অনেক পাওয়ার এক সফর
স্মরণীয়
এক সফর শেষে শ্রীলংকা থেকে কাল বেলা সাড়ে ১১টায় দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ দল।
শ্রীলংকার মাটিতে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল সফর। টেস্ট এবং ওয়ানডের পর টি
২০ সিরিজও শেষ হয়েছে ১-১ সমতায়। দারুণ এক সাফল্যে মোড়ানো সফরে সব ছাপিয়ে
আলোচনা টি ২০ ক্রিকেট থেকে মাশরাফি মুর্তজার অবসর নিয়ে। অনেক প্রাপ্তির
সফরে বাংলাদেশের বড় সাফল্য নিজেদের শততম টেস্টে জয়। তিন সংস্করণেই একটি করে
জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ঘটনাবহুল সফরটা শেষও হয়েছে জয় দিয়ে। প্রথমবারের মতো
কোনো সিরিজ না হেরে শ্রীলংকা থেকে ফিরল বাংলাদেশ দল। সফরের শুরুটা অবশ্য
হয়েছিল হার দিয়ে। ফেভারিট হিসেবেই প্রথম টেস্টে নেমেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু
ব্যাটসম্যানদের মাথা গরম ব্যাটিংয়ে ২৫৯ রানের বড় ব্যবধানে হেরে বসে
সফরকারীরা। এই হারের কারণেই শততম টেস্টের জয়টা আরও মধুর হয়ে ধরা দিয়েছিল।
সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে কলম্বোর পি সারা
ওভালে নিজেদের ১০০তম টেস্টে চার উইকেটের ঐতিহাসিক জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন তামিম ইকবাল, সিরিজ সেরা সাকিব।
বিদেশের
মাটিতে বড় দলের বিপক্ষে জয় টেস্টে বাংলাদেশের সক্ষমতাই প্রমাণ করেছে।
স্বপ্নময় সেই পাঁচ দিনে কত কিছুরই না দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। তামিমের
দুর্দান্ত ইনিংস, মুশফিকুর রহিমের চোয়ালবদ্ধ লড়াই, টেস্টেও মোস্তাফিজুরের
ফেরা, অভিষেকে চমক দেখানো মোসাদ্দেকের ঝলমলে ব্যাটিং এবং সাকিব আল হাসানের
ম্যাচ জেতানো অলরাউন্ড পারফরম্যান্স। শততম টেস্ট জয়ে অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট
ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের সঙ্গে অনন্য এক রেকর্ডে নিজেদের নামটাও লিখিয়েছে
বাংলাদেশ। মাঠের বাইরেও হয়েছে অনেক নাটক। শুরুটা ছিল মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে।
শততম টেস্টের আগে হঠাৎ করেই তাকে বাদ দেয়া হয়। এমনকি তাকে দেশে ফেরত
পাঠানোর পরিকল্পনা চলছিল। শেষ পর্যন্ত মিডিয়ার সমালোচনার মুখে দলের সঙ্গে
রাখা হয় মাহমুদউল্লাহকে। অবশ্য শততম টেস্টে খেলা হয়নি তার। খেলতে পারেননি
মুমিনুল হকও। টেস্ট সিরিজ ১-১-এ ড্রর পর ওয়ানডে সিরিজে ৩-০-তে জয়ের আশা
করেছিল বাংলাদেশ। এই সিরিজের আগে হঠাৎ করে দেশে ফিরে যাওয়া মেহেদী হাসান
মিরাজকে ফের উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় শ্রীলংকায়। প্রথম ম্যাচেই রঙিন পোশাকে তার
অভিষেক হয়। সাদা পোশাকে সাফল্যের পর রঙিন পোশাকেও নিজের জাত চেনান মিরাজ।
শততম টেস্টের জয় টাটকা থাকতেই প্রথম ওয়ানডেতে দাপুটে জয় তুলে নেয় টাইগাররা।
তামিম ইকবালের সেঞ্চুরিতে ৩২৪ রানের পাহাড় গড়ে ৯০ রানের বড় জয় পান
