জিজেকের চোখে হলিউডি পারিবারিক ভাবাদর্শ by শাহনেওয়াজ চৌধুরী
গার্ডিয়ান
থেকে অনুবাদ করেছেন নাহিয়ান আজাদ শশী ‘দি কিং’স স্পিচ’ ছবিতে ভাবি রাজার
তোতলামির যথাযথ কারণ হয়তো এটাই যে সে তার নির্ধারিত প্রতীকী কাজ ও পদবি
সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জনে ব্যর্থ ছিল। একজন রাজা কেবল ঐশ্বরিক সমর্থনের
জোরে রাজা- এ ধারণা পোষণের মাধ্যমে তিনি বেশ স্বল্প জ্ঞানের পরিচয় দিয়েছেন
এবং অস্ট্রেলিয়ান স্পিচ থেরাপিস্টের কাজ ছিল তার বুদ্ধিমত্তাকে এমন স্তরে
নিয়ে যাওয়া, যাতে তার পক্ষে এটা ভাবা সম্ভব হয় যে সার্বভৌমত্ব একটি
প্রাকৃতিক সম্পদ। ফিল্মের একটি গুরুত্বর্পূণ দৃশ্যে দেখা যায় স্পিচ
থেরাপিস্ট সিংহাসনে বসে আছেন এবং এটা দেখে ক্ষিপ্ত রাজা কেন তিনি সিংহাসনে
বসেছেন তার কারণ জানতে চাইলেন এবং এ জবাবে কোচ পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বসলেন,
‘কেন নয়?’ তখন রাজা চিৎকার করে বললেন, ‘কারণ ঐশ্বরিক ক্ষমতা বলে আমিই রাজা’
এবং সে মুহূর্তে স্পিচ থেরাপিস্ট সন্তুষ্টির সঙ্গে মাথা নোয়ান এই ভেবে যে
রাজা এখন বিশ্বাস করেন যে তিনিই রাজা। ফিল্মে দেখানো সমাধান বেশ ভালোই
প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, রাজা ‘স্বাভাবিক’ হয়ে যান এবং তার অনিয়ন্ত্রিত আবেগ
তৈরিকারী প্রশ্নের শক্তিও ধ্বংস হয়ে যায়।
‘দ্য কিংস স্পিচ’-এর মতোই যে ছবিটি ২০১১ সালে অস্কার জয় করেছে সেই ‘ব্ল্যাক সোয়ান’ ছবিটি কিন্তু আরও বেশি প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এ ছবির ভূমিকায় বলা হয় এই যে যেখানে একজন পুরুষ তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিজেকে পুরোদমে নিয়োজিত করার পরও সাধারণ জীবনযাপন করতে পারে (‘ দ্যি কিং’স স্পিচ’), অপর দিকে একজন নারী যখন তার লক্ষ্য অর্জনে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত করে (একজন ব্যালেরিনা হওয়ার জন্য) তখন সে ধ্বংসের পথে পা বাড়ায়। এ চিত্রনাট্য সহজেই সেই পুরনো কাহিনীর কথা মনে করিয়ে দেয় যেখানে একজন নারীকে শৈল্পিক প্রতিভার বিকাশ সাধনের স্বপ্ন ও তার সুখী শান্ত ব্যক্তিগত জীবনের মাঝে পরে ক্ষত-বিক্ষত হতে দেখা যায়।
‘ব্ল্যাক সোয়ান’ ও ‘দ্যি কিং’স স্পিচ’ দুটো ছবি চিরায়িত পুরুষ-শাসিত সমাজের পারিবারিক মূল্যবোধকে তুলে ধরে। যেখানে পুরুষদের থাকে প্রতীকী ক্ষমতার প্রতি সরল ধারণা আর নারীদের জন্য হল আড়ালে সরে যাওয়া। কিন্তু যখন গতানুগতিক ভাবাদর্শ একেবারে সরাসরি প্রকাশিত হয় না তখনও সামাজিক অবস্থান থেকে পারিবারিক জীবনের দিকে ফিরে আসা একটি স্পষ্ট ভাবাদর্শের নিদর্শন। যেমন গত বছর বের হওয়া রবার্ট রেডফোর্ডের ‘দ্য কোম্পানি ইউ কিপ’ যেখানে সাবেক প্রগতিবাদী দুজন বামপন্থীর নিজেদের অতীতের মুখোমুখি হওয়ার স্পর্শকাতর বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে।
