সমন্বয়হীনতায় এগোতে পারছে না পুষ্টি সেবা by শেখ সাবিহা আলম
জাতীয় পুষ্টি সেবা (এনএনএস) কর্মসূচির আওতায় গত এক বছরে প্রশিক্ষণ
পেয়েছেন প্রায় ৪১ হাজার মানুষ। আর কর্মসূচি শুরুর ছয় মাসের মধ্যে খরচ
হয়েছে ৪০ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যেই অনিয়ম হয়েছে ২৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকার।
কিন্তু কর্মসূচির লক্ষ্য অনুযায়ী মানুষের কাছে এখনো পৌঁছেনি পুষ্টি
সেবা।পুষ্টি সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই বলছেন, সমন্বয়হীনতার
কারণেই সবার কাছে পুষ্টি সেবা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।সমন্বয়হীনতা কোথায়,
এ প্রশ্নের অনুসন্ধানে খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝেই পারস্পরিক
দোষারোপের চিত্রটি উঠে এসেছে। আবার এনএনএস-সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
কয়েকজন কর্মকর্তা উন্নয়ন-সহযোগীদের হস্তক্ষেপেরসমালোচনাও করেছেন। তাঁরা
বলছেন, সরকারকে পাশ কাটিয়ে উন্নয়ন-সহযোগীরা কাজ করতে চায়। আর
উন্নয়ন-সহযোগীদের অভিযোগ, সরকারের কাজের গতি শ্লথ।এ বিষয়ে জানতে চাইলে
এনএনএসের অন্যতম কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন,
সমন্বয়হীনতা শুরুর দিকে কিছুটা ছিল। কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।সবার কাছে
পুষ্টি সেবা পৌঁছে দিতে সরকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ২০১১ সালে
পাঁচ বছর মেয়াদি এ কর্মসূচি নেয়। এ জন্য বরাদ্দ রয়েছে এক হাজার ৪৬০ কোটি
টাকা। কর্মসূচি শুরু হয় গত বছরের জানুয়ারিতে। মোট ২০টি ক্ষেত্রকে
প্রাধান্য দিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছিল। এর মধ্যে এনএনএসের দাবি
চারটি ক্ষেত্রে কাজ এগিয়েছে। তবে মাঠপর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, তা
যথেষ্ট নয়। ২০১১-১২ অর্থবছরের এনএনএসের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬৫ কোটি টাকা।
২০১২ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরুর পর জুনের মধ্যে ৪০ কোটি ৩০ লাখ টাকা খরচ
হয়েছে। আর মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনিয়ম
হয়েছে ২৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকার।
কর্মসূচিসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম বছরে কিছু সমস্যা ছিল। এখন আর এসব সমস্যা নেই।
দেশের শীর্ষস্থানীয় পুষ্টিবিদ এস কে রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্মসূচিটি নিয়ে আমি ভীষণ অসন্তুষ্ট। এত কোটি কোটি টাকার কর্মসূচি যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে আনন্দিত হওয়ার কারণ দেখি না।’
মাঠপর্যায়ে সমন্বয়হীনতা: পুষ্টি সেবা মাঠপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের। গত ৩০ মার্চ এই দুই অধিদপ্তরের নড়াইল, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও সাতক্ষীরার কর্মকর্তা ও মাঠকর্মীদের নিয়ে রাজধানীর জাতীয় জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি প্রতিষ্ঠানে (আইপিএইচএন) একটি কর্মশালা আয়োজন করে এনএনএস। পুষ্টি সেবা পৌঁছাতে নানান প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়।
কর্মশালার পরে কয়েকটি উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য পরিচর্যা কর্মীদের (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা পুষ্টি তথ্য ও গর্ভবতী মায়েদের আয়রন ফলিক অ্যাসিড সরবরাহসহ কোনো কাজেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মীদের সহযোগিতা করেন না।
এ বিষয়ে একটি জেলার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন, পরিবার পরিকল্পনা সহকারীদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারাক্ষণ নিজেদের কাজে ব্যস্ত রাখে। তাঁদের সপ্তাহে দুই দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে বসতে হয়, দুই দিন সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কাজ করতে হয়। পুষ্টির কাজ করাটা তাঁদের জন্য একটা বাড়তি চাপ। একই জেলার সিভিল সার্জনের দাবি, এক মাসে তিনি নয়টি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শনে গেছেন। কিন্তু এক দিনও পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের পাননি।
এনএনএসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যেও সমন্বয় নেই: এনএনএসের মোট ১০ জন উপকর্মসূচি ব্যবস্থাপক হলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কেনাকাটা, বিদেশ ভ্রমণে বেশি আগ্রহী। জানা যায়, এ কর্মসূচিতে জরুরি অবস্থায় পুষ্টি সেবা কর্মসূচি দেখভাল করার কথা ছিল পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আলমগীর মুর্শেদীর। কিন্তু তিনি কেনাকাটার কাজ করেন। এ বিষয়ে আলমগীর মুর্শেদী জানান, তিনি আগেও সরকারের কেনাকাটার কাজ করেছেন।
পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের দাবি, কাজের চাপ কম থাকায় পুষ্টি কর্মসূচিতে বদলি হয়ে এসেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) তিন প্রভাবশালী নেতা মীর মোবারক হোসেন, শাহ গোলাম নবী ও আমীর হোসেন। একই সঙ্গে শাহ গোলাম নবী এবং আমির হোসেন পুষ্টি সেবা কর্মসূচির বাইরে আলাদা দুটি কর্মসূচির দায়িত্বেও রয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁরা বলেন, পুষ্টি সেবা কর্মসূচি এগিয়ে নিতে কাজ করছেন।
