সরকারি ভবনগুলোও অনুমোদনহীন! by অরূপ দত্ত
আইন ও বিধিমালায় উল্লেখ থাকলেও কোনো সরকারি, আধা সরকারি বা
স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা তাদের নিজস্ব ভবন নির্মাণে রাজধানী উন্নয়ন
কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন নেয় না। আবার রাজউকও এসব সংস্থার ওপর আইনি
ক্ষমতা প্রয়োগ না করে দায়িত্ব এড়িয়ে যায়।ইমারত নির্মাণ আইন, ১৯৫২ এবং
ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ২০০৮ অনুসারে দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া রাজধানীর
যেকোনো ভবনের নকশা অনুমোদন করার একমাত্র কর্তৃপক্ষ রাজউক। অনুমোদন ছাড়া
ভবন নির্মাণ করা হলেও আজ পর্যন্ত কোনো সরকারি সংস্থার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে
এর ব্যাখ্যা চায়নি রাজউক।জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান মো. নূরুল হুদা
প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীর চারপাশের ৫৯০ বর্গমাইল এলাকা রাজউকের
নিয়ন্ত্রণে। কোনো সরকারি সংস্থা, এমনকি সিটি করপোরেশনও রাজউকের অনুমোদন
নিয়ে ভবন নির্মাণ করে না। রাজউক ব্যবস্থা নেয় না কেন, জানতে চাইলে
চেয়ারম্যান বলেন, এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনসহ অন্য সংস্থাগুলোকে সরাসরি
নোটিশ দেওয়া না হলেও মন্ত্রণালয়কে বিভিন্ন সময়ে অবহিত করা হয়েছে এবং
আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় বিষয়টি উত্থাপনের কথা বলা হয়েছে।
আইনে যা আছে:
ইমারত নির্মাণ আইনের ৩.(১) ধারায় বলা আছে, ‘অন্য আইনে যা-ই থাকুক না কেন, রাজউকের অথরাইজড কর্মকর্তার পূর্বানুমোদন ছাড়া কোনো ভবন নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ, সংযোজন বা পরিবর্তন করা যাবে না।’সে অনুসারে রাজউক এলাকায় যেকোনো স্থাপনার কাঠামোগত ভালো-মন্দ দেখার কর্তৃপক্ষ হচ্ছেন রাজউকের চেয়ারম্যান। তাঁর পক্ষে রাজউকের অথরাইজড কর্মকর্তারা এই দায়িত্ব পালন করতে পারেন। ১৯৮৭ সালের আগ পর্যন্ত সরকারি সংস্থাগুলো নিজ উদ্যোগে ভবন নির্মাণ করতে পারত। ওই সময় সাবেক ডিআইটি এসব ভবন পরীক্ষা করতে পারত। তবে নিরাপত্তা ও গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষার জন্য সেনানিবাস এলাকায় এসব স্থাপনার অনুমোদন দিতে পারে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ইমারত আইনের এই ধারার বাইরে আরেকটি বিধান রয়েছে। তা হচ্ছে, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করে নিজ উদ্যোগে স্থাপনা তৈরির অধিকার অর্জন। পূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে ভবন তৈরির ‘অথরাইজড’ সংস্থা হওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে স্থাপনার নকশা তৈরির আবেদন করলে মন্ত্রণালয় যদি যথাযথ মনে করে, তাহলে ইমারত নির্মাণ আইনের আওতায় গেজেট তৈরি করে আবেদনকারী সংস্থাকে ‘অথরাইজড সংস্থা’র মর্যাদা দিতে পারে। ২০০৮ সালে এই স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতিকে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়।
নগর ভবনও অনুমোদনহীন: বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু রাজউকের অনুমোদন নেওয়া হয়নি, তাই ঢাকা সিটি করপোরেশনের নগর ভবনও অবৈধ। এটা অবশ্যই একটি খারাপ দৃষ্টান্ত।