রেডফোর্ড জিম নামক চরিত্রে অভিনয় করেন যিনি একজন বিপতিœক। তিনি ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ডের সদস্য, ভিয়েতনামবিরোধী যুদ্ধের একজন সৈনিক এবং তিনি ব্যাংক ডাকাতি ও খুনের দায়প্রাপ্ত এক আসামি যিনি কি-না নিউইয়র্কের কাছাকাছি একজন অ্যাটর্নি সেজে নিজেকে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এফবিআই-এর কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছেন। যখন তার সত্যিকারের পরিচয় প্রকাশিত হয় তখন এফবিআই-এর কাছ থেকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য তাকে অবশ্য তার সাবেক প্রেমিকা মিমিকে খুঁজে বের করতে হবে। যদি সে এটা করতে ব্যর্থ হয়, তবে তাকে সবকিছু হারাতে হবে এমনকি তার মেয়েকেও। যখন জিম, মিমির দেখা পান মিমি তাকে জানায় যে সে এখনও জিমের ওয়েদারমেন উদ্দেশ্যগুলোর প্রতি উৎসাহী এবং সে তার ৩০ বছর আগের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থী নয়। জিম তখন তীক্ষèভাবে এর উত্তরে বলেন, ‘আমি ক্লান্ত হইনি, আমি বিকশিত হয়েছি’। জিম এর পর মিমিকে অনুরোধ করেন তার মেয়ের স্বার্থে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে সাহায্য করার জন্য।
একজন সমালোচকের মতে, ‘দ্য কোম্পানি ইউ কিপ’ এমন এক সময়ের ব্যাপারে স্মৃতিবেদনাতুর করে তোলে যখন টেররিস্ট বলতে এমন মানুষের বোঝাত, যারা পরিচিত অ্যাংলো স্যক্সসন নাম বহন করে। তবে ছবিটি আমাদের রাজনৈতিক ও ভাবাদর্শিক বাস্তবতা থেকে প্রগতীবাদী বামপন্থা অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার অসহনীয় যন্ত্রণাকর সত্যটিকে তুলে ধরে। সেই আন্দোলনকারীদের মধ্যে যারা এখনও বেঁচে আছেন তারা এখন সহানুভূতিপূর্ণ জিন্দালাশের মতো, একটা যুগের স্মৃতি মাত্র, নতুন এক জগতের পথহারা আগন্তুক যেন। এটা বিস্ময়কর নয় যে রেডফোর্ড রক্ষণশীলদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন টেরোরিস্টদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সহযোগিতার মনোভাব পোষণের জন্য। এ ফিল্মের ব্যর্থতা হলও ওয়েদারমেনদের কাজকর্মের দিকে সম্মুখীন না হয়ে হিংসাত্মক কাজের পথ বেছে নেয়া। যেটা একটা বড় সমস্যা।
ছবিটি যৌবনের প্রবল কৌতূহলময় পথকে স্বীকৃতি দেয়, যা সহজেই হিংস আচরণে রূপ নিতে পারে। পরিণত সচেতনতা তৈরি হতে হবে এ ব্যাপারে যে কোনো রাজনৈতিক পন্থাই আমাদের পারিবারিক জীবন ও নিজ সন্তানদের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের হিংসাত্মক হতে বাধ্য করতে পারে না।
তারপরও বেড়ে ওঠা ও পারিবারিক দায়িত্ববোধের এই উল্লেখ কি প্রতিষ্ঠা করে যে এটি হল নিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক জ্ঞান, যা আমাদের রাজনৈতিক কার্যকালাপে জড়িত হওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তৈরি করে নাকি এটা ভাবাদর্শে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর একটি পন্থা? দ্বিতীয় উপায়টি শুধু হিংসাত্মক আচরণকে যুক্তিসঙ্গত করার মিথ্যা চেষ্টাকেই নয় বরং এটি নিজস্ব পন্থায় পর্যালোচনা ও বিচার করার আইনগত বাধ্যবাধকতাকেও পরিমাপ করে। এ ধরনের প্রতিশীল আত্ম অনুসন্ধান ব্যতীত আমরা আমাদের স্থিতিশীল ব্যক্তিগত জীবনের নিশ্চয়তা প্রদানকারী হিসেবে বিবেচিত বিদ্যমান আইনি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেই অনুমোদন দিয়ে যাব। এটা বিস্ময়কর নয় যে, ‘দ্য কোম্পানি ইউ কিপ’ ছবিটির বিষয় হল নায়কের আইনি পুনর্বাসন এবং তাড়া করে বেড়ানো কোনো অন্ধকার অতীতবিহীন সাধারণ নাগরিক হওয়ার জন্য তার চেষ্টা।
