অবোধ by শাহনেওয়াজ চৌধুরী

বলতে গেলে রোজই আড্ডাটা বসে। আমরা হাতেগোনা কয়েকজন যার যার অফিস শেষে পুরানা পল্টনের পরনো বইয়ের দোকানগুলোর কাছে প্রায় প্রতিদিন আড্ডা দেই। যেন অফিস শেষে আড্ডা না দিয়ে বাসায় গেলে রাতের ভাত হজম হবে না!
আমাদের আড্ডাসক্তির পূর্ণ প্রকাশ ঘটাতে বলতে হয়- বাসায় ফিরে মনের খুঁতখুঁতি কাটবে না, কী যেন বাকি রয়ে গেল! কী যেন বাকি রয়ে গেল!!
এই খুঁতখুঁতি থাকবে পরদিন আড্ডায় যোগ দেয়ার আগ পর্যন্ত। আমাদের আড্ডাস্থলের কাছাকাছি ফুটপাতের পুরনো বইয়ের দোকান ও তেলেভাজার দোকানটিকে ঘিরে আরো যাদের আড্ডা বসে তাদের ক্ষেত্রেও এমন হয় কিনা কে জানে!
আড্ডা বলতে মূলত শিল্প-সাহিত্য ঘিরে আলোচনা, ফাঁকে ফাঁকে চা-সিগারেট খাওয়া।
তবে এর মাঝে কখনোবা রাজনীতি, অর্থনীতিও উঠে আসে। আমাদের সীমিত জ্ঞানে এই দুই গরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথাবার্তা বলি আর এই ভেবে মনকে সান্তÍনা দেই- এ আমাদের সচেতনতা বোধ। আসলে আমাদের অবস্থা মোল্লার মতো, মসজিদ পর্যন্ত দৌড়। কেননা মধ্যবিত্ত মগজ দখলে থাকে মাস কাবারি হিসেব-নিকেষের। এর ফাঁক-ফোকরে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি জায়গা করে নেবার সুযোগ পায় না তেমন। যেটুকু পায় সেটুকু ওই মধ্যবিত্ত জীবনের স্বার্থেই। যেখানে আশা-আকাঙ্খার একচেটিয়া আধিপত্য।
আমাদের মধ্যে আজাদ ভাইয়ের এ ক্ষেত্রে দ্বিমত। তিনি বলেন, ‘যেহেতু এই দেশের খাই-পরি, সেহেতু দেশ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করা মূর্খতার সামিল।’
আজাদ ভাইকে খুশি করতে মানিক সায় দেয় তার কথায়- ‘আজাদ ভাই ঠিক বলেছেন। এটা অন্যায়। আমাদের পাশের দেশ ভারতকেই দেখুন না; মানুষগুলো না খেয়ে থাকবে তবু দেশপ্রেমে আকণ্ঠ ডুবে থাকে। সে তুলনায় আমরা...’
মানিকের ওপর রাগ ধরে তখন। ব্যাটা এমনভাবে বলে যেন অনেকবার ভারত ঘুরে এসেছে। অথচ খরচের ভয়ে ছয় মাসে একবার গ্রামে যায় না। কিন্তু আজাদ ভাইকে খুশি করতে এমনভাবে স্ব-উৎপাদিত যুক্তি সমেত কথা বলে, কোনোমতেই তা কৃত্রিম মনে হয় না। আর তাই মানিকের লাভ যা হবার হয়ে যায়। আজাদ ভাই একটি খ্যাতিমান পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক। তাকে খুশি করা মানে পত্রিকার কোনো এক সংখ্যায় গল্পকার ‘মানিক আকন্দ’ নামটি আলোকিত করে একটি গল্প ছাপা হয়ে যাবে!