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২০০৯ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ইমারত নির্মাণের অনুমোদনের ক্ষমতা প্রধান প্রকৌশলীকে দেওয়া হয়। কিন্তু নগর ভবনসহ ডিসিসির অনেক ভবনই এই ক্ষমতা পাওয়ার আগে তৈরি হয়েছে, এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, রাজউকের বাধ্যবাধকতাগুলো ডিসিসি সব সময়ই পালন করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯২ সালে নির্মিত নগর ভবন শুধু নয়, ঢাকা সিটি করপোরেশনের কোনো ভবনেরই নকশা রাজউক অনুমোদিত নয়। নিজস্ব প্রকৌশলীদের সহায়তায় বেসরকারি স্থপতিদের মাধ্যমে নকশা তৈরি করে করপোরেশন এসব ভবন নির্মাণ করে। প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে ‘কমিউনিটি সেন্টার’ তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে গিয়ে গত ২৫ বছরে ৩৯টির মতো ভবন তৈরি হয়। এগুলো ছাড়াও সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২, বঙ্গবন্ধু পাতাল সড়ক সুপার মার্কেট, নবাববাড়ি সুপার মার্কেট, মোহাম্মদপুর শহীদ পার্ক মার্কেটসহ আরও অনেক স্থাপনার অনুমোদন নেওয়া হয়নি। উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে সিটি করপোরেশনের বহুতল কাঁচাবাজার তৈরি হয়েছে রাজউকের অনুমোদন ছাড়া।
গণপূর্ত অধিদপ্তরও নিজস্ব ভবন তৈরিতে নিয়ম অনুযায়ী অতীতে কখনো রাজউকের অনুমোদন নেয়নি। ২০০৭ সালে বিজয় সরণি-তেজগাঁও সংযোগ সড়ক তৈরির কাজ শুরুর পর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্মাণাধীন সাতটি বহুতল ভবনের জন্য রাস্তাটি আরও চওড়া করা যায়নি। এখানে ১০০ ফুট রাস্তা করতে হয় বিভাজন লাইন, ফুটপাতসহ ৬০ ফুট। ওই সময়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর রাজউকের কোনো অনুমোদন ছাড়াই ভবনগুলো তৈরি হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে কমলাপুর ও আবদুল গনি রোডে নতুন যে ভবনগুলো তৈরি করেছে, সেগুলোর জন্য রাজউকের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। নিকেতনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নির্মাণাধীন পুলিশ কমপ্লেক্সও হচ্ছে নিজস্ব অনুমোদনে। ঢাকা ওয়াসা সায়েদাবাদ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও সেখানকার অন্য স্থাপনাগুলোর অনুমোদনের জন্য রাজউকের শরণাপন্ন হয়নি। ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডিপিডিসি) বিদ্যুৎ ভবনও অনুমোদনহীন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল, জিয়া হল, একুশে হল, বেগম সুফিয়া কামাল হল, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল, নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন ইত্যাদি নির্মিত হয় ১৯৮৭ সালের পর। এগুলো রাজউক অনুমোদিত নয়। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মফিজুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবন নির্মাণে অতীতে কখনো রাজউকের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। রাজউকও কখনো আপত্তি জানায়নি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নতুন একাডেমিক ভবন তৈরিতেও রাজউকের কোনো ভূমিকা নেই। এ ক্ষেত্রে যুক্তি হচ্ছে, বুয়েটের প্রকৌশলী ও স্থপতিরা রাজউকের অথরাইজড কর্মকর্তাদের তুলনায় অনেক বেশি অভিজ্ঞ। এমনকি রাজউকের অধীন এলাকায় কোনো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হলে তা পরীক্ষা করার জন্য বুয়েটের বিশেষজ্ঞদেরই সহায়তা নিতে হয়। তবে বুয়েটের উপাচার্য নজরুল ইসলাম বলেন, এখন বুয়েটের ভবন নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন নেওয়া হয়।
