নীল অপরাজিতা নান্দনিক শিল্প নির্মাণের প্রয়াস
নিজেকে প্রকাশ করা, নিজের ভাবনা-চিন্তাকে
অপরের মনে সঞ্চালিত করার এক অদম্য বাসনা থাকে মানুষের মধ্যে। এটাই
স্বাভাবিক মাধ্যম হিসেবে দেখতে পাই শিল্পে, কাজে, চিত্রে, ভাস্কর্যে। তবে
শিল্পের রসগত দিক থেকে কবিতা ও চিত্রের মধ্যেকার দূরত্ব খুবই কম। কবিতা
লিখিত হয় শব্দ দ্যোতনায় উপামা, প্রতীক, ছন্দ, চিত্রকল্পের শৈল্পিক
বিন্যাসের মাধ্যমে। কবিতায় কবির নিজস্ব ভাবনা-চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে
পারিপার্শ্বিকতাকে সঙ্গে করেই।
আজকের আলোচিত কবির বেলায় এর ব্যত্যয় ঘটেনি, আলোচিত কাজ গ্রন্থসহ তার কবিতায় দীর্ঘদিনের সঞ্চিত আবেগ, মান-অভিমান, ঘাত-প্রতিঘাত, সামাজিক ঐশর্যে, অন্তর্দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত, প্রত্যাশায় প্রাপ্তি, সাফল্য-ব্যর্থতার হাহাকার অনুরণিত হয়েছে। কারণ যখন আর্থসামাজিক টানাপোড়েন ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় রাষ্ট্রীয় কাঠামোর চারধার ঘুণপোকার মতো কুরে কুরে খেতে থাকে তখন কবিসত্তাও পায়ের তলার মাটি খুঁজে পান না। নান্দনিক শিল্প হয়তো নির্মিত হয়।
এটি তার কবিতায় ফুটে ওঠে এভাবে।
ক. যতোই ভাবা যায়
ততোই ভাবনা যায় বেড়ে,
কোথা থেকে কি যেনো হয়ে যায়।
কোথায় আমার উৎপত্তি কোথায় বিনাশ
কিছুই যায় না বোঝা
শুধু ভাবতে ইচ্ছে করে তোমার কথা,
[সর্বত্র বিরাজমান-১]
কবিতাটি জীবনের বাস্তব দলিল যা কবি প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করেছেন নীরবে আর ভরে উঠেছে কবিতার পাতা, কাব্য গ্রন্থটির নামকরণের যথেষ্ট নাটকীয়তা ও বাস্তবতাস্পর্শী দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষণীয়। বিপঞ্চ স্বদেশ সমকালের একজন সত্যসন্ধ কবির পক্ষে নিস্পৃহ ও উদাসীন থাকা কিছুতেই সম্ভব নয়। আর জাগরণের অর্থ ও দ্রোহী মানুষের পদধ্বনির ভেতর সচকিত কবির পক্ষে এ আহ্বান খুবই সঙ্গত এবং প্রাসঙ্গিক।
খ. বুঝি না স্বর্গ নরক,
জানি না তার স্বাদ,
তাই তার প্রতি নেই কোন আগ্রহ,
শুধু বুঝি তোমার উপস্থিতির মাঝে
স্বাদ পাই স্বর্গের, আর
অনুপস্থিতিতে হৃদয়ে জাগে নরক যন্ত্রণা,
[স্বর্গের স্বাদ]
কবিতায় লক্ষ্য করার বিষয় যে, কালাতিক্রমের সঙ্গে কবিতার রূপকথা ও বিষয় বৈচিত্র্যে ও সম্প্রীতি পূর্ণময়ে গতিময়তা অণ্বেষার পথ খুঁজে নিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে সময়ের ব্যবধানে অনেক কিছু পাল্টে যায় কিন্তু কবির নিজস্ব যা তার প্রতিভার স্বাক্ষর এবং ভাষার যে সাবলীল উপস্থাপন তাতে কোনো চিড় ধরেনি। কবি কখনো স্বপ্ন ও ছন্দে মলিন নন বরং সূবর্ণ রেখায় বিচ্ছুরিত এবং নিঃসন্দেহে এক্ষেত্রে তার সময়ের কবিদের মধ্যে তিনি অগ্রণী, একজন কবির ধর্ম ব্যাপকার্থে সাধারণ মানুষেরই চাওয়ার প্রতিরূপক।
