বড় ভাইয়ের নির্দেশে কিলিং মিশনে ছোট ভাই
‘বাবু
অফিসে আছে, আজই কাজটা শেষ করা লাগবে।’ এ কথা বলে নাসির ভাই আমার হাতে একটি
রিভলবার দিয়ে কলোনিতে চলে যায়। রাত আনুমানিক ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে নাসির
ভাই জানায়, বাবু ও আরেকজন লোক মতিঝিল এজিবি কলোনির আইডিয়াল জোনের যুবলীগ
ক্লাবের উত্তর পাশের রাস্তা দিয়ে আসছে। এরপর রাত সোয়া ১১টার দিকে বাবুকে
টার্গেট করে আমি এবং অমিত দু’জন গুলি করতে থাকি। যখন নিশ্চিত হই ওর আর
বাঁচার চান্স নেই। তখন ফাঁকা গুলি করতে করতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করি। এভাবেই
মতিঝিল এলাকার যুবলীগের সদস্য রিজভী হাসান বাবুকে (৩৩) হত্যার বর্ণনা
দিয়েছেন কিলার আবু সালেহ ওরফে ছালে। আবু সালেহ তার স্বীকারোক্তিমূলক
জবানবন্দিতে বলেন, বাবুকে খুন করার নির্দেশ দেন বড় ভাই সুমন শিকদার মুসা।
কিলিং মিশনে মোট পাঁচজন ছিলাম। ঘটনার দিন বাবু কখন কোথায় অবস্থান করছে এ
তথ্য দেন নাসির উদ্দিন। আর অস্ত্র নিয়ে আমি ও অমিত মিলে হামলা চালাই। এ সময়
আমাদের সঙ্গে আরও দু’জন ছিল। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মুসা বলেন,
আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক ভাই বাবুকে হত্যার দায়িত্ব দেন আমাকে। আমার
নির্দেশে ছোট ভাই সালেহ ও অমিতসহ আরও দু’জন এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। মামলার
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার
জুয়েল রানা যুগান্তরকে বলেন, এটি একটি ক্লুলেস মামলা ছিল। হত্যার
মাস্টারমাইন্ড নাসিরই গুলিবিদ্ধ বাবুকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। যে কারণে নাসির
ছিল সবার সন্দেহের বাইরে।
তিনি বলেন, নাসিরকে গ্রেফতারের পর পুরো হত্যার
রহস্য উদঘাটন হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক কামরুল ইসলাম
যুগান্তরকে জানান, কিলার অমিতকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। হত্যায় ব্যবহৃত
অস্ত্রটি উদ্ধার হয়েছে। অস্ত্রটি ব্যালাস্টিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে
জানান, যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী ও তারেক মারা যাওয়ার পর মতিঝিল
এলাকার এজিবি কলোনি ও আশপাশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসী বাবু ও
নাসিরের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। এই বিরোধের নেপথ্যে ছিল ফুটপাতের চাঁদাবাজি,
মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ। নাসির মিল্কীর হয়ে কাজ করত আর বাবু ছিল তারেকের
লোক। মিল্কী মারা যাওয়ার পর নাসির যোগ দেয় মতিঝিল ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী
লীগের সেক্রেটারি ওমর ফারুকের সঙ্গে। ধীরে ধীরে পুরো এলাকার চাঁদাবাজি ও
মাদকের নিয়ন্ত্রণ নিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে বাবু। কারও সঙ্গে সামান্য বিরোধ
হলেই অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করত। কথায় কথায় স্থানীয়দের গায়ে
হাত তুলত বাবু। তাকে হত্যার কিছু দিন আগে আওয়ামী লীগের ক্লাবে বসে ওমর
ফারুককে হুমকি দেয়। অফিসে এলে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়। এরপর নাসির ওমর
ফারুককে এই অপমানের বদলা নিতে বিভিন্ন উসকানি নিতে থাকে। পরে ফারুক নাসিরকে
নিয়ে মুসার সঙ্গে বসে বাবুকে হত্যার পরিকল্পনা ফাইনাল করে। পরিকল্পনা
অনুযায়ী হত্যার দায়িত্ব দেয়া হয় মুসাকে। মুসা তার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে
আরেক পেশাদার কিলার অমিতকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে বাবুকে। সংশ্লিষ্ট
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুকের সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয় মুসার।
মুসাও একসময় যুবলীগের রাজনীতি করতেন।
ঝামেলার কারণে রাজনীতি ছেড়ে অপরাধ
জগতে জড়িয়ে পড়েন মুসা। মুসার সঙ্গে অনেক পেশাদার কিলারের যোগাযোগ রয়েছে। মুসা কন্ট্রাক্ট নিয়ে নিজের ছোট ভাই সালেহসহ অন্যান্য ভাড়াটে খুনি দিয়ে
মানুষ হত্যা করতেন। এর আগে বেশ কয়েকবার মুসা অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন
বলে জানিয়েছে পুলিশ। আরও জানায়, মুসার সঙ্গে নাসিরকে পরিচয় করিয়ে দেন ওমর
ফারুক। এরপর মতিঝিল এজিবি কলোনির আইডিয়াল জোনের যুবলীগ ক্লাবের পাশে একটি
রেস্টহাউসে বসেই হয় বাবু হত্যার পরিকল্পনা। এর আগে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর
মতিঝিল থানার এজিবি কলোনি আইডিয়াল জোন এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় রিজভী
হাসান বাবুকে (৩৩)। এ ঘটনায় পরের দিন মতিঝিল থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে
হত্যা মামলা করা হয়। মামলাটি থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। কিন্তু তদন্তে
উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় নতুন করে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় মহানগর
গোয়েন্দা পুলিশকে। দায়িত্ব পেয়ে ডিবির তদন্তকারী কর্মকর্তারা ক্লুলেস এ
হত্যার রহস্য উদঘাটন করে। এ ঘটনায় জড়িত মুসা ও সালেহ আদালতে ১৬৪ ধারায়
স্বাকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেন। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করে ডিবি। তাদের
মধ্যে দু’জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
No comments