ঢাকা সিটি করপোরেশন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন। মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান রাজউকের অনুমোদন নেওয়া প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন সময়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়ররা মনে করেছেন, ভবন নির্মাণের বিষয়ে তাঁদের প্রধান প্রকৌশলীই দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি। সেদিক থেকে করপোরেশন নিজস্ব নকশায় ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে অন্য সংস্থার অনুমোদনের প্রয়োজন বোধ করে না। পৃথিবীর সব দেশেই পৌর করপোরেশন ভবন নির্মাণের দায়িত্ব পালন করে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব খন্দকার শওকত হোসেন বলেন, শুধু রাজউক নয়, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ পূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের এলাকায় অন্য কোনো সংস্থা যাতে নিজ উদ্যোগে ভবন বা স্থাপনা তৈরি করতে না পারে, সে জন্য মন্ত্রিসভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব ভবিষ্যতে মন্ত্রিসভায় পেশ করে অনুমোদন নেওয়া হবে। তাহলে ইমারত নির্মাণ আইনের এই বিষয়টিও রক্ষা পেতে পারে।
আইনে যা আছে:
ইমারত নির্মাণ আইনের ৩.(১) ধারায় বলা আছে, ‘অন্য আইনে যা-ই থাকুক না কেন, রাজউকের অথরাইজড কর্মকর্তার পূর্বানুমোদন ছাড়া কোনো ভবন নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ, সংযোজন বা পরিবর্তন করা যাবে না।’সে অনুসারে রাজউক এলাকায় যেকোনো স্থাপনার কাঠামোগত ভালো-মন্দ দেখার কর্তৃপক্ষ হচ্ছেন রাজউকের চেয়ারম্যান। তাঁর পক্ষে রাজউকের অথরাইজড কর্মকর্তারা এই দায়িত্ব পালন করতে পারেন। ১৯৮৭ সালের আগ পর্যন্ত সরকারি সংস্থাগুলো নিজ উদ্যোগে ভবন নির্মাণ করতে পারত। ওই সময় সাবেক ডিআইটি এসব ভবন পরীক্ষা করতে পারত। তবে নিরাপত্তা ও গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষার জন্য সেনানিবাস এলাকায় এসব স্থাপনার অনুমোদন দিতে পারে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ইমারত আইনের এই ধারার বাইরে আরেকটি বিধান রয়েছে। তা হচ্ছে, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করে নিজ উদ্যোগে স্থাপনা তৈরির অধিকার অর্জন। পূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে ভবন তৈরির ‘অথরাইজড’ সংস্থা হওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে স্থাপনার নকশা তৈরির আবেদন করলে মন্ত্রণালয় যদি যথাযথ মনে করে, তাহলে ইমারত নির্মাণ আইনের আওতায় গেজেট তৈরি করে আবেদনকারী সংস্থাকে ‘অথরাইজড সংস্থা’র মর্যাদা দিতে পারে। ২০০৮ সালে এই স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতিকে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়।
নগর ভবনও অনুমোদনহীন: বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু রাজউকের অনুমোদন নেওয়া হয়নি, তাই ঢাকা সিটি করপোরেশনের নগর ভবনও অবৈধ। এটা অবশ্যই একটি খারাপ দৃষ্টান্ত।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২০০৯ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ইমারত নির্মাণের অনুমোদনের ক্ষমতা প্রধান প্রকৌশলীকে দেওয়া হয়। কিন্তু নগর ভবনসহ ডিসিসির অনেক ভবনই এই ক্ষমতা পাওয়ার আগে তৈরি হয়েছে, এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, রাজউকের বাধ্যবাধকতাগুলো ডিসিসি সব সময়ই পালন করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯২ সালে নির্মিত নগর ভবন শুধু নয়, ঢাকা সিটি করপোরেশনের কোনো ভবনেরই নকশা রাজউক অনুমোদিত নয়। নিজস্ব প্রকৌশলীদের সহায়তায় বেসরকারি স্থপতিদের মাধ্যমে নকশা তৈরি করে করপোরেশন এসব ভবন নির্মাণ করে। প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে ‘কমিউনিটি সেন্টার’ তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে গিয়ে গত ২৫ বছরে ৩৯টির মতো ভবন তৈরি হয়। এগুলো ছাড়াও সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২, বঙ্গবন্ধু পাতাল সড়ক সুপার মার্কেট, নবাববাড়ি সুপার মার্কেট, মোহাম্মদপুর শহীদ পার্ক মার্কেটসহ আরও অনেক স্থাপনার অনুমোদন নেওয়া হয়নি। উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে সিটি করপোরেশনের বহুতল কাঁচাবাজার তৈরি হয়েছে রাজউকের অনুমোদন ছাড়া।