কবি তার প্রেমের কাছে ওয়াদাবদ্ধ কিন্তু সেই প্রেমিকের সঙ্গে মিলন অসম্ভব বৈরী সমাজ সংসারে সেই ব্যর্থ প্রেমের হাহাকার প্রতিধ্বনিত হয় এভাবে।
গ. প্রেমিক প্রেমে ডুবেস্বীয় সস্তিত্বহারায়
প্রেমময়ে লীনহয়ে যায়।
আধুনিক কবিতায় একটি প্রধান লক্ষণ এর আনুষঙ্গিকতা অস্তিত্বের নানাবিধ রহস্য গভীরতা, দ্বন্দ্ব দৈততার কাব্যিক উন্মোচনের যে আধুনিক কবিতা দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার উপরিতলের প্রান্তসমূহকেই ছুঁয়ে চায় বেশি করে, এই উপরিতলের মানুষের জীবন-যাপন, তার সুখ-দুঃখ, প্রেম-বিরহ প্রতিপাদ্য বিষয়।
যেমন ঘ. ডেকেছিলে স্বপ্নেরনীল অপরাজিতা বলে,
তাইতো তার চারা করেছি রোপণ বাড়ির লনে
একেই আনন্দের উৎস বলে মনে করি,
[নীল অপরাজিতা]
নাগরিকতা আর প্রতিনিয়ত বাস্তব জীবনের সংঘাত কবিকে জনিত করে বার বার অতীতের সুসময় শৈশব কিংবা যৌবনের ঊষালগ্নের সোনালী অতীত তাকে বার বার হাতছানি দেয়।
প্রতীক এবং রূপকের মিশ্রণে কবির সৎ স্বীকারোক্তির ভেতর দিয়ে বেড়ে ওঠে তার কাজ শরীর। এখানে কবি প্রেম-অপ্রেম, ঘৃণা ভালোবাসা, আলো-অন্ধকার একসঙ্গে প্রণীত হয়েছেন।
সৈয়দা নাজমুন নাহার
নীল অপরাজিতা ।। কুলসুম রশীদ
প্রকাশক সৈয়দা নাজমুন নাহার ।। প্রচ্ছদ কামরুল হাসান খান পিয়াল ।। মূল্য ২০০ টাকা পিয়াল প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স ।।
আজকের আলোচিত কবির বেলায় এর ব্যত্যয় ঘটেনি, আলোচিত কাজ গ্রন্থসহ তার কবিতায় দীর্ঘদিনের সঞ্চিত আবেগ, মান-অভিমান, ঘাত-প্রতিঘাত, সামাজিক ঐশর্যে, অন্তর্দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত, প্রত্যাশায় প্রাপ্তি, সাফল্য-ব্যর্থতার হাহাকার অনুরণিত হয়েছে। কারণ যখন আর্থসামাজিক টানাপোড়েন ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় রাষ্ট্রীয় কাঠামোর চারধার ঘুণপোকার মতো কুরে কুরে খেতে থাকে তখন কবিসত্তাও পায়ের তলার মাটি খুঁজে পান না। নান্দনিক শিল্প হয়তো নির্মিত হয়।
এটি তার কবিতায় ফুটে ওঠে এভাবে।
ক. যতোই ভাবা যায়
ততোই ভাবনা যায় বেড়ে,
কোথা থেকে কি যেনো হয়ে যায়।
কোথায় আমার উৎপত্তি কোথায় বিনাশ
কিছুই যায় না বোঝা
শুধু ভাবতে ইচ্ছে করে তোমার কথা,
[সর্বত্র বিরাজমান-১]
