‘আয়া ও আহমেদের কি দোষ ছিল’
সিরিয়ায়
‘রাসায়নিক অস্ত্রের’ হামলার পর স্ত্রী ও যমজ শিশুদের বাড়িতে সুস্থ দেখে
প্রতিবেশীদের সাহায্য করতে যাওয়া এক বাবা পরিবারের ২২ সদস্যকে হারিয়েছেন।
নিঃস্ব এ বাবার নাম আবদুল হামিদ আল ইউসুফ। কান্না জড়ানো কণ্ঠে ইউসুফের
প্রশ্ন, কি দোষ ছিল তার ১০ মাস বয়সী দুই শিশু সন্তান আয়া ও আহমেদের। ইদলিব
প্রদেশে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত খান শেইখৌন শহরে মঙ্গলবার সকালে বিমান
হামলার পর বাসিন্দাদের প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং মুখ দিয়ে ফেনা উঠতে
থাকে। ধারণা করা হচ্ছে, সিরিয়ার সরকারি বাহিনী সেখানে রাসায়নিক গ্যাস
(সারিন গ্যাস) হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় ২০টি শিশুসহ শতাধিক নিহত হয়েছে বলে
জানায় ‘সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস’। বিবিসি জানায়, মঙ্গলবার
সকালে খান শেইখৌন শহরে তিনবার বিমান হামলা চালানো হয়। প্রথমবার বিমান
হামলার পর স্ত্রী দালাল ও নয় মাস বয়সী যমজ সন্তান আয়া ও আহমেদকে বাড়িতে
রেখে পাশেই বাস করা আত্মীয়দের সাহায্য করতে যান ইউসুফ। সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক সাক্ষাৎকারে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি বাড়ি থেকে বের
হওয়ার সময় আয়া ও আহমেদকে সুস্থই দেখেছিলাম। কেন এটা হল? আমি ভেবেছিলাম তারা
বাড়িতে ঠিক আছে। এখন তারা আর নেই।’ দ্বিতীয়বার হামলার সময় ইউসুফের বাড়িতে
রাসায়নিক গ্যাস নার্ভ এজেন্ট ছড়িয়ে পড়ে বলে জানিয়েছে বিবিসি। ইউসুফ বলেন,
প্রথমবার বিস্ফোরণের পর প্রতিবেশীদের সাহায্য করতে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়
আমি দেখলাম গ্যাস বহু লোকদের আক্রমণ করেছে।
প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে লোকজন মারা
যাচ্ছে। আমি তাদের সাহায্যে এগিয়ে গেলাম। ‘তিনি আরও বলেন, আমি অসুস্থ
মানুষদের সরিয়ে নেয়া শুরু করলাম। আমি তাদের রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। রাস্তায়
লোকজনকে সাহায্য করতে গিয়ে আমি আর বাড়ি ফিরে যেতে পারিনি।’ পরে নিজের
বাবা-মার বাড়িতে গিয়ে ভাই ইয়াসের এবং তার সন্তানকে মৃত দেখতে পান ইউসুফ।
তিনি বলেন, সে (ইয়াসের) সম্ভবত তার ছেলেকে সাহায্য করার চেষ্টা করছিল।
তাদের মৃতদেহ একে অন্যের উপর পড়েছিল। আমি তাদের মুখে ফেনা দেখেছি, তাদের
শরীর নীল হয়ে গিয়েছিল।’ এ হামলায় স্ত্রী, সন্তান, পিতা-মাতা, ভাই এবং
ভাইয়ের সন্তানদেরসহ পরিবারের মোট ২২ জন সদস্যকে হারিয়েছেন ইউসুফ। আত্মীয়দের
সাহায্য করার সময় ইউসুফের শরীরে বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাব শুরু হয়।
শ্বাসকষ্টের এক পর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে
যাওয়া হয়। জ্ঞান ফেরার পর তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের কথা জানতে চান। ইউসুফ
বলেন, ‘প্রথম সবাই বলেছে, তারা জীবিত আছে। পরে তাদের মৃতদেহ আমাকে দেখানো
হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমি তাদের বাড়িতে রেখে গিয়েছিলাম এবং তারা ঠিকই ছিল। অথচ
তাদের মৃতদেহ আমার কাছে আনা হল। তারা দমবন্ধ হয়ে মারা গেছে। কেন তাদের
হত্যা করা হল? কেন গ্যাস দেয়া হল? আয়া ও আহমেদের কি দোষ ছিল?’
No comments