মুন্সীগঞ্জের অবাধে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ জাটকা
মুন্সীগঞ্জের
গ্রাম-গঞ্জের হাট- বাজার ও শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় অবাধে বিক্রি হচ্ছে
নিষিদ্ধ জাটকা মাছ। জেলা শহর, সদর উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রাম ও এর
আশপাশের বাজারগুলোতে এখন প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে জাটকা। আর
বিক্রেতারাও প্রতি কেজি জাটকা বিক্রি করছেন ২০০ টাকা কেজি দরে। বিষয়টি
দৃশ্যমান হলেও স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের ইন্ধনে অনেকটা বেপরোয়া
হয়ে উঠেছে জাটকা বিক্রেতারা এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের। সরেজমিনে অনুসন্ধান
করে দেখা যায়, মুন্সীগঞ্জের নদী তীরবর্তী গ্রাম, চর-আব্দুল্লাহ, কালিরচর,
বাংলাবাজার, চিতলিয়া বাজার ও বাঘেরহাটে সকালে বিকাল বিক্রি হচ্ছে জাটকা
মাছ। পহেলা বৈশাখের ইলিশের স্বাদ নেওয়ার জন্য অনেক ক্রেতা সাধারণ বড় বড়
ঝাটকা মাছগুলোকে ৩০০ টাকা কেজি দরে কিনে নিচ্ছেন।
সাধারন ক্রেতারা কিনছেন
প্রতি কেজি জাটকা ২০০ টাকা করে দাম দিয়ে। মঙ্গলবার বিকালে চিতলিয়া বাজারে
গিয়ে দেখা গেছে, একজন জাটকা ব্যবসায়ী প্রায় ১০ মন জাটকা নিয়ে আসেন।
মুহুর্তের মধ্যে ক্রেতাদের ভীড় পড়ে যায় মাছ বাজারটিতে। ২০ মিনিটের মধ্যে
বিক্রি হয়ে যায় পুরো ১০ মন জাটকা। বাংলাবাজারে গিয়েও একই চিত্র লক্ষ্য করা
গেছে। বাজারটিতে পদ্মার তীরবর্তী গ্রাম কালিরচর থেকে ৫ জন মাছ বিক্রেতা
জাটকা নিয়ে বাজারে আসে । সাংবাদিক দেখে তারা বলেন, আমরা খুচরা বিক্রি করি
যারা বড় বড় চালান কিনে নিয়ে আসে তাদেরকে গিয়ে ধরেন। কথা হয় বিক্রেতা করিমের
সঙ্গে তিনি জানান, আমরা অল্প পরিমান কিনে এনে বাজারে বিক্রি করে সংসার
চালাই। কিন্তু প্রতিদিন এই বাজার থেকে সিএনজি যোগে শত শত মন জাটকা শহরে
যাচ্ছে। তাদের গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন কোথায় থেকে জাটকাগুলো নিয়ে আসে। নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা জানান, কালিরচর গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য
বাচ্চু বেপারীর ছেলে রিপন দীর্ঘদিন ধরে পাইকারী দরে জাটকা মাছ বিক্রি করে
চলেছেন। তার থেকে খুঁচরা বিক্রেতারা কিনে এনে স্থানীয় বাজার ও গ্রামগুলোতে
ফেরি করে বিক্রি করেন। মাছ বিক্রয়ের ব্যাপারে জানতে চেয়ে পদ্মা নদীর তীরে
গেলে পাইকার রিপন সংবাদকর্মীদের দেখে দ্রুত ট্রলার চালিয়ে নদীর মাঝখানে চলে
যান। পরে কথা হয় ইউপি সদস্য বাচ্চু বেপারীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান,
অল্প পরিমান মাছ এনেছিল রিপন। আমার ছেলে সব সময় বিক্রি করেনা। কৌশলে ইউপি
সদস্য স্থান ত্যাগ করে কেটে পড়েন। বাগেরহাট বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, জাজিরা
গ্রাম থেকে আফছার নামের এক মাছ বিক্রেতা ৭টা ঝুঁড়িতে করে ৭মন জাটকা নিয়ে
আসে । মুহুর্তের মধ্যে ২ টি ঝুঁড়ি বাগেরহাট বাজারে স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে
বিক্রি করে দেন। বাকী ৫টা ঝুঁড়ি নিয়ে সিএনজি করে মুন্সীগঞ্জ শহরের দিকে
রওয়ানা করেন।
