বিস্কুটের বাজারে বৈচিত্র্য বাড়ছে
অলিগলির চায়ের দোকানে একটি বিস্কুট কেনা যায় তিন টাকা দিয়েই। আবার অভিজাত দোকানে পাওয়া যায় ২৪০ টাকা দামের ৬টি বিস্কুটের একটি প্যাকেট, যা দেশেই তৈরি হয়। এর মাঝখানে নানা দামের বিস্কুট আছে, যার স্বাদও বহু রকমের। এই নতুন নতুন স্বাদ আর দামের বৈচিত্র্য দেশের বিস্কুটের বাজারকে বড় করছে। শুধু দেশেই নয়, বাংলাদেশি বিস্কুটের বাজার বাড়ছে বিদেশেও। বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠান দেশের বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করে এখন বিস্কুট রপ্তানি করছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় তারা তুলনামূলক কম দামে রপ্তানি করতে পারছে। সব মিলিয়ে এ খাতে বেশ ভালো সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, দেশের বিস্কুটের বাজারের আকার এখন প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা, যা প্রতিবছর গড়ে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। যদিও এ হিসাব কোনো সমীক্ষা করে তৈরি করা হয়নি। বিস্কুট কোম্পানিগুলো বলছে, গত কয়েক বছরে বিস্কুটের উপকরণগুলোর দাম কমেছে, পাশাপাশি দেশে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। ফলে বিস্কুটের দামও বাড়েনি। এতে দেশের মানুষ সস্তায় নাগালের মধ্যে বিস্কুট পাচ্ছে, যা বাজার বৃদ্ধির আরেকটি বড় কারণ। বাংলাদেশ অটো-বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস বদলাচ্ছে। তারা এখন এক প্যাকেট বিস্কুট খেয়েই এক বেলা পার করছে। তাই বাজার বড় হচ্ছে। তিনি বলেন, বিস্কুট এখন একটি পূর্ণাঙ্গ খাদ্য। এতে সব ধরনের খাদ্য উপাদান যুক্ত করছে কোম্পানিগুলো, যা স্বাস্থ্যকর। পাশাপাশি আধুনিক কারখানায় উৎপাদিত স্বাস্থ্যসম্মত বিস্কুট এখন মানুষ কম খরচে পাচ্ছে। খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিস্কুটের বাজারটি মোটা দাগে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত।
এগুলো হলো সাধারণ বেকারির তৈরি বিস্কুট, ছোট ছোট অঞ্চল বা এলাকাভিত্তিক ব্র্যান্ডের বিস্কুট এবং প্রতিষ্ঠিত বড় কোম্পানির কারখানায় উৎপাদিত বিস্কুট। ব্র্যান্ডের বিস্কুটের দাম আগের চেয়ে কমে আসায় সেগুলোর বিক্রি এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বিশেষ করে পাঁচ টাকার মধ্যে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিস্কুট এখন পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলো চায়ের দোকানে বেশ জনপ্রিয়। অলিম্পিক, হক, নাবিস্কো, ড্যানিশ, রোমানিয়া, কোকোলা, প্রাণ, কিষোয়ান, ওয়েল ফুড—এগুলোই বিস্কুটের বাজারে এখন বড় ব্র্যান্ড। বিস্কুটের বাজারে পুরোনো কোম্পানি অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ নিজেদের শীর্ষ অবস্থান এখনো ধরে রেখেছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩৬টি ব্র্যান্ড নামে বিস্কুট বিক্রি করে। প্রায় এক দশক ধরে কোম্পানিটি বিস্কুট বিক্রিতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে বলে জানান বিপণন মহাব্যবস্থাপক তৌহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, এখন তো নানা রকম বিস্কুট আছে। যাঁর যেটা পছন্দ, তিনি সেটা কিনতে পারছেন। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন সাধারণ বিস্কুট থেকে শুরু করে আলু, জিরা, ক্রিম, চকলেট, ওয়েফার, টোস্ট, মসলা, নোনতা, বাদাম, দুধ, ঘি, ঝাল, সবজি, গ্লুকোজ, কফি, স্ট্রবেরি, কমলাসহ নানা স্বাদের বিস্কুট বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য চিনি ছাড়া বিস্কুট ও হজমে উপকারী ডাইজেস্টিভ বিস্কুট এনেছে কয়েকটি কোম্পানি। ২৪০ টাকায় ৬টি বিস্কুটের প্যাকেট বিক্রি করে যে প্রতিষ্ঠান তার নাম ইউনিম্যাক ফুডস। কোম্পানিটির মহাব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম বলেন, এ বিস্কুটের বিশেষত্ব হলো, এতে খুব ভালো মানের চকলেট ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কোকোয়া নোয়া, চকলেট ফুদু, চেসডবোর্ড নামের তিন ধরনের বিস্কুট আছে। তা এখন বিভিন্ন সুপারশপে মিলছে।
উঁচু দামের আমদানি বিকল্প বিস্কুট তৈরি করে বাজার ধরাই প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য। দেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্পগোষ্ঠী কোহিনূর গ্রুপ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘রিদিশা’ ব্র্যান্ড নামে বিস্কুটের বাজারে এসেছে। এ জন্য গাজীপুরের শ্রীপুরের ধানুয়ায় রিদিশা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কারখানা তৈরি করা হয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে বাজারের ৩ শতাংশ দখলে নিতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য সারা দেশে ৩০০ পরিবেশক নিয়োগসহ জোরেশোরে প্রচারণাও চালাচ্ছে রিদিশা ফুডস। ২০১২ সালে বিস্কুটের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। বিস্কুটের পাশাপাশি রুটি, কেক, পেস্ট্রির মতো বেকারি পণ্যও আছে প্রতিষ্ঠানটির। প্রাণ ব্র্যান্ড নামের সঙ্গে বিস্কুটের আরও দুটি ব্র্যান্ড বাজারে আছে প্রাণ-আরএফএলের। অন্য দুটি ব্র্যান্ড হলো বিস্ক ক্লাব ও অল-টাইম। সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকার মধ্যে কিনতে পাওয়া যায় এসব বিস্কুট। বছরে গড়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে বলে জানান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল। তিনি বলেন, প্রাণ সব শ্রেণির ক্রেতার কথা মাথায় রেখেই বিস্কুট উৎপাদন করে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিস্কুট, ওয়েফার ও কেক রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪ কোটি ৩৩ লাখ ডলার আয় করেছে। আগের বছরের চেয়ে রপ্তানি বেড়েছে ১৪ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে সংযুক্ত আরব-আমিরাতে।
No comments