গায়ানায় জেসন মোহাম্মদ–রূপকথা!
অবিশ্বাস—পাকিস্তান দলের খেলোয়াড় আর গায়নার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামের দর্শকের চোখে ম্যাচ শেষে এটাই ছিল। ৩০৯ রানের লক্ষ্য, ম্যাচ তো সেখানেই শেষ! ভাঙাচোরা এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে, তা কেই–বা ভাবতে পেরেছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে পেরেছে, তা একজন জেসন মোহাম্মদের রূপকথার মতো এক ইনিংসের কারণেই। ইনিংসের ৩৫ ওভার পর্যন্ত যেখানে পাকিস্তানের জয়ের সম্ভাবনাই ছিল ৯৫ ভাগ, সেখানে দিনের শেষে জয়ী দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ ১৩ ওভারে ১২৮ রান তুলে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৪ উইকেটের জয় পায় জেসন হোল্ডারের দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসে ওয়ানডেতে এটা সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও। এর আগে ৩০০–র বেশি রান তাড়া করে কখনো জেতেনি তারা। প্রথমে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ৩০৮ করে পাকিস্তান। কঠিন এই চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন জেসন মোহাম্মদ। ৫ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে জীবনের সেরা ইনিংসটাই যেন খেললেন তিনি। ৫৮ বলে ৯১ রানের ইনিংসটি তিনি সাজিয়েছেন ১১টা চার আর তিন ছক্কায়। জেসন যেন প্রতিজ্ঞা করেই মাঠে নেমেছিলেন দুর্দান্ত কিছুর। সেই প্রতিজ্ঞারই অনুবাদ দেখল গায়ানার দর্শকেরা। তিনটি জুটিতে জেসন মোহাম্মদের অবদান ঘুরিয়ে দেয় ম্যাচের মোড়। পঞ্চম উইকেট জুটিতে জোনাথন কার্টার ও জেসন ৭.৫ ওভারে যোগ করেন ৭০ রান। ষষ্ঠ উইকেটে জেসন হোল্ডারকে সঙ্গে নিয়ে জেসন মোহাম্মদ আরও ৩১ রান যোগ করেন মাত্র ৩ ওভারে। সপ্তম উইকেটে অ্যাশলি নার্সের সঙ্গে ৪.৩ ওভারে ৫০ রান যোগ করে ম্যাচটা নিজেদের করে নেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় উইকেটে এভিন লুইস এবং শাই হোপকে সঙ্গে নিয়ে যথাক্রমে ৬৮ ও ৬৫ রান যোগ করে দলের জয়ে দারুণ অবদান রাখেন কাইরেন পাওয়েল। পাওয়েলের ব্যাট থেকে আসে ৬২ রান। লুইস করেন ৪৭।
শেষ দিকে জেসন মোহাম্মদকে দারুণ সঙ্গ দেওয়া অ্যাশলি নার্সের ব্যাট থেকে আসে ৩৪ রান। পাকিস্তানের কোনো বোলারকেই ছেড়ে কথা বলেননি জেসন মোহাম্মদ। সবচেয়ে বেশি ঝড় গেছে, ওয়াহাব রিয়াজ, মোহাম্মদ আমির ও হাসান আলীর ওপর দিয়ে। আমির ৯ ওভারে ৫৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। রিয়াজ ৯ ওভারে ৬৯ দিয়ে একটি। আলী ৪৩ রান দিয়েছেন মাত্র ৫ ওভারে। এই সফরের সেনসেশন শাদাব খান ২ উইকেট পেলেও ছিলেন যথেষ্ট খরচে। ৯ ওভারে ৫২ রান দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া একটি উইকেট পেয়েছেন মোহাম্মদ হাফিজ। এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ক্যারিবীয় দলের বাজে ফিল্ডিংয়ের সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগায় পাকিস্তান। দারুণ ব্যাটিং করেন আহমেদ শেহজাদ, মোহাম্মদ হাফিজ ও কামরান আকমল। শেহজাদ-আকমলের ওপেনিং জুটি তোলে ৮৫ রান। প্রথম ১০ ওভারে বাউন্ডারির স্রোত বইয়ে দেন এই দুই ওপেনার। ওয়ান ডাউনে নামা হাফিজ ৯২ বলে করেন ৮৮। তবে পাকিস্তানের রান ৩০০ পেরোয় মূলত শোয়েব মালিকের ব্যাটিংয়ে। ৩৮ বলে ৬টি বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৫৩ রান করেন তিনি। সরফরাজ আহমেদ অপরাজিত থাকেন ২০ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের মধ্যে অ্যাশলি নার্সই সেরা। ৬২ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। একটি উইকেট জেসন হোল্ডারের। সূত্র: ক্রিকইনফো।
No comments