এর মানে কি এটা যে পারিবারিক মূল্যবোধের উল্লেখকে ভাবাদর্শের ভ্রান্ত ধারণার অংশ ভেবে নিয়ে আমরা তাকে বর্জন করব? অবশ্যই নয়, এটি একটি প্রগতিশীল স্বাধীন বিষয় হিসেবে কাজ করতে পারে। যেমনটি দেখানো হয়েছে পরিচালক পানোস কোটরাসের দ্য ওমেনস ওয়ে’-তে। গল্পটি এরকম : ইয়োরগস ১৪ বছর পর জেল থেকে ছাড়া পান তার ১৭ বছর বয়সী ভাইকে খুনের অপরাধে যে কি-না ইয়োরগসের ৫ বছর বয়সী ছেলে লিওনিডাসের সঙ্গে যৌন খেলা খেলছিলেন। তার দীর্ঘ সময় কারাবাসের জন্য সে তার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছে এবং এখন সে তার সন্ধানের চেষ্টা চালাচ্ছে। সে জেলের বাইরে তার প্রথম রাতটা এথেন্সের একটি কমদামি হোটেলে কাটায়, যেখানে তার স্ট্রেলা নামক একজন তরুণ লিঙ্গ পরিবর্তনকারী যৌনকর্মীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তারা একসঙ্গে রাত কাটান এবং দ্রুতই তারা প্রেমে পড়ে যান। কিন্তু ইয়োরগস তাড়াতাড়ি বুঝতে পারেন স্ট্রেলা হল লিওনিডাস, যে কিনা জেলে থেকে তার পিছু নিয়েছিল। সে শুধু তাকে দেখতে চেয়েছিল কিন্তু যখন ইয়োরগস তার দিকে এগিয়ে এলো সে তখন নিজেকে সামলে রাখতে পারেনি। ইয়োরগস দূরে চলে যায় এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। যদিও পরে আবার তাদের মধ্যে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তারা অবিষ্কার করে যে যদিও তারা তাদের যৌন সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে না কিন্তু তারা পরস্পরকে সত্যিই ভালোবাসে। শেষ দৃশ্যে দেখা যায় নববর্ষ উৎসব : স্ট্রেলা এবং তার কিছু বন্ধু ও ইয়োরগস তাদের বাসায় জড়ো হয়েছে, সঙ্গে একটি ছোট শিশু, যাকে স্ট্রেলা দত্তক নিয়েছে। শিশুটি তাদের ভালোবাসাকে এবং তাদের অচল অবস্থার এ সম্পর্ককে পূর্ণতা দেয়।
স্ট্রেলা ছবির হাস্যকর রকমের স্বাভাবিক সমাপ্তিকে ঘুরিয়ে দেয়। ছবির শুরুতে ইয়োরগস দুঃখের সঙ্গে আবিষ্কার করে এবং মেনে নেয় যে তার কাক্সিক্ষত নারী একজন লিঙ্গ পরিবর্তনকারী। স্ট্রেলা সহজভাবে ইয়োরগসকে বলে ‘আমি একজন রূপান্তরকারী, তোমার তাতে সমস্যা আছে?’ এবং এরপর তারা চুম্বন করে। এরপরে ইয়োরগস সত্যিকার অর্থে দুঃখের সঙ্গে আবিষ্কার করে যে স্ট্রেলা জেনেশুনে পিতার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছে। তার প্রতিক্রিয়া ছিল ‘দ্যি ক্রাইং গেমস’ এর ফারগাসের মতো যখন সে ডিলের লিঙ্গ দেখেছিল। অভক্তি আর আতঙ্কে সারা শহর ছুটে বেড়িয়েও নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছে না তার সঙ্গে যা সে একটু আগে আবিষ্কার করেছে। ‘দ্যি ক্রাইং গেমস’ এর মতো ‘দ্য ওমেনস ওয়ে’-তে দেখানো হয় ভালোবাসার সাহায্যে মনের ক্ষতকে সারিয়ে তোলা, এক্ষেত্রে একটি সুখী পরিবার ও একটি ছোট ছেলের আগমন।