কিন্তু জাফরও তো খুব লিখছে। এখানে-সেখানে ছাপাও হচ্ছে সেসব। তাকে কখনো জনসম্মখে তেলবাজিতে দেখা যায় না। জনসম্মখে তার অন্য রূপ। কোনো লেখা না ছাপলে কিংবা ছাপতে দেরি হলে সে যেমন সম্পাদকের গুষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়ে, তেমনি রাজনীতি প্রসঙ্গে কোনো কিছু না ভেবেই নিজের মন্তব্যটা ঝেরে ফেলে। এই যেমন মনিকের বক্তব্যের এনকাউন্টারে বলল, ‘ওসব দেশপ্রেম-টেশপ্রেম ছাই! আগে স্ব-প্রেম, পরে দেশপ্রেম। পেটে ভাত না থাকলে দেশপ্রেম জাগে নাকি?’
জাফরের কথাটা আজাদ ভাইয়ের পছন্দ না হবারই কথা। আমি তার কাছ ঘেঁষে দাড়ানো বলে সুবিধাগত কারণে আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন, ‘এখন কিন্তু স্বার্থপর লোকের দল ভারী, বুঝলে? তার নমুনা তো দখতেই পেলে।’
আমার কানের কাছে আজাদ ভাইয়ের ফিসফিস কারো চোখে, বিশেষ করে জাফরের চোখে পড়ার আগেই ত্রস্ত কণ্ঠে বললেন, ‘চলো চলো, চা হয়ে যাক আরেক প্রস্থ। কই, আধপাগলটা কোথায় গেল?’ এমনভাবে বললেন যেন অনেকক্ষণ যাবত চায়ের তেষ্টা দমিয়ে রেখেছেন!
পারভেজকে ‘আধপাগল’ বলে ডাকেন আজাদ ভাই। যদিও পারভেজের মাথায় গ্লগোল আছে কিছুটা; কথাবার্তা, আচার-আচরণে তার কিছু স্বরূপ ফুটেও ওঠে, কিন্তু তা খুব বেশি ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না।
পারভেজের সঙ্গে এই আড্ডার পরিচয়ের মাধ্যম আমি। কিন্তু পরবর্তীতে জানা গেল- আমার আগেও জাফরের সঙ্গে পারভেজের চেনাজানা। কিন্তু সেই চেনাজানায় চিড় ধরিয়েছে জাফরের স্বার্থপরতা প্রসুত দুর্ব্যবহার। এর মাঝে অনেক বছর কেটে গেছে, কিন্তু পারভেজের মনে জাফরের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙনের রেশ এখনো প্রবল। লোকে বলে- মানসিক রোগীদের নাকি আত্মসম্মান বোধ প্রবল! মানসিক রোগ জনিত আত্মসম্মান বোধের কারণেই নাকি জাফরের সেই দুর্ব্যবহারই এখনো পারভেজকে তাদের দুজনের সম্পর্ক শিথিলের ক্ষেত্রে দূরত্বে রেখেছে কে জানে! কিন্তু পারভেজকে দেখা যায় আড্ডা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে ফুটপাতের পুরনো বইয়ের দোকানে কবিতার বই ঘাটতে। তবে এমনিতেও আড্ডার সূত্র ধরে এলেও ফুটপাতের পুরনো বইয়ের দোকানেই বেশি সময় কাটায় সে। কেবল ফুটপাতের বইয়ের দোকানে কোনো কবিতার বই ঘাটতে ঘাটতে কবির সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা চোখে পড়লে আজদ ভাইয়ের সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করতে আসে, চা খেতে ডাক পড়লে আসে আর আড্ডার ভাঙনের আগে আগে এসে সৌজন্যতার খাতিরে কিছু সময় দেয়। কিন্তু রাষ্ট্রের রাজনীতি নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। কেবল নিয়মিত মানসিক রোগের ওষুধ কিনতে হয় বলে বছর বছর ওষুধের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কিত অর্থনীতি নিয়ে কালেভদ্রে দু’চার কথা বলতে শোনা যায়। তাও বেশ নরম সুরে, গম্ভীর মেজাজে।
পারভেজকে আড্ডার একজন হিসেবে ধরে নিলেও সে আমাদের কাছে খুব বেশি পাত্তা পায় না। বলা যায় অবহেলার পাত্র। আমাদের ক’জনের মধ্যে আচরণ বা কথায় কেউ তা প্রকাশ না করলেও বুঝে নেয়া যায়। এর কারণ তার ওই পাগলামো।
একদিন জাফরের আসতে দেরি হচ্ছিল। আর পারভেজ আমাদের সবার আগে আড্ডায় এসে হাজির। যেখানে এসে জরো হয়ে চা খেতে খেতে খানিক সময় আড্ডা দেই আমরা, আজ সেখানে পারভেজকে ঘিরে একে একে জরো হতে থাকলাম আমরা।
আড্ডা একটু একটু করে জমতে শুরু করেছে। পারভেজকে দেখলাম কথা বলতে বলতে বার বার রাস্তার মোড়ের দিকে তাকাচ্ছে। আলোচনায়ও খুব বেশি মনোযোগ নেই। ব্যাপারটা আরো কিছুক্ষণ খেয়াল করলাম। তারপর বললাম, ‘কী ব্যাপার পারভেজ, তুমি বার বার ওদিকে তাকাচ্ছ কেন?’