মাশরাফিরা। ডাম্বুলায় দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল
বাংলাদেশ। স্বাগতিকরা আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে ৩১১ রান তুলে ফেলে। তবে এই
ইনিংসে বাংলাদেশের প্রাপ্তি তাসকিন আহমেদের হ্যাটট্রিক। ইনিংসের শেষ তিন
বলে আসেলা গুনারত্নে, লাকমাল ও নুয়ান প্রদীপকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের হয়ে
ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক করা পঞ্চম বোলার হিসেবে নাম রেকর্ড বইয়ে লেখান এই ডান
হাতি পেসার। যদিও বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়। তাতে নিশ্চিত হয়ে
যায় বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজে হারছে না। মাশরাফিদের লক্ষ্য ছিল শেষ ম্যাচ
জিতে সিরিজ ২-০-তে জেতা। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় শেষ ম্যাচে হেরে যায়
টাইগাররা। সিরিজ ১-১-এ ড্র হয়। দল ভালো করলেও কিছু বলতে পছন্দ করেন, খারাপ
করলেও আলোচনায় থাকতে পছন্দ করেন নাজমুল হাসান। এই সফরের অধিকাংশ সময়েই
শ্রীলংকায় ছিলেন বিসিবি সভাপতি। টেস্ট সিরিজের পর নাজমুল হাসান বলেছিলেন,
মাহমুদউল্লাহকে শেষ টেস্ট থেকে বাদ দিয়েছেন তিনি, আবার ওয়ানডে দলে মিরাজকে
ঢুকিয়েছেনও নাকি তিনি।
অথচ দল নির্বাচনে বিসিবি সভাপতিকে যেন হস্তক্ষেপ
করতে না হয় এজন্যই চালু হয়েছে দ্বিস্তর বিশিষ্ট নির্বাচন পদ্ধতি। ক্ষুদে
ফরম্যাটে টানা আট ম্যাচ হারের পর শ্রীলংকার বিপক্ষে টি ২০ সিরিজে
বাংলাদেশকে একটু দুর্বলই মনে হচ্ছিল। প্রথম টি ২০ ম্যাচে টসের সময় মাশরাফি
হঠাৎ ধারাভাষ্যকার ডিন জোন্সকে জানিয়ে দেন এটাই তার শেষ টি ২০ সিরিজ। তার
অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। টসের আগেই অবশ্য নিজের
ফেসবুকে অবসরের বিষয়ে জানিয়ে দেন মাশরাফি। বিসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে,
মাশরাফির অবসরের পেছনে কোচের ভূমিকাই বেশি। কোচের সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়ন
করার জন্য বোর্ড মাশরাফির অবসর চেয়েছে। মাশরাফির বিদায়ী সিরিজের প্রথম
ম্যাচে হেরে যায় টাইগাররা। হারের পর মাশরাফি বলেন, ‘টেস্টের মতো টি ২০
ক্রিকেটেও আমরা শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজ ড্র করব।’ প্রিয় অধিনায়কের বিদায়ী
ম্যাচে যেন নিজেদের উজাড় করে দিয়ে খেলেছেন সাকিব-মোস্তাফিজরা। দারুণ এক জয়
দিয়ে টি ২০ সিরিজও ১-১-এ ড্র করেন মাশরাফিরা। স্বপ্নের এক সফর শেষে কাল
সকালে দেশে ফেরার পর আরও একটি বিস্ময়কর মন্তব্য করেছেন বিসিবি সভাপতি
নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘মাশরাফি কিন্তু এখনও টি ২০ ছাড়েনি। আমরা একবারও
বলিনি সে স্কোয়াডে নেই। সে অধিনায়কত্ব ছেড়েছে!’ কিছু বিতর্কের পরও সাফল্যে
মোড়ানো এই সিরিজটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
No comments