তবে রূপান্তরকারী যে নায়কের সন্তান এ আবিষ্কার কোনো অবচেতন কল্পনার বাস্তবায়ন নয়, ইয়োরগসের অভক্তির কারণ হল একটি বাহ্যিক ঘটনায় তার বিস্ময়। এ গল্পটিকে পিতা-পুত্রের শারীরিক সম্পর্ক হিসেবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। এখানে কিছুই ব্যাখ্যা করার নেই একেবারে স্বাভাবিক ও সত্যিকারের সুখী পরিবারের উল্লেখের মাধ্যমে ছবিটি শেষ হয়। সংক্ষেপে স্ট্রেলা হল আজকের আর্নস্ট লুবিটস্ক ফিল্ম যেখানে ‘স্বর্গীয় সমস্যা’ হল এটা আবিষ্কার করা যে আপনার প্রেমিকা আপনার ছেলে। এমনকি পরিবারটি যদি সব ঐশ্বরিক নিষেধাজ্ঞাকে লঙ্ঘন করেন তারপরও তারা স্বর্গের বর্ধিত অংশে একটি ‘ছোট্ট খালি রুম’ পাবেন। যেমন হাস্যরসাত্মকভাবে শয়তান লুবিটস্কের নায়ককে বলেছিল স্বর্গ অপেক্ষা করতে পারে।
‘দ্য কিংস স্পিচ’-এর মতোই যে ছবিটি ২০১১ সালে অস্কার জয় করেছে সেই ‘ব্ল্যাক সোয়ান’ ছবিটি কিন্তু আরও বেশি প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এ ছবির ভূমিকায় বলা হয় এই যে যেখানে একজন পুরুষ তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিজেকে পুরোদমে নিয়োজিত করার পরও সাধারণ জীবনযাপন করতে পারে (‘ দ্যি কিং’স স্পিচ’), অপর দিকে একজন নারী যখন তার লক্ষ্য অর্জনে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত করে (একজন ব্যালেরিনা হওয়ার জন্য) তখন সে ধ্বংসের পথে পা বাড়ায়। এ চিত্রনাট্য সহজেই সেই পুরনো কাহিনীর কথা মনে করিয়ে দেয় যেখানে একজন নারীকে শৈল্পিক প্রতিভার বিকাশ সাধনের স্বপ্ন ও তার সুখী শান্ত ব্যক্তিগত জীবনের মাঝে পরে ক্ষত-বিক্ষত হতে দেখা যায়।
‘ব্ল্যাক সোয়ান’ ও ‘দ্যি কিং’স স্পিচ’ দুটো ছবি চিরায়িত পুরুষ-শাসিত সমাজের পারিবারিক মূল্যবোধকে তুলে ধরে। যেখানে পুরুষদের থাকে প্রতীকী ক্ষমতার প্রতি সরল ধারণা আর নারীদের জন্য হল আড়ালে সরে যাওয়া। কিন্তু যখন গতানুগতিক ভাবাদর্শ একেবারে সরাসরি প্রকাশিত হয় না তখনও সামাজিক অবস্থান থেকে পারিবারিক জীবনের দিকে ফিরে আসা একটি স্পষ্ট ভাবাদর্শের নিদর্শন। যেমন গত বছর বের হওয়া রবার্ট রেডফোর্ডের ‘দ্য কোম্পানি ইউ কিপ’ যেখানে সাবেক প্রগতিবাদী দুজন বামপন্থীর নিজেদের অতীতের মুখোমুখি হওয়ার স্পর্শকাতর বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে।
রেডফোর্ড জিম নামক চরিত্রে অভিনয় করেন যিনি একজন বিপতিœক। তিনি ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ডের সদস্য, ভিয়েতনামবিরোধী যুদ্ধের একজন সৈনিক এবং তিনি ব্যাংক ডাকাতি ও খুনের দায়প্রাপ্ত এক আসামি যিনি কি-না নিউইয়র্কের কাছাকাছি একজন অ্যাটর্নি সেজে নিজেকে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এফবিআই-এর কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছেন। যখন তার সত্যিকারের পরিচয় প্রকাশিত হয় তখন এফবিআই-এর কাছ থেকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য তাকে অবশ্য তার সাবেক প্রেমিকা মিমিকে খুঁজে বের করতে হবে। যদি সে এটা করতে ব্যর্থ হয়, তবে তাকে সবকিছু হারাতে হবে এমনকি তার মেয়েকেও। যখন জিম, মিমির দেখা পান মিমি তাকে জানায় যে সে এখনও জিমের ওয়েদারমেন উদ্দেশ্যগুলোর প্রতি উৎসাহী এবং সে তার ৩০ বছর আগের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থী নয়। জিম তখন তীক্ষèভাবে এর উত্তরে বলেন, ‘আমি ক্লান্ত হইনি, আমি বিকশিত হয়েছি’। জিম এর পর মিমিকে অনুরোধ করেন তার মেয়ের স্বার্থে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে সাহায্য করার জন্য।