‘জাফর আসছে কিনা দেখছি।’
‘ও, তুমি জাফরের অপেক্ষায় চাতক পাখি হয়েছ?’
‘চাতক পাখি অন্য কারণে হয়েছি।’ পারভেজ বলল।
‘কারণটা বলে ফেল।’ আজাদ ভাই বললেন।
‘আজকে জাফরের একটা ঘটনা বলব আপনাদের। অবশ্য এর সঙ্গে আমিও জরিত। জাফর আসতে দেরি করছে দেখে ঘটনা বলব ভাবলাম। কিন্তু আপনাদের আলাপের মাঝে ঢুকতে পারছি না। আর জাফর এসে পড়লে সুযোগটা মিস হবে।’
‘তাহলে আর দেরি কেন? বলে ফেল।’ আজাদ ভাই তাড়া দিলেন।
আজাদ ভাইয়ের কথায় সায় দিয়ে বলল, ‘ঠিক ঠিক, দেরি করার কী দরকার?’
জাফরের সঙ্গে আমার পরিচয় ‘রবীন্দ -নজরুল সাহিত্য সংসদে’। সাহিত্য চর্চার সুবাদে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ওখানে। জাফরও যেত। সেখানে সাহিত্য আড্ডা হতো। আড্ডায় শিল্প-সাহিত্য নিয়ে কথা হতো। আমার পড়াশোনা আর সাহিত্যজ্ঞানের আলোকে কথা বলতাম। তারপর একদিন জাফরের সঙ্গে এক পত্রিকা অফিসে দেখা। আমাকে দেখেই উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, ‘রবীন্দ -নজরুল সাহিত্য সংসদে’ খুব লেকচার দেয়া হয়, তাই না? ফের যদি ওখানে গিয়ে লেকচার দিতে দেখি, তো থাপড়াইয়া বের করেুু দেব।’ জাফরের কথায় আমি হতবাক। কী আশ্চর্য, জাফর আমার সঙ্গে এমন আচরণ করবে কেন? অনেক ভেবে পেলাম- ও আমার সাহিত্যবিষয়ক জ্ঞানের পরিধিকে হিংসে করে। নিজের পড়াশোনার বহর তো নগন্য, তাই অন্যেরটা সহ্য করতে পারে না। আর এ কারণেই জাফরকে এরিয়ে চলি। নগন্য জ্ঞানের পরিধি নিয়ে আড্ডায় ও যখন রাজনীতি, অর্থনীতি নিয়ে কথা বলে, তখন মনে মনে হাসি।
কথাগুলো বলে ফুটপাতের বইয়ের দোকানের দিকে হেঁটে গেল পারভেজ। আমরা একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলাম। মুখে না বললেও আমাদের দৃষ্টি বলে দেয়- পারভেজের মানসিক সমস্যা থাকার কারণে ওর কথায় আমরা যতটুকু বিশ্বাস স্থাপন করতে পারি, তেমনি আচরণগত কারণে জাফরকে ততটুকুই বিশ্বাস করতে পারি, অর্থাৎ এ ধরনের কাজ সে ঘটাতে পারে।