এ সময় অনেক ক্রেতাই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,
বাংলাবাজার, চিতলিয়া এবং বাগেরহাট থেকে প্রতিদিন পিকাপ ও সিএনজি করে প্রচুর
মাছ শহরের দিকে যায়। তাছাড়া শহরের উপকন্ঠে মুন্সীর হাট, খাসকান্দি,
রমজানবেগসহ শহরের বিভিন্ন অলি-গলিতে প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ জাটকা মাছ বিক্রি
করতে দেখা গেছে। বাজারে মাছের দাম বেশী হওয়ায় হাতের কাছে কমদামে পেয়ে
ক্রেতারা কিনে খাচ্ছে এসব নিষিদ্ধ জাঁটকা মাছ। এভাবে প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ
জাটকা মাছ বিক্রি করলেও মৎস্য কর্মকর্তারা কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না
জনবল সংকটের অজুহাত দেখিয়ে। নদীতে নিয়মিত অভিযান না চালানোর কারণে এসব
জাটকা মাছ নদী তীরবর্তী গ্রামে ঢুকে পড়ছে আর সেখান থেকে ছড়িয়ে যাচ্ছে শহর
বন্দর আনাচে কানাচে। মধ্যবিত্ত আয়ের লোকেরা ইলিশের চাহিদা পূরন করতে জাটকা
মাছ কিনে নিচ্ছেন। স্থানীয় ও সাধারন জেলেদের সুত্রে জানা যায়, প্রতিদিন এসব
বাজারগুলোতে প্রা ১ থেকে দেড় টন জাটকা বিক্রি ও পরিবহনের মাধ্যমে বিভিন্ন
স্থানে চলে যায়। মৎস্য কর্মকর্তারা কোস্ট গার্ডের সাথে নদীতে নিয়মিত অভিযান
আর বাজারগুলো মনিটরিং করলে জাটকা বিক্রি কমে আসতো। তাছাড়া স্থানীয়
প্রভাবশারীরা জাটকা বিক্রেতাদের আশ্রয় ও সহযোগিতা করায় মৎস্য বিভাগের
কর্মকর্তারাও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সফল হতে পারছেন না চলমান এই জাটকা রক্ষার
অভিযানে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাছ বিক্রেতা জানান, আমরা নদীর তীর
থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারদের কাছ থেকে কিনে আনি আর সেটাকে ফেরি করে
২০০ টাকা ধরে বিক্রি করি । জানি এটা বিক্রি করা দন্ডনীয় অপরাধ কম দামে কিনে
বেশী দামে বিক্রি করে লাভবান হতে পারি তাই পেটের দায়ে এ কাজ করি। জাটকা
মাছ ক্রেতা বাংলাবাজার এলাকার আনোয়ার হোসেন জানান, আমাদের এলাকায় প্রতিদিন
মাছ বিক্রেতারা জাটকা মাছ নিয়ে আসে। ইলিশ মাছের দাম বেশী তাই ইলিশের
চাহিদা মেটাতে আমরা জাটকা মাছ কিনে খাই। কেন কিনেন নিষিদ্ধ জাটকা মাছ?
জবাবে বলেন, হাতের কাছে পাই বলে কিনি। এ ব্যাপারে গজারিয়া কোস্ট গার্ডের
পেটি অফিসার মো: আলী ফরহাদ বলেন, আমরা নিয়মিত নদীতে অভিযান চালাচ্ছি এবং
আমাদের অভিযান চলমান আছে। শহরের বিভিন্ন বাজারে জাটকা মাছ বিক্রি কওে সেটা
মৎস্য বিভাগ ব্যবস্থা নিবে। তারা যদি আমাদের কাছে কোন সাহায্য দরকার মনে
করে তাহলে নৌ পুলিশ আর আমাদের কোষ্টগার্ড তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
নিষিদ্ধ জাটকা বিক্রির বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড: অলিউর রহমান জানান,
জাটকা নিধনের অভিযান চলছে। আমাদের অভিযান চলমান আছে। চুরি চামারি কওে
জেলেরা ঝাটকা ধরে গ্রামে গঞ্জে হাটে বাজারে বিক্রি করছে এমন কোন তথ্য পেলে
আমরা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া
জাহান বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে
আসছে। এ পর্যন্ত অনেক জাটকা জব্দ করা হয়েছে। জাটকা বিক্রি এবং বিক্রিতে
জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
No comments