কবিতাটি জীবনের বাস্তব দলিল যা কবি প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করেছেন নীরবে আর ভরে উঠেছে কবিতার পাতা, কাব্য গ্রন্থটির নামকরণের যথেষ্ট নাটকীয়তা ও বাস্তবতাস্পর্শী দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষণীয়। বিপঞ্চ স্বদেশ সমকালের একজন সত্যসন্ধ কবির পক্ষে নিস্পৃহ ও উদাসীন থাকা কিছুতেই সম্ভব নয়। আর জাগরণের অর্থ ও দ্রোহী মানুষের পদধ্বনির ভেতর সচকিত কবির পক্ষে এ আহ্বান খুবই সঙ্গত এবং প্রাসঙ্গিক।
খ. বুঝি না স্বর্গ নরক,
জানি না তার স্বাদ,
তাই তার প্রতি নেই কোন আগ্রহ,
শুধু বুঝি তোমার উপস্থিতির মাঝে
স্বাদ পাই স্বর্গের, আর
অনুপস্থিতিতে হৃদয়ে জাগে নরক যন্ত্রণা,
[স্বর্গের স্বাদ]
কবিতায় লক্ষ্য করার বিষয় যে, কালাতিক্রমের সঙ্গে কবিতার রূপকথা ও বিষয় বৈচিত্র্যে ও সম্প্রীতি পূর্ণময়ে গতিময়তা অণ্বেষার পথ খুঁজে নিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে সময়ের ব্যবধানে অনেক কিছু পাল্টে যায় কিন্তু কবির নিজস্ব যা তার প্রতিভার স্বাক্ষর এবং ভাষার যে সাবলীল উপস্থাপন তাতে কোনো চিড় ধরেনি। কবি কখনো স্বপ্ন ও ছন্দে মলিন নন বরং সূবর্ণ রেখায় বিচ্ছুরিত এবং নিঃসন্দেহে এক্ষেত্রে তার সময়ের কবিদের মধ্যে তিনি অগ্রণী, একজন কবির ধর্ম ব্যাপকার্থে সাধারণ মানুষেরই চাওয়ার প্রতিরূপক।
কবি তার প্রেমের কাছে ওয়াদাবদ্ধ কিন্তু সেই প্রেমিকের সঙ্গে মিলন অসম্ভব বৈরী সমাজ সংসারে সেই ব্যর্থ প্রেমের হাহাকার প্রতিধ্বনিত হয় এভাবে।
গ. প্রেমিক প্রেমে ডুবেস্বীয় সস্তিত্বহারায়
প্রেমময়ে লীনহয়ে যায়।
আধুনিক কবিতায় একটি প্রধান লক্ষণ এর আনুষঙ্গিকতা অস্তিত্বের নানাবিধ রহস্য গভীরতা, দ্বন্দ্ব দৈততার কাব্যিক উন্মোচনের যে আধুনিক কবিতা দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার উপরিতলের প্রান্তসমূহকেই ছুঁয়ে চায় বেশি করে, এই উপরিতলের মানুষের জীবন-যাপন, তার সুখ-দুঃখ, প্রেম-বিরহ প্রতিপাদ্য বিষয়।
যেমন ঘ. ডেকেছিলে স্বপ্নেরনীল অপরাজিতা বলে,
তাইতো তার চারা করেছি রোপণ বাড়ির লনে
একেই আনন্দের উৎস বলে মনে করি,
[নীল অপরাজিতা]
নাগরিকতা আর প্রতিনিয়ত বাস্তব জীবনের সংঘাত কবিকে জনিত করে বার বার অতীতের সুসময় শৈশব কিংবা যৌবনের ঊষালগ্নের সোনালী অতীত তাকে বার বার হাতছানি দেয়।
প্রতীক এবং রূপকের মিশ্রণে কবির সৎ স্বীকারোক্তির ভেতর দিয়ে বেড়ে ওঠে তার কাজ শরীর। এখানে কবি প্রেম-অপ্রেম, ঘৃণা ভালোবাসা, আলো-অন্ধকার একসঙ্গে প্রণীত হয়েছেন।
সৈয়দা নাজমুন নাহার
নীল অপরাজিতা ।। কুলসুম রশীদ
প্রকাশক সৈয়দা নাজমুন নাহার ।। প্রচ্ছদ কামরুল হাসান খান পিয়াল ।। মূল্য ২০০ টাকা পিয়াল প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স ।।
No comments