এর পরদিন আড্ডা বসেনি আমাদের। মূলত আজাদ ভাই আসতে পারবেন না বলেই আড্ডা বসল না। কিন্তু সেই মনের খুঁতখুঁতি- কী যেন বাকি রয়ে গেল! কী যেন বাকি রয়ে গেল!! -এই অনুভূতি থেকেই হয়তো রাতে ফোন করলেন আজাদ ভাই। কথায় কথায় পারভেজের বলা সেদিনের প্রসঙ্গটা উঠল। আজাদ ভাইকে বিরক্ত মনে হলো। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেই ফেললেন- ‘পারভেজের মতো মানসিক রোগীর সঙ্গে মেশা যায়, কিন্তু জাফরের মতো মানসিকতা সম্পন্ন লোকের সঙ্গে মেশা যায় না। পারভেজকে আমরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করি, কিন্তু ওর বোধ অনেক শানিত।’ একটু থেমে আজাদ ভাই বললেন, ‘এই বিষয়গুলো নিয়ে কিন্তু ভাবা দরকার।’
‘অবশ্যই আজাদ ভাই। কাল তো দেখা হচ্ছেই। তখন নাহয় আলাপ করা যাবে।’
‘আচ্ছা।’
কিন্তু পরদিনও আমাদের দেখা হলো না। যে কারণে দেখা হলো না, টিভিতে তার বিভৎসতা দেখে আমরা হতবাক। থেকে থেকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছেন আজাদ ভাই। শেষ বারের ফোনে তার কণ্ঠে হতাশা ঝরে পড়ল- ‘আনিস, এ দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে আমাদের মুক্তি নেই!’
‘হ্যাঁ ভাই, তাই তো দেখছি।’
আমরা কথা বলতে বলতে টিভির পর্দায় আরেকটা বোমা ফাটতে দেখা গেল। জায়গাটিতে ধোঁয়াচ্ছন্নতা কেটে গেলে দেখা গেল একজন লোক রাস্তায় পড়ে আছে। শুধু প্রযুক্তির বদৌলতেই নয়, আমাদের টিভি সাংবাদিকদের সাহসিকতার জন্যও আজকাল অনেক কিছুই আমাদের অক্ষিগোচর হয়। তাই বলে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি তো দেখতে চাই না আমরা!
বউয়ের নিষেধ সত্ত্বেও এমন তা­বলীলার পরেরদিন পুরানা পল্টনে এলাম। টিভি পর্দায় সরাসরি সম্প্রচারে গতকালের দেখা সহিংস ঘটনাগুলো যেন বিশ্বাস হতে চাইছিল না। আজ সকাল থেকে গতকালের ধবংসলীলা দেখাচ্ছে টিভি চ্যানেলগুলো। বিশ্বাস-অবিশ্বাসে দুলতে দুলতে তাই যা দেখেছি তার সত্যতা মেলাতে চেষ্টা করলাম।
কাল টিভিতেই দেখেছি, ফুটপাতের যে বইয়ের দোকানের সামনে আমরা দাঁড়িয়ে চা খেতে খেতে আড্ডা দেই দুর্বৃত্তরা সেই দোকানটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আমি দেখলাম দাউ দাউ করে জ্বলছে বইগুলো। তারপর পরই ফুটপাতের অন্যান্য বইয়ের দোকানগুলোতে আগুন জ্বলতে দেখলাম। দেখতে দেখতে বুক কাঁপছিল। আর আজ এসে দেখি দুর্বৃত্তের ধবংসলীলা অসভ্যতার মাপকাঠি পেরিয়ে আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগকে প্রবলভাবে হাতছানি দিয়ে ডাকছে!