গণপূর্ত অধিদপ্তরও নিজস্ব ভবন তৈরিতে নিয়ম অনুযায়ী অতীতে কখনো রাজউকের অনুমোদন নেয়নি। ২০০৭ সালে বিজয় সরণি-তেজগাঁও সংযোগ সড়ক তৈরির কাজ শুরুর পর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্মাণাধীন সাতটি বহুতল ভবনের জন্য রাস্তাটি আরও চওড়া করা যায়নি। এখানে ১০০ ফুট রাস্তা করতে হয় বিভাজন লাইন, ফুটপাতসহ ৬০ ফুট। ওই সময়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর রাজউকের কোনো অনুমোদন ছাড়াই ভবনগুলো তৈরি হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে কমলাপুর ও আবদুল গনি রোডে নতুন যে ভবনগুলো তৈরি করেছে, সেগুলোর জন্য রাজউকের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। নিকেতনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নির্মাণাধীন পুলিশ কমপ্লেক্সও হচ্ছে নিজস্ব অনুমোদনে। ঢাকা ওয়াসা সায়েদাবাদ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও সেখানকার অন্য স্থাপনাগুলোর অনুমোদনের জন্য রাজউকের শরণাপন্ন হয়নি। ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডিপিডিসি) বিদ্যুৎ ভবনও অনুমোদনহীন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল, জিয়া হল, একুশে হল, বেগম সুফিয়া কামাল হল, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল, নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন ইত্যাদি নির্মিত হয় ১৯৮৭ সালের পর। এগুলো রাজউক অনুমোদিত নয়। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মফিজুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবন নির্মাণে অতীতে কখনো রাজউকের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। রাজউকও কখনো আপত্তি জানায়নি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নতুন একাডেমিক ভবন তৈরিতেও রাজউকের কোনো ভূমিকা নেই। এ ক্ষেত্রে যুক্তি হচ্ছে, বুয়েটের প্রকৌশলী ও স্থপতিরা রাজউকের অথরাইজড কর্মকর্তাদের তুলনায় অনেক বেশি অভিজ্ঞ। এমনকি রাজউকের অধীন এলাকায় কোনো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হলে তা পরীক্ষা করার জন্য বুয়েটের বিশেষজ্ঞদেরই সহায়তা নিতে হয়। তবে বুয়েটের উপাচার্য নজরুল ইসলাম বলেন, এখন বুয়েটের ভবন নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন নেওয়া হয়।
ঢাকা সিটি করপোরেশন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন। মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান রাজউকের অনুমোদন নেওয়া প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন সময়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়ররা মনে করেছেন, ভবন নির্মাণের বিষয়ে তাঁদের প্রধান প্রকৌশলীই দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি। সেদিক থেকে করপোরেশন নিজস্ব নকশায় ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে অন্য সংস্থার অনুমোদনের প্রয়োজন বোধ করে না। পৃথিবীর সব দেশেই পৌর করপোরেশন ভবন নির্মাণের দায়িত্ব পালন করে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব খন্দকার শওকত হোসেন বলেন, শুধু রাজউক নয়, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ পূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের এলাকায় অন্য কোনো সংস্থা যাতে নিজ উদ্যোগে ভবন বা স্থাপনা তৈরি করতে না পারে, সে জন্য মন্ত্রিসভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব ভবিষ্যতে মন্ত্রিসভায় পেশ করে অনুমোদন নেওয়া হবে। তাহলে ইমারত নির্মাণ আইনের এই বিষয়টিও রক্ষা পেতে পারে।
No comments