একজন সমালোচকের মতে, ‘দ্য কোম্পানি ইউ কিপ’ এমন এক সময়ের ব্যাপারে স্মৃতিবেদনাতুর করে তোলে যখন টেররিস্ট বলতে এমন মানুষের বোঝাত, যারা পরিচিত অ্যাংলো স্যক্সসন নাম বহন করে। তবে ছবিটি আমাদের রাজনৈতিক ও ভাবাদর্শিক বাস্তবতা থেকে প্রগতীবাদী বামপন্থা অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার অসহনীয় যন্ত্রণাকর সত্যটিকে তুলে ধরে। সেই আন্দোলনকারীদের মধ্যে যারা এখনও বেঁচে আছেন তারা এখন সহানুভূতিপূর্ণ জিন্দালাশের মতো, একটা যুগের স্মৃতি মাত্র, নতুন এক জগতের পথহারা আগন্তুক যেন। এটা বিস্ময়কর নয় যে রেডফোর্ড রক্ষণশীলদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন টেরোরিস্টদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সহযোগিতার মনোভাব পোষণের জন্য। এ ফিল্মের ব্যর্থতা হলও ওয়েদারমেনদের কাজকর্মের দিকে সম্মুখীন না হয়ে হিংসাত্মক কাজের পথ বেছে নেয়া। যেটা একটা বড় সমস্যা।
ছবিটি যৌবনের প্রবল কৌতূহলময় পথকে স্বীকৃতি দেয়, যা সহজেই হিংস আচরণে রূপ নিতে পারে। পরিণত সচেতনতা তৈরি হতে হবে এ ব্যাপারে যে কোনো রাজনৈতিক পন্থাই আমাদের পারিবারিক জীবন ও নিজ সন্তানদের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের হিংসাত্মক হতে বাধ্য করতে পারে না।
তারপরও বেড়ে ওঠা ও পারিবারিক দায়িত্ববোধের এই উল্লেখ কি প্রতিষ্ঠা করে যে এটি হল নিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক জ্ঞান, যা আমাদের রাজনৈতিক কার্যকালাপে জড়িত হওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তৈরি করে নাকি এটা ভাবাদর্শে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর একটি পন্থা? দ্বিতীয় উপায়টি শুধু হিংসাত্মক আচরণকে যুক্তিসঙ্গত করার মিথ্যা চেষ্টাকেই নয় বরং এটি নিজস্ব পন্থায় পর্যালোচনা ও বিচার করার আইনগত বাধ্যবাধকতাকেও পরিমাপ করে। এ ধরনের প্রতিশীল আত্ম অনুসন্ধান ব্যতীত আমরা আমাদের স্থিতিশীল ব্যক্তিগত জীবনের নিশ্চয়তা প্রদানকারী হিসেবে বিবেচিত বিদ্যমান আইনি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেই অনুমোদন দিয়ে যাব। এটা বিস্ময়কর নয় যে, ‘দ্য কোম্পানি ইউ কিপ’ ছবিটির বিষয় হল নায়কের আইনি পুনর্বাসন এবং তাড়া করে বেড়ানো কোনো অন্ধকার অতীতবিহীন সাধারণ নাগরিক হওয়ার জন্য তার চেষ্টা।
এর মানে কি এটা যে পারিবারিক মূল্যবোধের উল্লেখকে ভাবাদর্শের ভ্রান্ত ধারণার অংশ ভেবে নিয়ে আমরা তাকে বর্জন করব? অবশ্যই নয়, এটি একটি প্রগতিশীল স্বাধীন বিষয় হিসেবে কাজ করতে পারে। যেমনটি দেখানো হয়েছে পরিচালক পানোস কোটরাসের দ্য ওমেনস ওয়ে’-তে। গল্পটি এরকম : ইয়োরগস ১৪ বছর পর জেল থেকে ছাড়া পান তার ১৭ বছর বয়সী ভাইকে খুনের অপরাধে যে কি-না ইয়োরগসের ৫ বছর বয়সী ছেলে লিওনিডাসের সঙ্গে যৌন খেলা