আমাদের মতো শত শত মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ধবংসলীলা অবলোকন করছে আর ছিঃ ছিঃ করছে!
একজন পথচারী বলল, ‘ছিঃ ছিঃ তো নিজেদের করা উচিত। কেননা দেশ স্বাধীনের এত বছর পরেও দেশের শত্রুদের দেশকে রসাতলে নেবার এসব ষড়যন্ত্র আমরা চেয়ে চেয়ে দেখছি! আমাদের বোধ-বুদ্ধি লোপ পেয়ে গেছে!’
লোকের ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে নানা রকম মন্তব্য কানে এলো।
আমরা আমাদের আড্ডাস্থলে এলাম।
জাফরের দিকে তাকিয়ে আজাদ ভাই জিজ্ঞেস করলেন- ‘কী জাফর, তুমি তো খুব বলো- আগে স্ব-প্রেম, পরে দেশপ্রেম। এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখেও কি কিছুটা দেশপ্রেম জাগবে না তোমার মনে? বুক কেঁপে উঠবে না? তা না হলে তোমার লেখকসত্ত্বা কলুশিত।’
জাফরের সেই পরনো সুরের কথা- ‘এই নষ্ট রাজনীতির দেশটাকে নিয়ে চিন্তা করে লাভ কী আজাদ ভাই?’
জাফরের প্রশ্নের জবাবে আজাদ ভাই কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন।
মানিক আজাদ ভাইয়ের পুরনো কথা থেকে ধার করে বলল, ‘যেহেতু এই দেশের খাই-পরি, সেহেতু দেশ নিয়ে ভাবতে তো হবেই।’
‘অন্তত নিজের ভালোর জন্য হলেও ভাবতে হবে।’
আমার কথাটা পছন্দ হলো আজাদ ভাইয়ের। সোৎসাহে বললেন, ‘হান্ড্রেট পার্সেন্ট নির্ভেজাল এবং গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছ আনিস। তোমার এমন একটি মূল্যবান কথা সেলিব্রেট করা যাক। চলো, সবাইকে চা খাওয়াব।’
সময় মতো কোত্থেকে এসে হাজির হলো পারভেজ! তাকে দেখেই জাফর বলে উঠল- ‘আমরা চা খেতে যাচ্ছি, এই খবর কি বাতাসে ভেসে তোমার কাছে পৌঁছল? একদম সময় মতো কোত্থেকে হাজির হলে পারভেজ?’
জাফরের কথা পাত্তা দিল না পারভেজ। স্বভাবজাত ভঙ্গিতে আজাদ ভাইকে বলল, ‘খুব তো দেশের রাজনীতি-অর্থনীতি নিয়ে কথা বলেন আপনারা! একবার ভেবেছেন ক্ষমতার লোভে কোরআন পুড়িয়ে ফেলার মতো সাহস দেখাতে পারে ওরা! যে জাতি ক্ষমতার লোভে নিজের ধর্মগ্রন্থ পোড়াতে দ্বিধা করে না, সে জাতির আবার রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ভবিষৎ কী!’
পারভেজের কথা শুনে থ খেয়ে গেলাম আমরা। আজাদ ভাইকে দেখলাম অবাক চোখে পারভেজের দিকে তাকিয়ে আছেন। একটুক্ষণ পর পারভেজকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। ধরা গলায় বললেন, ‘আজ থেকে তোকে আর ‘আধপাগল’ বলে ডাকব না ভাই!’
আজাদ ভাইয়ের আবেগের কারণ খুঁজতে থাকলাম মনে মনে। চা খেতে খেতে কারণটা খুঁজেও পেলাম। কারণটা খুঁজে পেয়ে মনে মনে হাসলাম। একজন মানসিক রোগী, যাকে আমরা তেমন পাত্তা দেই না; সে যদি বোধের এমন উচ্চতায় উঠতে পারে, তাহলে আমরা...

No comments

Powered by Blogger.