি কাজ শুরু করার মতো অবস্থা নেই। বিসিক এখনো প্রস্তুত নয়। সেখানে পুরোপুরি গ্যাস-সংযোগ চালু করা যায়নি। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) তৈরির কাজও পুরোপুরি শেষ হয়নি। এ অবস্থায় হাজারীবাগে ট্যানারিগুলোর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে।
No comments