খেলছিলেন। তার দীর্ঘ সময় কারাবাসের জন্য সে তার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছে এবং এখন সে তার সন্ধানের চেষ্টা চালাচ্ছে। সে জেলের বাইরে তার প্রথম রাতটা এথেন্সের একটি কমদামি হোটেলে কাটায়, যেখানে তার স্ট্রেলা নামক একজন তরুণ লিঙ্গ পরিবর্তনকারী যৌনকর্মীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তারা একসঙ্গে রাত কাটান এবং দ্রুতই তারা প্রেমে পড়ে যান। কিন্তু ইয়োরগস তাড়াতাড়ি বুঝতে পারেন স্ট্রেলা হল লিওনিডাস, যে কিনা জেলে থেকে তার পিছু নিয়েছিল। সে শুধু তাকে দেখতে চেয়েছিল কিন্তু যখন ইয়োরগস তার দিকে এগিয়ে এলো সে তখন নিজেকে সামলে রাখতে পারেনি। ইয়োরগস দূরে চলে যায় এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। যদিও পরে আবার তাদের মধ্যে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তারা অবিষ্কার করে যে যদিও তারা তাদের যৌন সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে না কিন্তু তারা পরস্পরকে সত্যিই ভালোবাসে। শেষ দৃশ্যে দেখা যায় নববর্ষ উৎসব : স্ট্রেলা এবং তার কিছু বন্ধু ও ইয়োরগস তাদের বাসায় জড়ো হয়েছে, সঙ্গে একটি ছোট শিশু, যাকে স্ট্রেলা দত্তক নিয়েছে। শিশুটি তাদের ভালোবাসাকে এবং তাদের অচল অবস্থার এ সম্পর্ককে পূর্ণতা দেয়।
স্ট্রেলা ছবির হাস্যকর রকমের স্বাভাবিক সমাপ্তিকে ঘুরিয়ে দেয়। ছবির শুরুতে ইয়োরগস দুঃখের সঙ্গে আবিষ্কার করে এবং মেনে নেয় যে তার কাক্সিক্ষত নারী একজন লিঙ্গ পরিবর্তনকারী। স্ট্রেলা সহজভাবে ইয়োরগসকে বলে ‘আমি একজন রূপান্তরকারী, তোমার তাতে সমস্যা আছে?’ এবং এরপর তারা চুম্বন করে। এরপরে ইয়োরগস সত্যিকার অর্থে দুঃখের সঙ্গে আবিষ্কার করে যে স্ট্রেলা জেনেশুনে পিতার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছে। তার প্রতিক্রিয়া ছিল ‘দ্যি ক্রাইং গেমস’ এর ফারগাসের মতো যখন সে ডিলের লিঙ্গ দেখেছিল। অভক্তি আর আতঙ্কে সারা শহর ছুটে বেড়িয়েও নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছে না তার সঙ্গে যা সে একটু আগে আবিষ্কার করেছে। ‘দ্যি ক্রাইং গেমস’ এর মতো ‘দ্য ওমেনস ওয়ে’-তে দেখানো হয় ভালোবাসার সাহায্যে মনের ক্ষতকে সারিয়ে তোলা, এক্ষেত্রে একটি সুখী পরিবার ও একটি ছোট ছেলের আগমন।
তবে রূপান্তরকারী যে নায়কের সন্তান এ আবিষ্কার কোনো অবচেতন কল্পনার বাস্তবায়ন নয়, ইয়োরগসের অভক্তির কারণ হল একটি বাহ্যিক ঘটনায় তার বিস্ময়। এ গল্পটিকে পিতা-পুত্রের শারীরিক সম্পর্ক হিসেবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। এখানে কিছুই ব্যাখ্যা করার নেই একেবারে স্বাভাবিক ও সত্যিকারের সুখী পরিবারের উল্লেখের মাধ্যমে ছবিটি শেষ হয়। সংক্ষেপে স্ট্রেলা হল আজকের আর্নস্ট লুবিটস্ক ফিল্ম যেখানে ‘স্বর্গীয় সমস্যা’ হল এটা আবিষ্কার করা যে আপনার প্রেমিকা আপনার ছেলে। এমনকি পরিবারটি যদি সব ঐশ্বরিক নিষেধাজ্ঞাকে লঙ্ঘন করেন তারপরও তারা স্বর্গের বর্ধিত অংশে একটি ‘ছোট্ট খালি রুম’ পাবেন। যেমন হাস্যরসাত্মকভাবে শয়তান লুবিটস্কের নায়ককে বলেছিল স্বর্গ অপেক্ষা করতে পারে।
No comments