গলাকাটা সুদ আদায় ক্রেডিট কার্ডে
ব্যাংকিং
খাতে গড় আমানতের সুদহার ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ ১০০ টাকার আমানত নিতে
ব্যাংক ব্যয় করছে পাঁচ টাকা। কিন্তু ক্রেডিট কার্ড থেকে ঋণ নিলে তার সুদ
পরিশোধ করতে হয় ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা। ক্রেডিট কার্ডের এ গলাকাটা সুদ ও
চার্জ নিয়ে যেন কারো কোনো কথা নেই। না আছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ
ব্যাংকের, না আছে সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো মহলের। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেডিট
কার্ডের সীমা দ্বিগুণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ যেন যত পারো ঋণ নাও আর বেশি
হারে সুদ পরিশোধ করো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে,
ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিতরণকৃত পুরো ঋণই শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ। এ ঋণ যত
বেশি বিতরণ করা হয় ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ তত বেড়ে যায়। আর
ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বাড়লে এর বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের পরিমাণও বাড়ে। তাই
ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের সীমা দ্বিগুণ করে প্রকারান্তরে
ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদই বাড়িয়ে তুলছে ব্যাংকিং খাতে। জানা গেছে, সচ্ছল ব্যবসায়ী ও
চাকরিজীবীরা যাদের কর শনাক্তকারী নম্বর আছে, তারাই মূলত ক্রেডিট কার্ড
ব্যবহারে যোগ্য বলে বিবেচিত হন। হরেক রকম ক্রেডিট কার্ড বাজারে ছেড়েছে
ব্যাংকগুলো। ভিসা, মাস্টার কার্ড, সিলভার কার্ড, গোল্ড কার্ড ইত্যাদি।
সাধারণত ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নগদ টাকা উত্তোলনের গ্রহীতাকে ব্যাংক-ভেদে
আড়াই থেকে সাড়ে তিন শতাংশ পর্যন্ত সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। আর নির্ধারিত
সময়ের পর টাকা পরিশোধ করতে গেলেও মাসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন শতাংশ সুদ কাটা
হয়। এ হিসাবে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ করে বছরে ১০০ টাকার বিপরীতে
পরিশোধ করতে হয় ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা। আগে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে
সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারতেন গ্রাহকেরা। কিন্তু বিনিয়োগ
স্থবিরতার কারণে ব্যাংকের হাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগযোগ্য তহবিল রয়েছে। অলস
টাকার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণসীমা বাড়ানো হয়।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এখন ১০০ টাকা আমানত পেতে গড়ে তাদের ব্যয় করতে হয়
পাঁচ টাকা। কিন্তু উদ্যোক্তার অভাবে ঋণ বিতরণ করা যাচ্ছে না। প্রায় প্রতিটি
ব্যাংকের হাতেই অলস টাকা রয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়
বেড়ে যাচ্ছে। এ ব্যয় কমাতে ব্যাংকগুলো এখন বিকল্প উপায়ে বিনিয়োগ করছে।
শিল্পঋণ কমে যাওয়ায় তাই ভোক্তাঋণ বাড়ানোর দিকে জোর দিচ্ছে।
নাম প্রকাশ না
করার শর্তে দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানান,
তার ব্যাংক বিদায়ী বছরে যে পরিমাণ মুনাফা করেছে তার উল্লেখযোগ্য অংশ এসেছে
ক্রেডিট কার্ড ও ভোক্তাঋণের ক্ষেত্র থেকে। তিনি জানান, আমানতের সুদহার কমে
যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও উদ্যোক্তাদের চাপে শিল্পঋণও কমানো হয়েছে। অনেক
ব্যাংক এখন কাগজ-কলমে শিল্পঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছে। কিন্তু যে
পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করছেন তা কাজে লাগাতে পারছেন না। ফলে তারা ক্রেডিট
কার্ড ও ভোক্তাঋণের মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা করছেন। যেহেতু ভোক্তাঋণ ও
ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণের সুদের সীমা বেঁধে দেয়া নেই, এ
কারণেই ব্যাংকগুলো এ ক্ষেত্রে বেশি সুদ আরোপ করতে পারছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ আমানতের সুদের ব্যবধান
৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাংকের এ
¯েপ্রড এখনো ১০ থেকে ১২ শতাংশ রয়েছে। এর অন্যতম কারণ ক্রেডিট কার্ড। কারণ
১০০ টাকা আমানত নিতে যেখানে পাঁচ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে, ওই আমানত থেকে
ক্রেটিড কার্ডের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণে সুদ নেয়া হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। ৩০
শতাংশ হিসেবে নিলেও এখানে ¯েপ্রড হচ্ছে ২৫ শতাংশ। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক
থেকে নির্দেশনা আছে ৫ শতাংশের নিচে থাকতে হবে। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে
উচ্চ সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে এক দিকে গ্রাহকের যেমন নাভিশ্বাস অবস্থা, তেমনি
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পরিপালনেও ব্যাংকগুলো গাফিলতির পরিচয় দিচ্ছে।
ব্যাংকগুলোর এ উচ্চ সুদ আদায় থামাতে প্রোডাক্ট-ভেদে ¯েপ্রড বেঁধে দেয়া
প্রয়োজন।
No comments