এলোমেলো কর্মসূচি: সমন্বয়হীনতার প্রভাব পড়ছে পুষ্টি সেবা কর্মসূচির বাস্তবায়নে। এনএনএসের কর্মকর্তাদের দাবি, তাঁরা দেশের ১৮টি মেডিকেল কলেজসহ মোট ৩৯টি জায়গায় তীব্র অপুষ্টির চিকিৎসা দিচ্ছেন। ঢাকার আজিমপুর মাতৃসদনে গত ৩০ মার্চ শিশু বিশেষজ্ঞ নাদিরা আফরোজ বলেন, তাঁরা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। সরকার তাঁদের একটি পানির ফিল্টার, জগ, কাপ, চামচ দিয়েছে। তবে তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের যে খাবার দেওয়ার কথা, তার বরাদ্দ নেই। সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর থেকে তাঁরা চাল, ডাল, তেল, নুন সংগ্রহ করেন। বরিশাল বিভাগীয় কয়েকটি জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানেও চিকিৎসাব্যবস্থা চালু হয়নি।
অভিযোগ আছে, বছরজুড়ে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে শুধু প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলেছে। এনএনএস এবং বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলো একই জনগোষ্ঠীকে বারবার একই প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
বরিশাল বিভাগের একটি জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশি-বিদেশি সবাই আসে শুধু প্রশিক্ষণ দিতে। একই কথা বারবার বলে।’
কর্মসূচিসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম বছরে কিছু সমস্যা ছিল। এখন আর এসব সমস্যা নেই।
দেশের শীর্ষস্থানীয় পুষ্টিবিদ এস কে রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্মসূচিটি নিয়ে আমি ভীষণ অসন্তুষ্ট। এত কোটি কোটি টাকার কর্মসূচি যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে আনন্দিত হওয়ার কারণ দেখি না।’
মাঠপর্যায়ে সমন্বয়হীনতা: পুষ্টি সেবা মাঠপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের। গত ৩০ মার্চ এই দুই অধিদপ্তরের নড়াইল, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও সাতক্ষীরার কর্মকর্তা ও মাঠকর্মীদের নিয়ে রাজধানীর জাতীয় জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি প্রতিষ্ঠানে (আইপিএইচএন) একটি কর্মশালা আয়োজন করে এনএনএস। পুষ্টি সেবা পৌঁছাতে নানান প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়।
কর্মশালার পরে কয়েকটি উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য পরিচর্যা কর্মীদের (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা পুষ্টি তথ্য ও গর্ভবতী মায়েদের আয়রন ফলিক অ্যাসিড সরবরাহসহ কোনো কাজেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মীদের সহযোগিতা করেন না।
এ বিষয়ে একটি জেলার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন, পরিবার পরিকল্পনা সহকারীদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারাক্ষণ নিজেদের কাজে ব্যস্ত রাখে। তাঁদের সপ্তাহে দুই দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে বসতে হয়, দুই দিন সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কাজ করতে হয়। পুষ্টির কাজ করাটা তাঁদের জন্য একটা বাড়তি চাপ। একই জেলার সিভিল সার্জনের দাবি, এক মাসে তিনি নয়টি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শনে গেছেন। কিন্তু এক দিনও পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের পাননি।
এনএনএসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যেও সমন্বয় নেই: এনএনএসের মোট ১০ জন উপকর্মসূচি ব্যবস্থাপক হলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কেনাকাটা, বিদেশ ভ্রমণে বেশি আগ্রহী। জানা যায়, এ কর্মসূচিতে জরুরি অবস্থায় পুষ্টি সেবা কর্মসূচি দেখভাল করার কথা ছিল পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আলমগীর মুর্শেদীর। কিন্তু তিনি কেনাকাটার কাজ করেন। এ বিষয়ে আলমগীর মুর্শেদী জানান, তিনি আগেও সরকারের কেনাকাটার কাজ করেছেন।
পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের দাবি, কাজের চাপ কম থাকায় পুষ্টি কর্মসূচিতে বদলি হয়ে এসেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) তিন প্রভাবশালী নেতা মীর মোবারক হোসেন, শাহ গোলাম নবী ও আমীর হোসেন। একই সঙ্গে শাহ গোলাম নবী এবং আমির হোসেন পুষ্টি সেবা কর্মসূচির বাইরে আলাদা দুটি কর্মসূচির দায়িত্বেও রয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁরা বলেন, পুষ্টি সেবা কর্মসূচি এগিয়ে নিতে কাজ করছেন।
এলোমেলো কর্মসূচি: সমন্বয়হীনতার প্রভাব পড়ছে পুষ্টি সেবা কর্মসূচির বাস্তবায়নে। এনএনএসের কর্মকর্তাদের দাবি, তাঁরা দেশের ১৮টি মেডিকেল কলেজসহ মোট ৩৯টি জায়গায় তীব্র অপুষ্টির চিকিৎসা দিচ্ছেন। ঢাকার আজিমপুর মাতৃসদনে গত ৩০ মার্চ শিশু বিশেষজ্ঞ নাদিরা আফরোজ বলেন, তাঁরা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। সরকার তাঁদের একটি পানির ফিল্টার, জগ, কাপ, চামচ দিয়েছে। তবে তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের যে খাবার দেওয়ার কথা, তার বরাদ্দ নেই। সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর থেকে তাঁরা চাল, ডাল, তেল, নুন সংগ্রহ করেন। বরিশাল বিভাগীয় কয়েকটি জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানেও চিকিৎসাব্যবস্থা চালু হয়নি।
অভিযোগ আছে, বছরজুড়ে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে শুধু প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলেছে। এনএনএস এবং বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলো একই জনগোষ্ঠীকে বারবার একই প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
বরিশাল বিভাগের একটি জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশি-বিদেশি সবাই আসে শুধু প্রশিক্ষণ দিতে। একই কথা বারবার বলে।’
No comments